লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
স্মার্টফোন কেনার গাইডলাইন
স্মার্টফোন কী এবং কেনো?
স্মার্টফোন একটি বিশেষ ধরনের মোবাইল ফোন, যা মোবাইল কমপিউটিং প্লাটফর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে চলে। ফিচার ফোনের তুলনায় অত্যাধুনিক কমপিউটিং সুবিধা ও কানেক্টিভিটিসম্পন্ন এ ফোনটিতে ইন্টারনেট, মাল্টিমিডিয়া ও টাচস্ক্রিন সুবিধা থাকায় ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একটি সাধারণ মোবাইলের সাথে পার্সোনাল ডিজিটাল অ্যাসিস্ট্যান্ট (পিডিএ) সুবিধা যুক্ত করে বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোনটি বের করা হয়। পরে এর সাথে যুক্ত হয়েছে পোর্টেবল মিডিয়া প্লেয়ার, নিমণমানের কমপ্যাক্ট ডিজিটাল ক্যামেরা, পকেট ভিডিও ক্যামেরা ও জিপিএস সুবিধা। বর্তমানে বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই হাই রেজ্যুলেশন টাচস্ক্রিন ও মোবাইল উপযোগী ওয়েব ব্রাউজার রয়েছে। মোবাইল ব্রডব্যান্ড ও ওয়াই-ফাই সুবিধার মাধ্যমে উচ্চগতির ডাটা অ্যাক্সেস সুবিধা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দৈনন্দিন জীবনের সব চাহিদা একটি মাত্র ডিভাইসের মাধ্যমে মেটানোর সুবিধা দিতে মোবাইল অ্যাপ মার্কেট ও মোবাইল ই-কমার্স গড়ে উঠেছে।
২০১৩ সালেই বিশ্বব্যাপী ফিচার ফোন বিক্রির পরিমাণকে টপকে গেছে স্মার্টফোন। গত জুলাইয়ের তথ্য মতে, বিশ্বের মোট মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রির ৯০ শতাংশই ছিল অ্যান্ড্রয়িড ও আইফোন স্মার্টফোন। শুধু কথা বলা নয়, মোটামুটি কমপিউটারের কাজ খুব সহজেই এ স্মার্ট ডিভাইসটির মাধ্যমে করা যায়। চলতি পথে অফিসের নানা কাজ সারতে ও ভার্চুয়াল যোগাযোগ করতে স্মার্টফোনের জুড়ি নেই।
স্মার্টফোনের বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট
গত বছর পরীক্ষা মূলকভাবে সরকারি টেলিকম অপারেটর টেলিটকের মাধ্যমে বাংলাদেশে থ্রিজির যাত্রা শুরম্ন। গত ৮ সেপ্টেম্বর দেশে সবচেয়ে বড় নিলামের মাধ্যমে গ্রামীণফোন ১০ মেগাহার্টজ এবং বাংলালিংক, রবি ও এয়ারটেল ৫ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ কেনে। এর মাধ্যমে জিএসএমনির্ভর মোট পাঁচটি অপারেটর থ্রিজি মার্কেটে প্রবেশ করে। ইতোমধ্যে প্রায় সব অপারেটর বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজি সেবা দেয়া শুরু করেছে। আপাতভাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে থ্রিজি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। লাইসেন্স পাওয়া থেকে পরবর্তী ৯ মাসের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে থ্রিজি সেবা পৌঁছাতে হবে বলে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। কোনো অপারেটর যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ৫০ কোটি টাকা করে জরিমানা গুনতে হবে। নীতিমালা অনুসারে প্রথম পর্যায়ে লাইসেন্স পাওয়ার ৯ মাসের মধ্যে অপারেটরগুলোকে সাতটি বিভাগীয় শহরে এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৮ মাসের মধ্যে দেশের ৩০ শতাংশ জেলায় এ সেবা চালু করতে হবে। আর তৃতীয় পর্যায়ে দেশের সব জেলায় ৩ বছরের মধ্যে এ সেবা চালু করতে হবে। থ্রিজি সেবা নিতে হলে আপনার ব্যবহৃত ডিভাইস স্মার্টফোনটি হতে হবে থ্রিজি সমর্থিত। এ ক্ষেত্রে দেশের বাজারে থাকা সাশ্রয়ী থেকে শুরু করে উচ্চ দামের ডিভাইস কিনতে পারেন। সম্প্রতি দেশী স্মার্টফোন বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান সিম্ফোনির চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ বলেন, দেশে বর্তমানে ব্যবহার হওয়া মোট হ্যান্ডসেটের প্রায় ১৫ শতাংশ স্মার্টফোন। এ বছর প্রায় দুই কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানি হবে, যার গড় বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। থ্রিজি চালু হওয়ায় দেশে স্মার্টফোনের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, স্মার্টফোনের প্রবৃদ্ধি শুধু থ্রিজিতেই নয়, টুজিকে কেন্দ্র করেও হয়েছে। অনেকেই থ্রিজি সমর্থনযোগ্য স্মার্টফোন বর্তমানে টুজি নেটওয়ার্কে ব্যবহার করছেন। দেশে পুরোপুরিভাবে থ্রিজি চালু হলে স্মার্টফোন বিক্রির পরিমাণ অনেকাংশে বেড়ে যাবে।
কেনার আগে বিবেচনার বিষয়
স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে বাজেট ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। আর এ সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা না থাকলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। তাই নিচের বিষয়গুলো আগেভাগেই জেনে নিয়ে কিনতে হবে।
বাজেট অনুযায়ী স্মার্টফোন : দেশের বাজারে কম দামী, বেশি দামীসহ সব ধরনের স্মার্টফোনই পাওয়া যায়। স্মার্টফোনের দাম ব্র্যান্ডভেদে এখন প্রায় ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কমবেশি প্রতিটি স্মার্টফোনে এক বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। কিছু কিছু স্মার্টফোনে দুই বছরের ওয়ারেন্টিও দেয়া থাকে। তাই কেনার আগে অবশ্যই দাম এবং ওয়ারেন্টির বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেম : সব স্মার্টফোনই যেকোনো মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমে চলে। এসব অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে টেক জায়ান্ট গুগলের অ্যান্ড্রয়িড, অ্যাপলের আইওএস, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন, নোকিয়ার সিমবিয়ান, ব্লাকবেরি লিমিটেডের ব্ল্যাকবেরি ওএস, স্যামসাংয়ের বাডা, এইচপির ওয়েবওএস ইত্যাদি। লিনআক্সের সাথে রয়েছে মিমো ও মিগো অপারেটিং সিস্টেম। এছাড়া বাজারে আসছে মজিলার ফায়ারফক্স ওএস, ক্যানোনিক্যাল লিমিটেডের উবুন্টু ফোন এবং টাইজেন। তবে এসব অপারেটিং সিস্টেম নির্মাতাদের তৈরি স্মার্টফোনে যে শুধু নিজেদের অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় এমনটি নয়। অন্য কোম্পানির অপারেটিং সিস্টেমও ব্যবহার করা হয়। যেমন- নোকিয়া বর্তমানে তাদের স্মার্টফোনে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন ও স্যামসাং তাদের স্মার্টফোনে গুগলের অ্যান্ড্রয়িড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছে। অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রে মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়িড এখন বেশ এগিয়ে আছে। ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা সুবিধা রয়েছে অ্যান্ড্রয়িডে। অ্যাপলের অপারেটিং সিস্টেম আইওএস অনেকের কাছেই খুব প্রিয়। তবে শুধু আইফোনেই আইওএস রয়েছে। এ ছাড়া উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমেও পাওয়া যায় অনেক স্মার্টফোন। তবে বিভিন্ন সুবিধার অ্যাপস ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো অ্যান্ড্রয়িড, আইওএস এবং উইন্ডোজ ফোন অপারেটিং সিস্টেম।
প্রসেসর : প্রসেসর হলো স্মার্টফোনের প্রধান ও সবচেয়ে গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ। কমপিউটারের মতোই প্রসেসর ছাড়া স্মার্টফোন অর্থহীন। প্রসেসরকে আপনি ভাবতে পারেন একটি মানুষ হিসেবে, যিনি অনেক কাজ করতে পারেন। কিন্তু তিনি সব ধরনের কাজ করেন না, তাকে যা শেখানো হয়েছে শুধু সেগুলোই তিনি করেন। অনেক সময় আবার তার মতো আরও লোক থাকতে পারেন, তখন একটি কাজ এরা ভাগ করে করেন। এ একাধিক লোক বা প্রসেসর থাকাকেই মূলত ডুয়াল কোর, কোয়াড কোর ইত্যাদি বলা যেতে পারে। প্রসেসরের ক্ষেত্রে কী কী কাজ প্রসেসর করতে জানে, তাকে বলা হয় ইনস্ট্রাকশন সেট। ফোন কেনার সময় প্রথমেই দেখতে হবে ইনস্ট্রাকশন সেট কোনটি। পুরনো ফোনের প্রসেসরে থাকে এআরএম ভি৬ বা এআরএম ভি১১ ইনস্ট্রাকশন সেট, যা এ যুগের নতুন কোনো বড়সড় প্রোগ্রাম/গেম চালাতে অক্ষম। তাই এখন এআরএম ভি৬ ফোন না কেনাই ভালো। এ তথ্য ফোনের স্পেসিফিকেশন সাইটেই পাবেন। যদি এআরএম ভি৭ বা এর পরের হয়, তাহলে প্রসেসরটি উন্নতমানের। এখানে এআরএম ভি৬, এআরএম ভি১১, এআরএম ভি৭ হলো প্রসেসরটির সংস্করণ। অর্থাৎ প্রসেসরটির সংস্করণ কত তা জানতে হবে। কম দামের প্রসেসরগুলোর আগের সংস্করণের অনেক অ্যাপ্লিকেশন, গেম, ফ্ল্যাশ সমর্থন করে না। তাই এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
এরপর হচ্ছে প্রসেসর গঠন বা আর্কিটেকচার। এআরএম ভি৭-এর মধ্যে আর্কিটেকচার মূলত পাঁচ ধরনের। সেগুলো হলো করটেক্স এ৫, এ৭, এ৮, এ৯ এবং এ১৫। সব কোম্পানিই এ পাঁচ আর্কিটেকচার মেনে প্রসেসর তৈরি করে। করটেক্স এ৫ অনেক পুরনো, বেশ দুর্বল। আর করটেক্স এ১৫ হচ্ছে সবচেয়ে শক্তিশালী। সম্প্রতি বাজারে আসা গ্যালাক্সি এস৪-এ ব্যবহার করা হয়েছে এ১৫-এর সিপিইউ। ডিভাইস কেনার সময় সম্ভব হলে এ৯ বা এ৭ কেনা উচিত। তবে এ৫ না নেয়াই ভালো। যারা ফোনে বেশি এইচডি গেম খেলেন না কিংবা মুভি দেখেন না, তাদের জন্য এ৫ নেয়াই ভালো। কেননা, করটেক্স এ৫ প্রসেসরগুলো খুবই কম ব্যাটারি ব্যবহার করে। যার ফলে আপনার ফোনে দীর্ঘ ব্যাটারি ব্যাকআপ পেতে পারেন। প্রসেসরের আরেকটি ব্যাপার হলো নিয়ন সাপোর্ট। এটি জটিল কিছু নয়। নিয়ন থাকার অর্থ হলো আপনার প্রসেসর এইচডি মানের ভিডিও সরাসরি দেখাতে সক্ষম। এরপর ক্লকস্পিড বা প্রসেসর কাজের গতি অবশ্যই যত বেশি হবে তত ভালো। ইদানীংকার বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই ন্যূনতম ১ গিগাহার্টজ ক্লকস্পিড থাকে। এছাড়া প্রসেসরটি কত কোরবিশিষ্ট তাও জানা প্রয়োজন। বর্তমানে বাজারে থাকা দামী স্মার্টফোনগুলোতে সিঙ্গেল কোর, ডুয়াল কোর, কোয়াড কোর ও অক্টা কোরের প্রসেসর রয়েছে। প্রসেসর কোয়াড কোর মানেই যে এটি ভালো হবে, তাও ঠিক নয়। কিন্তু কোর কয়টি তা না দেখে শুরুতে দেখা উচিত প্রসেসর ইনস্ট্রাকশন সেট ও আর্কিটেকচার। বাজারে এআরএম, কোয়ালকম সণাপড্রাগন, ক্রেইটসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় মোবাইল প্রসেসরের সর্বশেষ সংস্করণসমৃদ্ধ স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে।
ডিসপ্লে : স্মার্টফোনের অপর আরেকটি গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ হলো এর ডিসপেস্ন। কমপিউটারের মনিটরের ক্ষেত্রে যেমন সিআরটি, এলসিডি, এলইডি রয়েছে, তেমনি স্মার্টফোনগুলোতে এইচভিজিএ, কিউভিজিএ, ডবিস্নউভিজিএ, আইপিএস প্রযুক্তির ডিসপেস্ন রয়েছে। বর্তমানে প্রায় সব স্মার্টফোনই টাচস্ক্রিন ডিসপেস্নসমৃদ্ধ। এ ক্ষেত্রে আরামদায়ক ব্যবহার ও দেখার সুবিধার্থে বড় ডিসপেস্নর ফোনই সবচেয়ে উপযোগী। ডিসপেস্নর আকার ৩.৫ ইঞ্চি অথবা তার বেশি হওয়াই ভালো। তবে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন- এর রেজ্যুলেশন, পিক্সেল পার ইঞ্চি (পিপিআই), কালার ডেনসিটি ইত্যাদি। রেজ্যুলেশন বিষয়টি স্ক্রিন সাইজের ওপর নির্ভর করে। তাই যথাসম্ভব ডিসপেস্ন রেজ্যুলেশন বেশি দেখে স্মার্টফোন কেনা ভালো। পিক্সেল ঘনত্ব যত বেশি হবে তত ভালো মান দেখাবে। আর টাচস্ক্রিন অবশ্যই ক্যাপাসিটিভ হওয়া জরম্নরি। কারণ রেজিস্টিটিভ স্ক্রিন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট : গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটের সংক্ষিপ্ত রূপ হলো জিপিইউ। অনেকেই জিপিইউ সম্পর্কে অবহিত নন, অথচ এটি ছাড়া আপনি হাই গ্রাফিক্সের কোনো গেম খেলতে পারবেন না। এর কাজ হলো আপনার ডিসপেস্নতে যেসব জিনিস আসবে তা প্রসেস করা, কিছুটা বলতে পারেন আরেকটি প্রসেসর, যার কাজ শুধু গ্রাফিক্স যেমন- মুভি, গেম, গ্রাফিক্স ইত্যাদি প্রসেস করা। জিপিইউ শক্তিশালী হলে উন্নতমানের গেম এবং এইচডি মুভি চালাতে কোনো সমস্যা হবে না। এটি ভিডিও এক্সপেরিয়েন্সকেও করে তোলে যথেষ্ট উন্নত। অনেক সেটে বিল্ট-ইন জিপিইউ থাকলেও তার পারফরম্যান্স তেমন ভালো হয় না। তাই আপনার পছন্দের স্মার্টফোনটিতে জিপিইউ হিসেবে কোন হার্ডওয়্যারটি দেয়া আছে তা অবশ্যই স্পেসিফিকেশন থেকে জেনে নেবেন।
সেন্সর : স্মার্টফোনের স্মার্টনেস অনেকাংশে এর সেন্সরগুলোর ওপর নির্ভর করে। সেন্সরবিহীন একটি স্মার্টফোন চিমত্মাই করা যায় না। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে এর বিভিন্ন সেন্সর সম্পর্কে জেনে নিতে হবে। শতভাগ স্মার্টফোনেই অ্যাক্সেলোরোমিটার সেন্সরটি ব্যবহার হয়। আপনার স্মার্টফোনে ফটো প্রিভিও, ভিডিও দেখা, মেসেজ লেখা, ওয়েব ব্রাউজিং ইত্যাদির অ্যাপস ব্যবহারের সময় ফোনটি আড়াআড়ি বা লম্বালম্বি ধরলে অ্যাপস রোটেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরে যায়, যাতে স্ক্রিনে প্রদর্শিত দৃশ্য দেখতে অসুবিধা না হয়। এটাই অ্যাক্সেলোরোমিটারের কারসাজি। এছাড়া রেসিং গেম খেলার সময় ইচ্ছে মতো ডানে-বামে ঘুরিয়ে স্টিয়ারিং ঘোরানোর কাজটিও এ প্রযুক্তির মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর মূল কাজ হচ্ছে স্মার্টফোনটির অরিয়েন্টেশন কীভাবে পরিবর্তন করা হচ্ছে, কীভাবে ঘোরানো হচ্ছে, উল্টানো-পাল্টানো হচ্ছে তা বুঝতে পারা। স্মার্টফোনে যখন ভয়েস কল করা হয় এবং কথা বলার জন্য কানের কাছে ধরা হয় তখনই স্ক্রিনের আলো নিভে যায় এবং টাচস্ক্রিনের কার্যক্ষমতা বন্ধ করে দেয়, যাতে অনাকাঙিক্ষত বা অনিচ্ছাকৃত কোনো নির্দেশনা না পড়ে। এর অন্যতম আরেকটি সুবিধা হচ্ছে দেহের নির্দিষ্ট দূরত্বে এলে স্ক্রিনের আলো নিভিয়ে ব্যাটারির চার্জ দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করে। এ সেন্সিং ক্ষমতাসম্পন্ন সেন্সরকেই প্রক্সিমিটি সেন্সর বলে। তাই এ ফিচারটি সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে। এছাড়া আমরা জানি, দিনের ঝলমলে আলোতে সেলফোনের স্ক্রিন অস্পষ্ট লাগতে পারে, তখন ব্রাইটনেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়িয়ে দেখার উপযোগী করে তোলে অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর। আবার রাতের অন্ধকারে স্ক্রিনের আলোটা চোখে বেশি লাগতে পারে, তখন ঠিক তার উল্টো ব্রাইটনেস স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমিয়ে দেখার উপযোগী করে তোলে এ সেন্সরটি।
বর্তমানে সব স্মার্টফোনে ওপরের বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সেন্সর থাকে, যার মাধ্যমে স্মার্টফোনের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা ভোগ করা যায়। প্রত্যেক সেন্সরের কাজ ভিন্ন এবং সেট ও মডেল অনুযায়ী সেন্সরের সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।
ক্যামেরা : স্মার্টফোনের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো এর ক্যামেরা। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রযুক্তিপণ্যগুলোর মধ্যে স্মার্টফোনের অবস্থান অনেকটাই ওপরে। আর ক্যামেরা বর্তমানে স্মার্টফোনের একটি জরম্নরি অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। মোবাইল ফোন কেনার সময় অনেক ক্রেতাই এর ক্যামেরা দেখে আকৃষ্ট হন। মুঠোফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তা বুঝতে পেরেছে বলেই এখন বাজার ধরতে উন্নত ক্যামেরাযুক্ত ফোন তৈরি করছে। কিন্তু ভালোমানের স্মার্টফোন ক্যামেরা তৈরির এ প্রতিযোগিতায় একেকটি প্রতিষ্ঠান একেক ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। যার অর্থ- ক্রেতাদের পক্ষে বিভিন্ন ধরনের মুঠোফোনের ক্যামেরার মূল বিষয়গুলো চিনে পার্থক্য নির্ণয় করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোন ক্যামেরা ভালো হবে, ক্রেতারা বেশিরভাগ সময়ই তা বুঝে উঠতে পারেন না। স্মার্টফোন কেনার ক্ষেত্রে গ্রাহকেরা ক্যামেরার ধরনকে বেশিরভাগ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাই স্মার্টফোন নির্মাতা কোম্পানিগুলো উন্নতমানের ক্যামেরা সংযোজনই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সাধারণত সব স্মার্টফোনের ক্যামেরা একরকম নয়। প্রতিটি স্মার্টফোনের গঠন ও কার্যক্ষমতা ভিন্নরকম। প্রাথমিকভাবে মেগাপিক্সেল দিয়ে ক্যামেরার মানদ- নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু স্মার্টফোনের ক্যামেরা তৈরির ধরনের ওপরও এর বৈশিষ্ট্য অনেকাংশে নির্ভর করে। স্যামসাং, এইচটিসি, অ্যাপল বা নোকিয়ার স্মার্টফোনে সংযুক্ত ক্যামেরাগুলোর পিক্সেল এক হলেও ছবির ধরন এক হয় না। এর কারণ পিক্সেলের আকার। স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব ক্যামেরা সংযোজন করে থাকে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পিক্সেলের আকার বিভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একই পণ্য তৈরি করলে তাদের গুণগত মানে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এজন্য গ্রাহকদের ক্যামেরার বৈশিষ্ট্য দেখে ছবির মান যাচাই না করতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। বর্তমানে বিভিন্ন স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাদের ক্যামেরার মান উন্নয়নের জন্য পিক্সেল বাড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকে মনে করেন, ক্যামেরায় যত বেশি পিক্সেল ব্যবহার করা হবে, তত বেশি স্পষ্ট ছবি তোলা সম্ভব হবে। কিন্তু ভালো ছবি তোলার জন্য প্রয়োজন এ পিক্সেলকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা। উন্নত পিক্সেল শুধু ছবি তুলতে সাহায্য করে। কিন্তু এ ছবিকে সুন্দর করে তুলে ক্যামেরায় ব্যবহার হওয়া সফটওয়্যার। উন্নত পিক্সেলের পাশাপাশি যে প্রতিষ্ঠান যত বেশি উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করবে, তার ক্যামেরায় ছবি ফুটে উঠবে ততটাই সুন্দরভাবে। ক্যামেরার গুণগত মান অনেকাংশেই নির্ভর করে পিক্সেলের আকারের ওপর। পিক্সেলের মূল কাজ হচ্ছে ছবি তোলার জন্য আলো সংগ্রহ করা। যে ক্যামেরায় যত বেশি পিক্সেল ব্যবহার করা হবে, সে ক্যামেরা তত বেশি আলো গ্রহণ করতে পারবে। ফলে ছবির গুণগত মানও ভালো হয়। কিন্তু বেশি পিক্সেলসমৃদ্ধ ক্যামেরাগুলোর অন্যতম এক সমস্যা হলো স্বল্প আলোয় ভালো ছবি তুলতে না পারা। অল্প আলোয় ছবি তোলার জন্য কম কিন্তু বড় পিক্সেলের ক্যামেরাগুলোর কোনো বিকল্প নেই। ছবি তোলার ক্ষেত্রে ক্যামেরার লেন্সও বড় ভূমিকা পালন করে। সনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরায় উন্নত লেন্স ব্যবহার করেছে। উদাহরণস্বরূপ, সনি তাদের এক্সপেরিয়া জেড ওয়ান মডেলের স্মার্টফোনটিতে ২০ দশমিক ৭ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা ব্যবহার করেছে। ক্যামেরাটিতে উন্নতমানের জি লেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। নোকিয়ার লুমিয়া ১০২০ মডেলের স্মার্টফোনটি দিয়ে তোলা ছবি ও স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস ফোর দিয়ে তোলা ছবির মান এক নয়। আবার অ্যাপলের আইফোন ৫এস ও এইচটিসির এইচটিসি ওয়ান স্মার্টফোনটি দিয়ে তোলা ছবির মানও এক হবে না। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে মেগাপিক্সেল ছাড়াও লেন্সের সেন্সর, ছবির রেজ্যুলেশন অটোফোকাস, ফ্ল্যাশলাইট, জিইও ট্র্যাগিং, ফেস ডিটেকশন ইত্যাদি আছে কি না সে সম্পর্কে জেনে নিন। এছাড়া ভিডিও কোয়ালিটি, সেকেন্ডারি ক্যামেরা আছে কি না জেনে নিন। তবে ক্যামেরা ৫ মেগাপিক্সেলই যথেষ্ট।
ব্যাটারি : স্মার্টফোন কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে ব্যাটারির মেগাঅ্যাম্পিয়ার যেনো বেশি হয়। কারণ ব্যাটারি যত মেগাঅ্যাম্পিয়ার বেশি হবে, চার্জ তত বেশি থাকবে।
রম : রম হচ্ছে স্মার্টফোনের ইন্টারনাল মেমরি। এখন বেশিরভাগ স্মার্টফোনেরই ৪ গিগাবাইট বা ৮ গিগাবাইট স্পেস থাকে রমের জন্য। কিন্তু এ মেমরির মধ্যে আবার ভাগ আছে। ধরুন, একটি হচ্ছে আপনার সি ড্রাইভের প্রোগ্রাম ফাইল, উইন্ডোজ, প্রোগ্রাম ডাটার মতো (অর্থাৎ যত ধরনের অ্যাপস আছে তা এখানে ইনস্টল হবে) আর বাকিটুকু আপনার কমপিউটারের ডকুমেন্টস, লাইব্রেরিগুলোর মতো। তাই চেক করে কিনবেন যাতে আপনার কাঙ্ক্ষিত স্মার্টফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজ যে মেমরিতে অ্যাপস ইনস্টল করবেন, সেটা যেনো ১ অথবা ২ গিগাবাইট হয়। আর যদি আপনার রম কম হয়েই থাকে, তবে চিমত্মার কোনো কারণ নেই। কেননা রুট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লিঙ্কটুএসডি অথবা এ ধরনের অ্যাপসের মাধ্যমে মেমরিকার্ডে রমের একটি মেমরি তৈরি করা যায়।
র্যা ম : স্মার্টফোনের আরেকটি অপরিহার্য অংশ হলো র্যািম। র্যানমের জায়গা যত বেশি হবে কাজের পারফরম্যান্স ও স্পিড ততই বেশি হবে। তাই কেনার আগে র্যাসম কত তা দেখে নিন। তবে বর্তমানে বেশিভাগ স্মার্টফোনের র্যাাম ৫১২ মেগাবাইট বা তার বেশি হয়। অবশ্যই ইউজারের জন্য পর্যাপ্ত মেমরি যে হ্যান্ডসেটটি বেশি প্রদান করবে সেটিই বেছে নেবেন। এখন অনেক কম দামের মাঝেই ১ জিবি ডিডিআর৩ মানের র্যা্ম সংবলিত স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু মডেল বা ব্র্যান্ডভেদে মেমরির পর্যাপ্ততা কম-বেশি হয়ে থাকে। এমনও স্মার্টফোন আছে, যার র্যা ম ১ গিগাবাইট থাকলেও মেমরি পাওয়া যায় ৫১২ মেগাবাইট। আবার কোনো স্মার্টফোনে থাকে ৭৬২ মেগাবাইট। আমাদের দেশীয় পণ্য ওয়ালটন চীনের যে হ্যান্ডসেটগুলো রিব্র্যান্ডেড করে বিক্রি করছে, সেগুলোর ইউজার অ্যাভেইলঅ্যাবল মেমরি ৯০০+ মেগাবাইট পর্যমত্ম দিয়েছে, যা প্রায় বিরলই বলা চলে! আপনি যে লঞ্চার বা যে থিমটি ব্যবহার করছেন সেটা থেকে শুরু করে আপনার হোম স্ক্রিনের ব্যাটারি ইন্ডিকেটর অর্থাৎ সব প্রোগ্রাম/অ্যাপ র্যােমের মেমরি খরচ করছে। গেম এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের এক্সপেরিয়েন্স ভালোভাবে উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই ১ গিগাবাইট ধারণক্ষমতার স্মার্টফোন কেনার চেষ্টা করবেন।
মেমরি : স্মার্টফোন কেনার আগে দেখে নিন মেমরির সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা কত। স্মার্টফোনের মেমরি দুই ধরনের। যেমন- ফোন মেমরি বা ইন্টারন্যাল মেমরি ও কার্ড সস্নট বা এক্সটারনাল মেমরি। প্রায় সব স্মার্টফোনে মেমরি কার্ড লাগানো গেলেও দেখে নিন সর্বোচ্চ কত পর্যন্ত সাপোর্ট করে। বিশেষ করে ইন্টারনাল মেমরি কত তা জেনে নিন। কারণ বেশিরভাগ অ্যাপ্লিকেশন এ ইন্টারনাল মেমরিতেই থাকে।
জিপিএস : জিপিএসের পুরো অর্থ হলো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম। পুরো নামটা দেখলেই বোঝা যায় এর ধারণাটা কত ব্যাপক। স্মার্টফোনে যদি জিপিএস থাকে, তাহলে সে দেখিয়ে দেবে ব্যবহারকারী পৃথিবীর কোন জায়গায় স্মার্টফোনটি নিয়ে অবস্থান করছেন। জিপিএস হলো স্যাটেলাইটের সহযোগিতায় পৃথিবী ও এর আশপাশে চষে বেড়ানোর প্রযুক্তি। ইউএসএ শুধু তার মিলিটারির ব্যবহারের জন্য ষাটের দশকে জিপিএস স্থাপন করে। পরে আশির দশকে সীমিত পরিসরে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হয়। জিপিএস নেভিগেশনের জন্য বর্তমানে ২০টির বেশি স্যাটেলাইট প্রতিনিয়ত পৃথিবীর ওপর চোখ রাখছে। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে এর জিপিএস সম্পর্কে জেনে নিন।
নেটওয়ার্ক কানেকশন : স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক কানেকশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নেটওয়ার্ক কানেকশনের মধ্যে রয়েছে থ্রিজি, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ইত্যাদি। ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য থ্রিজি ও ওয়াইফাই সুবিধা থাকা প্রয়োজন। এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে ফাইল ট্রান্সফারের জন্য ব্লুটুথের প্রয়োজনীয়তার কথা না বললেই চলে। তাই স্মার্টফোন কেনার আগে এ বিষয়গুলো নিশ্চিত হতে হবে।
ফিডব্যাক : bmtuhin@gmail.com