• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > স্মার্ট মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে পরিচিতি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: রিয়াদ জোবায়ের
মোট লেখা:৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৩ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
স্মার্টফোন
তথ্যসূত্র:
মোবাইল ফোন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
স্মার্ট মোবাইল ফোনের ডিসপ্লে পরিচিতি

মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ডিসপ্লেটি কেমন হবে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। সাধারণত বিভিন্ন মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড নাম দিয়েই ডিসপ্লে পরিচিত, যা থেকে স্পষ্ট কোনো ধারণা লাভ করা সম্ভব নয়। যেমন- অ্যাপল রেটিনা ডিসপ্লে এবং সনি এরিকসন রিয়েলিটি ডিসপ্লে। ভিন্ন ভিন্ন কাজের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডিসপ্লে সর্বোচ্চ সুবিধা দিয়ে থাকে। তাই মোবাইল ফোন কেনার আগে আপনার উপযোগী ডিসপেস্ন কোনটি তা থেকে জেনে নেয়া ভালো। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় এমন কিছু ডিসপেস্ন নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে।

টিএফটি এলসিডি ডিসপ্লে

এটি থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টর লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে, যা ছবিকে অধিকতর নিখুঁতভাবে দেখানোর জন্য থিন ফিল্ম ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মোবাইল ফোনে এ প্রযুক্তির ডিসপ্লে লক্ষ করা যায়। এ প্রযুক্তির যেকোনো এলসিডি ডিসপ্লেসম্পন্ন মোবাইল ফোন থেকে অধিকতর গুণগত মানসম্পন্ন ছবি এবং উচ্চ রেজ্যুলেশনের ভিডিও দেখা যায়। এ ধরনের ডিসপেস্ন সাধারণত ২৫৬ হাজার কালার পর্যন্ত সমর্থন করে। তবে প্রখর সূর্যের আলোতে বা সরাসরি বেশি আলোতে এর ডিসপ্লে দেখতে বেশ অসুবিধা হয়। তা ছাড়া এ ধরনের ডিসপ্লেতে ছবি ও ভিডিও দেখতে তুলনামূলক অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, ফলে ব্যাটারি খুব দ্রুত খরচ হয়। সুতরাং এ প্রযুক্তির ডিসপ্লে তৈরিতে খরচ অনেক কম হওয়ায় সীমিত দামের স্মার্টফোনগুলোতে এ ধরনের ডিসপ্লে ব্যবহার হয়।

ওলেড ডিসপ্লে

অরগানিক লাইট ইমিটিং ডায়োট প্রযুক্তির ডিসপ্লে হলো ওলেড ডিসপ্লে। সমতল ও মসৃণতার জন্য অনেক ধরনের মোবাইল ফোনেই এ প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যবহার হয়। মোবাইল ফোনের পাশাপাশি পোর্টেবল পিডিএ এবং ডিজিটাল ক্যামেরার ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করা হয় এটি। ওলেড ডিসপ্লে ১৬ মিলিয়ন কালার সমর্থন করে। এর স্ক্রিনে টাচ করার সাথে সাথে তা খুব দ্রুত কাজ করে এবং বিভিন্ন দিক থেকে খুব ভালো দেখা যায়। এ ধরনের ডিসপ্লেতে ওলেড প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে এর ডিসপ্লে স্ক্রিনে আলোকসম্পাত করতে পারে, ফলে এলসিডি স্ক্রিনের মতো পেছন থেকে আলাদাভাবে আলোকসম্পাত করতে হয় না। এর অর্থ হলো এ ডিসপ্লেতে ছবি ও ভিডিও দেখতে কম শক্তির প্রয়োজন হয়। সাধারণত এ ধরনের ডিসপ্লের ঔজ্জ্বল্যের পরিমাণও তুলনামূলক বেশি হয়। এ প্রযুক্তির খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ভবিষ্যতে এ ধরনের ডিসপ্লের ওপর ভিত্তি করেই অতি পাতলা, নমনীয় অথবা স্বচ্ছ ধরনের ডিসপ্লে তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

অ্যামোলেড ডিসপ্লে

অ্যামোলেড ডিসপ্লে হলো একটিভ-ম্যাট্রিক্স অরগানিক লাইট-ইমিটিং ডায়োট। এর কাজ মোটামুটি ওলেড ডিসপ্লের মতোই। এ প্রযুক্তির মোবাইল ফোনগুলোতে আলাদাভাবে পেছন থেকে আলোকসম্পাত করতে হয় না বলে পাওয়ার খরচ অনেক কম হয়। তাই এ ধরনের প্রযুক্তিসম্পন্ন মোবাইল ফোনের ব্যাটারি আযু অনেক দীর্ঘ হয়। অ্যামোলেড ডিসপ্লে সর্বোচ্চ ১৬ মিলিয়ন কালার প্রদর্শন করতে পারে। তাই ছবির গুণগত মান যেমন ভালো হয় তেমনি ছবি অনেক উজ্জ্বল দেখা যায়। এর স্ক্রিনও অনেক সংবেদনশীল হওয়ায় স্পর্শ করার সাথে সাথে সাড়া দেয়। এ ধরনের ডিসপ্লের আরেকটি সুবিধা হলো সবদিক থেকেই স্বাচ্ছন্দ্যে ছবি দেখা যায়। সেই সাথে এর নিজস্ব আলোকসম্পাত করার সুবিধার জন্য ট্রু-কালার প্রদর্শন করে। অ্যামোলেড ডিসপ্লে এলসিডির চেয়ে আলাদা সাবপিক্সেল ব্যবহার করে ছবি প্রদর্শন করে। ফলে ছবির তীক্ষ্ণতা কিছুটা কম হয়। এ ধরনের ডিসপ্লে নির্মাণের খরচও বেশি হওয়ায় বেশ ব্যয়বহুল মোবাইল ফোনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। নোকিয়া এন৮ ফোনে এ ধরনের ডিসপেস্ন ব্যবহার হয়।

সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে

সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে স্যামসাং মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের তৈরি এবং অ্যামোলেড ডিসপ্লের আদলেই তৈরি করা। এটি অ্যামোলেড ডিসপ্লের প্রায় সব সুবিধাই ধারণ করে। সুপার অ্যামোলেড ডিসপ্লে অ্যামোলেড ডিসপ্লের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল, শক্তি সঞ্চয়ী ও স্পর্শ করলে সবচেয়ে দ্রুত সাড়া দিতে পারে। স্যামসাং মোবাইল ফোনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল গ্যালাক্সি এস২ এবং গ্যালাক্সি এস৩ ফোনগুলোতে এ প্রযুক্তির ডিসপেস্ন ব্যবহার করা হয়।

রেটিনা ডিসপ্লে

রেটিনা ডিসপ্লে মোবাইল ফোন ডিসপ্লের একটি সর্বাধুনিক সংস্করণ, যা আইপিএস এলসিডি এবং ব্যাকলিট এলসিডির সমন্বয়ে তৈরি। এটি মূলত অ্যাপল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবন। এর ডিসপ্লের রেজ্যুলেশন অত্যন্ত উন্নতমানের যা ৬৪০ বাই ৯৬০ পিক্সেল। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ ডিসপ্লের নাম রেটিনা ডিসপ্লে দিয়েছে কারণ মানুষের সাধারণ চোখে কখনই এর কোনো একক পিক্সেল আলাদাভাবে শনাক্ত করা সম্ভব নয়, যার ফলে এ ডিসপ্লেটি অত্যধিক তীক্ষ্ণ লেখা পড়া যাবে সুন্দরভাবে, ছবি ও ভিডিও দেখা যাবে স্পষ্ট। অ্যাপলের আইফোন ৪, আইফোন ৪এস, আইফোন ৫-এ এ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

মোবাইল ব্রাভিয়া ইঞ্জিন

ব্রাভিয়া হলো সবচেয়ে ভালো রেজ্যুলেশন এবং অডিও-ভিজ্যুয়ালের পূর্ণতাদানকারী প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তি বিশ্ববিখ্যাত ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনির উদ্ভাবন, যা আগে সনির উন্নতমানের টেলিভিশনের জন্য ব্যবহার করা হতো। এ প্রযুক্তি ছবির ও ভিডিওর গুণগত মান বাড়ানো এবং অস্পষ্টতা কমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটি কন্ট্রাস্টের মানও অনেক বাড়িয়ে দেয় এবং প্রকৃত কালার প্রদর্শন করে। সাধারণত সনি এক্সপেরিয়ান্স সিরিজের মোবাইল ফোনগুলোতে ব্রাভিয়া ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।

হেপটিক টাচ স্ক্রিন

হেপটিক প্রযুক্তির টাচ স্ক্রিন সাধারণত মোবাইল ফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নোকিয়া এবং ব্ল্যাকবেরি মোবাইলের বাজারে তাদের অবস্থান সমুন্নত রাখতে ব্যবহার করছে। এ প্রযুক্তির মোবাইল ফোনের ডিসপ্লেতে স্পর্শ করলে তা নিখুঁতভাবে শনাক্ত করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। মোবাইল ফোনে টাইপ করার ক্ষেত্রে নির্ভুলতা, অপেক্ষাকৃত সহজ, আরামদায়ক হওয়ায় মোবাইল ফোন বাজারে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

মোবাইল ফোনের স্ক্রিন রেজ্যুলেশন

কিউভিজিএ : কিউভিজিএ শব্দটির অর্থ হলো কোয়ার্টার ভিডিও গ্রাফিক্স আরেয় অর্থাৎ ভিজিএ’র এক-চতুর্থাংশ রেজ্যুলেশন (২৪০ বাই ৩২০ পিক্সেল) প্রদর্শন করে। এটি স্মার্ট মোবাইল ফোনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিম্নমানের রেজ্যুলেশন প্রদর্শন করে। সাধারণত কমদামী ফোনগুলোর রেজ্যুলেশন কিউভিজিএ হয়ে থাকে। স্যামসাং গ্যালাক্সি ওয়াই, এইচটিসি ওয়াইল্ড ফায়ারসহ বিভিন্ন মোবাইলে এ রেজ্যুলেশন পাওয়া যায়।

ডব্লিউকিউভিজিএ : এ রেজ্যুলেশন মোটামুটি কিউভিজিএ’র অনুরূপ। তবে ডব্লিউ থেকে ওয়াইড বোঝানো হয়েছে অর্থাৎ এই ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন কিউভিজিএ’র একই উচ্চতাসম্পন্ন, তবে এর প্রশস্ততা অনেক বেশি। এর রেজ্যুলেশন ২৪০ বাই ৪৩২ পিক্সেল। সনি এরিকসন আয়নোর ডিসপ্লেতে এ রেজ্যুলেশন ব্যবহার করা হয়েছে।

এইচভিজিএ

এইচভিজিএ থেকে ভিজিএ’র অর্ধেক রেজ্যুলেশন বোঝানো হয়। সবচেয়ে স্মার্টফোনে এ রেজ্যুলেশন (৩২০ বাই ৪৮০ পিক্সেল) ব্যবহার করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের আঙ্গিকে এটি বেশ মানানসই এবং অ্যাপলের আইফোন ৩জিএস, এইচটিসি ওয়াইল্ড ফায়ার এস মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন স্মার্টফোনে এ রেজ্যুলেশন ব্যবহার করা হয়েছে।
মোবাইল ফোন কেনার ক্ষেত্রে আপনার স্মার্টফোনটি ব্যবহারের দিক দিয়ে কোন ক্ষেত্রে কোন কাজের জন্য প্রাধান্য পাবে তার ভিত্তিতে এর ডিসপ্লে সিস্টেম পছন্দ করা উচিত। যদি ছবি দেখা, ভিডিও উপভোগ এবং গেমস খেলতে পছন্দ করেন তবে অ্যামোলেড ডিসপ্লে থাকতে পারে আপনার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। আবার বিভিন্ন ডকুমেন্ট দেখা থেকে শুরু করে ওয়েব পেজ ব্রাউজিং করতে চাইলে এলসিডি ডিসপ্লে থেকে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। অন্যদিকে টেক্সট মেসেজিং ও চ্যাটিং এবং টাইপ করার জন্য হেপটিক টাচস্ক্রিনের জুড়ি মেলা ভার।

ফিডব্যাক : riyadzubair@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস