লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
কে এম আলী রেজা
মোট লেখা:১৫৩
লেখা সম্পর্কিত
উইন্ডোজ ৮ স্টার্ট মেনুর প্রতিস্থাপক
মাইক্রোসফটের নতুন অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ ৮-এ বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। যেমন : নতুন ব্যবহারকারীরা এর ইন্টারফেস নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে হিমশিম খেতে পারেন। এছাড়া উইন্ডোজ ৮-এ আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে, যা অনেকটাই জটিল প্রকৃতির। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের অন্য নতুন ভার্সনগুলোর মতোই এর ‘বাগ’গুলো অস্বীকার করা যাবে না। তবে এগুলো সমাধানের জন্যও রয়েছে বিশেষ উপায়। এখানে উইন্ডোজ ৮-এর স্টার্ট স্ক্রিনের বিদ্যমান সীমাবদ্ধতা এবং এর বিকল্প হিসেবে যেসব সফটওয়্যার ব্যবহার করা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
উইন্ডোজ ৮-এর নতুন ব্যবহারকারীদের প্রথম ও প্রধান অভিযোগ এর স্টার্ট মেনু খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে থার্ড পার্টি কিছু সফটওয়্যার দিয়ে উইন্ডোজ ৮-এর আগের ভার্সনগুলোর মতো স্টার্ট মেনু ফিরিয়ে আনা যায়।
স্টার্ট স্ক্রিন ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করতে মাইক্রোসফট স্টার্ট মেনু অপশনটি সরিয়ে নিয়েছে উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেম থেকে। স্টার্ট স্ক্রিনে অনেকগুলো বিশেষ ফিচার ইউজারদের সুবিধার্থে সংযোজন করা হয়েছে। স্টার্ট স্ক্রিনে যুক্ত করা হয়েছে সর্বশেষ ই-মেইল, এপয়নমেন্ট, নিউজ ও অন্যান্য দরকারি তথ্যপ্রাপ্তির লিঙ্ক। এখানে আপনি নাম টাইপ করে যেকোনো অ্যাপ্লিকেশন, সেটিং, ফাইল মুহূর্তের মধ্যেই খুঁজে বের করতে পারেন। তবে অনেকেই এখনও স্টার্ট স্ক্রিনের পরিবর্তে স্টার্ট মেনুই পছন্দ করেন তাদের রুটিন কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য।
উইন্ডোজ ৮ অপারেটিং সিস্টেমে স্টার্ট স্ক্রিনের প্রতিস্থাপক হিসেবে যেসব স্টার্ট মেনু সফটওয়্যার আপনি ব্যবহার করতে পারবেন সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : Classic Shell, Pokki for Windows 8, Power 8, RetroUI Pro, Start Menu Plus 8, Start Menu Reviver, Start W 8, Start Menu 7, ViStart, Win 8, Start Button। এসব থার্ড পার্টি সফটওয়্যারের বেশিরভাগই ইন্টারনেটে ফ্রি পাবেন। নিচে কয়েকটি প্রতিস্থাপক স্টার্ট মেনু নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ক্ল্যাসিক শেল : উইন্ডোজের আগের ভার্সনগুলোতে ক্ল্যাসিক শেল মেনু পাওয়া যেত। তবে এখন এটি একটি নতুন ওপেন সোর্স প্রোগ্রাম হিসেবে বিবেচিত, যদিও এর ফিচার ও লুক বহুলাংশেই ক্ল্যাসিক স্টার্ট মেনুর মতোই। এ কারণেই সফটওয়্যারটিকে ক্ল্যাসিক শেল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
ক্ল্যাসিক শেল মেনু সব প্রোগ্রাম, ডকুমেন্ট, সেটিংয়ের শর্টকাট প্রদর্শন করে থাকে। এখানে উইন্ডোজের আগের ভার্সনের মতোই একই রান কমান্ড ও সার্চ ফিল্ড পাওয়া যাবে। এর শাটডাউন আইকনে ক্লিক করলে ShutDown, Restart, Hibernate, Lock, and Switch User অপশনগুলো পাবেন। এর হেল্প কমান্ড থেকে Windows 8 Help and Support পেজটিও পেতে পারেন আপনার কাজে লাগানোর জন্য।
পক্কি ফর উইন্ডোজ ৮ : প্রতিস্থাপকে স্টার্ট মেনুর ডিজাইন খুব চমৎকার এবং এখানে সংযোজিত কমান্ড ও অপশনগুলো বেশ সুসজ্জিত। এ মেনু থেকে আপনি সব প্রোগ্রাম অ্যাক্সেস করতে পারবেন এবং কমপিউটারের সুনির্দিষ্ট ফোল্ডার যেমন : Documents, Music ev Pictures ওপেন করতে পারবেন। সার্চ ফিল্ডের সাহায্যে যেকোনো প্রোগ্রাম খুঁজে বের করতে পারবেন এবং মেনুতে যথারীতি ShutDown, Restart, Sleep, Hibernate অপশগুলোও পাবেন। এতে সংযোজন করা হয়েছে উইন্ডোজ ৮ অ্যাপস নামে একটি নতুন ফোল্ডার, যা উইন্ডোজ স্টোর Windows Store অ্যাপিস্নকেশনগুলোর লিঙ্ক স্ক্রিনে প্রদর্শন করে থাকে।
পাওয়ার ৮ : এ সফটওয়্যারটিতে স্টার্ট মেনুর স্টার্ট বাটন ডেস্কটপের স্বাভাবিক স্পটে দেখা যাবে। স্টার্ট বাটনে ক্লিক করা মাত্রই দুই প্যানে মেনুটি দেখা যাবে। বাম প্যানে পছন্দের অ্যাপিস্নকেশনগুলো দেখতে পাবেন এবং প্রোগ্রাম মেনুর সাহায্যে সব প্রোগ্রাম অ্যাক্সেস করতে পারবেন। অপরদিকে ডান প্যানে আপনি সুনির্দিষ্ট ফোল্ডার যেমন : কমপিউটার, লাইব্রেরিস, কন্ট্রোল প্যানেল, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ টুলস ও নেটওয়ার্ক ওপেন করতে সক্ষম হবেন।
মেনুর নিচের দিকে সংযোজিত সহজে ব্যবহারযোগ্য সার্চ ফিল্ডের সাহায্যে আপনি কমপিউটারে রক্ষিত যেকোনো অ্যাপিস্নকেশন, ফাইল বা আইটেম সহজেই খুঁজে পাবেন। রান কমান্ড উইন্ডোতে প্রোগ্রাম, ফোল্ডার বা ফাইলের নাম টাইপ করে সেটি ওপেন বা রান করাতে পারেন। এ মেনুর সাহায্যে খুব সহজেই শাটডাউন, রিস্টার্ট, সিস্নপ, হাইবারনেট, লগ অফ, স্ক্রিনসেভার এবং লক পিসি কমান্ড অপশনগুলো অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
পাওয়ার ৮ স্টার্ট বাটনে ডান ক্লিক করলে অনেকগুলো অপশনসহ একটি পপ-আপ মেনু সামনে আসবে। এ সফটওয়্যারের বিভিন্ন ফিচার বা আচরণ কাস্টমাইজ করতে পারবেন সেটিং কমান্ড ব্যবহার করে। উইন্ডোজ ৮ প্রতিবার লগ-ইন করার পর মেনুটি সরাসরি পেতে একে অটো স্টার্ট হিসেবে সেট করতে পারেন। আপনি মেনুর আওতাধীন বাটন চাইলে রি-সাইজ করতে পারেন বা ইমেজগুলো পরিবর্তন করতে পারেন। অনেকেই মনে করেন, এটি একটি সাধারণ কিন্তু কার্যকর স্টার্ট মেনু।
রেট্রোইউআই প্রো (RetroUI Pro) : এ সফটওয়্যারটি চেষ্টা করে উইন্ডোজ ৮ এবং স্ট্যান্ডার্ড ডেস্কটপের মধ্যে একটি সমন্বয় ঘটানোর। ভিন্ন এ দুই ধরনের ইন্টারফেসের সম্মিলিত রূপ হচ্ছে রেট্রোইউআই প্রো নামের স্টার্ট মেনু। অন্যান্য প্রোগ্রামের স্টার্ট মেনু থেকে এর স্টার্ট মেনুর ইন্টারফেসটি দেখতে সম্পূর্ণ আলাদা। মেনুর বাম দিকের প্যানটি স্ট্যান্ডার্ড ডেস্কটপ অ্যাপ্লিকেশন এবং উইন্ডোজ ৮-এর স্কয়ার আইকনগুলো দেখাবে। অপরদিকে ডান দিকের প্যানটি আপনাকে লাইব্রেরি ফোল্ডার, কন্ট্রোল প্যানেল, প্রোগ্রাম এবং ইউজার ফোল্ডারে অ্যাক্সেস সুবিধা দেবে। ব্যবহারের সুবিধার্থে ডান প্যানের যেকোনো ফোল্ডার বা আইটেমকে বাম প্যানে নিয়ে আসতে পারেন। এছাড়া বাম প্যানের যেকোনো আইটেমের ওপর ডান ক্লিক করে পপআপ মেনু থেকে ডিলেট কমান্ড সিলেক্ট করে প্যান থেকে আইটেমটি অপসারণ করতে পারেন।
এ সফটওয়্যারটিতে পাবেন ডেডিকেটেড বাটন, যা দিয়ে সহজেই স্টার্ট স্ক্রিন, চার্মস বার, টাস্ক সুইচার এবং উইন্ডোজ ৮ সার্চ স্ক্রিন চালু করা যায়। যখন উইন্ডোজ ৮ স্টার্ট স্ক্রিন বা All Apps স্ক্রিনে সুইচ করবেন তখনও ডেস্কটপ টাস্কবারটি দৃশ্যমান থাকবে। যার ফলে উইন্ডোজের যেকোনো স্থান থেকে সহজেই রেট্রোইউআই প্রো মেনুতে ফেরত আসতে পারবেন।
এ মেনুতে ট্যাবলেটভিউ স্ক্রিনের আকার পরিবর্তন এবং টাস্কবারের আইকন প্রদর্শন করতে পারবেন। অন্য অপশনগুলো ব্যবহার করে এর ডিফল্ট ল্যাঙ্গুয়েজ, স্টার্ট মেনুর রং সেট বা রিসেট করতে পারবেন এবং উইন্ডোজ ৮-এর ফিচারগুলো নিষ্ক্রিয় করতে পারবেন।
স্টার্ট মেনু রিভাইভার : ইন্টারনেটে এ সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে পেতে পারেন। এটিও আধুনিক ও সনাতন বা পরিচিত ডেস্কটপের মধ্যে একটি সেতুবন্ধনের প্রয়াস চালিয়েছে। বলা যায়, এ সফটওয়্যারের নির্মাতারা তাদের এ প্রয়াসে যথেষ্ট সফলও হয়েছেন। প্রোগ্রামটির স্টার্ট বাটনে ক্লিক করা মাত্রই উইন্ডোজ ৮ অ্যাপ্লি কেশন, সেটিংস এবং ফাইলগুলোতে সব অ্যাক্সেস সুবিধা পাবেন।
মেনুর বাম দিকের আইকনগুলো আপনাকে বিভিন্ন অ্যাপস, উইন্ডোজ সেটিং, সার্চ টুল, রান কমান্ড এবং সম্প্রতি অ্যাক্সেস করেছেন এমন ফাইলগুলো নির্দেশ করবে। অ্যাপস আইকনে ক্লিক করলে আপনাকে অপশন দেয়া হবে আপনি কি সব অ্যাপস, না শুধু ডেস্কটপ অ্যাপস বা মডার্ন অ্যাপসগুলো দেখতে চান। এখান থেকে স্টার্ট মেনু ফোল্ডার, মাই ডকুমেন্ট ফোল্ডার, রিসেন্ট আইটেমস বা পছন্দমতো র্যােনডম ফোল্ডার দেখতে পারবেন।
একটি টাস্ক আইকন সহজেই উইন্ডোজ ৮ টাস্ক সুইচার সামনে নিয়ে আসে, যার ফলে আপনি একটি মডার্ন অ্যাপ থেকে অন্যটিতে যেতে পারবেন। এছাড়া সেটিং আইকন আপনাকে কন্ট্রোল প্যানেল, কমান্ড প্রম্পট, ডিভাইস ম্যানেজার, সার্ভিসেস, সিস্টেম প্রোপার্টিজ, উইন্ডোজ আপডেটস ইত্যাদি অপশনে অ্যাক্সেস সুবিধা দেবে। মেনুর মাঝখানে আইকনগুলো মাই কমপিউটার ফোল্ডার, ব্রাউজার, উইন্ডোজ স্টার্ট স্ক্রিন, ই-মেইল, ক্যালেন্ডারসহ অন্য অ্যাপগুলোতে যুক্ত করবে। এছাড়া মেনুর সার্চ ফিল্ডে টাইপ করে সরাসরি যেকোনো অ্যাপস খুঁজে বের করতে সক্ষম হবেন। সর্বোপরি উইন্ডোজ ৮-এর ডিফল্ট স্ক্রিন, টাইলস বা চার্মসের কোনো ধরনের সহায়তা না নিয়ে স্টার্ট মেনু রিভাইভারের সাহায্যে উইন্ডোজের যেকোনো জায়গাতে যেতে পারেন।
স্টার্ট মেনু ৭ : এটি স্টার্ট মেনু এক্স হিসেবেও পরিচিত। এর মাধ্যমে মেনুর আকৃতি এবং ফাংশনগুলো নিজের মতো করে সেট করতে পারবেন। মেনুকে রিসাইজ করে ডেস্কটপের স্পেস সুন্দরভাবে নিজের পছন্দমতো সাজাতে পারবেন। যেকোনো ফোল্ডার বা শর্টকাটে ডান ক্লিক করে পপআপ কমান্ড ব্যবহার করতে পারেন।
এ মেনুতে গতানুগতিক রান এবং সার্চ কমান্ড পাওয়া যাবে। এখানে আরও সংযোজন করা হয়েছে আরও প্যানেল ডিসপেস্ন অপশন, যার মাধ্যমে আপনি ShutDown, Restart, Hibernate, Sleep, এমনকি Undock অপশনগুলো অ্যাক্সেস করতে পারবেন। এ সফটওয়্যারের সাহায্যে আপনি Windows Start স্ক্রিন পুরোপুরি বাইপাস করে কমপিউটারকে সরাসরি ডেস্কটপে বুট করাতে পারবেন। এটি ট্র্যাডিশনাল পিসি এবং টাচ স্ক্রিন ডিভাইস সাপোর্ট করে। এর ফলে যে ডিভাইসে আপনি মেনুটি ব্যবহার করবেন তার ওপর ভিত্তি করে প্রোগ্রামটি পরিবর্তন করা যায়। অর্থের বিনিময়ে এবং বিনামূল্যে উভয় অপশনেই আপনি ইন্টারনেটে প্রোগ্রামটি পাবেন।
উইন্ডোজ ৮-এ স্টার্ট মেনুর পরিবর্তে স্টার্ট স্ক্রিন নিঃসন্দেহে একটি আধুনিক সংযোজন। তবে বেশিরভাগ ইউজার বহুদিন ধরে স্টার্ট মেনুর সাথে পরিচিত এবং এটি দিয়ে তারা কাজ করে আসছেন। সুতরাং হঠাৎ করে এ অভ্যাসটি পাল্টানো খুব কঠিন। আর এ কারণে ইউজারকে সহায়তার জন্য থার্ড পার্টির অনেকগুলো স্টার্ট মেনু সফটওয়্যার বাজারে আসছে, যেগুলো আমরা অনায়াসে আমাদের সুবিধামতো ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারি
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com