লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - সেপ্টেম্বর
যা থাকবে ইন্টেল পঞ্চম প্রজন্মের প্রসেসরে
বিশ্বের বৃহত্তম মাইক্রোচিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টেলের পরবর্তী প্রজন্মের কমপিউটার প্রসেসর এ বছরের শেষের দিকে বাজারে আসবে। ব্রডওয়েল নামে পঞ্চম প্রজন্মের এ চিপ ২০১৩ সালে বাজারে আসা চতুর্থ প্রজন্মের প্রসেসর হ্যাশওয়েলের উত্তরসূরি। এটি হ্যাশওয়েলের মতোই ডেস্কটপ ও ট্যাবলেটের জন্য ছাড়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আকারে আগের চিপগুলোর তুলনায় ছোট হলেও এটি হবে আরও শক্তিশালী। মাইক্রোচিপ বাজারে শীর্ষে অবস্থান করা এই প্রতিষ্ঠানের ব্রডওয়েল প্রসেসর নিয়ে প্রযুক্তিবিশ্বে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
কমপিউটার
সম্প্রতি প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট সিনেট এক প্রতিবেদনে জানায়, আসুস ট্রান্সফরমারবুক টি৩০০ চিপের মতো ডিভাইস দিয়ে ২০১৪ সালের শেষের দিকেই বাজারে অভিষেক হবে ব্রডওয়েল চিপের। যদিও এই ল্যাপটপটি বাজারে সীমিত সংখ্যায় পাওয়া যাবে। তবে সব ধরনের ডিভাইসের জন্য এ প্রসেসর পেতে ২০১৫ সাল নাগাদ অপেক্ষা করতে হবে।
ব্রডওয়েল
ব্রডওয়েল হলো ইন্টেলের পঞ্চম প্রজন্মের কোর প্রসেসর সিরিজের কোডনেম। ইন্টেলের উন্নয়ন চক্রে এটি আরেকটি অধ্যায়ের সূচনা করবে। এর আগের অর্থাৎ চতুর্থ প্রজন্মের প্রসেসর ২২ ন্যানোমিটারের হলেও ব্রডওয়েল প্রসেসর হবে মাত্র ১৪ ন্যানোমিটার সাইজের।
রোডম্যাপ
অসাধারণ কার্যক্ষমতা ও কম বিদ্যুৎ খরচসহ বিভিন্ন কারণে প্রযুক্তিবিশ্ব এই প্রসেসরের দিকে তাকিয়ে আছে। ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ইন্টেল সর্বপ্রথম আইডিএফে ১৪ ন্যানোমিটারের ব্রডওয়েল প্রসেসর আনার ঘোষণা দেয়। ২০১৪ সালের ১৮ মে ইন্টেলের প্রধান নির্বাহী ব্রেইন কারজানিক বলেন, বছরের শেষ নাগাদ ব্রডওয়েলনির্ভর কিছু কমপিউটার বাজারে ছাড়া হবে, তবে পুরোপুরিভাবে পেতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। বছরের শেষেই মোবাইল সিপিইউ এবং ২০১৫ সালে হাই পারফরম্যান্সের কোয়াড কোড সিপিইউ ছাড়া হবে। মোবাইল সিপিইউটি কম পাওয়ার খরচের মাধ্যমে এর ব্যাটারির স্থায়িত্ব বাড়াবে। গত ১৮ জুন ইন্টেল সিনেটকে জানায়, বছরের শেষ প্রামিত্মকে কিছু বিশেষায়িত ব্রডওয়েলনির্ভর পণ্য বাজারে আসবে। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের কাছে নমুনা হিসেবে ব্রডওয়েল সিপিইউ সরবরাহ করেছে ইন্টেল।
ব্যবহার
আকারে ছোট হওয়ায় মোবাইল ডিভাইসগুলোতে এর ব্যবহার যেমন বাড়বে, তেমনিভাবে শক্তিশালী হওয়ায় কমপিউটিং পণ্য প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও এটি ব্যবহারে আগ্রহী হবে। ইন্টেল জানায়, ব্রডওয়েল চিপ ট্যাবলেট থেকে শুরু করে টু ইন ওয়ান আল্ট্রাবুক, ডেস্কটপ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ওয়ার্কস্টেশনে ব্যবহার করা যাবে।
ব্রডওয়েল কী সুবিধা আনছে?
ইন্টেল দাবি করেছে, ব্রডওয়েল প্রসেস আগের সংস্করণের প্রসেসরগুলোর তুলনায় ৩০ শতাংশ কম পাওয়ার খরচ করবে। বিপরীতে প্রায় একই ধরনের পারফরম্যান্স দেবে। কম পাওয়ার খরচের কারণে ডিভাইসের ব্যাটারির ব্যাকআপ ও লাইফটাইম বাড়বে। যদিও ইন্টেল বিস্তারিতভাবে এটি জানায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, অ্যাপলের ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপ ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে ব্রডওয়েল প্রসেসরের মাধ্যমে ম্যাক অপারেটিং সিস্টেমের ডিভাইসের ব্যাটারি ব্যাকআপ ১৫ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়তে পারে।
একইভাবে উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ল্যাপটপের ব্যাটারি ব্যাকআপও বাড়বে। আগের সংস্করণে প্রসেসরের সমন্বয়ে উইন্ডোজ ৮ ডিভাইস ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ব্যাটারি ব্যাকআপ দেয়। যেটি ব্রডওয়েল প্রসেসরের মাধ্যমে ১০ ঘণ্টাতে পৌঁছাতে পারে। মাদারবোর্ডের আগের সকেটগুলোতেই ব্রডওয়েল চিপ বসানো যাবে। এটি মূল ডেস্কটপের ক্ষেত্রে এলজিএ১১৫০ সকেট ও মোবাইলের ক্ষেত্রে জি৩ সকেটের ডিডাইনে তৈরি করা হবে।
উচ্চ ক্ষমতা ও ভিন্নতা
ডিভাইসের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্রডওয়েল প্রসেসর বিভিন্ন কনফিগারেশনে তৈরি করা হবে। এর বল গ্রিড অ্যারে (বিজিএ) প্যাকেজের মধ্যে থাকছে ব্রডওয়েল-ওয়াই, ব্রডওয়েল-ইউ ও ব্রডওয়েল-এইচ। এলজিএ ১১৫০ সকেটের ক্ষেত্রেও ব্রডওয়েল-এইচ সংস্করণটি থাকছে। এ ছাড়া এলজি ২০১১-৩ সকেটের ক্ষেত্রে ব্রডওয়েল-ইপি ও ব্রডওয়েল-ইএক্স নামে প্রসেসর বাজারে ছাড়া হবে।
ব্রডওয়েল-ওয়াই : সিস্টেম অন চিপ, ৪.৫ ওয়াট এবং ৩.৫ ওয়াট টিডিপি ক্লাসের এই প্রসেসরটি ট্যাবলেট ও আল্ট্রাবুকের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হবে। এতে জিটি২ জিপিইউ ব্যবহার করা হবে এবং এটি সর্বোচ্চ ৮ গিগাবাইটের এলডিডিডিআর৩-১৬০০ র্যা ম সমর্থন করবে। এটিকে প্রথমে ব্রডওয়েল-ওয়াই বলা হলেও কমপিউটেক্স তাইপেতে একে কোর-এম নামে ব্র্যান্ড করে ইন্টেল।
ব্রডওয়েল-ইউ : সিস্টেম অন চিপ, দুটি টিডিপি ক্লাসের এই প্রসেসরটি মূলত ইন্টেলের আল্ট্রাবুক ও এনইউসি প্লাটফর্মের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ১৬ গিগাবাইটের ডিডিআর৩এল-১৬০০ র্যা ম অথবা ৮ গিগাবাইটের এলডিডিডিআর৩-১৬০০ র্যা ম সমর্থন করবে।
ব্রডওয়েল-এইচ : এর ‘এইচ’ সিরিজটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সিস্টেমের উপযোগী করা হবে এবং ৪৭ ওয়াটের পাওয়ার ড্রসহ একটি বা দুইটি চিপ কনফিগারেশন থাকতে পারে। এর কোয়াড-কোর সংস্করণ ৩২ গিগাবাইটের ডিডিআর৩এল র্যাইম সমর্থন করতে পারে। এ ছাড়া ৮ অথবা ১০ কোরের চিপসেটটি বিশেষ কাজ এবং ওয়ার্কস্টেশনের পিসির জন্য উপযোগী করা হবে। জানা গেছে, ইন্টেল ১৮ কোর প্রসেসর নিয়ে কাজ করছে, যা ডিডিআর৪ র্যা ম সমর্থন করবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে এটি বাজারে ছাড়া হতে পারে।
মোবিলিটি
এ বছরের প্রথম দিকে তাইওয়ানে অনুষ্ঠিত কমপিউটেক্স তাইপেতে ইন্টেল প্রসেসরের কোর এম ফ্যামিলির উন্মোচন করে। এই সিস্টেম অন চিপ (সক) মূলত ট্যাবলেট এবং টু ইন ওয়ান ডিভাইসের উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। এ সময় ইন্টেল লামা মাউনটেইন নামে একটি টু ইন ওয়ান ডিভাইসের রেফারেন্সও দেয়, যাতে ১২.৫ ইঞ্চি ডিসপ্লে রয়েছে। ডিভাইসটি আইপ্যাড এয়ার (৭.৫ মিলিমিটার) থেকেও পাতলা (৭.২ মিলিমিটার)। ইন্টেল জানায়, কোর এম চিপ আগের সংস্করণের চিপগুলোর তুলনায় অর্ধেক জায়গা নেয়। তবে এটি ৪০ শতাংশ বেশি শক্তিশালী ও ৬০ শতাংশ কম তাপ সৃষ্টি করে। ফলে ডিভাইসগুলো ফ্যান ছাড়াই তৈরি ও ব্যবহার করা যায়।
অসাধারণ গ্রাফিক্স উন্নয়ন
ব্রডওয়েল প্রসেসরে আগের প্রসেসরগুলোর তুলনায় গ্রাফিক্সে অনেক উন্নয়ন করা হচ্ছে। এতে ২৪ এক্সিকিউশন ইউনিটসহ জিডি৩ গ্রাফিক্সের কারণে গেমিং অ্যাপ্লিকেশন চালানো আরও আনন্দদায়ক হবে। এতে নতুন ভিডিও ডিকোডার/অ্যানকোডার হার্ডওয়্যার যুক্ত হচ্ছে, যা ভিপি৮ কোডেক সমর্থন করবে। ফলে ভিডিও কোয়ালিটিসহ ভিডিও রেজ্যুলেশন ও ক্রপিং সুবিধা আরও উন্নত হবে। ব্রডওয়েল প্রসেস ৬০ গিগাহার্টজের রিফ্রেশ রেটে কমপক্ষে ৩৮৪০ বাই ২১৬০ পিক্সেল রেজ্যুলেশন সমর্থন করবে। কিছু কিছু মডেল সর্বোচ্চ ৪০৯৬ বাই ২৩০৪ পিক্সেল রেজ্যুলেশনও সমর্থন করবে। ইন্টেল হ্যাশওয়েল প্রসেসরের মতো ব্রডওয়েল প্রসেসর ডিরেক্টএক্স ১১.১ এবং ওপেনসিএল ১.২ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস সমর্থন করবে। এ ছাড়া উচ্চ কনফিগারেশনের মডেলগুলো ওপেনজিএল ২.০ এবং ওপেনজিএল ৪.২ সমর্থন করবে
ফিডব্যাক : bmtuhin@gmail.com