লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
গেমের জগৎ
কিং অব ফাইটারস ২০১৩
ঈদ আসছে। এখন মোটামুটি বড় হয়ে যাওয়ার পর ঈদি পাওয়ার আনন্দটা ছোটবেলার মতো পাওয়া যায় না। ছোটবেলার সেই স্বাধীন আনন্দ ওই জমজমাট গেমগুলো ছাড়া আর কিছুতে তেমন একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই কমপিউটার জগৎ-এর এবারের ঈদ পর্বে থাকছে ছোটবেলার গেমগুলোর আধুনিক সিক্যুয়ালগুলোর রিভিউ। ছোটবেলা নিও জিওতে কিং অব ফাইটারদের নিয়ে খেলেনি এরকম ‘ছেলে’ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। কারণ স্কুল ছুটির পর বেরিয়ে মায়ের কাছ থেকে নিয়ে কিংবা টিফিন থেকে এক টাকা-আট আনা করে বাঁচানো ‘কয়েন’ দিয়ে রাস্তার পাশের ‘গেম’-এর দোকানে গেম খেলেনি এরকম পড়ুয়া খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আর সেই ছোটবেলার ভুলে যাওয়া কিং অব ফাইটারসের সর্বশেষ পিসি এডিশন নিয়ে এসেছে ক্যাপকম এবার নতুন ইঞ্জিনে। আগের সেই টুডি আমেজের সাথে দুর্দান্ত অ্যানিম্যাট্রিক্স- সব মিলিয়ে ক্লাসিক আমেজের অভাব হবে না। সেই সাথে আছে বিশাল ক্যারেক্টার লিস্ট থেকে ইচ্ছেমতো ফাইটার নিয়ে খেলার সুবিধা। প্রত্যেকের আছে সম্পূর্ণ পারসোনালাইজড মুভস এবং স্কিলসেট, যেগুলো ব্যবহার করার জন্য গেমারকে আলাদা স্পেশালাইজড কী কম্বিনেশন ব্যবহার করতে হবে।
সবচেয়ে দুর্দান্ত ফাইটিং স্কিলসসম্পন্ন সেরা ফাইটারদের নিয়ে এবারের কিংস অব ফাইটারসের পট গড়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি টিম গঠিত হয়েছে অপটিমাল ফাইটিং ক্যালিভার এবং আগের স্টোরিলাইনের কথা মাথায় রেখে। স্টোরি মোডের শুরু হয়েছে ২০০৩-এর অ্যাশ ক্রিমসনের কাহিনীর পরবর্তী অংশ থেকে। আছে ট্রাডিশনাল ওয়ান অন ওয়ান আর থ্রি অন থ্রি ব্যাটলস।
এবার কমব্যাট ট্যাক্টিক্সে যুক্ত হয়েছে দি গার্ড অ্যাটাক, ক্ল্যাশ, ক্রিটিকাল কাউন্টার সিস্টেম, হাইপার ড্রাইভ, এক্স স্পেসিয়াল, সুপার পাওয়ারড নিও-ম্যাক্স মুভ। সাথে আছে ড্রাইভ ক্যান্সেল, নিও ম্যাক্স ক্যান্সেল করার সুবিধা। ফাইনাল বস দুজন- সাইকি, যে কি না এ পর্যন্ত খেলে আসা সব কিং অব ফাইটারসের বস মুভ কপি করতে পারে। যত ধরনের ভজঘট ঘটানো যায় সে ঘটাবে। মাঝে আরও অনেক গল্প আছে। সব এখানেই বলে ফেললে গেম শেষ হওয়ার অপেক্ষায় থাকতে হবে না।
যাই হোক, সব কথার শেষ কথা হচ্ছে- এস এন কে বরাবরের মতো এবারও তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ নিয়ে ছেলেখেলা করেনি। সে কারণে কিং অব ফাইটারসও শত-সহস্র গেমারের ভালোবাসার জায়গাটি হারায়নি। তাই ছোটবেলার উচ্ছলতাকে আধুনিকতায় ফিরিয়ে আনতে নিয়ে বসুন কিং অব ফাইটারস ঢওওও।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : ডুয়াল কোর/এএমডি অ্যাথলন, র্যাম : ১ গিগাবাইট উইন্ডোজ এক্সপি/১ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিসতা/৭, ভিডিও কার্ড : ২৫৬ মেগাবাইট উইথ পিক্সেল শেডার, সাউন্ড কার্ড, কিবোর্ড ও মাউস
গুয়াকামিলি : গোল্ড এডিশন
প্লে স্টেশন ৩-এ বিশাল আলোড়ন সৃষ্টি করার পর দুটি ডিএলসি প্যাকসহ গুয়াকামিলি এবার পিসির জন্য নিয়ে এলো তাদের গোল্ড এডিশন। এতে পিসি গেমাররা পাবেন কোর প্লাটফর্ম গেমিংয়ের অভিজ্ঞতা, যা সহজেই কিবোর্ড দিয়ে খেলা যাবে, তবে সবচেয়ে ভালো হয় সাথে একটি গেমিং কন্ট্রোলার থাকলে। এখানে আছে সম্পূর্ণ কাস্টোমাইজেবল ক্যারেক্টার ট্রেইটের সুবিধা, আর সবচেয়ে অদ্ভুত মজাদার হুয়ান দ্য আনডেড। হালকা লাইন কোড জানা থাকলে নিজ থেকে পুরোটা তৈরি করেও নেয়া যাবে। ডিজিটাল বিপস্নবের অনেকগুলো সুবিধার মধ্যে একটি হচ্ছে, এখন ছোট ডেভেলপাররাও তাদের নিজস্ব প্রয়াসে অল্প খরচে দুর্দান্ত কিছু গেম গেমারদেরকে উপহার দিতে পারে। ঠিক তেমনই একটি গেম এই গুয়াকামিলি।
গেমের কেন্দ্রীয় চরিত্র হুয়ান- সাধারণ এক কৃষক, যে কি না পরবর্তী সময়ে একজন নামকরা মুক্তিযোদ্ধা এবং সুপার হিরো হিসেবে আবির্ভূত হয়। গেমের শুরুতেই হুয়ান একটি ভয়ঙ্কর স্কেলেটন কার্লোস কালাকার হাতে নিহত হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তাকে জীবিত করা হয়। সাথে সে পেয়ে যায় লুশাডোরের মুখোশ, যা হুয়ানকে অসম্ভব শক্তিশালী করে তোলে এবং তাকে সুপার পাওয়ার প্রদান করে। পরে এই পুনর্জীবিত হুয়ান ‘ফ্লেম ফেস’ নাম ধারণ করে তার হত্যাকারী কার্লোস কালাকার সন্ধানে বের হয়। আর তার সাথেই শুরু হয় গেমারের গুয়াকামিলিতে যাত্রা। গেমটির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হচ্ছে এর অনিন্দ্যসুন্দর মন ভালো করে দেয়া গ্রাফিক্স। ফ্লুইড ক্যারেক্টার অ্যানিমেশন, তার সাথে শক্তিশালী পরিবেশ আর পেছনে চলতে থাকা হালকা চনমনে মেক্সিকান ধাঁচের সাউন্ডট্র্যাক যে কারও মন খারাপের দিনকে ঘুচিয়ে দেবে। গেমটির টেরিয়ান টেক্সচার নিখুঁত এবং রঙিন, যা কি না গেমটিতে এনে দিয়েছে রুমিনিসেন্সের স্বাদ।
গেমটিতে আছে নন-লিনিয়ার ম্যাপিং, যা এর মজাদার বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এতে আছে ব্যাকড্রাফটিং, ওপেন এনডেড নেচার, শেষ না হওয়া স্কিল সেটস, নিত্য নতুন জায়গা। শুরুতে ডিপ কমব্যাট সিস্টেমটিকে ঠিকমতো ঠাহর করা যাবে না। আসেত্ম আসেত্ম যখন বেসিক পাঞ্চ আর কিক বাদেও হুয়ান নতুন কমপ্লিমেন্টারি স্কিলগুলো অর্জন করতে থাকবে, তখন জ্যাব, আপারকাট, হাইজাম্প ট্যাকটিক্স থেকে শুরু করে কিছুক্ষণের জন্য মুরগিতে বদলে যাওয়া সবকিছুই ডিপ কমব্যাটে গেমারকে সাহায্য করবে।
গুয়াকামিলি অ্যাকশন প্যাকড কমব্যাট ছাড়াও আরপিজি লাইট ধরনের কিছু কিছু জিনিসও নিয়ে এসেছে। যেমন গেমজুড়ে তিন ধরনের ট্রেজার প্যাক পাওয়া যাবে। কয়েন বক্স, যা দিয়ে নতুন স্কিলস যোগ করা যাবে, স্পেসাল মিটার বক্স আর হেলথ বক্স। সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ‘লিভিং অ্যান্ড ডেড’ পোলারিটি, যা দিয়ে গল্পের নায়ক হুয়ান খুব সহজেই জীবিত এবং মৃত দুই অবস্থাতেই পৃথিবীর মধ্যে ঘুরে বেড়াতে পারবে। পুরো গেম শেষ করতে মোটামুটি ছয় ঘণ্টার মতো লাগবে আর গেমারের পুরো গেম শেষে একমাত্র অভিযোগ হবে গেমটা আর একটু বড় হলো না কেন! আর সব মিলিয়ে রং-বেরংয়ের গুয়াকামিলি ট্যুর ঈদের সময় খুব একটা মন্দ হবে না। তাই বাসায় যদি একগাদা পিচ্ছি এসে হুল্লোড় শুরু করে দেয় তাহলে তাদের নিয়ে বসে পড়ুন গুয়াকামিলি গোল্ড এডিশনে।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : ডুয়াল কোর ২.২ গিগাহার্টজ/এএমডি অ্যাথলন, র্যাম : ১ গিগাবাইট উইন্ডোজ এক্সপি/১ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিসতা/৭, ভিডিও কার্ড : ২৫৬ মেগাবাইট উইথ পিক্সেল শেডার, সাউন্ড কার্ড, কিবোর্ড ও মাউস
ডিসঅনরড : ডানওয়াল সিটি ট্রায়ালস অ্যান্ড দ্য নাইফ অব ডানওয়াল
পৃথিবীতে রাজতন্ত্রের ইতিহাস বহু যুগের। এর পুরোটাই বিশ্বাসঘাতক, ষড়যন্ত্রকারীদের লোলুপ দৃষ্টি আর অসংখ্য সাধারণ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। সে ধরনের এক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কাহিনী নিয়ে ডিসঅনরড গেমটির প্রেক্ষাপট। সম্রাটের একান্ত দেহরক্ষী করভো বহুদিন পর দেশে ফিরে আসে তার প্রাণাধিক প্রিয় ছোট্ট রাজকন্যা এমিলির সাথে দেখা করতে। সমুদ্রের তীরে সম্রাজ্ঞী, এমিলির সাথে একামেত্ম আলাপচারিতার মাঝে হঠাৎ শূন্য জগত থেকে একদল মুখোশধারী মানুষ এসে হত্যা করে সম্রাজ্ঞীকে। এবং যাওয়ার সময় রাজকন্যা এমিলিকে অপহরণ করে। করভো তাদের জাদুশক্তির সামনে অসহায় হয়ে আটকে থাকে। সম্রাজ্ঞী করভোর সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। করভো তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় সে নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও ছোট্ট এমিলিকে ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু ঠিক তখন এমন কিছু ঘটল, যার জন্য করভো মোটেও প্রস্ত্তত ছিল না। সম্রাজ্ঞীকে হত্যা এবং রাজকন্যা এমিলিকে অপহরণের দায়ে সম্রাটের সেনাবাহিনী তাকে গ্রেফতার করল। এরপর কারাগারের অন্ধকার এক কুঠুরি থেকে গেমারের যাত্রার শুরু। এটা ছিল ডিসঅনরডের শুরুর গল্প। যারা অসাধারণ এই গেমটি খেলে শেষ করেছেন তারা নিশ্চয়ই এতদিনে এটাও জানেন, শেষটা কোথায় গিয়ে আটকেছে। যারা এখনও খেলার সময় করে উঠতে পারেননি, তাদের জন্য এই গল্প আর ফাঁস করব না, তবে এটুকু বলব- ডিসঅনরডের সাথে থাকলে ঈদের ছুটিটা মোটেই মন্দ যাবে না।
প্রতারিত, পরিত্যক্ত করভোর চরিত্রে গেমটি খেলতে হবে গেমারকে। ‘ঊমড় যড়সরহর খঁঢ়ঁং’- ‘আমি মানুষের বেশে নেকড়ে’। এই হচ্ছে ডিসঅনরডের পর করভোর বর্তমান। ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল : ফার্স্ট পারসন, গেম জনরা : অ্যাডভেঞ্চার, মিস্ট্রি, শুটিং। কারাগার থেকে বের হওয়া থেকে শুরু করে প্রতিটি পদক্ষেপে মৃত্যুর মুখোমুখি করভোকে নিয়ে গেমারকে হতে হবে অসম্ভব সুচতুর এবং কৌশলী। ব্যবহার করতে শিখতে হবে পরিবেশের প্রতিটি উপাদানকে। ছোট্ট ছায়া কিংবা পায়ের আওয়াজও যেকোনো সময় বিশ্বাসঘাতকতা করে বসতে পারে। মানুষ ছাড়াও শত্রু হিসেবে আছে জীবন্মৃত জম্বি, মড়াখেকো ইঁদুর, রাক্ষুসে মাছ, ভয়ঙ্কর সব উদ্ভিদ। আর সবচেয়ে বড় শত্রু নিজের বিশ্বাস। গল্পের প্রতিটি বাঁকে গেমারকে হতে হবে হতভম্ব বাস্তবতার নিষ্ঠুরতায়। এক পর্যায়ে করভো শিখে নেবে শক্তিশালী সব জাদু, দ্রুত জীবন বাঁচানোর দক্ষতা। পাওয়া যাবে ক্রস বো, গ্রেনেড, পিস্তল, ধারালো ফাঁদ, আরও অনেক কিছু। কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে গেমারকে নির্ভর করতে হবে নিজের সিদ্ধান্তগুলোতে, যার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হবে সবকিছুর ভবিষ্যৎ। এককালে সবার সম্মান ও ভালোবাসার পাত্র করভোকে নিজের চেহারা লুকিয়ে রাখতে হতো যান্ত্রিক মৃত্যু-মুখোশ দিয়ে। টানটান উত্তেজনা সত্ত্বেও গেমের সত্যিকারের স্বাদ বেরিয়ে আসে স্থৈর্য আর মনোযোগের মধ্য দিয়ে। গেমটির গ্রাফিক্স হালের গেমগুলোর মতো চোখ ধাঁধানো না হলেও এর বাস্তববাদী কন্ট্রোল ব্যবস্থা এবং শব্দ-কৌশল করভোকে গেমারের সাথে আত্মিক করে তুলে। গেমটির উন্নত এইমিং প্যানেল আর সমৃদ্ধ ইনভেন্টরি সব মিলিয়ে গেমটিকে করে তুলেছে গেমারদের পছন্দের প্রথম সারির গেমগুলোর একটি। আর এর অনন্যসাধারণ স্টোরিলাইন গেমটিকে একটি শিল্পে পরিণত করেছে।
প্রথম ডিএলসিতে জোর দেয়া হয়েছে- ফাইটিং, স্পিড, স্টেলথ আর পাজল সলভিংয়ের ওপর। এখানে অত্যানুকূল হিসেবে গেমারকে তার ম্যাজিক এবং স্কিলস কম্বাইন করতে হবে। প্রত্যেকটি থ্রিস্টার রেটিং সিস্টেম চ্যালেঞ্জ, যা গেমারকে প্রতি মুহূর্তে ভয়ঙ্করের সম্মুখীন করবে। আর দাউদ, ডেলিয়া আর দ্য আউটসাইডারের সাথে কিছু এক্সট্রা মিশন যোগ হয়েছে দ্বিতীয়টিতে।
ডিসঅনরড দেহরক্ষীর গল্প এখানেই শেষ হয়নি। শিগগিরই বের হবে ডিসঅনরড ২। তাই অতৃপ্ত গেমার মনকে বেশি কষ্ট পেতে হবে না। সুতরাং আর দেরি না করে প্রাচীন ষড়যন্ত্র, অবিশ্বাস, রাজকীয়তা আর জাদুময় বিশ্বে করভোর সঙ্গী হোন এখনই।
গেম রিকোয়ারমেন্ট
উইন্ডোজ : এক্সপি/ভিসতা/৭, সিপিইউ : কোর টু ডুয়ো ২.২ গিগাহার্টজ/এএমডি অ্যাথলন। র্যাম : ১ গিগাবাইট উইন্ডোজ এক্সপি/২ গিগাবাইট উইন্ডোজ ভিসতা/৭, ভিডিও কার্ড : ৫১২ মেগাবাইট উইথ পিক্সেল শেডার, সাউন্ড কার্ড, কিবোর্ড ও মাউস
ফিডব্যাক : alyousufhridoy@yahoo.com