লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
উইন্ডোজ সেভেন
উইন্ডোজ ৭ : কিছু সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাম্প্রতিক ভার্সন হলো উইন্ডোজ ৮.১। সম্প্রতি উইন্ডোজ এক্সপির সিকিউরিটি সাপোর্ট মাইক্রোসফট প্রত্যাহার করে নেয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে- উইন্ডোজ ঘরানার বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে উইন্ডোজ ৭ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হওয়া জনপ্রিয় এক অপারেটিং সিস্টেম। গবেষণা প্রতিষ্ঠান নেটশেয়ারের হিসাব মতে, পিসি ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৭ শতাংশই ব্যবহার করে উইন্ডোজ ৭। আর এ কারণেই পাঠকদের উদ্দেশে উইন্ডোজ ৭-এর কিছু সাধারণ সমস্যা ও তার সমাধান তুলে ধরা হয়েছে।
সমস্যা খুঁজে দেখা
বেশিরভাগ কমপিউটারের সমস্যাকে সাধারণ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়, যেমন কম্প্যাটিবিলিটি ইস্যু, হার্ডওয়্যার ত্রুটি, সিকিউরিটি ও পারফরম্যান্স সমস্যা। এক কমপিউটার থেকে আরেক কমপিউটারের উদ্ভূত সমস্যার লক্ষণ সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারে। সুতরাং প্রথম কাজ হলো সমস্যা-সংশ্লিষ্ট সাধারণ তথ্য সংগ্রহ করে নিয়ে তা সমাধানের চেষ্টা করুন।
প্রথমে জানার চেষ্টা করুন কখন থেকে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কেননা এর মাধ্যমে সম্ভাব্য কারণগুলোর লিস্ট তৈরি করে আপনি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করতে পারবেন। কোনো প্রোগ্রাম ইনস্টল করার পর সম্প্রতি নতুন কোনো সফটওয়্যার আপগ্রেট করার পর বা নতুন কোনো হার্ডওয়্যার সম্পৃক্ত করার পর এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা জেনে নিন। যদি তাই হয়, তাহলে সম্প্রতি সংঘটিত নতুন পরিবর্তনই সমস্যার মূল কারণ বা উৎস বলা যায়। এমন অবস্থায় ওয়ার্ডে সতর্ক মেসেজটি কোডসহ নোট করে রাখুন।
সমস্যা একটি নয়
যদি প্রায় সময় সতর্কমূলক স্ক্রিন আবির্ভূত হয়, যা আপনার ডেস্কটপকে ধূসর বর্ণে পরিণত করে, তাহলে আতঙ্কিত হবেন না। এমন অবস্থাকে বলে User Account Control (UAC) এবং এটি সিস্টেমকে তথা পিসিকে রক্ষা করে গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম ফাইল ও সেটিংসে অ্যাক্সেস সুবিধা সীমিত করার মাধ্যমে। এটি কতবার আবির্ভূত হয়, তা সীমিত করার জন্য স্টার্টে ক্লিক করে সার্চবক্সে User Account টাইপ করুন। এরপর আবির্ভূত হওয়া পরবর্তী স্ক্রিনের উপরের দিকে Change User Account Control Settings লিঙ্কে ক্লিক করুন। এবার পরবর্তী স্ক্রিনে পাবেন একটি সস্নাইডার। এই সস্নাইডার ব্যবহার করে টঅঈ পরিবর্তন করতে পারেন আপনার সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত সেটিংয়ে। আপনি ইচ্ছে করলে এটি বন্ধ রাখতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞেরা পরামর্শ দেন এ কাজটি না করার জন্য অর্থাৎ বন্ধ না রাখার জন্য।
প্রোগ্রাম মিশিং কি না
উইন্ডোজ ৭ বেশ কিছু টুল বাদ দিয়েছে, যেগুলো আগের ভার্সনে ছিল। যেমন মুভি মেকার, ফটো গ্যালারিসহ উইন্ডোজ মেইল। এগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে মাইক্রোসফটের ফ্রি উইন্ডোজ লাইভ এসেনশিয়াল ডাউনলোডের অংশ হিসেবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্য লাইভ এসেনশিয়াল ডাউনলোড করে নিন।
সফটওয়্যার কম্প্যাটিবিলিটি
ব্যবহারকারীর চাহিদার প্রতি লক্ষ রেখে অপারেটিং সিস্টেমসহ অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো নিয়মিতভাবে উন্নত থেকে উন্নতর করা হয় এবং উন্মোচন করা হয় নতুন ভার্সন। আর সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন থেকেই যায় পুরনো ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার নতুন আপগ্রেড করা ভার্সনের সাথে কম্প্যাটিবল হবে কি না অর্থাৎ রান করবে কি না। সাধারণত উন্নত ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামগুলো পুরনো ভার্সনে রান করে না। উইন্ডোজ ৭-এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি একই। মাইক্রোসফট তার ব্যবহারকারীর চাহিদার প্রতি বেশ সচেতন। তাই কম্প্যাটিবিলিটির বিষয়টির প্রতি মাইক্রোসফট বেশ গুরুত্ব দিয়েছে। কিছু কিছু টুল আছে যেগুলো পুরনো অ্যাপ্লিকেশন রান করাতে সহায়তা করে।
উইন্ডোজ ৭-এ এমন কাজ করতে চাইলে স্টার্টে ক্লিক করে All Programs-এ ক্লিক করুন এবং লিস্ট থেকে প্রোগ্রামের শর্টকাট খোঁজ করুন। এবার শর্টকাটে ডান ক্লিক করে প্রোপার্টিজ সিলেক্ট করুন। এরপর শর্টকাট ট্যাব সিলেক্ট করে Open File Location বাটনে ক্লিক করুন। পরবর্তী উইন্ডোতে হাইলাইট করা ফাইল যেটি ওপেন হবে সেটিই হলো এক্সিকিউটেবল ফাইল।
এরপর এতে ডান ক্লিক করে ‘Troubleshoot Compatibility’ সিলেক্ট করুন। এটি উইন্ডোজ ৭-এর কম্প্যাটিবিলিটি উইজার্ড চালু করবে। এই উইজার্ডের ধাপগুলো অনুসরণ করে দেখুন উইন্ডোজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোনো সমস্যা ডিটেক্ট এবং সমাধান করতে পারে কি না।
যদি এটি কাজ না করে, তাইলে ফাইলে ডান ক্লিক করে আবার চেষ্টা করুন। এবার প্রোপার্টিজ সিলেক্ট করে কম্প্যাটিবিলিটি ট্যাব সিলেক্ট করুন। এর ফলে আপনি বেশ কয়েকটি ম্যানুয়াল কম্প্যাটিবিলিটি অপশন পাবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সমেত্মাষজনক ফলাফল পাচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সেটিং দিয়ে চেষ্টা করতে পারেন। এবার কম্প্যাটিবিলিটি মোডের বক্সে টিক দিন এবং ড্রপডাউন মেনু থেকে যথাযথ উইন্ডোজের কাঙিক্ষত ভার্সন বেছে নিন।
ভিস্তা ড্রাইভার ইনস্টল করা
কমপিউটারের অভ্যন্তরের গ্রাফিক্স কার্ড বা পিসির সাথে সংযুক্ত কোনো কোনো ডিভাইস, যেমন হার্ডডিস্ক কখনও কখনও কাজ করতে নাও পারে যথাযথ উইন্ডোজ ৭ ড্রাইভার না থাকার কারণে। কেননা, এখন পর্যন্ত অনেক হার্ডওয়্যার প্রস্ত্ততকারক উইন্ডোজ ৭-এর উপযোগী ড্রাইভার তৈরি করেনি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ভিস্তার ড্রাইভার এ কাজগুলো করতে পারে। এটি বিশেষ করে তাদের জন্য খুবই উপযোগী, যারা এক্সপি থেকে উইন্ডোজকে উন্নতর ভার্সনে আপগ্রেড করছেন।
ভিস্তার ড্রাইভার ইনস্টল করার জন্য ডিভাইস প্রস্ত্ততকারকের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার পণ্যের জন্য সর্বশেষ ভার্সনের ড্রাইভারটি ডাউনলোড করে নিন অথবা সাপোর্ট সেকশনের সহায়তা নিন।
আপনার কাঙিক্ষত ফাইলটি ডাউনলোড করে নিন ডেস্কটপে। যদি জিপ ফাইল হিসেবে থাকে, তাহলে ডাবল ক্লিক করুন এক্সট্রাক্ট করার জন্য। অনেক ড্রাইভার এক্সিকিউটেবল ফাইল হিসেবে থাকে, যা ডাবল ক্লিক করে রান করা যায়। উইন্ডোজ ৭-এর কম্প্যাটিবিলিটি অপশন সঠিকভাবে ইনস্টল করার জন্য যদি এটি ব্যবহার হয়, তাহলে কম্প্যাটিবিলিটি মোডের অন্তর্গত অপারেটিং সিস্টেম মেনু থেকে ভিস্তা সিলেক্ট করুন।
যদি কোনো এক্সিকিউটেবল ফাইল না থাকে, তাহলে স্টার্টে ক্লিক করে কমপিউটারে ডান ক্লিক করে ম্যানেজ সিলেক্ট করতে হবে। এবার বাম দিকের কলামের ডিভাইস ম্যানেজারে ক্লিক করুন। এরপর ডান দিকের প্যানে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসে ডান ক্লিক করে Update Driver Software অপশন সিলেক্ট করুন। এবার উইজার্ড থেকে নিশ্চিত করুন যে আপনি ডাউনলোড হওয়া ভিস্তার ড্রাইভারের লোকেশন ঠিক করে দিয়েছেন।
অ্যাকশন সেন্টারসহ উইন্ডোজ ৭-এর সমস্যা ডায়াগনাস করা
কমপিউটারে উদ্ভব হওয়া অনেক সমস্যা কোনো কারণ ছাড়াই আবির্ভূত হয়। এ লেখায় উল্লিখিত সমস্যাগুলোর সাথে কোনো যোগসূত্র নাও থাকতে পারে। হতে পারে আপনার সমস্যাটি পিসি থেকে উদ্ভূত শব্দ, পারফরম্যান্স ধীরগতির বা র্যান্ডম ক্র্যাশ করা, যা অবশ্য কোনো কিছুতে আরোপ করা যায় না। এমন অবস্থায় সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করতে পারেন উইন্ডোজ ৭-এর নিজস্ব ট্রাবলশুটিং টুলকিট।
এজন্য প্রথমে চেক করে দেখুন নতুন অ্যাকশন সেন্টার। এই টুল উপস্থাপন করা হয় নোটিফিকেশন এরিয়ার একটি সাদা ফ্ল্যাগ আইকন দিয়ে। এটি নিচে স্ক্রিনের ডান দিকে থাকে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু রিসলভ করার প্রয়োজন আছে কি না, তা দেখার জন্য একবার ক্লিক করুন। পিসির বর্তমান অবস্থা জানার জন্য ঙঢ়বহ অপঃরড়হ ঈবহঃবৎ লিঙ্কে ক্লিক করুন। এরপর পরবর্তী সময়ে ওপেন হওয়া স্ক্রিনে আপনার পিসির সিকিউরিটি ও পরিচর্যার বর্তমান অবস্থা জানতে পারবেন সংশ্লিষ্ট ডাউন অ্যারোতে ক্লিক করে। যেসব বিষয় খুব জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দেয়া দরকার, সেগুলো লাল রংয়ে ফ্ল্যাগ হবে এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হাইলাইট হবে কমলা রংয়ে।
উইন্ডোজ ৭ ট্রাবলশুটার
কেনো সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে সে সম্পর্কে কোনো কিছু সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান না হলে আপনার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ হবে উইন্ডোজ ট্রাবলশুটার টুল ব্যবহার করা। এই টুলে অ্যাক্সেস করার জন্য অ্যাকশন সেন্টারের ট্রাবলশুটিং লিঙ্কে ক্লিক করুন। এটি উইন্ডোজের আগের ভার্সনের একই ফিচারের মতো নয়। বরং বলা যায়, উইজার্ডভিত্তিক এ টুলটি যথেষ্ট সহায়ক। এটি আবিষ্কৃত সমস্যাগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধান করতে পারে। এটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত। যেমন প্রোগ্রাম, হার্ডওয়্যার অ্যান্ড সাউন্ড, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড ইন্টারনেট, অ্যাপেয়ারেন্স অ্যান্ড পার্সোনালাইজেশন এবং সিস্টেম অ্যান্ড সিকিউরিটি। এবার সবচেয়ে উপযুক্ত ক্যাটাগরিতে ক্লিক করুন এবং প্রয়োজনীয় তথ্যসংবলিত প্রম্পট অনুসরণ করুন।
সেইফ মোড দিয়ে সমস্যা সমাধান করা
কমপিউটারের সুইচ অন করুন। যখন প্রাথমিক বায়োস স্ক্রিন আবির্ভূত হবে, তখন ঋ৮ বাটনে প্রেস করুন। এর ফলে আপনার সামনে আবির্ভূত হবে Advanced Boot Option স্ক্রিন। এবার সেইফ মোড অপশন হাইলাইট করুন অ্যারো কী ব্যবহার করে এবং এন্টার চাপুন।
সেইফ মোড চালু হতে কিছু সময় নেবে। এ সময় আপনাকে মূলত লগইন করতে হবে অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের পাসওয়ার্ড দিয়ে। এর ফলে সীমিত ভার্সনের ডেস্কটপ আবির্ভূত হবে। এ সময় কিছু কিছু ফিচার, যেমন ইন্টারনেট অ্যাক্সেস ডিজ্যাবল থাকবে, তবে আপনি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম চালু করতে এবং পিসি স্ক্যান করতে পারবেন।
সেইফ মোড দিয়ে আপনি ত্রুটিপূর্ণ ড্রাইভার অপসারণ করতে পারবেন। এ কাজটি করার জন্য স্টার্টে ক্লিক করে কমপিউটারে ডান ক্লিক করুন এবং সিলেক্ট করুন ম্যানেজ অপশন। বাম দিকের টাস্ক প্যানে ডিভাইস ম্যানেজার হাইলাইট করুন এবং সিলেক্ট করুন আনইনস্টল অপশন। আপনি ইচ্ছে করলে সিস্টেম রিস্টোর ব্যবহার করতে পারেন
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com