মাইক্রোসফটের মতে এরা এ পর্যন্ত যত নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে তার মধ্যে উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ হচ্ছে সবচেয়ে অ্যাডভান্সড এবং নিরাপদ সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম। মাইক্রোসফটের এ দাবির পেছনে অবশ্য কারণও আছে। উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ এমন কিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যা ছোট বা বড় যেকোনো কোম্পানির সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। এবার উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর এ ধরনের কিছু ফিচার এখানে তুলে ধরা হয়েছে।
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর নতুন অবয়ব
সিস্টেমে উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ ইনস্টল করা মাত্রই এর নতুন অবয়ব আপনার নজর কাড়বে। উপলব্ধি করতে পারবেন এটি আগের উইন্ডোজ সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম থেকে আলাদা। সার্ভার ২০০৮-এ উইন্ডোজ ইন্টারফেস অন্যান্য সার্ভার সফটওয়্যার ভার্সন থেকে বেশ আলাদা হওয়ায় উইন্ডোজ সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর প্রথম প্রথম একটু হোঁচট খেতে পারে।
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ সিস্টেমে ইনস্টল করা মাত্রই যে বিষয়টি সবার নজরে আসতে পারে তাহলো, Start মেনুতে Run কমান্ডটি নেই। এক্ষেত্রে আপনাকে Start মেনুতে গিয়ে Start Search এলাকায় ক্লিক করলে রান কমান্ড আসবে যেখানে প্রয়োজনীয় কমান্ড টাইপ করে তা এক্সিকিউট করতে পারবেন।
এছাড়া উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর কন্ট্রোল প্যানেল থেকে add/remove programs আইকন অপসারণ করা হয়েছে। ফলে ব্যবহারকারীকে প্রথমে একটু হোঁচট খেতে হতে পারে।
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর বাড়তি নিরাপদ ফিচার
মাইক্রোসফটের ভাষ্যমতে উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ হচ্ছে এ পর্যন্ত তৈরি সব সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ সিস্টেম। এ দাবির সমর্থনে এখানে উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ বেশ কিছু নিরাপত্তা ফিচার তুলে ধরা হয়েছে :
০১. অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি ফেডারেশন সার্ভিস :
এ ফিচারটির কারণে সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর খুব সহজেই ফেডারেশন পার্টনারদের মধ্যে ট্রাস্ট রিলেশনশিপ স্থাপন করতে পারে।
০২. রিড-অনলি ডোমেইন কন্ট্রোলারস :
নেটওয়ার্ক সিস্টেমে ডোমেইন কন্ট্রোলারের প্রয়োজন এমন পরিবেশে রিড-অনলি ডোমেইন কন্ট্রোলারস ব্যবহার হবে। তবে এসব ক্ষেত্রে সার্ভারের ফিজিক্যাল সিকিউরিটি নিশ্চিত করা যাবে না।
০৩. সার্ভার কোর ইনস্টলেশন :
এটি উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর জন্য নতুন একটি ইনস্টলেশন পদ্ধতি, যা আপনাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া উইন্ডোজ নেটওয়ার্ক সার্ভিস ইনস্টল করার সুযোগ করে দেয়। এ ধরনের সার্ভিসের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডিএইচসিপি, ডিএনএস, ফাইল শেয়ারিং এবং ডোমেইন কন্ট্রোলার ফাংশন। সার্ভার কোর ইনস্টলেশন সিলেক্ট করলে অপারেটিং সিস্টেমে তখন গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস পাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে ডস প্রম্পটে সব কমান্ড ব্যবহার করতে হবে। এটি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাছে নতুন এ নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমে বড় পরিবর্তন বলে মনে হবে।
০৪. পাসওয়ার্ড এবং অ্যাকাউন্ট লকআউট পলিসি উন্নয়ন :
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমের এ ফিচারটি একটি একক ডোমেইনে একাধিক পাসওয়ার্ড এবং অ্যাকাউন্ট পলিসি রাখার সুযোগ দেয়।
০৫. উইন্ডোজ বিটলকার ড্রাইভ এনক্রিপশন :
এ ফিচারটি একটি সার্ভারের সব হার্ডড্রাইভকে এনক্রিপ্ট করার সুযোগ দেয়। এর ফলে কোনো কারণে যদি সার্ভার বা হার্ডড্রাইভ চুরি হয়ে গেলে ওই এনক্রিপ্টেড হার্ডড্রাইভের ডাটা কেউ দেখতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না।
নতুন এবং উন্নত ওয়েব সার্ভার ৭.০
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর ওয়েব সার্ভার আইআইএস (ইন্টারনেট ইনফরমেশন সার্ভার) ৭.০ নামে পরিচিত, যা নতুন রূপে উপস্থাপিত হয়েছে। এটি সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অ্যাপিকেশন। ওয়েব সার্ভারের আপগ্রেডেশন বা অধিকতর উন্নয়নের কারণে ওয়েব হোস্টিং ও ব্যবস্থাপনার কাজ আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়েছে (চিত্র-২)।
একই সাথে এর ইন্টারফেসেরও অনেক উন্নতি হয়েছে। এ ইউজার ফ্রেন্ডলি ইন্টারফেসের কারণে ওয়েব সার্ভারের ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা যাচ্ছে, বাড়তি নিরাপত্তা দেয়া যাচ্ছে, ওয়েব সার্ভারের সমস্যা সম্পর্কিত তথ্য জানা যাচ্ছে, সার্ভারের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্ষমতা অন্যের কাজে সহজেই হস্তান্তর করা যাচ্ছে। এ ছাড়াও আইআইএস ৭.০-এ ওয়েব সার্ভারের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দ্রুত জানতে পারা এবং তা সমাধানের কাজটি সহজেই করা যাচ্ছে।
নেটওয়ার্ক সিকিউরিটির জন্য নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস প্রোটেকশন
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস প্রোটেকশন (NAP) একটি নতুন পলিসি, যা ব্যবহার করা হলে সার্ভারে অ্যাক্সেসের আগে ক্লায়েন্টকে কতগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়। আগেই নির্দিষ্ট করা শর্তগুলো না পূরণ করলে ক্লায়েন্টকে আলাদা করে রাখা হবে অথবা তাকে সার্ভারে অ্যাক্সেস করতে দেয়া হবে না। নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস প্রোটেকশন ব্যবহার করে লোকাল ক্লায়েন্ট পিসির পাশাপাশি ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ল্যানের মাধ্যমে নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হতে চায় এমন সব হোম কমপিউটার বা ভ্রাম্যমাণ কমপিউটারের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন।
উন্নত উইন্ডোজ টার্মিনাল সার্ভিসেস
উইন্ডোজ টার্মিনাল সার্ভিসেস বা ডবিউটিএস মাইক্রোসফটের আগের নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমগুলোতেও বিদ্যমান ছিল। তবে সেগুলোর তুলনায় উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ ফিচারটি অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ টার্মিনাল সার্ভিসের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ :
০১. রিমোটঅ্যাপ :
এটি অ্যাপিকেশন প্রোগ্রামকে কোনো একটি ওয়ার্কস্টেশনের সাথে শেয়ার করার সুযোগ দেবে। এজন্য পুরো উইন্ডোজ ডেস্কটপ শেয়ার করার কোনো প্রয়োজন হবে না। সার্ভার থেকে শেয়ার করা অ্যাপিকেশনটি ক্লায়েন্ট পিসির স্টার্ট মেনু বা ডেস্কটপের সাথে একীভূত অবস্থায় থাকবে এবং সেখানে অ্যাপিকেশনের আইকন দেখা যাবে। আইকনে ক্লিক করেই অ্যাপিকেশনটি চালু করা যাবে।
০২. টার্মিনাল সার্ভিসেস গেটওয়ে :
কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে দূরে কোথাও আছেন এমন ইউজারদের টার্মিনাল সার্ভিসের সাথে যুক্ত করতে এ ফিচারটি ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে রিমোট অ্যাক্সেসের জন্য পৃথকভাবে রিমোট ভিপিএন ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না।
০৩. টার্মিনাল সার্ভিসেস ওয়েব অ্যাক্সেস :
এর ফিচারটি ব্যবহার করে রিমোট ইউজাররা শুধু একটি ওয়েব ব্রাউজারের মাধ্যমে টার্মিনাল সার্ভিসের সাথে যুক্ত হতে পারবে। যুক্ত হবার জন্য রিমোট পিসিতে রিমোট ডেস্কটপ ক্লায়েন্ট বা ভিপিএন থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। বলা যেতে পারে এ ফিচারটি উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
সার্ভার ম্যানেজারের সাহায্যে ওয়ান-স্টপ ম্যানেজমেন্ট
সার্ভার ম্যানেজার উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ একটি নতুন কনসোল, যেখানে সার্ভার ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় সব টুল বা স্ন্যাপ-ইনস একটি মাত্র জায়গাতে স্থাপন করেছে। এর ফলে সার্ভার অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের কাজ আগের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত ও সহজ হয়েছে।
উইন্ডোজ সার্ভার ভার্চুয়ালাইজেশন
এটিও উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর একটি নতুন ফিচার, যার মাধ্যমে আপনি যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমকে একটি সার্ভারে ভার্চুয়ালাইজ করতে পারেন। এর অর্থ হচ্ছে একাধিক অপারেটিং সিস্টেমের সার্ভারকে একটিমাত্র সার্ভার হিসেবে ক্লায়েন্টের কাছে উপস্থাপন করতে পারেন। ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের পিসিসমূহ মনে করবে তারা একটি মাত্র সার্ভারে অ্যাক্সেস নিচ্ছে। এর মাধ্যমে সার্ভারের ন্যূনতম রিসোর্স ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস তৈরি ও তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন। মনে করা হচ্ছে, উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর এ ফিচার ব্যাপকভাবে ব্যবহার হওয়া ভার্চুয়ালাইজেশন অ্যাপিকেশন VMware-এর একটি বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
পরিশেষে বলতে হবে, উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর অবয়ব এবং ইন্টারফেস থেকেই বুঝা যায় শুধু কার্যকারিতার দিক থেকেই নয়, এর বাহ্যিকভাবেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অনেকে এ পরিবর্তন পছন্দ করছেন, অনেকে আবার এ পরিবর্তনকে খুব একটা গুরুত্বের সাথে দেখছেন না। অনেকে মনে করছেন, সার্ভারে নতুন নতুন ফিচার যোগ করার ফলে সার্ভার ব্যবস্থাপনার কাজটি জটিল হয়েছে। তবে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে এ ফিচারগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে এবং বুঝতে হবে এর কার্যকারিতা কতটুকু গ্রহণযোগ্য। উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর নতুন ফিচারগুলো নিয়ে কতটুকু স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন, তা আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।
কজ ওয়েব
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com