লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
কী বলে মহাখালী আইসিটি ভিলেজের ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট
২০১২ সালের ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিভাগীয় পর্যায়ে সাতটি আইসিটি ভিলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর একটি মহাখালীর আইসিটি ভিলেজ। ঠিক দুই বছর পর চলতি বছরের এপ্রিলে তৈরি করা হয় এর খসড়া ফিজিবিলিটি স্টার্ডি রিপোর্ট। এ রিপোর্টটি তৈরি করে ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি’। সম্প্রতি বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয় (www.ictd.gov.bd)। ২৭৩ পৃষ্ঠার এই সুদীর্ঘ স্টাডি রিপোর্টে এই প্রকল্প সম্পর্কে আগ্রহী পাঠকেরা অনেক তথ্যই জানার সুযোগ পাবেন। কমপিউটার জগৎ-এর পাঠকদের উদ্দেশে এ রিপোর্টের একটি সার-সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। আশা করি, এ প্রতিবেদন পাঠকবর্গের জানার চাহিদা মেটাবে।
২০১২ সালের ২৬ এপ্রিলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটির (বিএইচটিপিএ) নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিভাগীয় পর্যায়ে সাতটি আইসিটি ভিলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একটি ঢাকার মহাখালীতে। অপর ছয়টি রাজশাহী, যশোর, খুলনা, সিলেট, রংপুর ও চট্টগ্রামে। এ ব্যাপারে একটি পরামর্শ সেবা চুক্তি ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত হয় বিএইচটিপিএ ও আইআইএফসি’র (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি) মধ্যে। এ চুক্তি করা হয় বাছাই করা সাইটগুলোতে ফিজিবিলিটি স্টাডি তথা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা পরিচালনার জন্য। এই পরামর্শ সেবা চুক্তি অনুসারে আইআইএফসি মহাখালী আইসিটি সম্পর্কিত ফিজিবিটি স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করেছে।
এই আইসিটি ভিলেজ প্রকল্পের লক্ষ্য সারাদেশে জ্ঞানভিত্তিক শিল্প গড়ে তোলা, বিশেষ করে সফটওয়্যার ও আইটি এনাবলড সার্ভিস গড়ে তুলে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান সৃষ্টির মাধ্যমে ‘রূপকল্প ২০২১ : ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর লক্ষ্যগুলোর বাস্তবায়ন। বাংলাদেশ সরকার চায় মহাখালীতে আইটি পার্ক গড়ে তোলার জন্য মৌল অবকাঠামো সৃষ্টি করতে এবং এই পার্ক গড়ে তোলার জন্য ৪৭ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই জমি ব্যবহার হবে বিশ্বমানের ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে, যা হবে আইটি/আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রিজের জন্য সহায়ক। এই আইসিটি ভিলেজ দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে।
বাংলাদেশে আইসিটি শিল্প
আইটি/আইটিইএস হচ্ছে বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান শিল্পগুলোর একটি। বাংলাদেশের স্থানীয় আইটি/আইটিইএস শিল্প অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশে ৮০০ নিবন্ধিত সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানি রয়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস তথা বেসিস সূত্র মতে, আরও কয়েকশ’ অনিবন্ধিত ক্ষুদ্র কোম্পানি এ খাতে রয়েছে। বেসিস জরিপ মতে, মোট ৮০ কোটি ডলারের আইটি/আইটিইএস ইন্ডাস্ট্রির সফটওয়্যার শিল্পের অবদান ৩৯ শতাংশ। সম্প্রতি ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে জোরালো প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। এ খাতে এ দেশের তরুণ প্রজন্ম সরাসরি তাদের গ্রাহকদের সেবা ও পণ্য সরবরাহ করছেন।
এসব পেশাজীবী মূলত কাজ করেন তাদের ঘরে বসে। এরা কোনো নিবন্ধিত কোম্পানির মালিক নন। বেসিসের দেয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১০ হাজার ফ্রিল্যান্স পেশাজীবী রয়েছেন।
সফটওয়্যার ও আইটি সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রির জন্য প্রভাবশালী বিজনেস সোর্স হচ্ছে স্থানীয় বাজার। বেসিস সদস্য কোম্পানির ৬৩ শতাংশই এককভাবে স্থানীয় বাজারের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট মতে, বিগত কয়েক বছর ধরে এ খাতে অব্যাহতভাবে ২০-৩০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটছে। বিশ্ব আইটি/আইটিইএস বাজারও অব্যাহতভাবে বিকশিত হচ্ছে। এর বিশালতর বাজারের কারণে বাংলাদেশের সামনে এই বাজার দখল করার অমিত সম্ভাবনা বিদ্যমান। আইসিটি খাতে বিনিয়োগ আসে সরকারি খাত, এফডিআই ও বেসরকারি উৎস থেকে। সরকারি খাতের বিনিয়োগ আসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে। অপরদিকে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ আসে বেসরকারি ব্যাংক ও যৌথ উদ্যোগের কোম্পানি থেকে। আইসিটি খাতের এফডিআই প্রধানত আসে টেলিফোন ও মোবাইল শিল্পে।
বাংলাদেশ আইসিটি খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধানত জোর দেয়া হয় একটি ব্যাপকভিত্তিক মাস্টার প্ল্যানের ওপর। রূপকল্প ২০২১ ও ২০০৯ সালের আইসিটি নীতিমালার কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে এই মাস্টার প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। প্রস্তাবিত কাঠামোর কেন্দ্রে থাকছে ন্যাশনাল ইনফরমেশন অ্যান্ড নলেজ সিস্টেম (এনআইকেএস), যা গ্রাম ও শহরের মানুষের সেবা জোগানোর একটি প্ল্যাটফরম।
প্রকল্প এলাকা
মহাখালী-লালশরাই-করাইল মৌজায় বিটিটিবি’র (২০০৮ সালে থেকে বিটিসিএল নামের কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়) মালিকানাধীন ১৭০.৪ একর জমি থেকে ৯০ একর জায়গা পিডব্লিউডিকে বরাদ্দ দেয়া হয়। এই জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সরকারি ভবন নির্মাণের উদ্দেশ্যে। তৎকালীন সরকার একই স্থানে বিটিটিবি’র তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বসিত্ম গড়ে তোলার অনুমোদনও দিয়েছিল। ক্রমান্বয়ে তা পরিণত হয় করাইল বসিত্মতে। বর্তমানে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বসিত্মগুলোর একটি। ১৯৯৯ সালে পিডিবি’র উল্লিখিত ৯০ একর জমির মধ্য থেকে ৪৭ একর জমি সেখানে একটি আইসিটি ভিলেজ গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে দেয়া হয়। জায়গাটি ঢাকা শহরের মধ্যেই অবস্থিত। এটি অনেকটা একটি উপদ্বীপের মতো, যার তিন দিক ঘিরে আছে বনানী লেক। এর উত্তর দিকে রয়েছে বনানী ৫ নম্বর সড়ক। পূর্ব দিকে গুলশান-বনানী লেক। দক্ষিণ দিকে রয়েছে ব্র্যাক সেন্টার। আর পশ্চিম দিকে আছে টিঅ্যান্ডটি কলোনি ও বিটিসিএল স্যাটেলাইট অফিস। মহাখালী আইসিটি ভিলেজের প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ ৪৭ একর। এর একাংশ বর্তমানে করাইল বসিত্মর দখলে। এই বসিত্ম আইসিটি ভিলেজ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ সাইটে প্রবেশ করা যায় দুটি পথে : পায়ে চলা পথে ও নৌযান পথে। এর প্রধান প্রবেশ পথ প্রকল্পের দক্ষিণের বনানী ৫ নম্বর সড়ক দিয়ে। বাকি পথগুলো হাঁটার সঙ্কীর্ণ পথ, যা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ দিয়ে স্থানীয় আদিল রোডের সাথে সংযুক্ত। দক্ষিণ দিকে রয়েছে বনানী লেক। এদিক দিয়ে ছোট ছোট যাত্রীবাহী নৌকায় প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করা যায়। এই আদিল রোড ও নৌকা-পথ সংযুক্ত বীরউত্তম এ কে খন্দকার রোডের সাথে, শেষ পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের সাথে। প্রকল্প এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্ব ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) অধীন গুলশান এসঅ্যান্ডডি’র। সবচেয়ে কাছের ইলেকট্রিসিটি সাবস্টেশনটি (৩৩/১১ কেভি) বনানী ১ নম্বর সড়কে, প্রকল্প এলাকা থেকে ১.৩ কিলোমিটার দূরে। এর পরের দ্বিতীয় কাছের সাবস্টেশনটি (৩৩/১১ কেভি) আছে গুলশান ১ নম্বরে। সেটি প্রকল্প এলাকা থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে।
বাজার জরিপ
মহাখালী আইসিটি ভিলেজ গড়ে তোলার জন্য বাজার চাহিদা ও আইসিটি শিল্পের ধারা-প্রবণতা জানার জন্য আইআইএফসি নামে ঢাকাভিত্তিক একটি আইসিটি কোম্পানির ওপর জরিপ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়। বেসিসের রয়েছে ঢাকাভিত্তিক ৮০০ সদস্য কোম্পানি। আইআইএফসি এই তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ঢাকা আইসিটি কোম্পানির সংখ্যা ধরে নেয়। জরিপের উদ্দেশ্য, ৫০টি কোম্পানিকে বেছে নেয়া হয়। অর্থাৎ মোট কোম্পানির ৬ শতাংশকে জরিপের আওতায় আনা হয়। এর আইআইএফসি ৫-৬ জনকে নিয়ে একটি জরিপ দল গঠন করে। এই টিম বাছাই করা ৫০ কোম্পানির কর্মকর্তাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। এসব কোম্পানির মধ্যে যেমনি রয়েছে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি, তেমনি রয়েছে হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। সবগুলো কোম্পানিই ঢাকাভিত্তিক। আইসিটি কোম্পানি ছাড়াও জরিপ দল অনলাইন জরিপ ফরমের মাধ্যমে ২২ জন ফ্রিল্যান্সারের ওপরও জরিপ চালায়। জরিপের জন্য কোম্পানি বেছে নিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত কোম্পানিকে বিবেচনায় আনে। এগুলো মিশ্র ধরনের যেসব ব্যবসায়ের সাথে জড়িত, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে : সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও সার্ভিস, বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং, আইসিটি ট্রেনিং, হার্ডওয়্যার বিক্রি ও সেবা এবং অন্যান্য।
জরিপে পাওয়া তথ্য মতে, ঢাকাভিত্তিক কোম্পানিগুলোর ২০ শতাংশের বার্ষিক আয়ের মাত্রা দেড় লাখ ডলারে বা ১ কোটি ২০ লাখ টাকার নিচে। ৩১ শতাংশের আয় টাকার হিসাবে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা। আর ১৪ শতাংশ কোম্পানির আয়ের মাত্রা সাড়ে ৬ লাখ থেকে সাড়ে ১২ লাখ ডলার, টাকার হিসাবে ৫ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা। কিছ কোম্পানির আয় সাড়ে ১২ লাখ থেকে ৩০ লাখ ডলার, যা টাকার অঙ্কে ১০ কোটি থেকে ২৫ কোটি টাকা। খুব সামান্য কয়টি কোম্পানির আয়ই ৩০ লাখ ডলার বা ২৫ কোটি টাকার ওপর।
অফিসের জন্য জায়গা ভাড়ার হার ঢাকায় প্রতি বর্গফুট ৫৪ টাকা, যা তুলনামূলকভাবে বেশি। বিদ্যুৎ বিল ও জ্বালানি খরচও তুলনামূলকভাবে বেশি, তেমনই ব্যান্ডউইডথের খরচও বেশি। এর কারণ, রাজধানী শহরের এসব সার্ভিসের চাহিদা বেশি। জরিপ দল দেখতে পেয়েছে- আইসিটি কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য ও সেবার মান বাড়াতে আগ্রহী। এদের প্রত্যাশা তাদের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ। আইসিটি কোম্পানিগুলোর ওপর এদের প্রচ- আস্থা। এরা প্রবলভাবে আগ্রহী একটি আইসিটি ভিলেজে চলে যাওয়ার ব্যাপারে।
জায়গার চাহিদা প্রশ্নে বেশিরভাগ কোম্পানির চাহিদা ২০০০ বর্গফুট কিংবা তারচেয়েও বেশি। ঢাকায় আইসিটি কোম্পানিগুলোর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিদ্যুতের প্রাপ্যতা। আর্থিক প্রণোদনা, সস্তায় ভাড়া, কম খরচে জমি, নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সংযোগ ও নিরাপদ ব্যবসায় পরিবেশ হচ্ছে পরবর্তী অগ্রাধিকার সেসব কোম্পানির, সেগুলো আইসিটি ভিলেজে ব্যবসায় করতে আগ্রহী।
তিনটি নিমণ পর্যায়ের চাহিদা ছিল : উপযুক্ত শিক্ষিত পেশাজীবী/সণাতকের প্রাপ্যতা, একটি শক্তিশালী গ্রাহকভিত্তি ও মূল্য সংযোজন সেবা (মার্কেটে প্রবেশের সুযোগ, ব্যবসায় পরিকল্পনা ও পরিচালনাগত সহায়তা এবং সম্পদ সুবিধা)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সহায়ক সুযোগ (অ্যানাসিলারি ফ্যাসিলিটি) হচ্ছে গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এর পরবর্তী চাহিদা সম্মেলন ভবন, সিঙ্গল উইন্ডো সার্ভিস প্রভিশন তথা একস্থানকেন্ত্রিক সেবার সুযোগ এবং সপ্তাহের সাত দিনের ২৪ ঘণ্টা কারিগরি সহায়তা এবং সেই সাথে থাকতে হবে ক্যাফেটারিয়া ও রেসেত্মারাঁ সুবিধাও। এগুলোকেও গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকাভিত্তিক কোম্পানিগুলোর জন্য আইসিটি ভিলেজে ফ্রিল্যান্সারদের জন্য নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট কানেকশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য। এর পরে তাদের চাহিদার তালিকায় আছে শক্তিশালী গ্রাহকভিত্তির প্রাপ্যতা, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ও আর্থিক প্রণোদনাসহ কম ভাড়া ও কম খরচে জায়গার প্রাপ্যতা, নিরাপদ ব্যবসায় পরিবেশ ও মূল সংযোজন সেবার প্রাপ্যতা- অর্থাৎ বাজারে প্রবেশের সুযোগ, ব্যবসায় পরিকল্পনা, পরিচালনা ও সহায়তা এবং সম্পদ সুবিধা)।
টেকনিক্যাল প্ল্যানিং ও ডিজাইন
প্রকল্প এলাকাটির অবস্থান গুলশান-মহাখালী সড়কের ঠিক পেছনে। এই সড়কটি ব্র্যাকইন বিল্ডিংয়ের কাছের লেকের ওপর সেতু বরাবর চলে গেছে। এই পয়েন্ট থেকে বর্তমানে শুধু নৌকা দিয়ে প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করা যায়। মূল সড়ক থেকে লেক বরাবর প্রকল্প এলাকায় সহজে প্রবেশের জন্য একটি রোড ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্প এলাকায় জমি তুলনামূলকভাবে উঁচু। ফলে সেখানে মাটি ভরাট তেমন লাগবে না। তা সত্ত্বেও সামান্য পরিমাণ নিচু জমির উন্নয়নের প্রয়োজনে মাটি ভরাট করতে হবে।
মোট ৪৭ একরের প্রকল্প এলাকার মধ্যে লেক এরিয়া আড়াই একর। অবশিষ্ট ৪২.৫০ একর জমিকে ৬টি জোনে ভাগ করা হয়েছে : আইসিটি বিজনেস জোন- ১৮ একর, হোটেল বিজনেস জোন- ৩.২৫ একর, কনভেনশন ও ট্রেনিং সেন্টার জোন- ২ একর, রেসিডেন্সিয়াল জোন- ১৬.৫০ একর, রিক্রিয়েশনাল জোন- ১ একর এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ জোন- ১.৭৫ একর।
এসব জোনে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী ভবন গড়তে হবে, তার উল্লেখ রয়েছে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টে। তবে ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত এই উল্লেখ শুধুই জ্ঞাপনমূলক বা ইনডিকেটিভ। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রয়োজনানুসারে নেবে বিএইচটিপিএ ও বাছাই করা বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। আইসিটি বিজনেস জোনে দুটি মাল্টি টেন্যান্ট বিল্ডিং, হোটেল বিজনেস জোনে দুটি পাঁচ তারকা হোটেল বিল্ডিং, কনভেনশন ও ট্রেনিং সেন্টার জোনে একটি কনভেনশন সেন্টার ও দুটি ট্রেনিং সেন্টার ভবন, রেসিডেনশিয়াল জোনে দুটি ডরমিটরি বিল্ডিং এবং এ ও বি ব্লকে চারটি করে আটটি আবাসিক ভবন, রিক্রিয়েশনাল জোনে একটি এমফিথিয়েটার ও একটি বোট ক্লাব বিল্ডিং এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং ও একটি গেট হাউস এবং রিসিপশন বিল্ডিং নির্মাণের কথা উল্লেখ রয়েছে। কোন ভবন কত তলা হবে, ভবন কয়টি হবে, প্রতিতলায় ফ্লোর এরিয়া কত হবে, মোট ফ্লোর এরিয়া কত হবে- তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে (ছক : ০১)।
প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য রিসেটেলমেন্ট/রিলোকেশনের ৬টি সম্ভাব্য বিকল্পের কথা তুলে ধরা হয়েছে এই স্টাডি রিপোর্টে।
বিনিয়োগ মডেল
আইসিটি ভিলেজে অর্থায়ন চলতে পারে সরকারি তহবিল থেকে অথবা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) তথা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। সরকারি তহবিল আসতে পারে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে কিংবা দাতাদের তহবিল থেকে। আইসিটি ভিলেজের পুরোটাই গড়ে তোলা যেতে পারে পিপিপি’র মাধ্যমে কিংবা শুধু এর ‘ওঅ্যান্ডএম’র জন্য।
একটি প্রাইভেট অপারেটরকে সংশ্লিষ্ট করা একটি স্টেপ বাই স্টেপ প্রসেস। প্রাইভেট অপারেটর বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয় বিএইচটিপিএ’র আরএফকে তথা রিকুয়েস্ট ফর কোয়ালিফিকেশনের মধ্য দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টার্ডি চূড়ান্ত করার পর বিপিএইচটিএ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে অংশ নেয়ার জন্য কোয়ালিফিকেশনে স্টেটমেন্ট দাখিলের আমন্ত্রণ জানিয়ে পাবলিক নোটিস দেবে। সেখান থেকে কোয়ালিফিকেশন স্টেটমেন্ট যাচাই-বাছাই করে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টরদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হবে। অনুমোদিত এই সংক্ষিপ্ত তালিকা পাওয়ার পর টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
পূর্ব যোগ্যতাসম্পন্ন প্রাইভেট অপারেটরদের মধ্য থেকে সবচেয়ে সমেত্মাষজনক প্রাথী বাছাই ও তাদের যোগ্যতার অবস্থান নির্ণয়ের জন্য আরএফপি (রিকুয়েস্ট ফর প্রপোজেল) ইস্যুর মাধ্যমে আরএফপি ইস্যু করা হবে। বাছাই করা প্রাইভেট অপারেটর বিএইচটিপিএ’র সাথে চুক্তিতে যাবে। বিএইচটিপিএ প্রাইভেট অপারেটরকে জোগান দেবে লেআউট ও কনসেপচ্যুয়াল ডিজাইন। চূড়ান্ত ইনভেস্টর বাছাই হবে প্রস্তাব মূল্যায়ন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে।
আর্থিক বিশেস্নষণ
ফিন্যান্সিয়াল মডেল তৈরি করা হয়েছে পিপিপি মডেলের আওতায় পিপিপি পারস্পেকটিভের ওপর ভিত্তি করে। পিপিপি মডেলের আওতায় পিপিপি ইনভেস্টর একটি পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষর করবে বিএইচটিপিএ’র সাথে। এই চুক্তির আওতায় এটি আইসিটি বিজনেস জোন নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এর সাথে অন্তর্ভুক্ত থাকবে মাল্টি টেন্যান্ট বিল্ডিং নির্মাণ ও অভ্যন্তরীণ সড়ক, নর্দমা ইত্যাদি নির্মাণও। জোন ২ থেকে জোন ৫-এর কন্ট্রাক্ট আলাদা চুক্তির মাধ্যমে বিএইচটিপিএ দিতে পারে অন্যান্য পিপিএ ইনভেস্টরকে। ছয় নম্বর জোন নির্মাণ করবে বিএইচটিপিএ সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে। এ ছাড়া আইসিটি ভিলেজের রেগুলেশনের দায়িত্ব থাকবে বিএইচটিপিএ’র হাতে। আইসিটি বিজনেস জোনের ৩০ তলা ভবন দুটি নির্মিত হবে দুই পর্যায়ে। স্টাডি রিপোর্টে আর্থিক বিশেস্নষণের সুদীর্ঘ বিষয় রয়েছে, যা উল্লেখের সুযোগ এখানে একেবারেই নেই।
অর্থিক লাভ
আশা করা হচ্ছে, শুধু দুটি মাল্টি টেন্যান্ট বিল্ডিং নির্মাণের পর মহাখালী আইসিটি ভিলেজ ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে। অনুমিত হিসাব মতে, এই দুটি ভবনে ১,৩১৪টি ইউনিটের স্থান সঙ্কুলান হবে। অপশন সি কনসেশন পিপিপি মডেলের আওতায় পিপিপি ইনভেস্টররা ১৬ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবেন মাল্টি টেন্যান্ট বিল্ডিং থেকে ৩০ বছর সময়ে। জীবনযাপনের মানোন্নয়নের কথা বাদ দিলেও রিসেটেলমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত সমাজকে সুযোগ করে দেবে উন্নততর আবাসন, অবকাঠামো ও সেবার। সোশ্যাল রিসেটেলমেন্ট প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের বসিত্ম থেকে ইকোনমি হাউসিংয়ের সুযোগ করে দেবে, যাতে এরা পাবে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, নর্দমা ব্যবহারের; অধিবাসীদের অ্যাপার্টমেন্টের সুযোগ করে দেবে। এরা নানা অপশনের যেকোনো একটি ব্যবহার করে ১৫৪৫ জন বাড়ির মালিক পাবেন ১৫৪৫টি ফ্ল্যাট। মডেল সি তথা কনসেশন পিপিপি মডেলের আওতায় বিএইচটিপিএ রয়েলটি হিসেবে পিপিপি ইনভেস্টরদের কাছ থেকে প্রথম ১০ বছরে পাবে ৩৫.৬০ কোটি টাকা এবং ৩০ বছর সময়ে পাবে ৩৫৮.৩০ কোটি টাকা। মডেল সি তথা ভিজিএফসহ (ভায়েবিলিটি গ্যাপ ফান্ড) পিপিপি কনসেশন মডেলের আওতায় বিএইচপিটিএ পিপিপি ইনভেস্টরের কাছ থেকে রয়েলটি হিসেবে প্রথম ১০ বছরে পাবে ৩৫৬০ কোটি টাকা এবং ৩০ বছরে পাবে ১৩৯৩.২০ কোটি টাকা। মডেল ই তথা লিজহোল ট্র্যান্সফার মডেলের আওতায় বিএইচটিপিএ প্রথম ১০ বছরে রয়েলটি পাবে ২১৭.৫০ কোটি টাকা। অর্থনৈতিক বিশেস্নষণে দেখা গেছে, সরকার মোটামুটি হিসেবে ৩০ বছর সময়ে এ থেকে কর হিসেবে পাবে ৪৬০০ কোটি টাকা। অপশন সি’র আওতায় বিএইচটিপিএ সরকার পরিচালনা করবে জমি উন্নয়নের কাজ ও অফসাইট ইনফ্রাস্ট্রাকচার। বিএইচটিপিএ করাইল এলাকার অধিবাসীদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব বহন করবে। ৩০ বছরের কনসেশন পিরিয়ড পার হলে পিপিপি ইনভেস্টর ডেপ্রিসিয়েটেড ভ্যালু হিসেবে জমি ও ফ্যাসিলিটিগুলো বিএইচপিটিএ’র কাছে হস্তান্তর করবে। ডি অপশনের আওতায় সোশ্যাল রিসেটেলমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিপিপি ইনভেস্টরের মাধ্যমে অনসাইট রিসেটেলমেন্টে বিএইচটিপিএ পাবে ৫,১৪৮টি ফ্ল্যাট, যার আবাসিক সম্পদমূল্য ৯৫০.২০ কোটি টাকা। এছাড়া বিএইচটিপিএ পাবে ৩৪৭টি দোকান, যার বাণিজ্যিক সম্পদমূল্য ৩১৬.৭০ কোটি টাকা। অনুমিত হিসাব মতে, বিএইচটিপিএ বছরে ১৮.৫০ কোটি টাকা পাবে ফ্ল্যাট ভাড়া থেকে এবং ৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাবে বাণিজ্যিক স্থানের ভাড়া থেকে। অতএব সোশ্যাল রিসেটেলমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন হলে তা বিএইচটিপিএ’র জন্য বছরে ২৩.৫০ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
পরিবেশগত ও সামাজিক বিশেস্নষণ
বিভিন্ন ভবন নির্মাণ, উৎপাদন, পরিচালনা, আইসিটি পণ্য, যন্ত্রপাতি ও নেটওয়ার্ক সাজসরঞ্জামের বর্জ্য ইত্যাদির মাধ্যমে আইসিটি একটি প্রভাব ফেলছে পরিবেশের ওপর। তা সত্ত্বেও আইসিটি পথ করে দেয় পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব উপশমের এবং কার্যকর এনার্জি ব্যবহারের। যেমন- স্মার্ট এনার্জি সেভিং বিল্ডিং ও সুপরিকল্পিত টেলিফোন কর্মকা- এর প্রমাণ। মহাখালী আইসিটি ভিলেজকে ওরেঞ্জ বি ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর্যায়ের নির্মাণ সময়ে পরিবেশের ওপর এর প্রভাবের কারণে। আর বিশ্বব্যাংক অপারেশন পলিসি অনুসারে ফেলা যায় ক্যাটাগরি বি-এ। অতএব এই প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজন আইইই।
এনভায়রনমেন্ট ক্লিয়ারেন্স
তথ্যপ্রযুক্তি তথা জীবনের সব স্তরে কমপিউটারের ব্যবহার অপরিমেয় অর্থনৈতিক উপকার বয়ে আনে। এরপরও অপারেশন পর্যায়ে এর ক্ষতিকর প্রভাবকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। প্রায়ই দেখা যায়, এর পরিবেশগত নৈতিবাচক প্রভাবের ওপর নজর দেয়া হয় না। আইসিটি পণ্য উৎপাদন, ব্যবহার ও কমপিউটার বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেয়া ইত্যাদি প্রতিটি স্তরে এর ক্ষতিকর প্রভাব আছে। অতএব কমপিউটার জীবনচক্রের প্রতিটি স্তরের ওপর নজর রাখা এবং প্রতিটি স্তরকে জানা-বোঝার প্রয়োজন আছে। আইসিটি থেকে উৎপন্ন ই-বর্জ্য পরিবেশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তেমনি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে মানব স্বাস্থ্যের ওপরও। অতএব তাগিদ হচ্ছে, বিষয়টি মোকাবেলার জন্য পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। এ ধরনের একটি বড় মাপের ও জটিল প্রকল্পের স্বাভাবিক পরিবেশগত প্রভাব থাকে। যেমন- মাটি, পানি, ধুলোবালি, শব্দদূষণ, যান চলাচল ইত্যাদির বিরূপ প্রভাব। এসবের বেশিরভাগ প্রভাবকেই এড়ানো সম্ভব কিংবা প্রতিকারের পদক্ষেপ নিয়ে এগুলো মোকাবেলা সম্ভব।
যেহেতু প্রকল্প এলাকার একটি অংশ করাইল বসিত্মর দখলে, অতএব এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসন তথা নতুন করে বসবাসের সুযোগ দেয়ার কাজটি হতে পারে বড় ধরনের একটি সামাজিক চ্যালেঞ্জ। সাইট তৈরির সময় কড়াইলবাসীকে উচ্ছেদ করতে হবে এবং তাদের অন্য কোথাও থাকার জায়গা করে দিতে হবে অনসাইটে কিংবা অফসাইটে। এর রয়েছে একটি সুদূরপ্রসারী সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব। সমস্যাটি ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবেলা করতে হবে। এছাড়া আছে নানাবিধ আইনগত সমস্যা। এর ফলে রিসেটেলমেন্ট নিয়ে সৃষ্টি হতে পারে নানা জটিলতা।
প্রস্তাবিত মহাখালী আইসিটি ভিলেজ চাকরির সুযোগ বাড়াবে, বাড়াবে জমির দামও। আশপাশের এলাকার বাসাবাড়ির চাহিদাও বেড়ে যাবে, ব্যবসায়ের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে, উন্নয়ন ঘটাবে অবকাঠামোর। তবে ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের রিসেটেলমেন্টই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
প্রকল্প বাস্তবায়ন
প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রকল্পের পরিকল্পনার থেকে শুরু করে এর ভৌত বাস্তবায়ন রূপ দেয়া পর্যন্ত সব কর্মকা-। এ প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সোশ্যাল রিসেটেলমেন্টের বিষয়টি এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ বিষয়টি মাথায় রেখে প্রকল্পটিকে দেখতে হবে দুটি উপাদানে : আইসিটি ভিলেজ গড়ে তোলা এবং স্যোশ্যাল রিসেটেলমেন্ট।
ফিজিবিলিটি স্টাডি (ফেজ-৩) সম্পন্ন করার পর বিএফটিপিএ শুরু করবে দুটি আলাদা কর্মধারা : রিসেটেলমেন্ট কর্মকা- ও লেনদেন কর্মকা-। অর্থাৎ বিএফটিপিএ ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ৮ নম্বর সেকশনে বর্ণিত অপশন বেছে নেবে এবং নিয়োজিত করবে ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনার ইউপিপিআর অথবা একটি যথাযোগ্য ইনস্টিটিউশন, যা পালন করবে রিসেটেলমেন্ট ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনারের ভূমিকা। আর নিয়োগ দেবে একজন ট্র্যানজেকশন অ্যাডভাইজার, রিসেটেলমেন্ট কর্মধারার আওতায় বিএইচটিপিএ বাছাই করবে পিপিপি ইনভেস্টর প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং এদের সাথে পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষর করবে। একবার পিপিপি ইনভেস্টরসংশ্লিষ্ট হয়ে পড়লে, সে আমত্মঃক্রিয়া করবে ইউপিপিআর সাথে এবং তহবিলের জোগান দেবে বাছাই করা রিসেটেলমেন্ট অপশন অনুসারে আবাসন নির্মাণের জন্য।
যেকোনো নির্মাণকাজ শুরুর আগে জমি খালি করা অপরিহার্য, বিশেষ করে যেখানে প্রকল্প এলাকা পুরোপুরি বসতিপূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর লোকদের দিয়ে। তা সত্ত্বেও সবগুলো পরিবারকে একসাথে প্রকল্প এলাকা থেকে উচ্ছেদ করা কঠিন হবে। এদিক বিবেচনায় ইউপিপিআর সিদ্ধান্ত নেবে বিএইচটিপিএ/পিপিপি ইনভেস্টরের সাথে পর্যায়ক্রমে প্রকল্প এলাকার কোন কোন বাড়ি খালি করতে হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ
সব প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিএইচটিপিএ-তে একটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইউনিট থাকা। এই ইউনিটকে দায়িত্ব দেয়া দরকার প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানসহ প্রকল্প বাস্তবায়নের। ব্যবস্থাপনা কাঠামোর একটি প্রজেক্ট টিম থাকা দরকার, যার প্রধান হবেন একটি প্রকল্প পরিচালক ব্যবস্থাপক। এই টিমের গঠন সময়ে সময়ে পরিবর্তন করা যেতে পারে প্রকল্পের যেকোনো পর্যায়ে।
পিপিপি ইনভেস্টর আহবানের যথাযথ মডেল এবং পিপিপি ইনভেস্টরের কাজের সুযোগের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিএইচটিপিএ। সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারীদের একটি তালিকা তৈরির প্রয়োজন হবে এবং ধারণা অবহিত করা ও এ ব্যাপারে পরামর্শ নেয়ার কাজ চলতে পারে ইনভেস্টর প্রমোশন মিটিংয়ে কনসালটেশন পেপার উপস্থাপনের মাধ্যমে। এছাড়া কেনাকাটার ব্যাপারে টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরির পদক্ষেপ নেয়া শুরু করতে হবে
সরকার বিভাগীয় পর্যায়ে ৭টি আইসিটি ভিলেজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। মহাখালী আইসিটি ভিলেজসহ অন্যান্য প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে কমপিউটার জগৎ-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহেল রানা।
কমপিউটার জগৎ : সরকার মহাখালী আইসিটি ভিলেজসহ সারাদেশে বিভাগীয় পর্যায়ে ৭টি আইসিটি ভিলেজ গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন এবং এর ফলে জাতি কতটুকু উপকৃত হতে পারে?
হোসনে আরা বেগম : সরকারের ভিশন ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প আছে। এটি বাস্তবায়ন করতে অবশ্যই আইসিটি সেক্টরের বিস্তার, প্রসার এবং প্রচার দরকার। এই সেক্টরের বিস্তারে হাইটেক পার্ক হবে অন্যতম মাধ্যম। যেখানে একই স্থানে সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার তৈরি ও অ্যাসেম্বলের কাজ হবে। ফলে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সারা বিশ্ব এখন তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। আইসিটি ব্যবহার করে নানা দেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। শুধু আইসিটি খাতের আয় অনেক দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে। আমরা যদি আইসিটি ক্ষেত্রে তাল মিলিয়ে চলতে না পারি, তাহলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের অর্থনীতির সাথে প্রতিযোগীতায় অনেক পিছিয়ে পড়বে। পোশাক, চামড়াসহ অন্যান্য শিল্পে বিশ্বের নানা দেশ প্রতিযোগিতা করছে। ভবিষ্যতে গতানুগতিক এসব শিল্পে কাজের ক্ষেত্র কমে যাবে। এখন সব সেক্টরে আইটি নির্ভরতা বাড়ছে। বিকল্প হিসেবে অসীম সম্ভাবনাময় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে যদি আমরা এগিয়ে যেতে না পারি তাহলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের হাইটেক পার্কগুলো অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। যেকোনো একটি হাইটেক পার্কে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। আমাদের পোশাক শিল্পে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। এদের বেশিরভাগ জনবলের আয় খুব বেশি নয়। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে যেকোনো পেশাজীবীর আয় অন্যান্য খাতের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া এই খাতে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এজন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ৭টি আইসিটি ভিলেজ নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে।
কমপিউটার জগৎ : মহাখালী আইসিটি ভিলেজ প্রকল্প বাস্তবায়নে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ কোনটি?
হোসনে আরা বেগম : মহাখালী আইসিটি ভিলেজ নিয়ে বাইরের বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখান। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই প্রকল্প এলাকায় যোগাযোগ, আশপাশে নানা প্রতিষ্ঠানের অফিস, বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য এই এলাকার গুরুত্ব অনেক। প্রকল্পের কিছু এলাকাজুড়ে বসিত্ম আছে। বর্তমানে এই বসিত্মবাসীই প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা এখন বসিত্ম উচ্ছেদ নয়, পুনর্বাসন চাচ্ছি। প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বসিত্মবাসীদের পুনর্বাসনে সম্ভাব্য পাঁচটি অপশন আছে। আমরা এটি নিয়ে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে আলোচনা করব। ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে আরএফকিউ (রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন) দিয়েছি। এর ডেডলাইন দেয়া আছে ১৩ নভেম্বর। বসিত্মবাসীদের পুনর্বাসনে আরএফকিউর মাধ্যমে আসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেও কিছু পরামর্শ পাওয়া যাবে। এরপর তাদের সাথে আমরা আলোচনা করে পাঁচটি অপশন থেকে ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে একটি নির্বাচন করে সেই মোতাবেক সামনে অগ্রসর হব। পুনর্বাসনের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন হবে তা আমরা পিপিপি’র মাধ্যমে ব্যবস্থা করার চিমত্মা করছি।
কমপিউটার জগৎ : মহাখালী আইসিটি ভিলেজ নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট এরই মধ্যে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। বাকি ছয়টি আইসিটি ভিলেজের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরির কাজটি কোন পর্যায়ে আছে?
হোসনে আরা বেগম : মহাখালী আইসিটি ভিলেজ নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডির চূড়ান্ত রিপোর্ট হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে রাজশাহী, যশোর, বরিশাল, সিলেট নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডির খসড়া রিপোর্ট তৈরি শেষ হয়েছে। আগের পরিকল্পনায় বরিশালে প্রকল্প না থাকলেও পরে খুলনাকে বাদ দিয়ে সেখানে প্রকল্প সংযোজিত হয়। খসড়া চূড়ান্ত করার কাজ হচ্ছে। পাশাপাশি রংপুর এবং চট্টগ্রামে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে। আইআইএফসি (ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি) ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ করছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে। পরবর্তীতে বাকি ফিজিবিলিটি স্টাডির চূড়ান্ত রিপোর্টও ওয়েবসাইটে দেয়া হবে।
কমপিউটার জগৎ : মহাখালী আইসিটি ভিলেজ কখন থেকে চালু হতে পারে?
হোসনে আরা বেগম : এই প্রকল্পের জন্য এখনও বেশ কিছু প্রক্রিয়া বাকি আছে। এগুলোর মধ্যে আরএফকিউ এবং আরএফপি শেষ করে পার্ক ডেভেলপার নিয়োগ করতে হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৫ সালের জুন-জুলাই নাগাদ পার্ক ডেভেলপার নিয়োগ হতে পারে। এরপর নকশা প্রস্ত্তত করে অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হতে আরও ছয় মাস সময় লাগবে। তবে কালিয়াকৈর এবং যশোর প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি আগামী মার্চের শেষে যশোর আইসিটি ভিলেজ প্রকল্পের অবকাঠামো বুঝে পাব। তারপর প্রপার্টি ম্যানেজার নিয়োগ করে বিনিয়োগকারী আহবান প্রক্রিয়া শুরু হবে। এটি হবে বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় অর্জন। পাশাপাশি কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কও চালু হয়ে যাবে।
কমপিউটার জগৎ : আইসিটি ভিলেজগুলোর জন্য জমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে?
হোসনে আরা বেগম : সব প্রকল্পের জন্য জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। ইতোমধ্যে কালিয়াকৈর, মহাখালী এবং সিলেট প্রকল্পের জন্য জমি হস্তান্তর সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া যশোরের কিছু অংশের জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। পাশাপাশি নাটোরে ফ্রিল্যান্সিং ইনস্টিটিউট তৈরির জন্য জমি বরাদ্দ হয়েছে। এছাড়া বাকি প্রকল্পগুলোর জন্য ডিসি অফিস থেকে জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন জায়গা হস্তান্তর করতে ভূমি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় লাগবে
মহাখালীর আইসিটি ভিলেজে কী কী থাকছে
ভবনের নাম বর্গফুটে প্রতি তলার কত তলা ভবন সংখ্যা বর্গফুটে মোট
ফ্লোর এরিয়া ফ্লোর এরিয়া
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং ১০,০০০ ৫ ১ ৫০,০০০
গেট হাউস ও রিসিপশন বিল্ডিং ৩,০০০ ২ ১ ৬,০০০
মাল্টি টেন্যান্ট বিল্ডিং ৫০,০০০ ৩০ ২ ৩,০০০,০০০
হোটেল বিল্ডিং ২৫,০০০ ২০ ২ ১,০০০,০০০
ট্রেনিং সেন্টার বিল্ডিং ১২,০০০ ১০ ২ ২৪০,০০০
কনভেনশন সেন্টার বিল্ডিং ১৫,০০০ ৩ ১ ৪৫,০০০
রেসিডেন্সিয়াল বিল্ডিং ২৫,০০০ ৮ ৮ ১,৬০০,০০
ডরমিটরি বিল্ডিং ৬,০০০ ৬ ২ ৭২,০০০
এমফি থিয়েটার বিল্ডিং ১০,০০০ ১ ১ ১০,০০০
বোট ক্লাব ভবন ১০,০০০ ২ ১ ২০,০০০
প্রাক্কলিত মোট মূলধন খরচ
জোন মোট মূলধন খরচ বেসরকারি খাত থেকে সরকারি খাত থেকে
(কোটি টাকায়) (কোটি টাকায়) (কোটি টাকায়)
জোন : ০১
আইসিটি বিজনেস ১২৬৩.৮১ ১২৬৩.৮১ -
জোন : ০২
হোটেল বিজনেস ৩২৮.৯৪ ৩২৮.৯৪ -
জোন : ০৩
কনভেশন ও ট্রেনিং সেন্টার ৯২.৬৭ ৯২.৬৭ -
জোন : ০৪
রেসিডেন্সিয়াল ৬৪.৪৩ ৬৪.৪৩ -
জোন : ০৫
রিক্রিয়েশনাল ৯.৬৭ ৯.৬৭ -
জোন : ০৬
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ৩৬.৭২ - ৩৬.৭২
মোট খরচ ১৭৯৫.৬০ ১৭৫৮.৯৯ ৩৬.৭২