• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইউএন রিপোর্টে বাংলাদেশের নাজুক পরিস্থিতি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - অক্টোবর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফিচার
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইউএন রিপোর্টে বাংলাদেশের নাজুক পরিস্থিতি

প্রতিবেদনে প্রতি ১০০ জনে তারযুক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের তালিকায় বাংলাদেশের সূচক হলো ১৩৬ (০.৬ শতাংশ)। মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮তম, যা আফগানিস্তান (১২১) ও পাকিস্তানের (১২৬) চেয়েও নিচে।

গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে শুরু হয় এর সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই অধিবেশনকে সামনে রেখে এর একদিন আগে গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিটিজাল ডেভেলপমেন্টের দশম সভায় ২০১৪ সালের বিশ্ব ব্রডব্যান্ড পরিস্থিতি সম্পর্কে ১১১ পৃষ্ঠার সুদীর্ঘ গুরুত্বপূর্ণ এক রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। ‘দ্য স্টেট অব ব্রডব্যান্ড ২০১৪ : ব্রডব্যান্ড ফর অল’ শীর্ষক এই রিপোর্টে বিশ্বের নানা দেশের ব্রডব্যান্ড পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্রডব্যান্ড কমিশন হচ্ছে জাতিসংঘের একটি কমিশন। এর পুরো নাম : ‘দ্য ব্রডব্যান্ড কমিশন ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য তথা এমডিজি পূরণে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের আহবানে আইটিইউ ও ইউনেস্কোর উদ্যোগে এই কমিশন ২০১০ সালে চালু করা হয়। এ পর্যন্ত এই কমিশন বেশ কয়েকটি উচ্চপর্যায়ের পলিসি রিপোর্ট ও কেস স্টাডি প্রকাশ করেছে। আলোচ্য ব্রডব্যান্ড কমিশন রিপোর্ট ২০১৪ এরই ধারাবাহিকতার একটি ফসল।

দ্রুতগতির সহজলভ্য ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি আধুনিক সমাজের ফাউন্ডেশন স্টোন তার ভিত্তিপ্রস্ত্তর হিসেবে বিবেচিত। দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উপকার বয়ে আনে- এমনটিই স্বীকৃত। দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড এখন আর শুধু কতিপয় অভিজাত ব্যক্তিবর্গের কাটিং-এজ টেকনোলজি নয়। বরং এটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সমাজে ধীরে হলেও একটি নিশ্চিত পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে সমাজের সাধারণ মানুষও সেবা ও তথ্যে প্রবেশের নানা পথ খুঁজে পাচ্ছে।

ব্রডব্যান্ড শুধু একটি অবকাঠামো মাত্র নয়। আজকের দিনের ব্রডব্যান্ড কানেকটিভিটি নতুন নতুন সেবা ও তথ্যের উদ্ভবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার সুযোগ আমাদের হাতে এনে দিচ্ছে। আমরা পাচ্ছি নানা উন্নয়ন উদ্যোগ। ব্রডব্যান্ড কমিশন তাই চায় প্রতিটি দেশ কার্যকর ব্রডব্যান্ড নীতি অবলম্বন ও অনুশীলন করুক, যাতে সহস্রাব্দ উন্নয়নের লক্ষ্যগুলো তথা এমডিজি অর্জন সম্ভব হয়। এই রিপোর্টের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড কমিশন ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক, সার্ভিস ও অ্যাপ্লিকেশন জোরদার করা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলার প্রয়াস চালিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্রডব্যান্ড সম্পর্কিত নীতি-সিদ্ধান্ত গ্রহণে এই রিপোর্ট সহায়ক হবে।

এ বছরে রিপোর্টে বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে শিক্ষায় আইসিটি দক্ষতা সমন্বিত করার ব্যাপারে, যাতে আগামী প্রজন্ম ডিজিটাল অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে। এ রিপোর্টের তাগিদ হচ্ছে- প্রতিটি দেশকে যথাযথ নীতি ও কৌশল অবলম্বন করতে হবে, যাতে করে ব্রডব্যান্ড সহজলভ্য হয়, সস্তাতর হয় এবং সবার জন্য ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের সুযোগ অবারিত থাকে। এটি করতে হবে দেশকে উন্নয়ন-সক্ষম করে তুলতে এবং দেশে যাতে আধুনিক যুগের একটি অংশগ্রহণমূলক স্থিতিস্থাপক ও টেকসই তথ্যসমাজ গড়ে তোলা নিশ্চিত করতে। রিপোর্টের কাঠামোতে ঘুরেফিরে এসেছে চারটি থিম, যা আমাদেরকে ‘সবার জন্য ব্রডব্যান্ড’-এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করবে।

আজ ক্রমবর্ধমান হারে অপরিহার্য হয়ে উঠছে প্রতিটি মানুষকে আধুনিক জীবনের সাথে সমন্বয় করতে- এজন্য প্রয়োজন এদের জন্য ডিজিটাল শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা, আর্থিক ও বাণিজ্য সেবায় প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে ঘনিষ্টভাবে একসাথে কাজ করতে হবে। রিপোর্টের বিভিন্ন অধ্যায়ে দেখানো হয়েছে ‘সবার জন্য ব্রডব্যান্ড’ বিশ্বব্যাপী নীতি, সমাজ ও উন্নয়নের ফলাফলে পরিবর্তন আনতে পারে। আজকে আমরা দাঁড়িয়ে আছি দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ডের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুচালো ডগায়। আধুনিক অর্থনীতিতে যৌক্তিক প্রতিযোগিতা ও সাফল্যের জন্য অবশ্যই ব্রডব্যান্ড অবকাঠামো ও সার্ভিস আজ অপরিহার্য। জাতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে বৃহত্তর দক্ষতা দানে মুখ্য অবজারক হচ্ছে এই দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড। এসব বাস্তবতার প্রতিফলন রয়েছে গোটা রিপোর্টজুড়ে।

বৈশ্বিক পরিসংখ্যান

রিপোর্টে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারে বৈশ্বিক পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে আইটিইউ’র বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সাল শেষে বিশ্বের ২৯০ কোটি মানুষ তথা ৪০ শতাংশ মানুষ অনলাইন সুবিধা পাবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের এই প্রবৃদ্ধি-হার অব্যাহত থাকলে বিশ্বের অর্ধেক মানুষ ২০১৭ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাবে। রিপোর্ট মতে, এ যুগ ‘মাস কানেকটিভিটি’র যুগ। এ যুগ মানুষের কাজের প্রক্রিয়াকে ধীরে ধীরে পাল্টে দিচ্ছে। আর এর প্রতিশ্রুতি উন্নয়ন ও বিশ্বকল্যাণে পরিবর্তন আনা। ব্রডব্যান্ডের ‘মাস কানেকটিভিটি’ আমাদের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে অপরিমেয় উপায়ে- এর মাধ্যমে আমরা সুযোগ পাচ্ছি উন্নততর স্বাস্থ্যসেবা ও সহজে অর্থ পরিশোধ করতে পারছি, মানুষ সক্ষমতা বাড়াতে পারছে অনলাইন এডুকেশনের মাধ্যমে, সরকারে স্বচ্ছতা আনা সম্ভব হচ্ছে। ব্রডব্যান্ডকে এখন আর শুধু একটি অবকাঠামো না ভেবে, ভাবতে হবে পরিবর্তনের জোরালো শক্তি হিসেবে। এ রিপোর্ট মতে, ২০১৪ সালের মধ্যে বিশ্বে মোবাইল ফোন গ্রাহকসংখ্যা ৬৯০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ই-মার্কেটারদের ধারণা, একই সময়ে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭৬ কোটি আর ইউনিক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৪০ কোটি। অপরদিকে এরিকসনের অনুমিত হিসাব মতে, ২০১৯ সালের মধ্যে স্মার্টফোন গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬০ কোটি। আইটিইউ বলেছে, ২০২০ সালের মধ্যে নেটওয়ার্কড ডিভাইসের সংখ্যা ২৫০০ কোটিতে পৌঁছবে। ২০১৪ সালে পরিচালিত একটি জরিপ মতে, শিক্ষা ও উদ্যোক্তা সেবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দ্রুত মোবাইল-সেবার প্রবৃদ্ধি ঘটছে। ১৯০ কোটি মানুষ এখন ব্যবহার করছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিটি। অর্থাৎ বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ মানুষ ব্যবহার করছে সোশ্যাল মিডিয়া। বিশ্ব ডিজিটাল অর্থনীতির উন্নয়নে ব্রডব্যান্ড জোরালো ভূমিকা পালন করছে। এক প্রাক্কলনে দেখানো হয়েছে, ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড ডাটা ট্রাফিক ২০২০ সালে আজকের তুলনায় হাজার গুণ বেড়ে যাবে।

ব্রডব্যান্ড প্রবৃদ্ধি

ব্রডব্যান্ডের আইটিইউ সংজ্ঞা ব্যবহার করে ফিক্সড ও মোবাইল- এই উভয় ধরনের ব্রডব্যান্ড চালু বিশ্বব্যাপী অব্যাহত রয়েছে। আইটিইউ’র অনুমিত হিসাব মতে, ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী ৬৭ কোটি ৩০ লাখ ফিক্সড ব্রডব্যান্ড লাইন ছিল। আইটিইউ বলেছে, এই সংখ্যা ২০১৪ সাল শেষে দাঁড়াবে ৭১ কোটি ১০ লাখে। ক্যাবল ও ফাইবার অপটিকের মাধ্যমে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। যদিও তথ্য-প্রমাণ বলছে, মোট ডিএসএল (ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন) সংখ্যা এখন অবনতির দিকে হলে তা আগামী দিনে বাড়বে। এন্ডইউজার বিবেচনায় ক্যাবল ও স্যাটেলাইট কানেকশনও বছরে অব্যাহতভাবে বাড়ছে যথাক্রমে ১.৮ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ হারে। বিশ্বে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশনে সেরা দশ দেশের মধ্যে সবগুলোই ইউরোপের। একমাত্র ব্যতিক্রম কোরিয়াকে বাদ দিলে। কোরিয়ার অবস্থান ষষ্ঠ স্থানে। ২০১৪ সালে আরও চারটি দেশে ব্রডব্যান্ড পেনিট্রেশন ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৩ সালে মাত্র একটি দেশ (সুইজারল্যান্ড) এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিল।

আইসিটি’র যেকোনো খাতের তুলনায় ২০১৪ সালে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হার পরিলক্ষেত হয়েছে মোবাইল ব্রডব্যান্ডে (থ্রিজি ও ফোরজি)। ২০১৪ সালে এ খাতের প্রবৃদ্ধি হার প্রায় ২০ শতাংশ। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯১টি এলটিই (লং-টার্ম এভোলিউশন) নেটওয়ার্ক সক্রিয় ছিল। ‘ফোরজি অ্যামেরিকাস’ ধারণা করছে, ২০১৪ সাল শেষে ৩৫০টি এলটিই নেটওয়ার্ক কমার্শিয়াল থাকবে। এছাড়া এলটিই অ্যাডভান্সড এখন কমার্শিয়িলি ডেপ্লয় করা হয় ৭টি দেশের ৯টি নেটওয়ার্কে। আশা করা যায়, ২০১৪ সাল শেষে এ সংখ্যা ৪০টিতে পৌঁছবে।

তুলনামূলক পরিসংখ্যান

আলোচ্য রিপোর্টে দেশভিত্তিক ব্রডব্যান্ড পরিস্থিতির ব্যাকিং ও তুলনামূলক নানা বিষয়ের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এই তথ্য-পরিসংখ্যান দৃষ্টে বাংলাদেশের সামগ্রিক ব্রডব্যান্ড পরিস্থিতি যে এখনও নাজুক অবস্থায় আছে, তা-ই প্রতিভাত হয়েছে।

রিপোটর্টির পরিশিষ্টাংশে বিশ্বের নানা দেশের জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতির একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। এতে কোন দেশে ব্রডব্যান্ড পলিসি আছে ও কোন দেশে নেই, কোন দেশ কী শিরোনামে ব্রডব্যান্ড পলিসি চালু করেছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সাথে ব্রডব্যান্ড পলিসি সম্পর্কে সংক্ষেপ্ত বর্ণনাও রয়েছে। বলা হয়েছে- বিশ্বের ১৪০টি দেশে জাতীয় ব্রডব্যান্ড নীতিমালা রয়েছে, নীতিমালা নেই ৪৩টি দেশে। আর ১৩টি দেশ এই নীতিমালা প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে। রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশ এই নীতিমালা পেয়েছে ২০১০ সালে, ভারত ২০১১ সালে, পাকিস্তান ২০০৭ সালে, সিঙ্গাপুর ২০০৬ সালে এবং ভুটান ২০০৮ সালে।

রিপোর্টের দ্বিতীয় পরিশিষ্টাংশে রয়েছে, বিশ্বের ১৯০টি দেশে প্রতি ১০০ জনে কতজন ফিক্সড (ওয়্যারড) ব্রডব্যান্ড গ্রাহক রয়েছে, তার একটি হিসাব। এ হিসাব গোটা বিশ্বের প্রতি ১০০ জনের এই গ্রাহকসংখ্যা গড়ে ৯.৪ জন। ১৯০ দেশের বাইরে আরও ৫টি দেশের এ সম্পর্কিত কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ আছে। দেশ পাঁচটি হচ্ছে- হাইতি, ইরাক, মার্শাল আইল্যান্ড, সিয়েরা লিওন এবং ভ্যাটিকান। রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জন ফিক্সড (ওয়্যারড) ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা ০.৬ জন। আর বিশ্বে এ ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান ১৩৬তম। পাকিস্তান ১৩৭তম (প্রতি ১০০ জনে গ্রাহকসংখ্যা ০.৬ জন), ভারত ১২৫তম (১.২ জন), শ্রীলঙ্কা ১১৫তম (শতকরা ২ জন)। এ ক্ষেত্রে প্রথম স্থানে রয়েছে মোনাকো (শতকরা ৪৪.৯ জন)। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে যথাক্রমে ৮ম (শতকরা ৩৫.৭ জন) এবং ২৪তম (শতকরা ২৮.৫ জন) স্থানে। উল্লেখ্য, এ হিসাব ২০১৩ সাল সাপেক্ষে।

রিপোর্টের তৃতীয় পরিশিষ্টে আজ মোবাইল ব্রডব্যান্ড কোন দেশে শতকরা কতজন গ্রাহক রয়েছে সে বিবেচনায় কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে তার দেশওয়ারী হিসাব। এ ক্ষেত্রে ১৩৮টি দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুর, যার প্রতি ১০০ জন নাগরিকের সক্রিয় মোবাইল ব্রডব্যান্ড গ্রাহকসংখ্যা ১৩৫.১টি। প্রথম দশটি দেশের মধ্যে যথাক্রমে রয়েছে- সিঙ্গাপুর (প্রতি ১০০ জনে ১৩৫.১), ফিনল্যান্ড (১২৩.৫), জাপান (১২০.৫), অস্ট্রেলিয়া (১১০.৫), বাহরাইন (১০৯.৭), সুইডেন (১০৮.৭), ডেনমার্ক (১০৭.৩), কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (১০৫.৩), হংকং ও চীন (৭৫.৭) এবং যুক্তরাষ্ট্র (৯২.৮)। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১২৮তম (শতকরা মোবাইল ব্রডব্যান্ড গ্রাহক ০.৮), আফগানিস্তান ১২১তম (১.২), পাকিস্তান ১২৬তম (০.৫), নেপাল ৮৭তম (১৩.০) ও ভারত ১১৩তম (৩.২)। এই পরিসংখ্যানও ২০১৩ সালভিত্তিক।

রিপোর্টের চতুর্থ পরিশিষ্টে ২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে শতকরা কতটি পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে, এর তথ্য-পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তালিকার শীর্ষে রয়েছে কোরিয়া প্রজাতন্ত্র। দেশটির শতকরা ৯৮.১ বাড়িতেই ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে যথাক্রমে কাতার (শতকরা ৯৬.৪) এবং সিঙ্গাপুর (শতকরা ৮৬.০)। এ তালিকার বাংলাদেশ ১০২তম (শতকরা ৪.৬)। ভারত ৭৫তম (শতকরা ১৩), পাকিস্তান ৮৫তম (শতকরা ৮.৩), নেপাল ১০০তম (শতকরা ৪.৯), মিয়ানমার ১২২তম (শতকরা ২.২), শ্রীলঙ্কা ৭৬তম (শতকরা ১২.৭)। এ তালিকার সর্বনিমণ ১৩২তম স্থানে রয়েছে ইরিত্রিয়া (শতকরা ১.৩)। তালিকায় এছাড়া আরও ১৫টি দেশের নামোল্লেখ করে বলা হয়েছে, এসব দেশের কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ পঞ্চম পরিশিষ্টে জানানো হয়েছে কোন দেশে শতকরা কতজন ব্যক্তি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। এ তালিকার শীর্ষে আইসল্যান্ড, যেখানে ৯৬.৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে নরওয়ে ও সুইডেন (৯৬.১ ও ৯১.৮ শতাংশ)। এখানে সর্বশেষ তথা ১৯১তম স্থানে ইরিত্রিয়া (০.৯ শতাংশ), বিশ্বে যেখানে শতকরা ৩৭.৯ জন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহর করছেন। এখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯১টি দেশের মধ্যে ১৬২তম স্থানে (৬.৪ শতাংশ), যেখানে পাকিস্তান ১৫২তম (১০.৯ শতাংশ), ভুটান ১১৫তম (২৯.৯ শতাংশ), উজবেকিস্তান ১০০তম (৩৮.২ শতাংশ), থাইল্যান্ড ১১৬তম (২৮.৯ শতাংশ) এবং ভারত ১৪২তম (১৫.১ শতাংশ)।

উপসংহার

এ রিপোর্টের সারকথা হচ্ছে- এই রিপোর্টে সরকার ও নীতি-প্রণেতাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের নীতি-বিকল্প তুলে ধরা হয়েছে, যা গ্রহণ করে একটি দেশ তাদের ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ ও সেবার ক্ষেত্র বাড়িয়ে তুলতে পারে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতিতে একটি দেশ ভবিষ্যতে এর প্রতিযোগিতার সক্ষমতারও উত্তরণ ঘটাতে পারে। ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক ও সার্ভিস একটি সরল অবকাঠামোর চেয়েও বেশি কিছু। এটি উপস্থাপন করে বেশকিছু ট্রান্সফরমেটিভ টেকনোলজি, যা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেয় আমাদের যোগাযোগ, প্রতিদিনের কাজ, খেলা ও ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে। উন্নয়নশীল দেশগুলো এ ক্ষেত্রে সাইডলাইনে পড়ে থাকতে পারে না। কারণ, ডিজিটালের উদ্ভব নলেজ ইকোনমিকে গ্লোবালাইজেশনে প্রতিনিধিত্বমূলক অবস্থানে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে। সত্যিকারের তথ্য-বিপ্লব নিহিত রয়েছে প্রতিদিনের ক্রমবর্ধমান হারে ইন্টারনেটসমৃদ্ধ ডিভাইস ব্যবহারের মাঝে। আর এই মাস-কানেকটিভিটির যুগে প্রতিটি মানুষের কর্মপ্রক্রিয়ায় ছোট্ট কিন্তু ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের মধ্যে নিহিত উন্নয়নের পরিবর্তন ও বৈশ্বিক কল্যাণের প্রতিশ্রুতি বিদ্যমান।

আল্ট্রা-হাই-স্পিডের ক্ষেত্র বিবেচনায় এখনও কনজ্যুমার অ্যাপ ও সার্ভিসের সংখ্যা তত বেশি নয়, যেগুলোর জন্য প্রয়োজন গিগাবাইট স্পিড। তবে এ ধরনের সার্ভিস আসার পথে। অভিজ্ঞতা বলে, মানুষের ধারণার তুলনায় প্রযুক্তি চলে আরও বেশি গতি নিয়ে। তাই বিভিন্ন দেশকে এবং অপারেটরদেরকে আসন্ন ব্রডব্যান্ড জগতের জন্য পরিকল্পনা শুরু করতে হবে এখনই। দেশের মানুষের ক্ষমতায়নের ও সক্ষমতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রতিটি দেশের সরকারকে দেশের ব্রডব্যান্ড পরিকল্পনা প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হবে আইসিটি অ্যান্ড ডিজিটাল আইসিটি ও ডিজিটাল ই-স্কিলে। এ কাজটিকে বিবেচনা করতে হবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন বাড়ানোর নিয়ামক হিসেবে। একপাক্ষেক বিবেচনা মাথায় রেখে সমতাভিত্তিক ব্রডব্যান্ড চালু ত্বরান্বিত করা যাবে না। ইউএন ব্রডব্যান্ড কমিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সরকারগুলোর উচিত নারী-পুরুষ সবার জন্য সমভাবে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি করা।

বাজার জোরালোভাবে সম্প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি অধিকতর জটিল চ্যালেঞ্জেরও উদ্ভব ঘটছে। সবিশেষ উল্লেখ্য, বিধিবিধান পরিবর্তনশীল বাজারের সাথে সমান্তরালভাবে চলতে পারছে না। সামঞ্জস্যহীন বিধিবিধানের কারণে এ ক্ষেত্রে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার ও নীতি-প্রণেতাদেরকে তাদের রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক পর্যালোচনা করে একে হালনাগাদের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রতিটি দেশকে ভবিষ্যৎ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্য তাদের ব্রডব্যান্ড নীতিকে নবরূপ দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। সর্বোপরি বিভিন্ন সরকারি নীতি ও রেগুলেটরি অপশন নেয়ার সময় কস্ট-বেনিফিট উদ্যোগ মাথায় রাখতে হবে। নইলে কোনো দেশেই ব্রডব্যান্ডের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি ঘটানো সম্ভব হবে না

প্রতিবেদনের বিস্তারিত : goo.gl/xVyW64
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস