• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড যেখানে ভবিষ্যৎ
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: ইমদাদুল হক
মোট লেখা:৬২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - মার্চ
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড যেখানে ভবিষ্যৎ
প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধমে মেধাভিত্তিক অর্থনীতি ভিত্তিতে দেশ গড়ে তুলে উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশের স্বপ্ন দেখিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হয় এবারের ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড সম্মেলন। ‘ভবিষ্যৎ এখানেই’ প্রত্যয়ে অনুষ্ঠিত চার দিনের এই সম্মেলনে একদিকে যেমন ছিল জমকালো আয়োজন, তেমনি ছিল প্রযুক্তিবিদ আর প্রযুক্তিমনাদের মিলন মেলায় ঠাসা। ডিজিটাল সেবা ও উদ্ভাবনার প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, ম্যাচমেকিং সবই ছিল এই সম্মেলনে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ইমদাদুল হক।
শুরুটা হয়েছিল ই-এশিয়ার মধ্য দিয়ে ২০১১ সালে। লক্য্প ছিল আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিবিদদের অংশগ্রহণে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় পরিসরের সম্মেলন আয়োজন। কিন্তু পরের বছরই প্রত্যাশা আরও বেড়ে যাওয়ায় নাম পাল্টে রাখা হয় ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড’। ওই বছর ৬ থেকে ১২ ডিসেম্বর চলে এই সম্মেলন। সপ্তাহব্যাপী হওয়ায় সরকারি উদ্যোগে সম্মেলন শেষ দিকে কিছুটা ভাটা পড়ে। ২০১৩ সালে দেশজুড়ে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থায় তারিখ নির্ধারণ করেও সম্মেলন করা থেকে পিছিয়ে আসতে হয়। এর পরের বছর সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে ফের সম্মেলনের আয়োজন করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি (বিসিএস), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) খাত-সংশ্লিষ্ট সংগঠন। ওই বছর ৪-৭ জুন অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ছিল নতুনত্বের ছোঁয়া। প্রথমবারের মতো ধারাবাহিকতাকে অক্ষুণ্ণ রেখে ৯-১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের তৃতীয় আসর। আসরের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী বক্তব্যে উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের বিভিন্ন ডিজিটাল উদ্ভাবনী কার্যক্রমের সাফল্যগাথা। জানানো হয়, বর্তমানে দেশে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ৬০ ধরনের সরকারি সেবা পাওয়া যাচ্ছে। এতে প্রায় দশ হাজার উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। প্রতি মাসে ৪৫ লাখ মানুষ সেবা পাচ্ছেন সেবাকেন্দ্র থেকে। সেবা দিয়ে ১২৮ কোটি টাকা উপার্জন করেছেন স্থানীয় যুবকেরা। রূপকল্প ২০২১-এর আগেই সফটওয়্যার খাতে ১ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা বারবার উঠে এসেছে আয়োজকদের কণ্ঠে। এজন্য দেশের ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে এই সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে আশাবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই দেশের জিডিপির এক শতাংশ তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে জোগান দেয়ার অভিপ্রায় জানান প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সমাপনী বক্তব্যে ইপিজেডের আদলে সফটওয়্যার এক্সপোর্ট জোন গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রযুক্তি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে নিয়ে এসে মূলধন সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান তিনি।
মিলনমেলার বাঁকে বাঁকে
বিনিয়োগ আকর্ষণ ও মেধা অন্বেষণসহ তথ্যপ্রযুক্তির প্রচার, প্রকাশ ও অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং দেশের তরুণ প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সফল আইটি ব্যক্তিত্বদের পরিচয় করিয়ে দিতে মিলনমেলায় ১৪টিরও বেশি দেশ থেকে যোগ দেন অর্ধশত আন্তর্জাতিক আইটি বিশেষজ্ঞ, সহস্রাধিক সরকারি আমলা, আড়াই শতাধিক এক্সিবিটর ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ৮০ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী। সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সেমিনার ও টেকনিক্যাল সেশনে অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন এরা। আলাপ করে জেনে নেন দর্শনার্থীদের প্রত্যাশা। প্রযুক্তিবিশ্বের ভবিষ্যৎ বিষয়ে আলোকপাত করেন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিবিদেরা। এদের মধ্যে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের মহাসচিব হাওলিন ঝাও, ব্লগিং ওয়েবসাইট টাম্বলারের প্রতিষ্ঠাতা বয়েডলি পোলেন্টাইন, ক্লাউডক্যাম্প প্রতিষ্ঠাতা ডেভ নিয়েলসেন, টাই সিলিকন ভ্যালির প্রেসিডেন্ট ভেঙ্ক শুক্লা, বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল সাউথ এশিয়ার হেড অব সেলস বেন কিং, গুগলের হেড অব এজেন্সি ডেভেলপমেন্ট বিকি রাসেল, অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ফেসবুক ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর ও হেড অব পাবলিক পলিসি অাঁখি দাস, অ্যাসেঞ্চার বাংলাদেশ চেয়ারম্যান অবিনাশ ভাসিস্তা, অগমেডিক্সের সিইও ও কো-ফাউন্ডার আইয়ান শাকিল, এনটিএফ থ্রি প্রকল্প পরিচালক মার্টিন লাবিব, বিক্রয় ডটকমের প্রধান মার্টিন মালস্ট্রম প্রমুখ যোগ দেন বিভিন্ন সেশনে।
মেলার যত আয়োজন
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আগামী দিনের পরিকল্পনা উপস্থাপনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ২০টি সেমিনার, ১১টি কনফারেন্স ও ১৩টি প্রশিক্ষণ কর্মশালা, ক্লাউড ক্যাম্প, সিএক্সও এবং অ্যাওয়ার্ড নাইটের পাশাপাশি চার দিনের প্রযুক্তি সম্মেলনে ছিল চারটি প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর মধ্যে ছিল ই-গভর্ন্যান্স এক্সপো, বেসিস সফট এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো ও ই-কমার্স এক্সপো। এই চার মেলার সেতুবন্ধনে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড হয়ে উঠিছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বেসিস সফট এক্সপো, ই-গভর্ন্যান্স এক্সপো, মোবাইল ইনোভেশন এক্সপো ও ই-কমার্স এক্সপোর সাথে ছিল ই-এক্সপেরিয়েন্স জোন। এসব জোনে প্রযুক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি চারটি আলাদা হলে চলে সভা-সেমিনার। সম্মেলনে ৩৫ শতাংশ সভা-সেমিনারে, ২১ শতাংশ সরকারি সেবায়, ৯ শতাংশ হার্ডওয়্যারে, ১৮ শতাংশ অ্যাপ ও সফটওয়্যারে এবং ১০ শতাংশ লোক ডিজিটাল প্রযুক্তিতে অভিজ্ঞতা নিতে সম্মেলনে আসেন (সূত্র : হাইফাইপাবলিক ডটকম ইনফোগ্রাফ)।
মেলায় যত প্রদর্শনী
সরকারি সেবার মেলা : মেলায় ৭২টি স্টল থেকে সরকারি নানা ই-সেবা প্রদর্শন করা হয় ভাষাশহীদ শফিকুর রহমান জোনে। ব্যক্তিগতভাবে তৈরি (ডেভেলপ) প্রকল্পও প্রদর্শিত হয়। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদফতর কতটা ‘ডিজিটালাইজ’ হয়েছে, কী কী সেবা ডিজিটালি দেয়া হচ্ছে, কী কী সেবা আগামীতে দেয়া হবে, সেসবের বিবরণ দিয়ে কৌতূহলীদের ‘কৌতূহল’ মেটান স্টল-প্যাভিলিয়নে উপস্থিত কর্মকর্তারা। ‘ই-গভর্ন্যান্স’ প্রদর্শনীর মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সরকারের অগ্রযাত্রার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল চার দিনের প্রদর্শনীতে। পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় সরকারি যেসব সেবা ঘরে বসেই পাওয়া যায়, সেসব সেবার সাথে। আবার কোনো কোনো সরকারি দফতরের কাজ করতে ঘর থেকেও বের হতে হয় না, তা কীভাবে পাওয়া যাবে হাতে-কলমে সেই পাঠও দেয়া হয় এসব স্টল থেকে। অনলাইনে মুহূর্তেই হাতের মুঠোয় সেবা দিতে সরকারের উদ্যোগে অনেকেই বিস্মিত হন। চাইলেই ঘরে বসে সরকারি সেবা পাওয়া যায়- এমন তথ্য পেয়ে অভিভূত হয়েছেন অনেকে। নির্বাচন কমিশনের স্টল থেকে সেবা নেয়া গোড়ানের আবদুর রহমান বলেন, আমার ন্যাশনাল আইডি কার্ডে একটু ভুল ছিল। জানতাম না কীভাবে ঠিক করা যাবে। ভেবেছিলাম নির্বাচন কমিশনের অফিসে যাব। কিন্তু এত সহজে অনলাইনে পাওয়া যায় এসব সেবা ভাবতে পারিনি। মেলায় স্টলে লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্প, হাইটেক পার্ক, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ। কীভাবে জিডি করতে হবে, কীভাবে ইমিগ্রেশনে পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হবে- এমন তথ্য দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরে বাংলাদেশ পুলিশ। এছাড়া পুলিশের মোবাইল অ্যাপস, সিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম, অটোমেটেড ফিঙ্গার প্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম, বডি অন ক্যামেরা, ডিজিটাল ডকুমেন্ট অ্যানালাইসিস সেন্টারে প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা তুলে ধরা হয় তাদের স্টল থেকে।
উদ্ভাবন : শুধু কি প্রদর্শনী আর সেবা? না, নতুন নতুন উদ্ভাবন নিয়েও মেলা প্রাঙ্গণের এই জোনে হাজির হয়েছিলেন তরুণ প্রযুক্তি গবেষকেরা। এর মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্টলের সামনে শেষ দিন পর্যন্ত একটি হুইল চেয়ারকে ঘিরে ছিল মানুষের জটলা। কেননা, চেয়ারে বসে ডানে যাওয়ার চিন্তা করলে নাকি হুইল চেয়ারটি সেদিকে ঘুরে যাচ্ছিল। অর্থাৎ হুইল চেয়ারে বসা ব্যক্তির চিন্তায় পরিচালিত হয় এই চেয়ারটি। সেখানেই কথা হয় এর উদ্ভাবক দলের সদস্য ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইইই’ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র প্রীতম চৌধুরীর সাথে। তিনি জানালেন, সহপাঠী এসএস কিবরিয়া শাকীমকে সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. খলিলুর রহমানের সহায়তায় এই আপডেটেড প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন তারা। বললেন, আমাদের ব্রেইন কন্ট্রোলারটি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বাড়তি সুবিধার জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই হুইল চেয়ারের সাথে রয়েছে একটি বিশেষ ধরনের পরিধেয় ডিভাইস। এই ডিভাইসটিতে রয়েছে ১৬টি ইলেকট্রয়েড সেন্সর। আর নিচে রয়েছে মাইক্রোকন্ট্রোলার। বস্নু-টুথের মাধ্যমে সংযুক্ত ডিভাইসটি নিয়ন্ত্রণ করে হুইল চেয়ারটিকে। তিনি আরও জানালেন, এই ডিভাইসটি দিয়ে কমপিউটারের মাউস পরিচালনা করা যায়। মুখের বিভিন্ন অভিব্যক্তির মাধ্যমে কমপিউটারের যেকোনো একটি ফোল্ডারে প্রবেশ ও বের হওয়ার পাশাপাশি সফটওয়্যারও রান করা যায়।
অনলাইনে সদাইপাতি : অনলাইনে ঘরে বসে কেনাকাটার নানা আয়োজন নিয়ে ভাষাশহীদ আবুল বরকত জোনে ছিল চারটি প্যাভিলিয়ন, ১০টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২২টি স্টল। নিরাপদে অনলাইনে কেনাকাটার নানা অফারের পাশাপাশি নিজেদের সেবার পসরা নিয়ে হাজির হয় দেশী ই-কমার্স সাইটগুলো। এই জোনে যোগ দেয়া ব্যতিক্রমী ই-কমার্স সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ফিস ডটকম ডট বিডির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার জিএম জাকির হোসেন রাজিব বলেন, ‘প্রতিদিনের বাজারে মাছ কেনাটা একটু ঝামেলার বিষয়। তাছাড়া মাছে ফরমালিন থাকায় অনেকেই মাছ কিনতে ভয় পান। তাই আমরা আমাদের ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে অর্ডার নিয়ে ক্রেতাদের বাড়িতে বিনামূল্যে মাছ সরবরাহ করছি। এখানে সেই বিষয়টিই দর্শনার্থীদের সামনে তুলে ধরেছি।’ অনলাইন শপ ওখানেই ডটকমের স্টলে সেলফি তুলে মোবাইল সিকিউরিটি উপহার পাওয়া দর্শনার্থী কুসুম হালদার। প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহিতুল ইসলাম রুয়েল জানান, ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপলক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অরিজিনাল জার্সি সংগ্রহ করতে ভিড় করেছেন অনেক তরুণই। অপরদিকে মেলায় অংশ নেয়া আজকের ডিলের প্রধান নির্বাহী বলেন, প্রথমবারের মতো দেশী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর এই মিলন মেলা সত্যি প্রশংসনীয়। এখানে সবাই যেভাবে দর্শনার্থীদের অনলাইনে কেনাকাটার বিষয়ে সচেতন করে তুলেছেন, তা দেশের সম্ভাবনাময় এ খাতকে সামনে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে।
নানা কাজের সফটওয়্যার : মেলায় বেসরকারি পর্যায়ে ৭২টি স্টলে দেশে তৈরি বিভিন্ন সফটওয়্যার প্রদর্শন করে সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সম্মেলন কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় শহীদ আবদুস সালাম জোনে ছিল বেসিস সফট এক্সপো। এখানে বেসিস সদস্যভুক্ত কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার প্রদর্শন করে। মেলায় রিভ সিস্টেমের স্টল থেকে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সেলস ম্যানেজার তৌহিদ রহমান চৌধুরী বলেন, তাদের তৈরি বেশিরভাগ সফটওয়্যারেরই বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দেশেও তাদের সফটওয়্যার জনপ্রিয়। মেলায় আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আশরাফুল ইসলাম বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের তৈরি সফটওয়্যারের বিদেশে চাহিদা বাড়ছে, যা নিঃসন্দেহে গর্বের। নিশ্চয় তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ একদিন অন্যতম শীর্ষ দেশ হিসেবে নিজের পরিচয় বিশ^ দরবারে তুলে ধরবে। সফটওয়্যার ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান লিড সফট মেলায় তাদের পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি নিজেদের প্রতিষ্ঠানের জন্য দক্ষ কর্মী সংগ্রহ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্ট ম্যনেজার চৌধুরী মহিবুল হাসান বলেন, এবার আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখে মেলায় প্রয়োজনীয় সলিউশন দিয়েছি। উদ্ভাবনের পাশাপাশি স্মার্ট হোম সলিউশন নিয়ে মেলার এই জোনে সবার দৃষ্টি কাড়ে অ্যাপলম্বটেক বিডি। মেলায় তড়িৎ প্রকৌশল ও কমপিউটার প্রকৌশল বিভাগের দেশের একঝাঁক তরুণ প্রযুক্তিবিদের তৈরি বিভিন্ন সলিউশন নিয়ে হাজির হয়েছিল। তাদের পণ্য ও সেবাগুলো বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে পারে। দূর থেকেও নজরে রাখে ঘরের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, আসবাব থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের। নিজেদের উদ্ভাবন নিয়ে অ্যাপলম্বটেক বিডির ব্যবস্থাপক রাহবী আলভী বলেন, আমাদের সলিউশনের মধ্যে রয়েছে স্মার্টহোম সলিউশন, স্মার্ট এনার্জি মিটার ও সিভিল ড্রোন, ইনডোর পজিশনিং সিস্টেম ও টেলিহেলথ কেয়ার।
মুঠোফোনে সেবার মেলা : মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপে বাংলাদেশের জয়যাত্রা তুলে ধরতে ৪২টি স্টলে সেজেছিল বীরশ্রেষ্ঠ রফিক উদ্দীন জোন। এখানে বাংলাদেশী ডেভেলপার কোম্পানির জনপ্রিয় অ্যাপ্লিকেশনের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন দর্শনার্থীরা। উইন্ডোজ, আইওএস ও অ্যান্ড্রয়িড প্লাটফর্মের হাজারের বেশি দেশী অ্যাপ্লিকেশন ছিল মোবাইল ইনোভেশন জোনে। মানুষের স্থানীয় চাহিদার কথা বিবেচনা করে নতুন উদ্ভাবন নিয়ে এসেছিল সন্ধান ডটকম। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা নাজমুল চৌধুরী শারুন বলেন, দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় কোনো প্রতিষ্ঠান, পণ্য, মার্কেট কোথায়, কখন, কীভাবে পাওয়া যাবে- এই তথ্য দেবে সন্ধান ডটকম। প্রায় দুই লাখের ওপরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য এই ওয়েবে রয়েছে। জুনের মধ্যে এই তথ্য দাঁড়াবে ১০ লাখ। পাশাপাশি মানুষের সুবিধার জন্য চালু হবে কলসেন্টার। বাংলাদেশের নারীদের বিভিন্ন তথ্যসেবা দিতে প্রথমবারের মতো অভিনব মোবাইল অ্যাপ ‘মায়া আপা’ নিয়ে এসেছিল ব্র্যাক। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে সাহায্য করার পাশাপাশি নারীদের বিভিন্ন সামাজিক এবং আইনী সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েও দারুণ ভূমিকা পালন করবে এটি। বাংলাদেশের অসাধারণ উদ্যমী একদল নারী উদ্যোক্তা, কমপিউটার প্রকৌশলী, ডাক্তার এবং আইনজীবী মিলে দেশের সব বয়সী নারীর জন্য তৈরি করেছেন এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন। ‘মায়া আপা’ নারীদের (অথবা যে কারও) বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ চাইবার এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে যেকেউ নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখেই তার প্রশ্নটি করতে পারবেন। অ্যাপটি নারীদের সব ধরনের পরামর্শ দিতে সক্ষম। আসিয়া খালেদা নীলা ও সুব্রামি মৌটুসী মৌ- এই দুই তরুণী সফটওয়্যার প্রকৌশলীর যৌথ প্রয়াসে অ্যাপটি তৈরি হয়েছে। নীলা ও মৌটুসীর মতে, তাদের তৈরি করা এই অ্যাপ্লিকেশনটি হাজারো মোবাইল অ্যাপের চেয়ে আলাদা। প্রযুক্তির হাত দিয়ে নারীর ক্ষমতায়নের একটি মাধ্যম হবে এটি। আইসিটি টেকনোলজি সলিউশন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে তাদের বুথে ই-এডুকেশন, ই-হেলথ, এলটিই টেকনোলজি ও অন্যান্য নতুন আইটি সলিউশন এবং বাংলাদেশে তাদের সাফল্যের বিষয়গুলো প্রদর্শন করে। বাংলাদেশের জন্য এলটিই টেকনোলজি কেন প্রয়োজন- তা নিয়ে মেলায় তথ্য দেয় হুয়াওয়ে। এছাড়া প্রদর্শনীতে হুয়াওয়ে হেড অফিসের ৬ জন বিশেষজ্ঞ দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর বাইরে মেলায় তুলে ধরা হয় নানা উদ্ভাবনী প্রযুক্তি। ঘরের লাইট, ফ্যানের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র চলবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে। এমন উদ্ভাবনী প্রদর্শন করেছে ‘ওয়েবপারস’। অন্যান্য বৈদ্যুতিক বোর্ডের মতো একটি বোর্ড লাগিয়ে নিয়ে স্মার্টফোনে একটি সফটওয়্যার ইনস্টল করে এই সুবিধা পাওয়া যাবে। দুর্যোগময় মুহূর্তে জরুরি সেবা দিতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন করেন ‘ড্যাফোডিল ড্রোন’। ড্রোন প্রসঙ্গে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাহিদ বলেন, এই ড্রোন ব্যবহার করে সুউচ্চ ভবনে আগুন লাগলে ওপরের তলার চিত্র নিচ থেকেই দেখা যাবে। এছাড়া প্রয়োজনে ৫ কেজি ওজন পর্যন্ত জিনিসপত্র নিচ থেক উপরে ওঠানো যাবে। চাইলে ড্রোনের সাথে ক্যামেরা ব্যবহার করে ৩৬০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ছবি শুট করা যাবে। সম্মেলন প্রাঙ্গণে মোবইল ইনোভেশন জোনে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছিল ‘ডাক’ অ্যাপ। আপৎকালে জরুরি সেবা দেয় ‘রুপম আইটি’র তৈরি অ্যাপ্লিকেশনটি। অ্যাপটি ইনস্টল করলে বিশেষ একটি বাটনে চাপ দিতেই বিপদের বার্তা যাবে নিকটজনের কাছে।
মেলায় যত সম্মেলন
চার দিনের সম্মেলনে মোট ৪৩টি সভা, সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে মোবাইল, টেলিকম, ই-কমার্স প্রভৃতি বিষয়ে আয়োজিত কারিগরি বিভিন্ন কর্মশালায় উপচেপড়া ভিড় ছিল তরুণদের। ই-গভর্ন্যান্স বিষয়ক আয়োজনের মধ্যে মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে আগ্রহ ছিল সবার। টেক ওমেন কনফারেন্স, টাইটেনিয়াম কনফারেন্স, সিএসএম ডেভেলপারস কনফারেন্স, ক্লাউড ক্যাম্প, বিআইপিসি ডেভেলপারস কনফারেন্স, সিএক্সও নাইট, আইটি খাতে ক্যারিয়ারবিষয়ক সম্মেলনে আগ্রহীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক। এ ছাড়া ই-গভর্ন্যান্সের অন্যান্য সেমিনারের বিষয়ের মধ্যে ছিল শিল্প খাতের জন্য শিক্ষা, সরকারি চাকরিতে উদ্ভাবনী ইকোসিস্টেম, মেধাস্বত্ব, ই-শিক্ষা প্রসার, জাতীয় ই-আর্কিটেকচার, ইন্টারনেট অব থিংস, সুশাসন ও ভূমি ব্যবস্থাপনায় আইসিটির ব্যবহার বিষয়ে জানতে উৎসাহী ছিলেন দর্শনার্থীরা। ব্যবসায়ভিত্তিক বিভিন্ন সম্মেলন ও সেমিনারের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল বিপিএম কনফারেন্স, ডিজিটাল মার্কেটিং, হাইব্রিড গেম নির্মাণ, ই-কমার্স খাতের উন্নয়ন, নতুন উদ্যোক্তাদের নিয়ে ডেমো ডে ফর টেক রকার্স, পরবর্তী প্রজন্মের ই-কমার্সের সমস্যা ও সম্ভাবনাবিষয়ক সেমিনারে তরুণদের ভিড় ছিল চোখে পাড়ার মতো। সম্মেলনে কারিগরি সেশনের মধ্যে বাংলাদেশে গুগল, র্যা বিটএমকিউ দিয়ে অ্যাপ্লিকশন স্কেলিং, হ্যাডুপ, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে ক্যারিয়ার ও ১ বিলিয়ন ডলার রফতানির মার্কেটিং কৌশলবিষয়ক সেমিনারে উপস্থিত থেকে নিজেদের জানা-শোনার পরিধি বাড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করেননি তরুণ প্রযুক্তিপ্রেমীরা। আইটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ ও ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটি কনফারেন্সেও আগ্রহের কমতি ছিল না। এসব সভায় ১৫ হাজারের বেশি শ্রোতা অংশ নেন বলে জানিয়েছে মেলার পর্যবেক্ষক টেক অনলাইন ‘হাইফাই পাবলিক’। ইনফোগ্রাফিতে পোর্টালটি জানিয়েছে, সম্মেলনে যোগ দেয়া প্রায় সাড়ে চার লাখ দর্শনার্থীর মধ্যে ৭৬ শতাংশই ছিল পুরুষ। আগতদের ৪০ শতাংশ সেমিনারের যোগ দেয়।
প্রথম দিন
প্রযুক্তি-প্রাণের মেলা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড ২০১৫-এর উদ্বোধনী দিন অনুষ্ঠিত হয় চারটি কনফারেন্স। বেসিস নির্বাহী পরিচালক সামী আহমেদের সভাপতিত্বে ব্যবসায় উন্নয়ন নিয়ে ‘বিজনেস প্রমোশন ম্যানেজমেন্ট’ সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাকসেঞ্চার বাংলাদেশ চেয়ারম্যান অবিনাশ ভিস্তা। এতে নির্ধারিত বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিটল টাটা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মাতলুব আহমাদ, আইটিসি চেয়ারম্যান মার্টিন লাবিব, এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবর রহমান, বাক্য প্রেসিডেন্ট আহমাদুল হক প্রমুখ।
দিনের অন্যতম সভার মধ্যে ছিল টেক উইমেন কনফারেন্স। দুটি প্যানেলে এই সেশনটি পরিচালনা করেন আপলোড ইওর সিস্টেম সিইও ফারহানা এ রহমান এবং বেসিস পরিচালক সামিরা জুবেরি হিমিকা। সভায় নিজেদের সাফল্যের পেছনের গল্প তুলে ধরেন অংশ নেয়া নারী উদ্যোক্তারা। এ সময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও নারী উদ্যোক্তা ফেডারেশনের চেয়ারপারসন রোকেয়া আফজাল রহমান জানান, ১৯৬২ সালে তিনি এশিয়া ব্যাংকে চাকরির সুযোগ পান। দুই বছর চাকরির পর ১৯৬৪ সালে তিনি ম্যানেজার হন। দীর্ঘ সাত বছর ব্যাংকে চাকরি করার পর ব্যবসায় শুরু করেন। সম্মেলনে কুইন্স ব্যুরোর ডিস্ট্রিক লিডার উমা সেনগুপ্তা বলেন, ছেলেদের সাথে মেয়েরাও অবশ্যই এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে এই ধারা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সুযোগ পাওয়ার পর অনেক মেয়ের পরিবার এবং পরিবেশনের জন্য এগিয়ে যেতে পারে না। সে ক্ষেত্রে প্রবল ইচ্ছাশক্তি দিয়ে বাধাগুলো এড়িয়ে যেতে হবে নারীকে। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, আমার মা খুব বেশি শিক্ষিত ছিলেন না। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। নিজে বেশি পড়াশোনা না করলেও ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করতে উৎসাহ দিয়েছেন আমার মা। মায়ের এ ধরনের সাপোর্টের জন্যই তিনি এগিয়ে গেছেন। তিনি জানান, নারীরা যেন আইটিতে এগিয়ে যেতে পারে, তাই নারীদের বিভিন্ন আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে সরকার। এ ধরনের ব্যবস্থার ফলে নারী এগিয়ে যাবে। ঘরে বসে সংসার করার পাশাপাশি কাজ করে আয় করতে পারবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমার মা এবং স্ত্রীর জন্য আমি আজকে এই জায়গায়।
এ দিনের একমাত্র টেকনিক্যাল সেশন ছিল ‘গুগল ইন বাংলাদেশ : হাউ কমিউনিটি ইমপ্রম্নভস দ্য ওয়েব এক্সপেরিয়েন্স’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। সবার সহায়তার মাধ্যমে গুগলের ব্যবহার আরও কত সহজ ও ব্যবহারোপযোগী হতে পারে- তা নিয়ে আয়োজিত সভায় ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। গুগলের এই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের গুগল প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালট্যান্ট খান মোহাম্মাদ আনোয়ারুস সালাম, গুগলের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার রাভি রাজকুমার, গুগলের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার লিন হা এবং গুগলের ট্রান্সলেট সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার অ্যানি মেসার। সভার মূল বিষয় ছিল গুগল কীভাবে কাজ করে, বাংলাদেশে গুগলের ব্যবহার এবং গুগলকে আরও ব্যবহারোপযোগী করতে বাংলাদেশীদের ভূমিকা নিয়ে।
দ্বিতীয় দিন
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হয় ১৩টি সভা-সেমিনার। মিনিস্ট্রিয়াল কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সেবা খাত থেকে জিডিপিতে ১ শতাংশ অবদান রাখার লক্ষে্য ইপিজেডের আদলে ঢাকায় সফটওয়্যার এক্সপোর্ট জোন (এসইজেড) তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। একই সাথে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণেই বাংলাদেশ আজ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ মর্যাদা পাচ্ছে। ২০০৮ সালের দারিদ্র্যতা ৪০ শতাংশ থেকে ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে, মোবাইল ব্যবহারকারী ২০ মিলিয়ন থেকে ১২০ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী দশমিক ০৪ থেকে বেড়ে ২৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশে বর্তমানে পাঁচ হাজরের মতো সাইট ও ই-কমার্স ওয়েবপেজ রয়েছে। যার মাধ্যমে গত বছর ৬০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। একই সাথে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে আয় হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সঞ্চালনায় বিভিন্ন দেশের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন আইটিইউ মহাসচিব হাউলিন ঝাও, ভুটানের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রী দিনা নাথ ধুনগোয়েল, মালদ্বীপের মন্ত্রী আহমেদ আদিম, নেপালের মন্ত্রী মনিন্দ্র প্রসাদ। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল আবদুল মুহিত এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সম্মেলনে আইটিইউ মহাসচিব হাউলিন ঝাও বলেন, যে দেশ যত দ্রুত ইনফরমেশন হাইওয়েতে যুক্ত হবে, তাদের অর্থনীতি ততটাই চাঙ্গা হবে। বাংলাদেশ ও বিভিন্ন দেশের সরকার আইসিটিতে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে, তাতে খুব শিগগিরই এসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে সুসংহত হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল আবদুল মুহিত বলেন, আইসিটি খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। তাই নতুন উদ্যোক্তাদের সরকার সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকার অবকাঠামোর পাশাপাশি মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে। সম্মেলনে নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের প্রতিনিধি ছাড়াও দেশের আইসিটি খাত সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
এ দিনের অপর গুরুত্বপূর্ণ সভা ছিল বিজনেস প্রসেসিং ম্যানেজমেন্ট-বিপিএম। এতে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনার নানা দিক তুলে ধরেন টাই সিলিকনভ্যালির প্রেসিডেন্ট ভেঙ্কটেশ শুক্লা, আভাশান্ত এমডি প্রদীপ মুখার্জী, আইটিসির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মার্টিন লাবিব ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোকনুজ্জামান। সভায় রোকনুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ৩০ মিলিয়ন ছাত্র রয়েছে। এই ছাত্ররাই দেশের সম্পদ। এখানে রয়েছে ২৫ হাজার আইটি ফার্ম। প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচুর তরুণ প্রযুক্তিকর্মী কাজ করছে। তাই এই খাতটিতে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে নজর দেয়া প্রয়োজন।
তৃতীয় দিন
সম্মেলনের তৃতীয় দিনে সর্বোচ্চ ১৪টি সেমিনার ও সভা অনুষ্ঠিত হয়। ক্লাউড ক্যাম্প বাংলাদেশের আহবায়ক মাহমুদ জামানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক এবং অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন প্রকল্পের পরিচালক কবির বিন আনোয়ার, বেসিসের নির্বাহী পরিচালক সামি আহমেদসহ সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা। এতে ক্লাউড কমপিউটিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে ক্লাউড ক্যাম্পের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডেভ লেইলসন বলেন, আজকে আমরা যে বিশ্বব্যাপী ক্লাউড কমপিউটিং নিয়ে কথা বলছি, বিভিন্ন আয়োজন করছি, এই ধারণাটিও কিন্তু প্রযুক্তি আইকন স্টিভ জবসের ছিল। তিনি ১৯৯৭ সালে প্রথম অ্যাপলের মাধ্যমে এর পরিচয় করিয়েছেন। সেই পথ ধরেই আজ আমরা একই ডকুমেন্ট আমাদের মোবাইল ট্যাবলেট এবং ব্যক্তিগত কমপিউটারে ব্যবহার করছি ইচ্ছেমতো। হাতের নাগালে থাকছে সব তথ্য-উপাত্ত। ক্লাউড কমপিউটিং আমাদের সব পর্যায়ে একই অভিজ্ঞতা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ক্লাউড কমপিউটিংয়ের চারটি বৈশিষ্ট্য এই সেবাটিকে অনন্য করেছে। প্রথমত প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্যের ব্যবহার, নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ, পরিমাপযোগ্যতা এবং তথ্যের স্থিতিস্থাপকতা। বর্তমানে প্রায় সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই ক্লাউড কমপিউটিং সেবা দিচ্ছে। এর কারণ হলো বিগ ডাটা। প্রতিদিনই ওয়েবে যুক্ত হচ্ছে বড় আকারের তথ্য। যেমন- গুগলের জি-মেইল, মাইক্রোসফটের আজিউর- সবই ক্লাউড কমপিউটিং।
শেষ দিন
সম্মেলনের শেষ দিনে অনুষ্ঠিত হয় মোট ১২টি সেমিনার। এর মধ্যে তথ্য নিরাপত্তাবিষয়ক নিয়ে ‘ইনফরমেশন সিকিউরিটি’, ‘প্রসেস অ্যান্ড কোয়ালিটি প্র্যাকটিস অ্যাডাপ্টেশন : প্রসপেক্ট অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস’, ‘ইথিক্যাল হ্যাকিং কনফারেন্স’, ‘প্রমোটিং পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশন থ্রু দ্য ইনোভেশন ফান্ড’, ‘আইসিটি ফর গুড গভর্ন্যান্স ইন ল্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ এবং ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ ছিল উল্লেখযোগ্য। ইন্টারনেট অব থিংস অধিবেশন সঞ্চালন করেন গুগল বাংলাদেশের হেড অব এজেন্সি ডেভেলপমেন্ট ভিকি রাসেল। এতে প্যানেল ডিসকাশনে অংশ নেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সহ-সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, ইএটিএলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ, এরিকসন থাইল্যান্ডের যোগাযোগ বিভাগ প্রধান বুনিয়াতি কিদনিয়াম, অগমেটিকস প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আইয়ান শাকিল, রোসেতা আসোসিয়েটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাঞ্জুরুল আলম প্রমুখ। সেমিনারে সৈয়দ আলমাস কবির বলেন, বাংলাদেশে ইন্টারনেট অব থিংস ধারণা ইতোমধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। গুগল কর্মকর্তা ভিকি রাসেল বলেন, এখানে প্রচুর মানুষ মোবাইল মানি সেবা ব্যবহার করেন। গ্রামের মানুষ এই সেবাটি খুব দ্রুত গ্রহণ করেছে। এরকম আরও উদ্ভাবন রয়েছে আমাদের তরুণ বাংলাদেশীদের কাছে। এখন প্রয়োজন এসব উদ্ভাবনগুলোকে উদ্যোগে রূপান্তর করা।
একই দিন হল অব ফেমে ‘বেসিস স্টুডেন্টস ফোরাম’ আয়োজিত ‘আইটি ক্যারিয়ার : স্টেপিং ইনটু দ্য ফিউচার’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশে এমনই দিকনির্দেশনা তুলে ধরেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ফেসবুক কর্মকর্তা আঁখি দাস, লেখক ও স্পিকার সাবিরুল ইসলাম, অন্যরকম গ্রুপের উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান মাহফুজুল হাসান সোহাগ, রকিন সফটওয়্যারের সিটিও শাহ আলী নেওয়াজ তপু, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী, বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান, বিডি সাইক্লিস্টের ফাউন্ডার মোজাম্মেল হক, ওয়ান ডিগ্রি ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা শাহানাজ রশিদ দিয়া ও বিডি জবস ডটকমের সিইও একেএম ফাহিম মাশরুর। সভা সঞ্চালনা করেন বেসিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ। সেশনটি বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) পরিচালক ও বেসিস স্টুডেন্টস ফোরামের আহবায়ক আরিফুল হাসান অপু বলেন, বেসিস সারাদেশে ৬০টিরও বেশি ‘বেসিস স্টুডেন্টস ফোরাম’ গঠন করেছে। ফোরামের তরুণ আইটিপ্রেমীদেরকে আইটি ক্যারিয়ার গঠনে একত্রিত করা হয় সামনের পথটিকে তাদের সামনে মেলে ধরতে।
এদিকে ‘প্রমোটিং ইন্টারনেট অ্যাক্সেস অ্যান্ড ইকোনমিক গ্রোথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে কথা বলেন ফেসবুকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক আঁখি দাস। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে তিনি বলেন, পিছিয়ে পড়া তৃতীয় বিশ্বকে বদলে দেবে ইন্টারনেট। যোগাযোগের মহাসড়ক হয়ে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে নির্ভৃতে অবদান রাখছে ফেসবুক। ফলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহারে বাংলাদেশ অনেক দূর পৌঁছবে। কেননা, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ খুব কম সময় অনেক দূর এগিয়েছে। আশা করছি তথ্য ও প্রযুক্তি বাংলাদেশকে অনেক দূরে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এসএম আশরাফুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমিনারে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বিটিআরসি চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস, বেসিস প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান, গ্রামীণফোনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার রাজিব শেঠী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার, বিডি জবসের সিইও ফাহিম মাশরুর এবং এটু্আই পলিসি অ্যাডভাইজার আনীর চৌধুরী।
সেরা জেলা প্রশাসক
ঢাকা বিভাগের সেরা জেলা প্রশাসক তোফাজ্জাল হোসেন মিয়া, জেলা প্রশাসক, ঢাকা। চট্টগ্রামে বিভাগে মো: হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, জেলা প্রশাসক, ফেনী। খুলনা বিভাগে সৈয়দ বেলাল হোসেন, জেলা প্রশাসক, কুষ্টিয়া। রাজশাহী বিভাগে মো: শফিকুর রেজা, জেলা প্রশাসক, বগুড়া। বরিশালে বিভাগে অমিতাভ সরকার, জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালী। সিলেট বিভাগে শেখ রফিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ। রংপুর বিভাগে আহমদ শামীম আল রাজী, জেলা প্রশাসক, দিনাজপুর।
সেরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার
ঢাকা বিভাগে মো: অহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ। চট্টগ্রাম বিভাগে শেখ ছালেহ আহাম্মদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, চান্দিনা, কুমিলস্না। খুলনা বিভাগে সিফাত মেহনাজ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অভয়নগর, যশোর। রাজশাহী বিভাগে মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, নাটোর সদর। বরিশাল বিভাগে শামীমা ফেরদৌস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ঝালকাঠি সদর। সিলেট বিভাগে আমিনুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বড়লেখা, মৌলভীবাজার। রংপুর বিভাগে মাকসুদা বেগম সিদ্দীকা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পঞ্চগড় সদর।
সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি)
ঢাকা বিভাগে মো: মমিন উদ্দিন, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), ধানম-- সার্কেল, ঢাকা। চট্টগ্রাম বিভাগে মো: সামিউল মাসুদ, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), সদর সার্কেল, চট্টগ্রাম। খুলনা বিভাগে তৌহিদুজ্জামান পাভেল, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), নড়াইল সদর, নড়াইল। রাজশাহী বিভাগে মুহা: শওকাত আলী, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), পাবনা সদর। বরিশাল বিভাগে মুহাম্মদ ইব্রাহীম, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), বরগুনা সদর, বরগুনা। সিলেট বিভাগে বিএম মশিউর রহমান, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), বানিয়াচং, হবিগঞ্জ। রংপুর বিভাগে এসএম গোলাম কিবরিয়া, সেরা সহকারী কমিশনার (ভূমি), পীরগঞ্জ, রংপুর।
সেরা ডিজিটাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ঢাকা বিভাগে মুসলিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। বরিশাল বিভাগে উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। খুলনা বিভাগে খুলনা পাবলিক কলেজ। সিলেট বিভাগে সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ। চট্টগ্রাম বিভাগে লক্ষ্মীপুর আদর্শ সামাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। রাজশাহী বিভাগে কামারখন্দ ফাজিল মাদ্রাসা। রংপুর বিভাগে বিপি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
সেরা ডিজিটাল থানা
ঢাকা বিভাগে সাভার মডেল থানা, ঢাকা। চট্টগ্রাম বিভাগে দেবিদ্বার থানা, কুমিলস্না। খুলনা বিভাগে কোতোয়ালী থানা, যশোর। রাজশাহী বিভাগে কাহালু থানা, বগুড়া। বরিশাল বিভাগে ভোলা সদর থানা, ভোলা। সিলেট বিভাগে কোতোয়ালী মডেল থানা, এসএমপি, সিলেট। রংপুর বিভাগে সদর থানা, ঠাকুরগাঁও।
বিশেষ সম্মাননা
বিশেষ সম্মাননা (আইসিটি অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড) পেয়েছেন নাফিস বিন জাফর, হিমেল দেব, ড. অনন্য রায়হান, কামাল কাদির, ফাহিম মাশরুর ও ওয়াহিদ শরীফ।
সেরা কোডিং যোদ্ধা
ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে এ পুরস্কার জয় করেছে টেকনেক্সট লিমিটেড কোম্পানি ও আইআইটি ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা। রানার্সআপ হয়েছে যান্ত্রিক টেকনোলজিস লিমিটেড ও ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট ট্র্যাকে এ পুরস্কার জয়ী হয়েছে মোবিওঅ্যাপ লিমিটেড এবং সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। রানার্সআপ হয়েছে টেকনেক্সট লিমিটেড কোম্পানি এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
চার দিনের সম্মেলন শেষে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, পোশাক খাতে আমরা ভালো অবস্থানে আছি। কিন্তু আমরা শুধু এই খাতের ওপর নির্ভর থাকতে পারি না। আমাদের অন্যান্য খাতও এগিয়ে যাচ্ছে। এবার আমাদের লক্ষ্য- আমরা ১ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাব সফটওয়্যার খাতে। আমাদের গতি আরও বাড়াতে হবে। সেজন্য আমাদের অর্থনীতির গ্রোথ শতকরা ১০ ভাগে নিতে হবে। আমাদের বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আমরা এতদিন অপেক্ষা করেছিলাম বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে। আমাদের মেধার অভাব নেই। প্রয়োজন মেধার বিকাশ ঘটানো। পৃথিবীর বড় বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুগল, ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে মেধা। এ ধরনের বিশ্বসেরা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে বড় বড় শিল্পকারখানা গড়ে তোলা নয়, বরং প্রয়োজন মেধার। আমাদের সেই মেধা রয়েছে।
সম্মেলনের আন্তর্জাতিক অর্জন
এদিকে সম্মেলনে অংশ নিয়ে ডিজিটালাইজেশনে বাংলাদেশকে অনুসরণের আগ্রহ প্রকাশ করে মালদ্বীপ। মালদ্বীপ ডিজিটাল বাংলাদেশের সফল অভিজ্ঞতাগুলো তাদের নিজ দেশে বাস্তবায়নের বাংলাদেশের সহযোগিতা পেতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। সেই পরিপ্রেক্ষেতে সমাপনী দিনে ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মালদ্বীপ সরকারের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফরমেশন টেকনোলজির (এনসিআইটি) সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় এটুআই প্রোগ্রাম মালদ্বীপ সরকারকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনা, হজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স প্রসেস, বিদ্যমান সরকারি সেবাকে ই-সেবায় রূপান্তর, ন্যাশনাল পোর্টাল ও ডাটা সেন্টার স্থাপন বিষয়ে সহযোগিতা করবে। এ উদ্যোগ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন জোরদার করতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞজনেরা
প্রযুক্তি পদক পেলেন যারা
সম্মেলনের শেষ দিন রাতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখা ৫৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়। আজীবন সম্মাননা পান বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সংবাদ প্রকাশে জনসচেতনতা গড়ে তোলায় দৈনিক সমকাল, সেরা সাংবাদিক এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ মুন্নী সাহা, তথ্যপ্রযুক্তি সাংবাদিকতায় রেডিও আমার বার্তা প্রধান আবীর হাসান, সেরা নারী উদ্যোক্তা ফারহানা এ রহমান, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর এবং অস্কার জয়ী নাফিস বিন জাফরকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়।
এছাড়া নিজ নিজ ক্ষেত্রে সেরা হয়েছেন বগুড়ার পুলিশ সুপার মো: মোজাম্মেল হক, ও চট্টগ্রামের খুলশী থানার ওসি মাইনুল ইসলাম ভূঁইয়া। সেরা ডিজিটাল পৌরসভা ঝিনাইদহ পৌরসভা। সেরা ডিজিটাল হাসপাতাল ঢাকার জাতীয় কিডনি ডিজিসেস অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকড)। সেরা ডিজিটাল ব্যাংক ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - মার্চ সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস