সময়ের সাথে ছোট হয়ে আসছে অসম্ভবের তালিকা। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে দারিদ্র্যের অবসান, মৌলিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে সার্বজীনন প্রবেশ ইত্যাদিও বিদায় নেবে অসম্ভবের তালিকা থেকে। আইসিটি এসব অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে। আইসিটি দ্রুত বদলে দিচ্ছে আমাদের দুনিয়া। সৃষ্টি করছে দূরত্বহীন, সীমানাহীন তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সুবিধা। ক্রমেই আইসিটি হয়ে উঠছে সস্তা থেকে সস্তাতর। আইসিটি আজ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গ্রাম এলাকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন সাধনের এক সম্ভাবনাময় হাতিয়ার। আইসিটি গ্রাম এলাকায় সৃষ্টি করছে আয়ের সুযোগ। গ্রামীণ সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি হয়ে উঠছে আইসিটি। আইসিটিতে আমাদের কষ্টার্জিত বিনিয়োগ ফল দিতে শুরু করেছে। চরম গরিব দেশ বাংলাদেশও গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে বহু আগেই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গরিব মানুষের জন্য সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইসিটি খাতে বিনিয়োগ শুরু করে। এর সুফল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষও আজ পাচ্ছে। আইসিটি তাদের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে। গরিব মানুষের সামনে খুলে গেছে নতুন নতুন সুযোগ।
২০০৮ সালে দাঁড়িয়ে আজ আর অস্বীকার করার উপায় নেই, আইসিটি গোটা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এক ইতিবাচক রূপান্তর ঘটিয়েছে। এমনকি এ অঞ্চলে সবচেয়ে কম উন্নত দেশের মানুষের জীবনেও আইসিটি ছাপ ফেলেছে। এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামোতে আইসিটি হয়ে উঠেছে কেন্দ্রীয় বিষয়। আইসিটির ছোঁয়ায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন উঠে এসেছে অভিজাত পর্যায়ে। আইসিটি বাজারসমূহের মধ্যে অভূতপূর্ব সংহতি এনে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা আইসিটি ক্রমবর্ধমান হারে ধনী-গরিব ব্যবসায়ী, দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনছে।
গোটা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আইসিটিতে সার্বজনীন প্রবেশ ঘটানোর লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে ICT4D (ICT for Development) পলিসি। এই নীতি উদ্যোগে রয়েছে উচ্চাকাক্সক্ষী কিছু আপ্তবাক্য। যেমন কমপিউটার ফর অল কিংবা ওয়ান ল্যাপটপ পার চাইল্ড। এগুলো নিশ্চিতভাবেই গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। কারণ, যেখানে এখনো মানুষের প্রবেশ নেই মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য ও পানীয়ে, সেখানে আইসিটিতে চাহিদামতো অর্থ সহায়তা যোগানো সত্যিই কঠিন। এমনি যখন অবস্থা, তখনো এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলো আইসিটি খাতে বিনিয়োগের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে চলেছে। কেনো? এর উত্তর সহজ। আইসিটি অর্থনৈতিক উন্নয়নকে আরো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে তা ঠিক, তারপরও আইসিটিকে এড়িয়ে চলার অন্য অর্থ দাঁড়ায় ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকে নিজের দেশকে বাইরে রাখা। কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এখন পুরোপুরি নির্ভরশীল প্রযুক্তির ওপর। ছোট-বড় গরিব-ধনী সব দেশের জন্যই তা সত্য। কিন্তু একটি সত্যিকারের সমাজ বিনির্মাণের চ্যালেঞ্জ এখনো উল্লেখযোগ্যভাবে বড় মাপের। শুধু আইসিটি খাতে বিনিয়োগ করে এর জাদুকরী সমাধান পাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রয়োজন প্রতিটি ব্যবসায়ে, সরকার, এনজিও আর ব্যক্তিপর্যায়ে এমন কৌশল অবলম্বন, যা বিশ্বের বিশেষ পরিস্থিতির সাথে মানানসই। আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো আইসিটি বাজারের প্রকৃতি হচ্ছে খুবই অস্থিতিশীল। এটি বিবেচনায় রেখে তাগিদ হচ্ছে নেটওয়ার্ক বাড়িয়ে যাওয়া, যেখানে আমরা শেখার সুযোগ পাবো অন্যদের অভিজ্ঞতার আলোকে। এখানে ওয়ান-সাইজ-ফিটস-অল ধরনের কোনো দর্শন কার্যকর নয়। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার প্রকাশ করেছে ডিজিটাল রিভিউ অব এশিয়া প্যাসিফিক ২০০৭-২০০৮। এই পর্যালোচনা রিপোর্টের অন্যতম একটি লক্ষ্য, এসব অভিজ্ঞতার দলিল তৈরি ও অভিজ্ঞতার পারস্পরিক অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি। এ রিপোর্টের ধারণাগত অধ্যায়গুলোর মধ্যে আছে : মোবাইল ও ওয়্যারলেস টেকনোলজিস, রিস্ক কমিউনিকেশন্স, লোকেলাইজেশন, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রিজিয়ন্স। আমরা এরই আলোকে প্রথমে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ডিজিটাল পরিস্থিতি, এর পরে বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করব। এ লেখায় আমরা প্রধান প্রধান প্রবণতা ও মানব-উন্নয়ন, প্রযুক্তি, জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি, ডিজিটাল ও অর্থনৈতিক বিভাজন, নিরাপত্তা, পরিবেশ ও ই-গভর্নমেন্টের ওপর এর প্রভাবটুকুও তুলে ধরার প্রয়াস পাবো। আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশসহ এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অন্যান্য দেশ এর আলোকে তাদের নিজেদের অবস্থান পরিমাপ করে নিজ নিজ আইসিটি খাতকে এগিয়ে নেয়ার সঠিক পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।
প্রাযুক্তিক উন্নয়ন
প্রাযুক্তিক উন্নয়ন অব্যাহতভাবে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করে চলেছে। সবচেয়ে বড় মাপের পরিবর্তনটা হচ্ছে তিনটি উদ্ভাবনীমূলক পরস্পরসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে : ব্রডব্যান্ড, কনভারজেন্স ও ওয়্যারলেস। এসব প্রাযুক্তিক পরিবর্তন সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার আকার-আয়তন পাল্টে দিচ্ছে। আর এসব সুবিধা পাওয়া যায় অনলাইন পরিবেশে।
ব্রডব্যান্ড :
চারদিকে ব্রডব্যান্ডের পরিব্যাপ্তি অব্যাহত রয়েছে দ্রুতগতিতে। প্রাযুক্তিক পর্যায়ে গোটা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ডিএসএল তথা ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রডব্যান্ড সরবরাহের ক্ষেত্রে প্রধানতম প্রটোকল হিসেবে। ব্যাপক বিনিয়োগ চলছে ফিক্সড টেলিফোনের পিএসটিন অর্থাৎ প্লেইন স্ট্যান্ডার্ড টেলিফোন নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে। ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে পাওয়া ব্যান্ডউইডথের প্রবৃদ্ধি পরিবর্তন এনেছে কনটেন্টে। এ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে দুটি উল্লেখযোগ্য কারণ।
প্রথমত, ব্রডব্যান্ড হচ্ছে অলওয়েজ অন। অর্থাৎ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক এখন টেলিফোন অথবা অন্যান্য ব্রডকাস্টে নেটওয়ার্কের মতো পরিষেবার আকার ধারণ করেছে, যা যখন-ইচ্ছে-তখন ব্যবহার করা যায়। এর অর্থ ভিওআইপি তথা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট টেলিফোনি হতে পারে টেলিফোনের টেকসই বিকল্প।
দ্বিতীয়ত, ব্রডব্যান্ডের ফলে ব্যান্ডউইডথে সম্প্রসারণে প্রভাব ফেলেছে আলোচ্য অঞ্চলে। বেড়েছে অডিও ভিজ্যুয়াল মেটেরিয়েলের অনলাইন সরবরাহ। ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কসমূহের মধ্যে বর্ধিত পরিমাণে পাঠাচ্ছে তাদের অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট। এর ফলে জনপ্রিয় ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্টের ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটছে। যেমন ব্যবহার বেড়েছে ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউব এবং ফটোগ্রাফি ওয়েবসাইট ফ্লিকার-এর। ব্যবহারকারীরা তাদের পিসিকে ব্যবহার করছে মিউজিক ও ফটো লাইব্রেরি, ভিডিও প্লেয়ার এবং হোম ভিডিও এডিটিং স্যুট হিসেবে।
এশিয়া অঞ্চল এখন ব্রডব্যান্ডের প্রসারে শীর্ষস্থানীয় অঞ্চল। এ অঞ্চলে সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্রডব্যান্ডের বিকাশ ঘটছে দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং ও তাইওয়ানে। এসব দেশে দ্রুতগতির ডাটার মাধ্যমে যোগান দিচ্ছে নতুন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ও সার্ভিস।
কনভারজেন্স :
এ অঞ্চলে কনভারজেন্স চলছে জোরালো পর্যায়ে। পূর্ববর্তী আলাদা আলাদা মাধ্যমে অর্থাৎ রেডিও, মিউজিক স্টোর, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, টেলিফোন ইত্যাদিকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক। উল্লিখিত আলাদা আলাদা গণমাধ্যমগুলো এখন কনফিগার করা হচ্ছে ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মধ্যে। এর ফলে যোগাযোগের নিয়ন্ত্রকদের মাঝে বিধি-বিধান সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক ও নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সমস্যার সৃষ্টি করেছে। যেমন সমস্যা দেখা দিয়েছে টেলিভিশন ও রেডিও ব্রডকাস্টারদের জন্য স্পেকট্রাম বরাদ্দ প্রশ্নে। আগে ব্রডকাস্টারদের মাধ্যমে কনটেন্ট কন্ট্রোল ছিল তুলনামূলকভাবে সহজতর। কিন্তু আজকের নতুন মিডিয়া পরিবেশে কোনো প্রযোজক বিশেষের প্রযোজিত কনটেন্ট হোস্ট করা যায় বিদেশে কিংবা অসংখ্য কনটেন্ট চ্যানেলে। ফলে লোকাল কনটেন্টের ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ওয়্যারলেস :
এ অঞ্চলে অব্যাহতভাবে বেড়ে চলেছে মোবাইল যন্ত্রপাতি ও ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের বংশ। তেমনি যন্ত্রপাতি নিয়ে লাস্ট মাইল পর্যন্ত চলাচল বাড়ছে আর কমছে এগুলো ব্যবহারের খরচ। যেমন ২০০১ ও ২০০৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার দশগুণেরও বেশি বেড়েছে। একই সময়ে ফিক্সডলাইন টেলিফোন গ্রাহক দ্বিগুণ হয়েছে।
সীমিত সম্পদের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সেল স্পেকট্রামে প্লাটফরম বাছাইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অতি উন্নত বাজার অর্থনীতির দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সুযোগ রয়েছে জিএসএম ও সিডিএমএর মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক অবকাঠামোতে বিনিয়োগের। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিদেশী দাতা ও বেসরকারি খাতের যৌথ বিনিয়োগ পরিবর্তন আনতে পারে প্রযুক্তি প্লাটফরমে। প্লাটফরম বাছাইয়ে ভবিষ্যতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
উদ্ভাবনীমূলক মোবাইল অপারেটররা সাগ্রহে গ্রহণ করছে এসব পরিবর্তন। জাপানে ৬ লাখ one-seg টেলিফোন সার্ভিস চালু হওয়ার তিন মাসের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। এসব টেলিফোন ডিজিটাল টেলিভিশন সম্প্রচার গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু নিয়ন্ত্রকদের লাইসেন্স জটিলতার কারণে এখনো এতে কাস্টমাইজড কনটেন্ট তৈরি করা যাচ্ছে না। এটি জাপানের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের নতুন প্রযুক্তির প্রতি সারা দেয়ার ক্ষেত্রে একটি পশ্চাৎপদতা। এমনি ধরনের পশ্চাৎপদতা আমাদের এ বাংলাদেশে আমরা দেখেছি ভিওআইপি উন্মুক্ত করা ও সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ সুবিধা সৃষ্টির ক্ষেত্রে।
তবে ওয়্যারলেস প্রযুক্তি চালুর ব্যাপারে এশিয়াই পালন করছে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা। আই-মোডের মতো মোবাইল ডাটাসমূহ সার্ভিসে জাপান দীর্ঘদিন ধরে নেতৃস্থানীয় স্থানটি দখল করে আছে। মোবাইল ইনফরমেশন সোসাইটি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়া, হংকং, ফিলিপাইন ও তাইওয়ানের ভূমিকা স্বীকৃত হচ্ছে। মোবাইল ওয়্যারলেসের প্রশ্নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিরাপত্তা। ফিক্সডলাইন পরিবেশে একটি নেটওয়ার্কে সম্পন্ন যোগাযোগ-বিশেষের উৎস চিহ্নিত করা সম্ভব। কিন্তু প্রি-প্রেইড কল ও ওয়্যারলেস ইন্টারনেটের বেলায় তা করা সব সময় সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন নীতি-প্রতিকারও রয়েছে। যেমন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রি-প্রেইড কলিং সার্ভিসের সেল পয়েন্টে আইডেনটিফিকেশন প্রকাশ করতে হয়। তবে এ ধরনের নীতি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বিনাশ করার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
ইলেকট্রনিক বর্জ্য ও পরিবেশিক প্রভাব
আজ তাই প্রশ্ন উঠেছে ইলেকট্রনিক বর্জ্য বা ই-বর্জ্য নিয়ে। বিশ্বে ই-বর্জ্য সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। আইসিটি পণ্যের বিষাক্ত উপাদান, যেমন সীসা, বেরিলিয়াম, পারদ, ক্যাডমিয়াম ও ফ্লেম রিটারডেন্টসমূহ আজ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পেশা ও পরিবেশগত স্বাস্থ্য সমস্যায়। তথ্যপ্রযুক্তির সর্বাধিক ব্যবহার হচ্ছে ধনী দেশগুলোতে, আর এদের বর্জ্য পণ্যগুলো রফতানি হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ই-বর্জ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেমন, ইইসিজেড প্রোগ্রাম (http://www.eecz.org/ index,hotmail)। এর লক্ষ্য চীনের ঝিঝেং প্রদেশের শিল্পকারখানায় শিল্প কর্মকাণ্ডে ক্ষতিকর দূষণ কমিয়ে আনা। ই-বর্জ্য দমনে প্রয়োজন বেশ কিছু নীতি-কৌশল। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হচ্ছে ই-বর্জ্যরে নিট আমদানিকারক। সে হিসেবে এ অঞ্চল সমঝোতার মাধ্যমে একটা ই-বর্জ্যরে মাত্রা নির্ধারণ করে দিতে পারে। একটি যৌথ কর্তৃপক্ষ এ মাত্রা মেনে চলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাছাড়া পণ্যমূল্যেও প্রতিফলন রয়েছে পরিবেশগত ও মানবিক ক্ষতির দিকটি। এ বিষয়টি এখনো আইসিটি উৎপাদকরা ব্যাপকভাবে এড়িয়ে চলছে।
আইসিটি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য
আইসিটি ও দারিদ্র্য বিমোচন :
আইসিটি খাতের জোর তাগিদ হচ্ছে গরিব জনগোষ্ঠীর অনুকূল উন্নয়ন। তারপরও দারিদ্র্য ও উন্নয়নের জন্য আইসিটির একটি সমাধান খুঁজে পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ। এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সরকার আইসিটি নীতি-কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে প্রযুক্তিপার্কে। লক্ষ্য হচ্ছে, গ্রামের মানুষও যেনো প্রযুক্তির রাজ্যে সহজ প্রবেশ ঘটাতে পারে। কিন্তু এ ব্যাপারে গ্রামের মানুষকে কিভাবে প্রণোদিত করা যায়, সে প্রশ্নটিও রয়ে গেছে জটিল পর্যায়ে। এর সহজ সমাধানও এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এমনটি বলা হয়নি যে, দারিদ্র্য বিমোচনে আইসিটির কোনো ভূমিকা পালনের অবকাশ নেই। বরং বলা হয়, আইসিটিকে সমন্বিত করতে হবে বৃহত্তর কাঠামোতে-যেমন শিক্ষায়, ব্যবসায় বাণিজ্যে ও এমনি আরো অনেক ক্ষেত্রে। গরিব মানুষের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সূচিত টেলিসেন্টার সম্পর্কিত সাম্প্রতিক এক ইউএনডিপি জরিপে দেখা গেছে, ব্যবহারকারীর সন্তুষ্টি প্রধানত নির্ভর করছে টেলিসেন্টার স্টাফদের দক্ষতার ওপর। এতে বুঝা যায়, আইসিটির সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে মানবিক দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। তা সত্ত্বেও দারিদ্র্য বিমোচনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
আইসিটিসংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক উন্নয়ন :
আলোচ্য অঞ্চলে আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে অনেক দেশ তাদের অর্থনৈতিক নীতিতে আইসিটি শিল্পের প্রতি জোরালো নজর দিয়েছে। একটি সাধারণ কৌশল হতে পারে আইসিটি শিল্পগুলোকে একত্রে গুচ্ছ আকারে গড়ে তোলা, যাতে প্রতিটি শিল্পকারখানা পারস্পরিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারে। সেই সাথে গড়ে তুলতে পারে আঞ্চলিক সংযোগ। মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া সুপার করিডোর তথা এমএসসি এর একটি বড় উদাহরণ। প্রযুক্তিপার্কগুলোর মধ্যে অনানুষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষার বিনিময় সার্বিক দক্ষতা গড়ে তোলায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সেজন্য ইরানের মতো অন্য দেশগুলোও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় এধরনের শিল্পগুলোতে ভর্তুকি দিচ্ছে। শুধু ইরানেই এখন এ ধরনের নয়টি প্রযুক্তিপার্ক রয়েছে।
এ অঞ্চলে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ও বিতর্কিত নীতি-কৌশল হচ্ছে স্থানীয় আইসিটি উৎপাদকদের সুরক্ষার জন্য শুল্ক আরোপ। এ ধরনের সুরক্ষা ছাড়া স্থানীয় হার্ডওয়্যার শিল্প গড়ে তোলা অসম্ভব এবং এ ধরনের শিল্পকারখানা ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রতিযোগিতা করাও সম্ভব হবে না। অপরদিকে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে আইসিটি হার্ডওয়্যার অকারণে ব্যয়বহুল রাখা হয়। ফলে তা থেকে যায় অনেক সাধারণ ব্যবহারকারীর নাগালের বাইরে।
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিপিও তথা বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং দিন দিন বাড়ছে এবং তা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনছে। এক পর্যায়ে আউটসোর্সিং এ অঞ্চলের অনেক দেশের আয়ের উল্লেখযোগ্য উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো কলসেন্টার, অ্যানিমেশন ও ডাটা প্রসেসিংয়ের কাজ এ অঞ্চলে আউটসোর্সিং করছে উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনার ভাবনা মাথায় রেখে।
বেসরকারি অবকাঠামো হিসেবে ইন্টারনেট :
আইসিটিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ে নতুনতম চাপ হচ্ছে নেটওয়ার্ক নিউট্রালিটির ধারণা। ইন্টারনেটের তাত্ত্বিক মডেল অনুযায়ী আইএসপি সব ইন্টারনেট ট্র্যাফিক সমভাবে বহন করে। আইএসপি কোনো ডাটা ট্র্যাফিকের ওপর অগ্রাধিকার কিংবা ব্লক আরোপ করে না। এজন্য ভিন্ন ভিন্ন চার্জও আদায় করে না। ব্যবহারকারী গোষ্ঠী এ ওপেননেস তথা স্বচ্ছতা বিধানের জন্য চায় আইনগত পদক্ষেপ। তাদের অভিমত, এটা অপরিহার্য। কারণ, উচ্চ সুইচিং খরচ ও সীমিত পছন্দের কারণে ব্যবহারকারীদের মধ্যে সত্যিকারের কোনো প্রতিযোগিতা নেই। ব্যবহারকারীরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে, কনটেন্ট লিঙ্কের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রয়াস সুনির্দিষ্ট কোনো লিঙ্কের জন্য প্রোভাইডারদের সাথে চুক্তিতে যেতে হতে পারে। অনেকের ধারণা ইন্টারনেট একটি পাবলিক ফ্যাসিলিটি। কারণ, তথ্য হস্তান্তরের জন্য টেকনিক্যাল প্রটোকল হচ্ছে পাবলিক। কিন্তু প্রকৃত ভৌত নেটওয়ার্কের মালিক প্রাথমিকভাবে বেসরকারি। যেহেতু ইন্টারনেট বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো হয়ে উঠছে, তাই বেসরকারি মালিকানাধীন এ ইন্টারনেট অবকাঠামোকে জনস্বার্থে ব্যবহার করা একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্টারনেট গভর্নেন্স
ইন্টারনেট সম্পর্কে একটা সাধারণ মিথ হচ্ছে : Internet is not governed।
কারিগরি দিক থেকে বলা যায় ইন্টারনেট গভার্নড না হয়ে বরং হয় কো-অর্ডিনেটেড। এটি অবশ্য সত্য এমন কোনো একক স্থান নেই, যেখানে একটি ইন্টারনেট শাসক ও সমন্বয়ক সংস্থাকে চিহ্নিত করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে বেশ কিছু আলাদা ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে গভর্নেন্সের বিশ্লেষণ প্রয়োজন।
ইন্টারনেট গভর্নেন্সের ক্ষেত্রে একটা প্রশ্ন উঠেছে আইডিএন তথা ইন্টারন্যাশনাল ডোমেইন নেম নিয়ে। এ নিয়ে বিতর্ক চলমান। এর বিশেষ প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও। ডোমেইন নেম সিস্টেম তদারকি করে ICANN (ইন্টারনেট কর্পোরেশন ফর অ্যাসাইন্ড নেমস অ্যান্ড নাম্বারস)। এটি কাজ করে রোমান স্ক্রিপটের উপসেটের ওপর। যেহেতু ইংরেজি না জানা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে, তখন এটি প্রমাণ হয়ে গেছে ICANN অন্যান্য ল্যাঙ্গুয়েজ ও স্ক্রিপটে ইন্টারনেট নেভিগেশন সার্ভিসে যোগাতে সক্ষম নয়। আইক্যান সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, এটি নতুন টেস্টবেড চালু করতে যাচ্ছে নতুন আইডিএন ব্যবহারের জন্য। তা সত্ত্বেও অনেকেই মনে করে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য তা নগণ্য এবং অনেক দেরি হয়ে গেছে। একটি বিকল্প ব্যবস্থা দরকার, যা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য অনলাইনে তাদের নিজেদের ভাষা ব্যবহারের সুযোগ এনে দেবে। এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক গ্র“প ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলে আইডিএন টেস্টবেড। বিশেষ কিছু আইএসপি ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠা করেছে কিছুসংখ্যক আইডিএন। মাল্টিল্যাঙ্গুয়াল ইন্টারনেট নেমস কনসোর্টিয়াম তথা এমআইএনসি-এর মতো কিছু সংগঠন একটি কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছে, যাতে করে এটুকু নিশ্চিত হয় যে, বিভিন্ন জোনে আইডিএন লিকেজের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ফ্র্যাগমেন্টেশন না ঘটে।
আইডিএন বিতর্ক এখনো বিভিন্ন মেরুকেন্দ্রিক। একটি মহল সমর্থন করে সার্বজনীনতা, প্রমিতকরণ, স্থিতিশীলতা ও নিয়ন্ত্রণ (ইউনিভার্সেলিটি, স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন, স্ট্যাবিলিটি ও কন্ট্রোল)। এদের বিপরীতে যারা চাইছেন বহুজনীনতা, বৈচিত্র্য, ঢিলেঢালা সমন্বয় এবং স্থানীয় ভাষা গোষ্ঠীর কাছে জবাবদিহিতা। এ বিতর্ক এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রবল। বিদ্যমান এ প্রেক্ষাপটে ICANN এবং IETF (ইন্টারনেট ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্স)-এর মতো সংস্থাগুলো আইডিএনের জন্য একটি একক ব্যবস্থা গড়ে তোলা উচিত বলে মনে করে। এ একক ব্যবস্থা সব স্টেকহোল্ডারের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে। তাই এরা মনে করে মাল্টিপল সিস্টেম এড়াতে হবে। তা সত্ত্বেও আইডিএনের জন্য সার্বজনীন উদ্যোগ সৃষ্টি করে আরো বেশি জটিল কারিগরি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সমস্যা- একটি বিশেষ ভাষাগোষ্ঠীর জন্য একটি টেকসই ব্যবস্থা গড়ে তোলার তুলনায়। এ জটিলতাই আইক্যান ব্যবস্থায় আইডিএন গড়ে তোলায় অগ্রগতি ঘটছে না। এসব মতভেদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সবাই একমত, এটুকু নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ইন্টারনেট থাকে একটি একক ও আন্তঃপরিচালনা উপযোগী পাবলিক ফ্যাসিলিটি। অনেকেই ক্রমবর্ধমান হারে বিশ্বাস করছেন, জনগণের অধিকার রয়েছে তাদের নিজের ভাষা যোগাযোগ রক্ষার এবং অধিকার রয়েছে এই নতুন মাধ্যমে যোগাযোগ সম্প্রসারণের।
সাংস্কৃতিক ও স্থানীয় কনটেন্ট প্রথা
প্রাসঙ্গিক স্থানীয় ভাষায় তৈরি কনটেন্টের প্রাপ্যতা খুবই জরুরি। ইংরেজির প্রাধান্য ও যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক কনটেন্ট সে পথে বড় বাধা। ইংরেজিপ্রধান ও যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক অনেক কনটেন্ট এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিকও নয়। লোকেলাইজেশনের সাথে অনেক কারিগরি বিষয় সংশ্লিষ্ট। যেমন : এনকোডিং, কী-বোর্ড ও ইনপুট মেথড, ফন্ট ও রেন্ডারিং, স্থান ও স্থানীয় ভাষা ইন্টারফেস। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বেশ কিছুসংখ্যক উল্লেখযোগ্য প্রকল্প চালু রয়েছে লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ কমপিউটিং ক্যাপাসিটি গড়ে তোলার জন্য। নেপালের Dobhase Projects -এ কাজ হচ্ছে ওয়েবে ইংরেজি থেকে নেপালি ভাষা অনুবাদ সুবিধা সৃষ্টির জন্য। ভুটানে সফলভাবে উদ্ভাবন করা হয়েছে লোকেলাইজড অপারেটিং সিস্টেম Dzongkha Linux।
ক্রমবর্ধমান হারে এ অঞ্চলে আইসিটি নীতিমালা সাংস্কৃতিক ও স্থানীয় কনটেন্টের ওপর জোর দিচ্ছে। আসিয়ান আইসিটি ফান্ড অনুমোদন দিয়েছে ব্র“নি অ্যাকশন প্ল্যান। এ প্ল্যানের আওতায় আসিয়ান দেশগুলো হোমওয়ার্কারদের ক্ষমতায়ন উদ্যোগ নেয়া হবে। যুবকদের জন্য আয়োজন করবে ই-লার্নিং, ই-কালচার ও ই-হেরিটেজ প্রশিক্ষণ। গড়ে তুলবে আসিয়ান স্কিল স্ট্যান্ডার্ড। এ অঞ্চলের দেশগুলো মেধাসম্পদ ও প্যাটেন্ট সম্পর্কে ক্রমেই সচেতন হচ্ছে। বাংলাদেশে এ সম্পর্কিত আইন হয়েছে। ভারতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ট্রাডিশনাল নলেজ ডিজিটাল লাইব্রেরির। এতে ৩৬ হাজার আয়ুর্বেদিক সূত্রের ও অন্যান্য প্রচলিত ওষুধের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। এতে মেধাসম্পদ ও প্যাটেন্ট জালিয়াতি কমবে। তবে এ অঞ্চলে লোকাল কনটেন্ট কোম্পানিগুলোর জন্য একটি টেকসই আর্থিক মডেল এখনো থেকে গেছে সমস্যাকর। এ সমস্যা সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই। তাই বহু ভাষা-সংস্কৃতির ধারক একটি দেশের জন্য একটি সাধারণ ভাষার কনটেন্ট তৈরিই সহজ হবে। এশিয়ার দেশগুলোতে অনেক ব্লগ লোকাল কনটেন্ট অভাব পূরণ করছে। শুধু ইন্দোনেশিয়ায় এ ধরনের এক লাখ ব্লগ রয়েছে। এগুলোতে রয়েছে ইউজার-জেনারেটেড কনটেন্ট।
ই-গভর্নমেন্ট ও নিয়ন্ত্রণ
সম্ভবত এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আইসিটি নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে : প্রতিটি দেশেরই দরকার একগুচ্ছ সাংস্কৃতিকভাবে স্পর্শকাতর ও অব্যাহত জাতীয় অগ্রাধিকার নীতি প্রণয়ন। আইসিটি সম্পর্কিত নীতি সূত্রায়নের সর্বোত্তম কোনো উদ্যোগ নেই। তারপরও এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশ তাদের নিজস্ব নীতিমালা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবধান শুধু বিধি-বিধান সম্পর্কিত উদ্যোগে। আইসিটি বাজারের পরিপক্বতা বিবেচনায় এ অঞ্চলের দেশগুলোর শ্রেণীবিভাজন করা চলে উন্নত আইসিটি বাজার দেশ অথবা উন্নয়নশীল আইসিটি বাজার দেশ-এই দুই শ্রেণীতে। প্রথম শ্রেণীতে পড়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ান। এসব দেশের আইসিটির বাজার পরিপক্ব। এসব দেশে রয়েছে বর্তমান প্রজন্মের অবকাঠামো। আছে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা পরবর্তী প্রজন্মের অবকাঠামো স্থাপনের ব্যাপারে। এসব দেশ, চাহিদা ও পণ্য উৎপাদন পরিস্থিতি সুষ্ঠু। উন্নয়নশীল আইসিটি বাজার দেশ দু-ধরনের : ক. সেসব দেশ, যেখানে অর্থনৈতিক বিস্ফোরণের কারণে আইসিটি বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে এবং এ ধরনের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার মতো তাদের বিপুল জনগোষ্ঠী রয়েছে। যেমন : চীন ও ভারত। খ. যেসব দেশের অর্থনীতি ও আইসিটি টেকআপ সম্প্রসারিত হচ্ছে না দ্রুতগতিতে। এর কারণ দেশের আয়তন ও জনসংখ্যা ছোট। ভৌগোলিক অবস্থানও সুবিধাজনক নয়।
ই-গভর্নমেন্ট ও ই-গভর্নেন্স :
আইসিটির অব্যাহত ব্যবহার ও যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটের উত্থানের ফলে ব্যবসায়ী ও নাগরিক সাধারণের পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের ওপর চাপ বেড়েছে ইলেকট্রনিক উপায়ে তথ্য সরবরাহ করার জন্য। এ বছর অস্ট্রেলিয়া প্রকাশ করেছে : রেসপনসিভ গভর্নমেন্ট : অ্যা নিউ সার্ভিস অ্যাজেন্ডা। এতে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে আরো নাগরিকমুখী কর্মসূচি নেয়ার প্রয়োজনের কথা। এরই প্রতিফলন রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার u-Korea Master Plan (2006-2010)। এ অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্প রয়েছে। সহজেই অনুমেয় এর জন্য প্রয়োজন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিশেষজ্ঞ ও ব্যাপক অভিজ্ঞতা। এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অনেক দেশেই এর অভাব আছে। খুব কমসংখ্যক সরকারি নীতি-নির্ধারকের সরাসরি আইটি অভিজ্ঞতা আছে। তাদের সামনে অনেক সুযোগ বিদ্যমান থাকলেও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতার অভাবে এরা নিজেদের সমর্পণ করে দেয় ভেন্ডর অথবা ব্যক্তিবিশেষ পরামর্শকের হাতে। একটি সমস্যা হচ্ছে, সময় ও বাজেটের অভাবে সফটওয়্যার যোগাড় ও বাস্তবায়ন, সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন ও প্রশিক্ষণ হয়ে উঠছে প্রয়োজনের সমাধায়। এজন্য আলোচ্য অঞ্চলের ছোট-বড় সব দেশেই পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ খুবই প্রয়োজন। তবে সুখের কথা, এ অঞ্চলের অনুন্নত দেশগুলোতেও ই-গভর্নমেন্ট প্রজেক্ট প্রাধান্য পাচ্ছে। ভুটানের মতো দেশও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ ও নাগরিক নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্প চালু করেছে। মালদ্বীপ সরকার অফিসগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ বাস্তবায়ন করেছে ওয়্যান নেটওয়ার্কের মাধ্যমে।
ওপেনসোর্সিং :
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রায় সব দেশেই ওপেনসোর্স সফটওয়্যার তৈরির বিষয়টি উৎসাহিত করছে। ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভুটান ও মঙ্গোলিয়ার মতো আরো কয়েকটি দেশে লিনআক্স অপারেটিং সিস্টেমের স্থানীয় সংস্করণ খুবই জনপ্রিয়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ, লাইসেন্সড সফটওয়্যার এখনো ব্যয়বহুল। চীন ও ভারতই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ওপেনসোর্স সহায়ক নীতি অবলম্বন করেছে। উভয় দেশই প্রোপ্রাইটরি সলিউশনের তুলনায় ওপেনসোর্সকেই প্রাধান্য দিচ্ছে ২০০২ সালের পর থেকে।
অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় নিখরচায় কাজ সারানোর দিকেই আমাদের ঝুঁকে পড়ার কথা। তবে লিনআক্সের ব্যবহারে আছে জটিলতা। বিশেষ করে যেসব দেশে সাক্ষরতার হার নিচু সেসব দেশের জন্য এ জটিলতা বেশি। অন্যান্য প্লাটফরমের তুলনায় লিনআক্স শেখা কঠিন। সেজন্য নীতি-নির্ধারকদের উচিত ওপেনসোর্স প্লাটফরমে সহজে ব্যবহারযোগ্য লোকেলাইজড ইন্টারফেস উৎসাহিত করা। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের বিধায়ক ও নীতি-নির্ধারকদের প্রয়োজন এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়া, যাতে করে কী করে সর্বোত্তম উপায়ে অনলাইনে লোকাল কনটেন্টের প্রাপ্যতা নিশ্চিত ও সর্বাধিক মাত্রায় একে প্রবেশযোগ্য করে তোলা যায়।
গভর্নেন্স ও পলিসির ওপরও আইসিটির সার্বিক প্রভাব : কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইসিটি দুর্নীতি দমন করে। তারপরও কোনো কোনো দুর্নীতি দমনে এর ইতিবাচক কোনো প্রভাব নেই, বরং আইসিটি সৃষ্টি করতে পারে নতুন ধরনের দুর্নীতি ও প্রতারণার সুযোগ। অবশ্য অনেক ই-গভর্নেন্স প্রকল্পের ইতিবাচক ফল থাকলেও অনেক অবাঞ্ছিত পরিণামও ডেকে আনতে পারে।
একটা উদাহরণ দিই :
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার একটি জমি নিবন্ধন ব্যবস্থা চালু করেছিল। এ ব্যবস্থায় জমির মালিকরা তার সম্পত্তির বিবরণ তুলে ধরে। যেমন : অবস্থান, দিক, সীমা ও অন্যান্য বিষয় নিবন্ধিত করা হয়। এসব দিক বিবেচনা করে এর মূল্যও নির্ধারিত হয়। এ ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগে জমির মূল্য নির্ধারিত হতো পুরোপুরি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। অ্যাসেসর ও এজেন্টগুলো তা নির্ধারণ করে কয়েক সপ্তাহ সময় নিয়ে। এজন্য কোনো কোনো অতিরিক্ত পয়সাও ঢালতে হতো। এখন সেখানে জমি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই নতুন ব্যবস্থার মাধ্যমে। আগে তা করতে ৭ থেকে ১৫ দিন সময় লাগতো। তবে এই আইসিটি-এনাবল ল্যান্ড মার্কেটে গরিবদের প্রবেশ নেই, প্রবেশ আছে ধনবানদের। তাই অনেক ক্ষেত্রে তা গরিবদের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনেনি।
এবং বাংলাদেশ
বিশ্ব আইসিটি মানচিত্রে বাংলাদেশ এখন আরো দৃশ্যমান। দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাত এখন আরো সক্রিয়, যাতে করে আইসিটিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে আরো বেশি করে কাজে লাগানো যায়। সরকার আইসিটি খাতকে অগ্রাধিকার খাত ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের আইসিটি শিল্পে বাড়ছে কমপিউটার ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। চলছে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ। বাড়ছে সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান, যৌথ-উদ্যোগের আইসিটি কোম্পানি ও উন্নয়নের জন্য আইসিটি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। সবিশেষ উল্লেখ্য, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে বাড়ছে আইসিটির ব্যবহার।
প্রযুক্তি অবকাঠামো :
ষাটের দশকে বাংলাদেশে প্রথম কমপিউটার আনা হয় গবেষণা ও ডাটা প্রসেসিংয়ের জন্য। আশির দশকে কমপিউটারের ব্যবহার শুরু হয় এদেশের মুদ্রণ শিল্পে। নব্বইয়ের দশকে এসে পিসির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৯৯৮ সালে কমপিউটার ও আইসিটি পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়ার পর দেশে কমপিউটারের ব্যবহার ব্যাপকতা লাভ করে। তখন বিশ্ব বাজারেও কমপিউটার ও কমপিউটার যন্ত্রপাতির দাম কমে যায়।
বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ, বিশেষ করে মোবাইল টেলিফোনের প্রতিযোগিতামূলক নীতি অবলম্বনের ফলে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটে। গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, একটেল, ওয়ারিদ, সিটিসেল ও টেলিটক ইত্যাদি মোবাইল কোম্পানি বাংলাদেশে সক্রিয়। গ্রামীণফোন সারাদেশের ৬০ শতাংশ মোবাইল ফোনের বাজার দখল করে আছে। ২০০১ সালে এদেশে টেলিডেনসিটির হার ছিল ০.৫৮ শতাংশ। ২০০৬ সালের এপ্রিলে তা ৮.০৪ শতাংশে উন্নীত হয়। আশা করা যায়, ২০১০ সালে তা ১০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছবে। পিএসটিএন তথা পাবলিক সুইচ্ড টেলিফোন নেটওয়ার্ক টেলিফোনের প্রবৃদ্ধিহারও বাংলাদেশে অনেক বেশি। ২০০০ সালে বাংলাদেশে পিএসটিএন টেলিফোন গ্রাহকসংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯১ হাজার ৩০৩ জন। ২০০৬ সালের জুনে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০ লাখ ১০ হাজারে। এক্ষেত্রে বছরে গড় প্রবৃদ্ধি ১৫.০৭ শতাংশ। ২০০৬ সালে ফিক্সড ও মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ২৬ লাখে। ২০০১ সালে তা ছিল মাত্র ১২ লাখ।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ উপগ্রহনির্ভর। তা তুলনামূলকভাবে ধীরগতির ও ব্যয়বহুল। ২০০৬ সালের মে মাসে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ চালু হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে আইএসপিগুলো এখন দ্রুতগতির ব্যান্ডউইডথ সরবরাহ করতে পারছে। কিছু কিছু আইএসপিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্পেকট্রাম রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড ২ গিগাহার্টজ পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার জন্য কমপিউটারগুলোর মধ্যে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ওয়্যারলেস সংযোগের উদ্দেশ্যে।
বাংলাদেশ তথ্য অবকাঠামোর বেশ কিছু ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ঘটিয়েছে। তারপরও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে অন্যান্য কিছু তথ্য-অবকাঠামোর ক্ষেত্রে। এগুলো হচ্ছে : নেটওয়ার্ক ও ইনফরমেশনের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা, আইনগত বৈধতা ও আর্থিক অবকাঠামো এবং প্রযুক্তি সমকেন্দ্রিকতা তথা কনভারজেন্স।
উল্লেখযোগ্য আইসিটি প্রতিষ্ঠান :
১৯৯৭ সালে সরকার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে গঠন করে একটি আইসিটি টাস্কফোর্স। এসআইসিটি তথা সাপোর্ট টু আইসিটি টাস্কফোর্স গঠিত হয় ২০০১-এ। এর লক্ষ্য ছিল ই-গভর্নেন্সে প্রকল্প চিহ্নিত ও বাস্তবায়ন করা। ২০০৬ সালের মে মাসে গঠিত হয় ই-সেল। জাতীয় আইসিটি টাস্কফোর্সের সচিবীয় সহায়তা দেয় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এসআইসিটি প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করে আইসিটি টাস্কফোর্সের উদ্দেশ্যের আলোকে। বিশেষ করে ই-গভর্নেন্সে এবং প্রধানমন্ত্রীর অফিস, পরিকল্পনা কমিশন ও সচিবালয়ের মধ্যকার হাব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে পরিকল্পনা কমিশন।
বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয় গঠিত হয় ২০০১ সালে। এর প্রাথমিক দায়িত্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মূলধারায় আইসিটিকে নিয়ে আসা। এ মন্ত্রণালয় আইসিটি নীতিমালা তৈরি ও আইসিটিসংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। বিজ্ঞান ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কমপিউটার কাউন্সিল দেশের আইসিটি উন্নয়নে মূল প্রতিষ্ঠান। এটি সরকারি কর্মকর্তা ও নাগরিক সাধারণের আইসিটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে লালন করে, সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে আইসিটি সম্পর্কিত পরামর্শ যোগায়, আইএসপিগুলোতে কানেকটিভিটি দেয় এবং স্থানীয় ভাষার কী-বোর্ড উন্নয়নের প্রজেক্টের মতো প্রজেক্টের মাধ্যমে মানোন্নয়নের কাজও করে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কাজ করে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের। শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করে আইসিটি শিক্ষাক্রম এবং এগিয়ে নিয়ে যায় স্কুলের কমপিউটারায়ন কর্মসূচি। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন তথা বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ সেবাদাতাদের নিয়ন্ত্রণ ও লাইসেন্স দেয়ার ক্ষমতাধর কর্তৃপক্ষ। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রণয়ন করে আইসিটিসংশ্লিষ্ট আইন।
বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন তথা সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস অব বেসিস আইসিটি শিল্প উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এটি প্রতিবছর সফটএক্সপো নামে সফটওয়্যার মেলার আয়োজন করে। অনেক বিদেশী সফটওয়্যার কোম্পানি এ মেলায় অংশ নেয়। একইভাবে সফটওয়্যার উন্নয়ন সহায়তা ও নগদ প্রণোদনার ব্যাপারে বেসিস সরকারের সাথে লবিং করে থাকে। আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ কমপিউটার সমিতি তথ্যপ্রযুক্তি খাত উন্নয়নে কাজ করে থাকে।
ডিজিটাল কনটেন্ট উদ্যোগ :
লোকাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট এখন বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে অগ্রাধিকারমূলক গুরুত্ব পাচ্ছে। ব্রডব্যান্ড নীতিমালায় কনটেন্টের বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে উল্লিখিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার ইউএনডিপির সহায়তায় সরকারের কিছু ফরম ডিজিটাল ফরমেটে প্রকাশ করেছে ওয়েব (http://www.forms.gov.bd) ও সিডি রম আকারে। বেশ কিছু ফরম এখন বিনামূল্যে ডাউনলোড সম্ভব। এগুলোর মধ্যে আছে পাসপোর্টের আবেদনপত্র, ভিসার আবেদনপত্র, নাগরিকত্বের আবেদনপত্র, পেনশন ফরম, ইন্টারনেট কানেকশনের আবেদনপত্র, জন্ম নিবন্ধন, আয়কর রিটার্ন ও ডাইভিং লাইসেন্সের আবেদনপত্র। এর ফলে নাগরিক সাধারণ সরকারি সেবা পেতে পারে কম খরচে ও কম সময়ে। ওয়েবসাইটগুলো দ্বিভাষিক, ফলে যেকোনো স্বল্পশিক্ষিত মানুষও এটি ব্যবহার করতে পারেন। যারা লেখাপড়া জানেন না, তারা এসব ফরম সংগ্রহ করতে পারেন টেলিসেন্টারগুলো থেকে। টেলিসেন্টারগুলো এখন গ্রাম এলাকায় জনপ্রিয়। সবচেয়ে বড় বাংলা ওয়েবসাইট হচ্ছে www.abolombon.org। এই ওয়েবসাইটের লক্ষ্য মানবাধিকার বিষয় নিয়ে কাজ করা। এ ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে আইনের ব্যাখ্যা ও আইনী পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা। আরেকটি স্থানীয় ভাষার ওয়েবসাইট হচ্ছে www.gunijan.org, এতে বাংলাদেশের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের পরিচিতি রয়েছে।
অনলাইন সেবা :
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যোগান দিচ্ছে অনলাইন সেবা। এ সেবার পরিধি তথ্যসেবা থেকে ই-কমার্স পর্যন্ত বিস্তৃত। সরকারের এসআইসিটি প্রোগ্রাম এরই মধ্যে অর্ধশতাধিক ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। অধিকতর সফল ই-গভর্নমেন্ট প্রজেক্টের মধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হাজীদের তথ্যভিত্তিক ওয়েবসাইট www.bdhajjiinfo.org। এটি একটি ইন্টারেকটিভ ওয়েবসাইট। এর মাধ্যমে হাজী ও হাজীদের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে তথ্য ও বার্তা বিনিময় করা যায়। আরেকটি সফল ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্প হচ্ছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ইলেকট্রনিক জন্ম নিবন্ধন ব্যবস্থা (ইবিআরএস)। এর মাধ্যমে নাগরিক সাধারণকে একটি অনন্য পরিচয়পত্র দেয়া হয়, যা বিভিন্ন সেবার কাজে ব্যবহার করা যায়। জন্ম নিবন্ধন এখন আগের চেয়ে তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০০১ সাল থেকে এ ব্যবস্থা সেখানে কার্যকর রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি একটি বড় সাফল্য।
আরেকটি প্রশংসাযোগ্য ই-গভর্নমেন্ট উদ্যোগ হচ্ছে স্কুল শিক্ষকদের সেলারি স্ট্যাটাস প্রকাশ করা (http://www.dshe.gov.bd/search-pbh)। স্কুল শিক্ষকরা এখন অনলাইনে জানতে পারবেন তাদের বেতন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দফতর থেকে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে কি না। কিন্তু কিছু ই-গভর্নমেন্ট প্রকল্প তেমন সফলতা পায়নি। নাগরিক সাধারণের জন্য হালনাগাদ তথ্য পাওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হলেও সরকারি অনেক ওয়েবসাইট অচল ও পুরনো তথ্যে ভরপুর। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের অনলাইন সার্ভিস তুলনামূলকভাবে উন্নততর। এর একটি উদাহরণ www.bdjobs.com। ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ওয়েবসাইটের রয়েছে বিপুলসংখ্যক ভিজিটর। প্রায় দুই লাখ জীবনবৃত্তান্ত এ পোর্টালে পোস্ট করা আছে। এর ২৫০০ কর্পোরেট গ্রাহক রয়েছে। বিডিজবসের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষ তাদের চাকরি পেয়েছে। আরেকটি জনপ্রিয় অনলাইন সার্ভিস প্রোভাইডার হচ্ছে www.bangladeshinfo.com। এটি গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নীতি-নির্ধারকদের জন্য একটি পোর্টাল। এটি বর্তমানে ২ হাজারেরও বেশি দক্ষিণ এশিয়া ও বাংলদেশবিষয়ক গবেষণাপত্র, লেখা ও বইয়ের অধ্যায় হোস্ট করে। প্রধান প্রধান গবেষক ও প্রকাশনা সংস্থা এগুলো প্রকাশ করে। এই ওয়েবসাইটে একটি উদ্ভাবনীমূলক কৌশল সংযুক্ত করা হয়েছে, যার মাধ্যমে যেকেউ প্রি-পেইড কার্ডের মাধ্যমে গবেষণাপত্র কিনতে পারেন।
আইসিটি ও আইসিটিসংশ্লিষ্ট শিল্প :
টেলিযোগাযোগ খাতকে বাদ দিলে বাংলাদেশের বার্ষিক আইসিটি বাজারের পরিমাণ ১১০০ কোটি টাকা। ডলার মূল্যে সাড়ে ১৬ কোটি ডলার। এ হিসাব ২০০৬ সালের দিকের। এখন অবশ্য এ বাজার আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইসিটি বাজারের উল্লেখযোগ্য অংশ কমপিউটার ও হার্ডওয়্যারের দখলে, যার পরিমাণ ৬০০ কোটি টাকার মতো। সফটওয়্যার বাজারের পরিমাণ ১৭০ কোটি ডলার। বাকি অংশ ইন্টারনেট, নেটওয়ার্ক সার্ভিস ও অন্যান্য আইটিইএস সার্ভিসের দখলে।
২০০৬ সালে হার্ডওয়্যার কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫০০। ২০০০ সালে তা ছিল ১২০০। একই সময়ে সফটওয়্যার কোম্পানির সংখ্যা ১০০ থেকে ৩৫০-এ উন্নীত হয়। এ সময়ে আইএসপির সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণ : ৩০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০টিতে। প্রশিক্ষণ ও এ ধরনের সেবাদাতা সংস্থার সংখ্যা এ সময়ে ১০০ থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫০-এ।
আইসিটি আউটসোর্সিং সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশে বাড়ছে। ২০০৬ রাজস্ব বছরে সফটওয়্যার ও আইটিইএস সার্ভিস রফতানি হয়েছে ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তা আরো বেড়েছে। ২০০৬ সালে এ খাতে রফতানি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ছিল। ২০০২ সালে এ ধরনের রফতানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২৮ লাখ ডলারের। যদিও এখনো মোট রফতানির পরিমাণ বিখ্যাত সফটওয়্যার রফতানিকারক দেশ ভারতের তুলনায় অনেক কম। আমাদের এ রফতানি খাত ক্রমেই পরিপক্বতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আমরা ভারতের আউটসোর্সিংয়ের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছি। ভারতের অনেক অফশোর কোম্পানি বাংলাদেশে এর অফিস খুলছে। বাংলাদেশের কিছু সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানি ইউরোপীয় অংশীদারদের সাথে মিলে যৌথ উদ্যোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সক্ষম হচ্ছে। ২০০৫-০৬ সময়ে ৪০টি ইউরোপীয় দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সফর করেন। সেই সূত্রে বাংলাদেশে ১২টি যৌথ উদ্যোগের প্রকল্প চালু হয়।
শিক্ষা ও সক্ষমতা বাড়ানোর কর্মসূচি :
বাংলাদেশের জাতীয় শিক্ষা নীতিতে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে বাধ্যতামূলক কমপিউটার কোর্সের সুপারিশ আছে। এ পলিসির ম্যান্ডেট হচ্ছে, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের যথাক্রমে ৫৬৯৪টি ও ১৫৭৪৮টি স্কুলে, সেই সাথে ৯২২টি কলেজে, ৩৪৭টি পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানে এবং ১৪৬২টি মাঝারি পর্যায়ের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২০১০ সালের মধ্যে আইসিটি সমন্বিত করা। এ নীতিতে বলা হয়েছে, গড়ে তোলা হচ্ছে যে ১২টি নতুন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সেগুলোতে আইসিটি শিক্ষা চালু করা হবে। পাশাপাশি চালু হবে দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় পরীক্ষা ব্যবস্থাও। আইসিটির আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার মান বজায় রাখার লক্ষ্যেই এ ব্যবস্থা।
২০০০ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে আইসিটি পেশাজীবীর সংখ্যা ১১,৪৪০ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫,২০০-এ (বিসিএস ২০০৬)। বাজারে আইসিটি পেশাজীবী সরবরাহে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। বুয়েটে আনুষ্ঠানিক আইটি শিক্ষা চালু হয় ১৯৮৪ সালে। বর্তমানে ১০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইটি শিক্ষায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে। ১৯৯৫ সালের পর থেকে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি ডিগ্রি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র কয়টি যথাযথ মানের পেশাজীবী আইসিটি শিল্পে পাঠাতে পারছে।
বেসরকারি খাতে ৩৫০টিরও বেশি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো বিভিন্ন ধরনের আইসিটি প্রফেশনাল তৈরি করছে। এসব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক বিদেশী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ফ্র্যাঞ্চাইজ। এসব অনেক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ মান ও উঁচু হারে কোর্স ফি আদায়ের অভিযোগ আছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্রমবর্ধমান হারে আইসিটি শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে। এখন অনেক সরকারি কর্মকর্তা আইসিটি প্রশিক্ষিত। গ্রামের শিশুদের আইসিটি দক্ষতা গড়ে তুলতে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও মাঠপর্যায়ে কাজ করছে।
ওপেনসোর্স ও ওপেনকনটেন্ট উদ্যোগ :
বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক ওপেনসোর্স আন্দোলনে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এদেশে ওপেনসোর্স জনপ্রিয় করায় অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে আছে বাংলা ইনোভেশন থ্রো ওপেনসোর্স তথা ইওঙঝ এবং অঙ্কুর (www.leanglalinei.org)। ওপেনকনটেন্টও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশে প্রথম ওপেনকনটেন্ট ধারণার ওপর বাংলা ওয়েবসাইট করে ডি.নেট। ওপেন কনটেন্টের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ওয়েবসাইট হচ্ছে : http://www.pallitathya.org/ www. abolombon.org/www.meghbeartha. com এবং www.gunijan.org/Banglewikipedia .(http://bn.Wikipedia.org/wiki)। বাংলা উইকিপিডিয়ার এরই মধ্যে ২০০০০-এর মতো এন্ট্রি রয়েছে।
গবেষণা ও উন্নয়ন :
এখানে বিক্ষিপ্তভাবে চলে আইসিটিসংশ্লিষ্ট গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ। বেশিরভাগ গবেষণা চলে লোকেলাইজেশন ও বাংলা কমপিউটিংয়ের ওপর। অঙ্কুর বেশকিছু গবেষণা কাজ চালিয়েছে। লোকেলাইজেশন ও ওপেনসোর্স গবেষণা উদ্যোগে বাংলাদেশ ওপেনসোর্স নেটওয়ার্ক একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় আইডিআরসির প্যান এশিয়া নেটওয়ার্কের সহায়তায় প্যান লোকেলাইজেশন প্রজেক্ট-এর আওতায় বাস্তবায়ন করছে লোকেলাইজেশন প্রজেক্ট। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ডেভেলপ করছে বাংলা ওসিআর, যা একটি স্পেল চেকার ও সার্চ ইঞ্জিন। বুয়েটে চলছে রোবট নিয়ে কিছু গবেষণা। কিছু গবেষণা লাভ করেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। যেমন চীনের বেজিংয়ে ২০০৫ সালের রোবোকন প্যানাসনিক অ্যাওয়ার্ড লাভ। ডি.নেট গবেষণা করছে টেলিসেন্টারের পরিচালনা ব্যয় কমানো ও আয়ের সুবিধা বাড়ানোর জন্য, যাতে করে গ্রামীণ সেবায় নিয়োজিত থেকে টেলিসেন্টারগুলো আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে উঠতে পারে।
চ্যালেঞ্জগুলো :
বাংলাদেশের ডিজিটাল অপরচুনিটি ইনডেক্স তথা ডিওআই মাত্র ০.২০ এবং বাংলাদেশের র্যারঙ্ক ১৩৯তম, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধু নেপালের তুলনায় ভালো (আইটিইউ ২০০৬)। এ থেকে প্রমাণ হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক কল্যাণ আইসিটিকে মূলধারায় আনতে হলে বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর যেতে হবে। এখানে বেসরকারি খাতের আইসিটি শিল্পে ও উন্নয়নের জন্য আইসিটি খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইসিটি খাতে সরকারি বরাদ্দ খুবই নগণ্য ও বিক্ষিপ্ত, যদিও আইসিটি নীতিতে জাতীয় বাজেটের ২ শতাংশ আইসিটি খাতে বরাদ্দের কথা বলা আছে। ২০০৬ সালের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ মাত্র ০.৮ শতাংশ। অন্যান্য বছরের চিত্রও মোটামুটি একই ধরনের। আইসিটি খাতে কোথায় বরাদ্দ হবে, তাও অস্পষ্ট। কারণ, বাজেট লাইন আইটেমে আছে দ্ব্যর্থক বর্ণনা। টেলিযোগাযোগ খাতে বরাদ্দ তুলনামূলকভাবে বেশি। আইসিটি জনশক্তির উন্নয়নে বিনিয়োগ এখনো আশানুরূপ আসছে না। গ্রামীণ আইসিটি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ এখনো উন্নয়ন সহযোগীদের নজরে আসেনি। গ্রামীণ আইসিটি অবকাঠামোতে বেসরকারি খাত তেমন আগ্রহী নয়। আইসিটির মাধ্যমে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার বিষয়টি এখানে থেকে গেছে একটি চ্যালেঞ্জ।
শেষ কথা
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে উন্নয়নের জন্য আইসিটির প্রয়োগ চলছে বহুমাত্রিকভাবে। আর বিষয়টি নানা বিষয়ের সাথে পরস্পর সম্পর্কিত। আছে ভৌগোলিক বিবেচ্যও। যেমন নেপাল তার অবস্থান নির্ধারণ করেছে যোগাযোগের ক্ষেত্রে চীন ও ভারতের মধ্যকার গেটওয়ে হিসেবে। মালদ্বীপের কিছু সফটওয়্যার ডেভেলপার হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রির সফটওয়্যার তৈরিতে সাফল্য পেয়েছে। এভাবে বিভিন্ন দেশ সাফল্য পেয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। বাংলাদেশকেও তার সার্বিক অবস্থান বিবেচনা করেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে আইসিটি উদ্যোগ বা পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে একটিবারের জন্যও ভুললে চলবে না, আইসিটি অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন আনছে। আর আইসিটি পদক্ষেপে সফল বাস্তবায়ন করবে উচ্চ পর্যায়ের সেই সব শিরোপাধারী, যারা প্রভাব ফেলবে সরকারের কৌশলগত দিক-নির্দেশনা, ব্যবসায়ে ও সামাজিক সংগঠনে। আর সেই সূত্রে সৃষ্টি করতে পারে পরিবর্তনের পরিবেশ। লক্ষ রাখতে হবে, বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন আইসিটি প্রকল্পে পেয়েছে অভাবিত সাফল্য। এসব প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের ভুলগুলো স্বীকার করে নিয়ে ভবিষ্যৎ সাফল্য গড়ে তোলার প্রতি আমাদের অতীতের সব অনাগ্রহ ঝেড়ে ফেলতে হবে। তবেই আইসিটির সুফল ধরা দেবে আমাদের কাছে।
কজ ওয়েব