মাদারবোর্ড ডায়াগ্রাম : বড় আকারের সার্কিটকে ছোট আকারে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে বলে মাদারবোর্ড নির্মাতারা মাদারবোর্ডে নানা ফিচার একইসাথে যুক্ত করতে পারছেন। এ কারণে আগের তুলনায় এখন মাদারবোর্ডে অনেক বেশি কম্পোনেন্ট বা ডিভাইস দেখা যায়।
মাদারবোর্ড বর্ণনা করার জন্য বায়োস্টার তৈরি চিত্রে দেখানো বোর্ডটি নেয়া হয়েছে এ কারণে যে, এর লে-আউটটি খুব পরিচ্ছন্ন এবং এতে সহজেই কানেক্টরগুলো নজরে আসে। তবে প্রত্যেক মাদারবোর্ডেরই সুনির্দিষ্ট কিছু ফিচার বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের চাহিদা, উপযোগিতা, বাজার দর ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে যুক্ত করে থাকে।
চিত্রে দেখানো মাদারবোর্ডকে সক্রিয় করতে এর প্রধান বৈদ্যুতিক সংযোগটি আসে ২৪ পিনের এক্সটেন্ডেড পাওয়ার কানেক্টরের মাধ্যমে। মাদারবোর্ডে পয়েন্ট ১২-এর মাধ্যমে তা দেখানো হয়েছে। অপর একটি ৮ পিনের সিপিইউ পাওয়ার কানেক্টরের মাধ্যমে প্রসেসর ইন্টারফেসে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয় (১৩)। অনেক মাদারবোর্ড রয়েছে, যেগুলো একাধিক পিসিআই গ্রাফিক্স কার্ড স্লট (৪) সাপোর্ট করে থাকে তাদের জন্য সলটের কাছে (১৪) একটি অতিরিক্ত পাওয়ার কানেক্টর থাকে। তবে একে আলাদাভাবে সংযুক্ত করার প্রয়োজন হয় না। অনেক মাদারবোর্ড আবার অতিরিক্ত পিসিআই এক্সপ্রেস স্লটের মাধ্যমে একাধিক গ্রাফিক্স কার্ড সাপোর্ট করে থাকে। এতে কার্ড কম ব্যান্ডউইডথসম্পন্ন ক্ষীণ আকারের পাইপলাইনের মাধ্যমে বাকি প্লাটফর্মের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে।
চিত্রে প্রদর্শিত মাদারবোর্ডের ডান দিকে বড় আকারের হিট সিঙ্ক দেখা যাবে, যার কাজ হচ্ছে মাদারবোর্ডে উদ্ভূত তাপ শুষে নিয়ে একে ঠা-া রাখা। এতে রয়েছে ৬ ফেজের ভোল্টেজ রেগুলেটর। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের কম্পোনেন্ট হওয়ায় রেগুলেটরকে মাদারবোর্ডে শনাক্ত করতে পারবেন। আধুনিক মাদারবোর্ডগুলোতে স্বল্পমাত্রার বিদ্যুৎপ্রবাহ সম্পন্ন একাধিক ফেজ ব্যবহার করা হয়, যাতে এরা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন লোডে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে। এ ধরনের মাদারবোর্ড ডিজাইনে বিদ্যুৎপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় বা অব্যবহৃত কম্পোনেন্টগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়। রেগুলেটরের ফেজ সংখ্যা গণনা করে একটি মাদারবোর্ডের মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। মাদারবোর্ডে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন কম্পোনেন্টের দক্ষতাও মাদারবোর্ডের গুণাগুণকে প্রভাবিত করে। অপরদিকে যেসব মাদারবোর্ডে ডিজিটাল ভোল্টেজ রেগুলেটর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোতে রেগুলেটর কম্পোনেন্টগুলো দৃশ্যমান হয় না।
মাদারবোর্ড লে-আউট : মাদারবোর্ডে সন্নিবেশিত বিভিন্ন কম্পোনেন্ট সম্পর্কে জানতে এবার আমরা মাদারবোর্ডের লে-আউটের দিকে নিবিড়ভাবে লক্ষ করব।
গেমিং পিসি নির্মাণের জন্য গ্রাফিক্স কার্ড স্থাপনের বিষয়টি মুখ্য বিবেচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের উদাহরণের এই মাদারবোর্ডে দুটো পিসিআই (PCI : Peripheral Component Interconnect) সলট রয়েছে এবং এদের মধ্যে রয়েছে দুটো একক লেনের কানেক্টর। দ্রুততর গতিসম্পন্ন গ্রাফিক্স কার্ডে বিশেষ ধরনের শীতলীকারী ডিভাইস (cooler) থাকায় এ ক্ষেত্রে মাদারবোর্ডে তৃতীয় সলট রাখা সম্ভব হয় না। অনেক মাদারবোর্ডে গ্রাফিক্স কার্ডের পেছন অংশ এবং মেমরি ল্যাচের (ষধঃপয) মধ্যে বেশ জায়গা রাখা হয়, যাতে গ্রাফিক্স কার্ড ইনস্টল থাকা সত্ত্বেও মেমরি কার্ড স্থাপন বা অপসারণ করা যায়।
আমাদের বর্ণিত মাদারবোর্ডে ইউএসবি ৩.০ পোর্ট নিচের দিকে সাদা রংয়ের সলট ল্যাচের পেছনে অবস্থিত। ইউএসবি ৩.০ ক্যাবল শক্ত প্রকৃতির, এ কারণে অন্যান্য ফ্রন্ট প্যানেল ক্যাবলের মতো একে ভাঁজ করে রাখা যায় না বা অন্য কোনো ডিভাইসের আশপাশের ফাঁকা স্থানের মধ্য দিয়ে স্থাপন করা যায় না। এর অর্থ হচ্ছে মাদারবোর্ডে তৃতীয় গ্রাফিক্স কার্ড সলট ইনস্টল করা হলে সে ক্ষেত্রে ইউএসবি কানেক্টর ব্যবহার করা যাবে না। এ কারণে দেখা যায় বেশিরভাগ নতুন মাদারবোর্ডে কানেক্টরটি স্থাপন করা হয় পিসিআই সলটের ঠিক উপরে।
মাদারবোর্ডের উপরের অংশ ATX12V/EPS12V কানেক্টরের জন্য নির্ধারিত থাকে। এর ফলে যদি কোনো কারণে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট নিচের দিকে স্থাপন করা হয়, তাহলে পাওয়ার ক্যাবল পেছন দিক থেকে টেনে এনে মাদারবোর্ডে সংযুক্ত করা যাবে। বেশিরভাগ উচ্চ প্রবাহের পাওয়ার সাপ্লাইয়ে ক্যাবল যথেষ্ট পরিমাণ লম্বা থাকে, যাতে সেগুলো এ ধরনের মাদারবোর্ড কনফিগারেশনে যথাযথভাবে কাজ করতে পারে। এ ধরনের মাদারবোর্ড কনফিগারেশনে দুটি ৮ পিনবিশিষ্ট পাওয়ার কানেক্টর থাকতে পারে।
বড় আকারের ২০ বা ২৪ পিনের ATX/EPS পাওয়ার কানেক্টর মাদারবোর্ডের সামনের প্রামেত্ম স্থাপন করা হয়, যাতে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট মাদারবোর্ডের উপরে বা নিচে যেখানেই বসানো হোক না কেনো, কানেক্টর সহজেই পাওয়ার সাপ্লাই অ্যাক্সেস করতে পারে। এ ব্যবস্থায় পাওয়ার কানেক্টর সিপিইউ কুলার বা কোনো এক্সপানশন সলটের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না। তবে সামনের প্যানেলের অডিও কানেক্টর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ইন্টেলের মতে, এটি স্থাপন করতে হবে মাদারবোর্ডের পেছনের দিকে নিচের অংশে। অনেক মাদারবোর্ড নির্মাতা এ নিয়ম মানেন না। এরা পছন্দ করেন অডিও কানেক্টর ক্যাবলকে মাদারবোর্ড ট্রের পেছন দিক দিয়ে নিয়ে আসার জন্য। এ ধরনের ক্ষেত্রে দেখা যায় ক্যাবলের আকার ছোট হওয়ায় তা কানেক্টর দিয়ে অ্যাক্সেস করতে সমস্যা হয়।
মাদারবোর্ড লে-আউটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ফ্যান কানেক্টর। চিত্রে দেখানো মাদারবোর্ডে সিপিইউ ফ্যান কানেক্টরটি প্রসেসর ইন্টারফেসের নিচের ডান দিকে স্থাপন করা হয়েছে। এখানে লক্ষ করলে দেখা যাবে, সাপ্লিমেন্টাল গ্রাফিক্স পাওয়ার কানেক্টরের কাছে স্থাপন করা হয়েছে একটি এক্সজস্ট (exhaust) ফ্যান হেডার এবং সামনের নিচের কোনায় স্থাপন করা হয়েছে একটি ইনটেক ফ্যান কানেক্টর। পাওয়ার সাপ্লাইয়ে সরাসরি অতিরিক্ত ফ্যান যুক্ত করার জন্য অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এ ধরনের পদ্ধতিতে ফ্যানের গতি নিয়ন্ত্রণে মাদারবোর্ডের কোন ক্ষমতা থাকে না।
মাদারবোর্ড ডিজাইন নিঃসন্দেহে একটি জটিল বিষয়। লে-আউটের পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি বিষয় এর সাথে সংশ্লিষ্ট। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফরম-ফ্যাক্টর যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করা হবে
ফিডব্যাক : shamim967@hotmail.com