• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টেল পার্টসবার্গযুক্ত মাদারবোর্ড
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মো: তৌহিদুল ইসলাম
মোট লেখা:২৬
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১২ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইন্টেল
তথ্যসূত্র:
হার্ডওয়্যার
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টেল পার্টসবার্গযুক্ত মাদারবোর্ড

অক্টোবর ২০১১ সংখ্যায় ইন্টেলের চিপসেট সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। এ লেখাতেও আলোচনা করা হয়েছে ইন্টেলের সর্বশেষ চিপসেট এক্স৭৯ সম্পর্কে। পাশাপাশি এক্স৭৯যুক্ত কিছু মিডরেঞ্জ মাদারবোর্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।



১৪ নভেম্বর ২০১১তে ইন্টেল কোম্পানি অবমুক্ত করেছে সর্বশেষ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ চিপসেট এক্স৭৯। যার কোডনেম পার্টস্বার্গ। ইতোমধ্যেই বাজারে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন কোম্পানির এক্স৭৯ চিপসেটযুক্ত মাদারবোর্ড। ইন্টারনেটে পাওয়া তথ্যমতে, ইন্টেল পার্টস্বার্গ তৈরি করেছে মূলত তাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রসেসরগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর জন্য। এ জন্য এলজিএ ২০১১ নামে নতুন একটি সকেটও তৈরি করেছে তারা।

পার্টস্বার্গে নতুন যে ফিচারগুলো যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে ইন্টেল আইডেন্টটিটি প্রটেকশন, ইন্টেল র্যা পিড স্টোরেজ, পিসিআই এক্সপ্রেস ২.০ ইন্টারফেস, ইন্টেল হাইডেফিনিশন অডিও, ইউনিভারসাল সিরিয়াল বাস, সিরিয়াল এটিএ (৬ গি.বা./সে. ও ৩ গি.বা./সে.) অন্যতম। এ ছাড়া গ্রিন টেকনোলজি, সাটা পোর্ট ডিজ্যাবল, ইউএসবি পোর্ট ডিজ্যাবল ও ই-সাটার সুযোগ সুবিধাও রয়েছে।
আইডেনটিটি প্রটেকশন টেকনোলজি : এটি ওয়েবসাইটভিত্তিক নতুন এক টেকনোলজি। আইপিটির মাধ্যমে যাচাই করা হয় ব্যবহারকারী তার নির্দিষ্ট পিসি থেকে ইন্টারনেটে লগইন করেছেন কি না। এটি মূলত ব্যবহারকারী ও ইন্টারনেট-এ দুটি দিকের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই যুক্ত করা হয়েছে। ফলে যেসব ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, অনলাইন গেমিং কিংবা অনলাইন ফাইন্যান্সের কাজ করে থাকেন তারা আরো বেশি সুরক্ষিত হবেন। কারণ এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে রিমোট অ্যাক্সেস অনেকখানি ঠেকানো যাবে বলে মনে করছে ইন্টেল। ফলে ব্যবহারকারীর নাম ও পাসওয়ার্ড ঠিক থাকলেও রিমোট অ্যাক্সেস করতে পারবে না।

র্যা পিড স্টোরেজ টেকনোলজি :

এক্স৭৯-এ যুক্ত হয়েছে আরএসটি ৩.০। ফলে প্রতি সেকেন্ডে ৬ গিগাবাইটের বেশি ডাটা ট্রান্সফার করা যাবে। এর ফলে আগের থেকেও আরো দ্রুতগতিতে এসএসডি, হাইব্রিড ড্রাইভ, বড় ধরনের ডিজিটাল ফটো বা ভিডিও খুব তাড়াতাড়ি অ্যাক্সেস করা যাবে। এটি হার্ডড্রাইভের ডাটা লস প্রতিহত করে ও হার্ডড্রাইভকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে।

পিসিআই এক্সপ্রেস ২.০ ইন্টারফেস :

পিসিআই একটি সিরিয়াল বাস। এটি ৮ বিট/১০ বিট নামের পদ্ধতিতে ডাটা এনকোড করে। আগে পিসিআই ১.১-এ এই এনকোডিং ছিল ২.৫ গি.বা./সে.। অর্থাৎ এটি প্রতি সেকেন্ডে ২.৫ গিগাবাইট ডাটা ট্রান্সফার করতে পারত। আর ২.০-এ এটি বেড়ে ৫ গি.বা./সে. হয়েছে। এরকম আটটি পিসিআই এক্সপ্রেস রয়েছে এক্স৭৯ চিপসেটে।

সিরিয়াল এটিএ :

এ চিপে দুটি ৬ গি.বা./সেকেন্ড গতির ও চারটি ৩ গি.বা./সে. গতির সাটা পোর্ট আছে।
ই-সাটা : বাইরের কোনো সাটা পোর্টযুক্ত ডিভাইসের জন্য এ সুবিধা রাখা হয়েছে, যা ৩ গি.বা./সে. গতির ডাটা ট্রান্সফারের সুবিধা দেয়।

সাটা পোর্ট ডিজ্যাবল :

এটি এক ধরনের সুইচের মতো। যার কাজ হলো প্রয়োজন অনুযায়ী সাটা পোর্ট খোলা ও বন্ধ করা। ফলে বিভিন্ন ধরনের মেলিসাস ভাইরাস এক পোর্ট থেকে অন্য পোর্টে ঢুকতে পারে না। ই-সাটা পোর্টের ক্ষেত্রে যা বিশেষভাবে কার্যকর।

ইউএসবি পোর্ট ডিজ্যাবল :

সাটা পোর্ট ডিজ্যাবলের মতো কাজ করে। ফলে এক পোর্ট থেকে অন্য পোর্ট সুরক্ষিত থাকে।

হাইডেফিনিশন অডিও :

হাইডেফিনিশন অডিওতে যুক্ত হয়েছে প্রিমিয়ার ডিজিটাল সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেম, যা অনেকগুলো অডিও স্ট্রিম একত্রে ডেলিভারি দিতে পারে।



উপরোল্লিখিত ফিচারের বাইরে ইন্টারনাল ফিচারের মধ্যে আছে থার্মাল ডিজাইন পাওয়ার (টিডিপি) টেকনোলজি। টেম্পারেচার কন্ট্রোল সেন্সরের সাহায্যে চিপের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে রাখা এর কাজ। চিপটি সর্বোচ্চ ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। কিন্তু সেন্সরে সেট করা ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে এটি সিপিইউর ফ্যানের গতি বাড়াতে শুরু করে। ফলে চিপের নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

অন্যদিকে এই প্রথম লেড ও ক্ষতিকারক হ্যালোজেন ছাড়াই এ চিপ তৈরি করায় ইন্টেল একে গ্রিন টেকনোলজি আখ্যায়িত করেছে। ইতোমধ্যেই ইন্টেল বাজারে ছেড়েছে এক্স৭৯ মাদারবোর্ড ডিএক্স৭৯ এসআই মাদারবোর্ড। প্রধান সুবিধাগুলোর মধ্যে আছে আটটি ডিস র্যারম স্লট, যা ৬৪ গি.বা. পর্যন্ত মেমরি সাপোর্ট করে। তিনটি পিসিআই গ্রাফিক্স কার্ড পোর্ট, যা এটিআই ক্রসফায়ার এক্স ও এনভিডিয়া এসএলআই সুবিধা দেয়। আরো আছে বিল্টইন নেটওয়ার্ক কার্ড, ব্লুটুথ ও ওয়াই-ফাই, দশটি সাটা পোর্ট।

গিগাবাইট কোম্পানিও প্রতিযোগিতা তৈরি করতে বাজারে ছেড়েছে GA-X7 UD7/5, 3 নামে তিন ধরনের মাদারবোর্ড। এ তিনটি মাদারবোর্ডেই কমবেশি ইন্টেলের মাদারবোর্ডের সব ফিচার বর্তমান। উপরন্তু ডুয়াল বায়োস ফিচার, অসি-টার্চ, অসি-ভিএমআর (ভোল্টেজ মিক্সিং রেশিও) টেকনোলজি যুক্ত করা হয়েছে।

UD5/7 যেখানে চারটি এসএলআই/ক্রসফায়ার সাপোর্ট করে, সেখানে UD3 মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে তিনটি। আবার UD7/15 ৬৪ গি.বা. মেমরি সাপোর্ট করে, কিন্তু UD3 সাপোর্ট করে ৩২ গি.বা.। এ মাদারবোর্ডগুলোতে গিগাবাইট কোম্পানি ব্যবহার করেছে থ্রিডি পাওয়ার ইউটিলিটি-যা মেমরি ও সিপিইউর ভোল্টেজ ফেজ ও ফ্রিকোয়েন্সি কন্ট্রোল করে। তাপ সরে যাওয়ার সুবিধার জন্য UD7/5-এ হিটপাইপ যুক্ত করা হয়েছে, যা UD3তে অনুপস্থিত। গিগাবাইটের দাবি, তাদের এ মাদারবোর্ডগুলোর পিসিবি আগের মাদারবোর্ডগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ মোটা। ফলে আগের মাদারবোর্ডগুলোর তুলনায় এ মাদারবোর্ডগুলো কম গরম হবে। জাপানিজ সলিড ক্যাপাসিটর ও ফেরাইট কোর চোখ ব্যবহার হওয়ায় এ মাদারবোর্ডগুলোর আয়ুষ্কাল অনেক ভালো। ডুয়াল বায়োস টেকনোলজি ব্যবহার করায় প্রধান বায়োসে কোনো কারণে সমস্যা দেখা দিলে বা প্রধান বায়োস ক্র্যাশ করলে এর ডুয়াল বায়োস ফিচার দ্বিতীয় বায়োস থেকে প্রথম বায়োস রিকোভার করে। ফলে মাদারবোর্ডগুলোর বায়োস ফেইলিওর বা নষ্ট হয় না।

ভিআরএম (ভোল্টেজ রেগুলেশন মডিউল) প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় এ মাদারবোর্ডগুলোর প্রসেসর ও র্যা ম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ভিআরএমকে অনেক সময় পিপিএম (প্রসেসর পাওয়ার মডিউল) বলা হয়। এতে একটি ডিসি টু ডিসি পাওয়ার কনভার্টার থাকে। যাকে বাক কনভার্টার বলে। প্রসেসর ও র্যাুমের চাহিদা অনুযায়ী এ বাক কনভার্টার +5V ও +12 ভোল্টকে কনভার্ট করে বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়, যা প্রসেসরের অভ্যন্তরীণ ট্রানজিস্টরগুলোর ও র্যা মের ভেতরের ক্যাপাসিটরগুলোর আয়ু অনেক বাড়িয়ে দেয়। এর পাশাপাশি ভোল্টেজ রেগুলেশন মডিউল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এর মসফেট ড্রাইভার আইসি সব মসকেট, ক্যাপাসিটর ও চোখের ভোল্টেজ সুনিপুণভাবে কন্ট্রোল করে। ফলে মাদারবোর্ডের আয়ু বাড়ে।

ইন্টেলের তৈরি এলজিএ ২০১১ সকেট ব্যবহার করায় এ মাদারবোর্ডগুলোকে মিডিয়াম রেঞ্জ সার্ভার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। LGA2011-কে বলা হয় সকেট R, যা কিউপিআই (কুইক পার্থ ইন্টারকানেক্ট) টেকনোলজি ব্যবহার করে। এটি আগের ব্যবহার হওয়া ফ্রন্ট সাইড বাসের (FSB) একটি উন্নত সংস্করণ, যা আগের তুলনায় আরো ২০ শতাংশ বেশি গতিতে প্রসেসরের অভ্যন্তরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট কানেকশন তৈরি করতে পারে।

এমএসআই বাজারে ছেড়েছে MSIX79A-GD65(8D) নামের মাদারবোর্ড। নামেই বোঝা যাচ্ছে এতেও যুক্ত হয়েছে X79 চিপসেট। এ মাদারবোর্ডের বিশেষ সুবিধার মধ্যে আছে ভিআরএম, ডাইরেক্ট অসি, মাল্টিবায়োস, ডা. মস ইত্যাদি। ডা. মস কাজ করে ভিআরএম প্রযুক্তির মতো। মাল্টি বায়োস কাজ করে গিগাবাইটের ডুয়াল বায়োসের মতো। পাশাপাশি প্রসেসর ওভারক্লকিংয়ের কাজও করে। ডাইরেক্ট অসিতে দুটি বাটন থাকে। যাদের কাজ হলো ম্যানুয়ালি পিসির প্রসেসরের গতি বাড়ানো ও কমানো। অডিওর জন্য ব্যবহার হয়েছে ট্রু স্টুডিও প্রো, যা দেবে লসলেস ২৪ বিট এইচডি অডিও। এ মাদারবোর্ডে গিগাবাইট ও ইন্টেলের মাদারবোর্ডের মতো বিল্টইন ওয়াই-ফাই ও ব্লুটুথ নেই। কিন্তু তারপরও গিগাবাইট ও ইন্টেলের মাদারবোর্ডের তুলনায় এ মাদারবোর্ডের দাম বেশি।

আসুস বাজারে ছেড়েছে P9X79 ডিলাক্স মডেলের মাদারবোর্ড। ৬৪ গিগাবাইট র্যালম ব্যবহারের সুবিধা ছাড়াও এতে যুক্ত হয়েছে হিটপাইপ, টিপিইউ (টার্বো ভি প্রসেসিং), ইপিইউ (ইমার্জেন্সি প্রসেসিং ইউনিট)। টিপিইউ ও ইপিইউ প্রসেসর এবং মেমরি পাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করে। এ ওভারক্লকিংয়ের জন্যও একটি বাটন ব্যবহার করা হয়েছে, যা শুধু প্রসেসরের গতি ম্যানুয়ালি বাড়াতে পারে। মাদারবোর্ডে যুক্ত এসএসডি কেসিং টেকনোলজির মাধ্যমে ব্যবহার হওয়া এসএসডি ও এইচডিডির গতি একই রকম করা যায়, যা ব্যবহারকারীর ডাটা রাখাতে বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে।

উপরোল্লিখিত সব মাদারবোর্ডের দামই ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে, যা অনেক কমপিউটার ব্যবহারকারীর পক্ষেই কেনা সম্ভব নয়। তথাপি মাদারবোর্ডগুলোর পারফরম্যান্স, টেকসই ও নতুনত্বের কথা চিন্তা করলে, তা খুব একটা বেশি নয়। অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, যারা গ্রাফিক্সের কাজ, ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ বা গেম খেলার কথা চিন্তা করছেন তাদের জন্য এ মাদারবোর্ডগুলো খুবই উপযুক্ত।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : minitohid@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস