লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
তাসনীম মাহ্মুদ
মোট লেখা:১২৭
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
টিপস অ্যাণ্ড ট্রিকস
পিসি বা ম্যাক পরিষ্কার করার কিছু টিপ ট্রিকস ও অ্যাপ
গাড়ি বা অন্য যেকোনো যান্ত্রিক মেশিনের মতো কমপিউটারের নিয়মিত পরিচর্চা অপরিহার্য। বর্তমানে কমপিউটারের রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি এতই গুরুত্ব পেয়েছে যে মাদারস ডে, ফাদারস ডে, চিলড্রেনস ডে ইত্যাদি বার্ষিক ইভেন্টের মতো যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৯ ফেব্রুয়ারি (ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সোমবার) পালন করা হচ্ছে ‘National Clean Up Your Computer Day’। কমপিউটারের ভেতর ও বাইরের দিক পরিষ্কার-পরিপাটি করার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য ‘দি ইনস্টিটিউট ফর বিজনেস টেকনোলজি’ মূলত প্রতিবছরের ৯ ফেব্রুয়ারিকে নির্ধারণ করেছে একটি বিশেষ দিন হিসেবে, যাতে সবাই এ দিনে কমপিউটারের যথাযথ পরিচর্যা করেন, যেমন- কমপিউটারের ফাইল ও প্রোগ্রামের দিকে খেয়াল করা, ফাইল ও ফোল্ডার অর্গানাইজ করা, জাঙ্ক ফাইল ডিলিট করা, ডুপ্লিকেট ফাইল ডিলিট করা ইত্যাদি।
০১. হার্ডডিস্ক ডিফ্র্যাগ করা : ডিফ্র্যাগমেন্টেশন হলো আপনার পিসির জন্য ঘর পরিষ্কার করার মতো ব্যাপার। এটি হার্ডডিস্কে বিক্ষেপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব ডাটা তুলে নিয়ে সেগুলোকে একত্রে এক জায়গায় রাখার চেষ্টা করে। ডিস্কে ফিট হওয়ার জন্য ফাইল খ-- খ-- ভেঙে গিয়ে ডিস্ক ফ্র্যাগমেন্টেশন হয়। যেহেতু ফাইল অব্যাহতভাবে রিটেন হয়, ডিলিট হয় এবং রিসাইজ হয়, তাই ফ্র্যাগমেন্টেশন হলো একটি স্বাভাবিক ঘটনা। যখনই কোনো ফাইল কয়েকটি লোকেশনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিক্ষেপ্ত হয়ে যায়, তখন তা রিড ও রাইট করতে দীর্ঘ সময় নেবে। শুধু তাই নয়, এর প্রভাব ব্যাপক-বিস্তৃত। ফ্র্যাগমেন্টেশনের কারণে পিসির পারফরম্যান্স ধীর হয়ে যায়। বুট টাইম দীর্ঘ হয়, সিস্টেম অবিরতভাবে ক্র্যাশ করে এবং ফ্রিজ হয়ে যায়, এমনকি সিস্টেম বুট হতে পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পরে। এমন অবস্থায় অনেকে মনে করেন, এটি অপারেটিং সিস্টেমের সমস্যা বা মনে করেন তাদের সিস্টেম পুরনো হওয়ায় এমন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এমন অবস্থার মূল কারণ হলো ডিস্ক ফ্র্যাগমেন্টেশন।
ডিস ডিফ্র্যাগমেন্টার ব্যবহার করে পারফরম্যান্সকে উন্নত করা যায় ফ্র্যাগমেন্টেড ডাটাকে পুনর্বিন্যাস করে, যাতে ড্রাইভ অধিকতর দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। উইন্ডোজে রয়েছে এর নিজস্ব ডিফ্র্যাগ টুল, তবে এটি তুলনামূলকভাবে একটু বেশি বেসিক ধরনের।
ফাইল সিস্টেম মেইনটেন্যান্সে ডিফ্র্যাগমেন্টেশন হলো একটি প্রসেস, যা ফ্র্যাগমেন্টেশনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। ফিজিক্যালি মাস স্টোরেজ ডিভাইসের কনটেন্টকে কাছাকাছি ক্ষুদ্রতর অঞ্চলে ফাইল স্টোর করার মাধ্যমে পিসির পারফরম্যান্স বাড়িয়ে দেয়।
স্মার্ট ডিফ্র্যাগ ৩ অধিকতর কার্যকর এবং অন্যতম একটি থার্ড পার্টি অপশন, যা সাপোর্ট করে উইন্ডোজ ৮.১ অ্যাপ। পক্ষান্তরে আইডিফ্র্যাগ ওএস এক্সের অন্যতম এক জনপ্রিয় ডিফ্র্যাগ টুল। এসএসডির জন্য ডিফ্র্যাগের দরকার হয় না।
০২. খুঁজে বের করুন অটোমেটিক প্রসেস এবং প্রতিরোধ করুন যাতে রান না করে : অপারেটিং সিস্টেম ইনস্টল করার সময় বেশ কিছু অ্যাপ ও প্রসেস সিস্টেমে ইনস্টল হয়। এসব অ্যাপ ও প্রসেস অপারেটিং সিস্টেম বুট করার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয় এবং ব্যাপকভাবে সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করতে থাকে, যা সিস্টেমের পারফরম্যান্স কমিয়ে দেয়।
কমপিউটারের অপারেশনের গতি বাড়ানো ও বুট টাইম বাড়ানোর অন্যতম দ্রুততম উপায় হলো ব্যাপকভাবে সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহারকারী অ্যাপ এবং প্রসেস সিস্টেম বুটিংয়ের সময় যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হতে না পারে তা ব্যবস্থা করা অর্থাৎ এসব অ্যাপ এবং প্রসেসকে প্রতিরোধ করা, যাতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোড না হয়।
কোনো প্রসেস রিয়েল টাইম রানিং এবং আপনার সিস্টেমকে ধীর করে ফেলছে, তা দেখতে পাবেন উইন্ডোজ (ভায়া টাস্ক ম্যানেজার) এবং ওএস এক্স (ভায়া অ্যাক্টিভিটি মনিটর) উভয়ের মাধ্যমে। আপনি ম্যাক ব্যবহারকারী হলে System Preferences, Users & Groups-এ মনোনিবেশ করে Login Items-এ ক্লিক করুন বুটের সময় আইটেমকে সিলেক্ট বা ডিসিলেক্ট করার জন্য।
উইন্ডোজে অটো-স্টার্ট অ্যাপ্লিকেশন নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় ফ্রি টুল হলো অটোরানস। এটি সুযোগ দেবে অনেক অনেক অপশনে শিফট করার, যেমন- লগঅন এন্ট্রি, এক্সপেস্নারার/ইন্টারনেট এক্সপেস্নারার অ্যাড-অনস এবং বুট এক্সিকিউট ইমেজ। তুলনামূলকভাবে নতুন পিসি যা ব্লটওয়্যারপূর্ণ, তাহলে এক্ষেত্রে পিসি ডিক্র্যাফায়ার টুল ব্যবহার করতে পারেন, যা বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এ ক্ষেত্রে। এ টুল খুব দ্রুতগতিতে অপ্রয়োজনীয় প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপ শনাক্ত করে অপসারণ করতে পারে।
০৩. দীর্ঘ ফাইল লোকেট ও ডিলিট করা : কমপিউটার থেকে মাঝেমধ্যে জাঙ্ক ফাইল মুছে ফেলা একটা ভালো অভ্যাস। এ কাজের জন্য বেশ কিছু ফ্রি এবং শক্তিশালী টুল রয়েছে। এ কিলিং টুলগুলো সহায়তা করবে টেম্পোরারি ফাইল, ব্রাউজার ক্যাশ এবং অন্যান্য উইন্ডোজ জাঙ্ক ফাইল থেকে পরিত্রাণ পেতে, যেগুলো আপনার দরকার নেই। তবে এ লেখায় আমাদেরকে নজর দিতে হচ্ছে দীর্ঘ ফাইলের প্রতি, যেমন মুভি, আইএসওএস এবং গেম। এসব ফাইল ফোল্ডার নেস্টে অদৃশ্য থাকে। পুরনো ফাইল দূর করার জন্য উইন্ডোজে রয়েছে একটি বিল্ট-ইন ডিস্ক ক্লিনআপ উইজার্ড।
WinDirStat নামের ফ্রি অ্যাপ এসব দীর্ঘ ফাইল আলাদা করার ক্ষেত্রে সহায়তা করে, যাতে ক্লিনআপের কাজ সহজ হয়ে যায়। এই টুল আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ফাইলের আত্তিকরণে নেয়া ড্রাইভ স্পেসের গ্রাফিক্যাল ভিউ প্রদান করে এবং আপনাকে সুযোগ দেবে এক্সটারনাল ড্রাইভের ফাইলকে মুভ বা ডিলিট করার।
ওএস এক্স উপরে উল্লিখিত কাজগুলো আরও কম টেকনিক্যাল উপায়ে করার সুযোগ করে দেয়। এ কাজটি করা হয় ঋরহফবৎ ব্যবহার করে। থার্ড পার্টি ইউটিলিটি iStat Menus ব্যবহার করে হার্ডডিস্কে কতটুকু স্পেস ফ্রি আছে তা খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।
০৪. পিসির ভেতরে পরিষ্কার করা : পিসির যথাযথ যত্ন ও খেয়াল না করলে পিসি ধুলাবালি পূর্ণ হয়ে যায়। পিসির কেসের অভ্যন্তরে ধুলাবালি জমে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রচুর তাপ সৃষ্টি হয়, যার কারণে পিসির পারফরম্যান্স কমে যায় এবং এক সময় হার্ডওয়্যার ফেইলুরের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।
পিসি পরিষ্কারের জন্য দরকার ফিলিপস হেড স্ক্রু ড্রাইভার, কম্প্রেস এয়ার ক্যান। পিসি বন্ধ করার পর পিসির সব কম্পোনেন্ট বিচ্ছিন্ন করুন এবং পিসি কেস ওপেন করুন এবং ধুলাবালি দূর করার জন্য কম্প্রেস এয়ার ব্যবহার করুন। এ সময় কোনো কম্পোনেন্টে স্পর্শ করা যাবে না এবং ক্যান ও কম্পোনেন্টের মাঝে যেন ভালো দূরুত্ব থাকে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। এ কাজ শেষ হওয়ার পর ধুলোবালি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করুন ভ্যাকিউম ক্লিনার।
০৫. ই-মেইল প্রতিহত করা, যাতে সবকিছু ভারাক্রান্ত করতে না পারে : যদি আপনি ডেস্কটপ ই-মেইল ক্লায়েন্ট ব্যবহার করেন এবং অব্যাহতভাবে ই-মেইল আর্কাইভের সত্মূপ তৈরি করতে থাকেন, তাহলে এমন অবস্থায় ব্যবহার করতে পারেন unroll.me নামে এক সহজ ব্যবহারযোগ্য টুল। এ টুলের মাধ্যমে আপনি খুব সহজে এবং দ্রুতগতিতে মাল্টিপল সার্ভিস আনসাবস্ক্রাইব করতে পারবেন যেগুলোর জন্য হয়তো আপনি সাইনআপ করেছিলেন। দ্রুতগতিতে ক্লিকিংয়ের উপায় হিসেবে ই-মেইলের নিচে “Unsubscribe Me” লিঙ্কে ক্লিক করুন।
আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেস এন্টার করার পর এবং টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন মেনে নেয়ার পর সার্ভিসের জন্য সাইন আপ করার জন্য এটি ইনবক্স স্ক্যান করবে। এ কাজটি করবে আপনাকে Unsubscribe en masse অপশন দেয়ার আগে। সাবস্ক্রিপশনের লিমিট পাঁচটি, যা আপনি পার হয়ে যেতে পারেন এর ফেসবুক পেজ লাইক করে।
০৬. ম্যালওয়্যার এবং ভাইরাস দূর করা : যদি আপনি দুর্ঘটনাবশত কম বিশ্বস্ত লিঙ্কে ক্লিক করেন, তাহলে দুর্ঘটনাক্রমে ট্র্যাপে পড়তে পারেন এবং ভাইরাস, স্পাইওয়্যার ও ম্যালওয়্যার কমপিউটারের গতি কমার মূল কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এক ভুল ধারণা প্রচলিত ছিল যে ম্যাক কখনই ভাইরাস আক্রান্ত হয় না এবং ম্যাকের জন্য অ্যান্টিভাইরাস দরকার নেই। এ ধারণা মোটেও সত্য নয় (ভাইরাস কম কমন হলেও ভাইরাস আক্রান্ত হয়)। সুতরাং অ্যাপল ব্র্যান্ডের মেশিন যদি সন্দেহজনকভাবে ধীরে রান করতে থাকে, তাহলে আপনার উচিত হবে ম্যাকের জন্য ফ্রি অ্যাভাস বা সোফস অ্যান্টিভাইরাস টুল রান করানো।
যেহেতু উইন্ডোজ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশী তাই উইন্ডোজের জন্য ম্যালওয়্যার স্ক্যানারের লিস্টও অনেক বড়। উইন্ডোজের জন্য জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস টুলগুলো হলো ম্যালওয়্যারবাইট, বিটডিফেন্ডার ফ্রি এডিশন, ক্যাসপারস্কি ভাইরাস রিমুভাল, সুপারঅ্যান্টিস্পাইওয়্যার ইত্যাদি। আপনি পিসি ও ম্যাককে রক্ষা করতে পারেন আপ-টু-ডেট করে