লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ও মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স
গণিতের অলিগলি পর্ব : ১১৩
মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ও মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স
যেকোনো একটি সংখ্যা নিন। ধরা যাক, সে সংখ্যাটি ৯৮৭৬। স্পষ্টতই এ সংখ্যাটিতে রয়েছে চারটি অঙ্ক বা ডিজিট। এই সবগুলো ডিজিটের গুণফল বের করলে আমরা পাই ৯ ৮ ৭ ৬ = ৩০২৪। এবার গুণফল হিসেবে পাওয়া এই ৩০২৪ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর গুণফল আগের মতো বের করি এবং এভাবে গুণফলের অঙ্কগুলোর গুণফল বের করার প্রক্রিয়া ততক্ষণ চলবে, যতক্ষণ না গুণফল একটি এক অঙ্কের সংখ্যায় পরিণত হয়। এখন ৩০২৪ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর গুণফল হয় ০ (কারণ, ৩ ০ ২ ৪ = ০)। অতএব এ ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম শেষ গুণফলটি এক অঙ্কের সংখ্যায় পরিণত হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে এই গুণফল ০। এতএব চলমান গুণন-প্রক্রিয়াটি আর সামনে এগিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে সর্বশেষ গুণফল হিসেবে পাওয়া এক অঙ্কের ০ সংখ্যাটি হচ্ছে শুরুতেই নেয়া চার অঙ্কের সংখ্যা ৯৮৭৬-এর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট।
তাহলে মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুটের একটি সংজ্ঞা আমরা এভাবে দাঁড় করাতে পারি : যদি যেকোনো অঙ্কের একটি সংখ্যা নিয়ে এর অঙ্ক বা ডিজিটগুলোকে গুণ করে গুণফল বের করা হয়, এরপর পাওয়া এই গুণফলের অঙ্কগুলো গুণ করে আবার আরেকটি গুণফল বের করা হয় এবং এভাবে বারবার পাওয়া গুণফলের অঙ্কগুলোর গুণফল আবার বের করা হয়- আর এই প্রক্রিয়া ততক্ষণ অব্যাহত রাখা হয়, যতক্ষণ সবশেষ গুণফলটি এক অঙ্কের একটি সংখ্যায় রূপ না নেয়, তখন সবশেষে পাওয়া গুণফল হবে শুরুতে নেয়া সংখ্যাটির মাল্টিফ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী স্পষ্টতই ওপরে দেয়া উদাহরণে ৯৮৭৬ সংখ্যাটির মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ০।
এখান থেকে আমরা গণিতের আরেকটি বিষয়ের সংজ্ঞা সহজেই জেনে নিতে পারি। শুরুতেই ৯৮৭৬ সংখ্যটি নিয়ে আমরা এর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট শূন্য (০) সংখ্যাটি বের করতে সংশ্লিষ্ট সংখ্যার অঙ্কগুলোর গুণন-প্রক্রিয়া দুইবার চালাতে হয়েছে। প্রথম গুণন-প্রক্রিয়াটি ছিল ৯ ৮ ৭ ৬ = ৩০২৪ এবং দ্বিতীয় গুণন-প্রক্রিয়াটি ছিল ৩ ০ ২ ৪ = ০। এরপরই আমরা কাঙিক্ষত মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিট রুট ০ পেয়েছি। এভাবে কোনো সংখ্যার মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিট রুট বের করার জন্য যতবার সংশ্লিষ্ট সংখ্যার অঙ্কগুলোর গুণন-প্রক্রিয়া চালানোর প্রয়োজন হয়, তত হচ্ছে এই সংখ্যার মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স। তাহলে আমরা বলতে পারি ৯৮৭৬ সংখ্যাটির মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স ২, আর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ০। জানিয়ে রাখি, মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্সকে number length-ও বলা হয়।
সাধারণ পাঠকদের কাছে বিষয় দুইটি আরও স্পষ্ট করে তোলার জন্য অন্য একটি সংখ্যা নিয়ে আরেকটি উদাহরণ দেয়া যাক। এবার ধরা যাক, পাঁচ অঙ্কের ৬৮৮৮৯ সংখ্যাটির মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ও মাল্টিপ্লিকেটিভ পারিসিসটেন্স কত, আমরা তা জানতে চাই। এখানে মূল সংখ্যাটি ৯৮৮৮৯। এ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর গুণফল = ৯ ৮ ৮ ৮ ৯ = ৪১৪৭২। আর ৪১৪৭২ সংখ্যাটির অঙ্কগুলোর গুণফল = ৪ ১ ৪ ৭ ২ = ২২৪; আর ২২৪-এর অঙ্কগুলোর গুণফল ২ ২ ৪ = ১৬; আবার ১৬-এর অঙ্কগুলোর গুণফল ১ ৬ = ৬। এখানে ৬ একটি এক অঙ্কের সংখ্যা। অতএব এতক্ষণ চলে আসা গুণন-প্রক্রিয়া আর চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। অতএব ৯৮৮৮৯ সংখ্যাটির মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিট রুট ৬ আর মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স ৪। কারণ সংখ্যাটির মাল্টিপ্লিকেটিভ রুট ৬ বের করতে আমাদেরকে চারবার সংশ্লিষ্ট সংখ্যার ডিজিটগুলোর গুণন-প্রক্রিয়া চালাতে হয়েছে।
আমরা যদি মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুটের সংজ্ঞাটি বুঝে থাকি, তাহলে সহজেই বলতে পারি ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০-এর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ০। আবার ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০-এর বেলায় এই রুট যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ০। একইভাবে ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০-এর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট যথাক্রমে ২, ৪, ৬, ৮, ০, ২, ৪, ৬, ৮, ০। আর ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪০-এর বেলায় এই রুট যথাক্রমে ৩, ৬, ৯, ২, ৫, ৮, ২, ৮, ৪ ও ০। এভাবে পরবর্তী সংখ্যাগুলোর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুটও আমরা সহজেই জানতে পারি।
লক্ষণীয়, ১, ১১, ১১১, ১১১১, ১১১১১, ... ইত্যাদি সংখ্যার প্রতিটির মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট হচ্ছে ১। অতএব আমরা বলতে পারি যেসব সংখ্যার এই ডিজিটাল রুট ১, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সংখ্যা হচ্ছে ১। আবার লক্ষ করি, আগের অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে- ২, ১২, ২১, ২৬, ৩৪, ৩৭, ... ইত্যাদি সংখ্যার প্রতিটির মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ২। অতএব বলতে পারি, যেসব সংখ্যার মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট ২ সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট সংখ্যা হচ্ছে ২।
এবার জেনে নেয়া যাক প্রথম দিকের স্বাভাবিক সংখ্যাগুলোর মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স। ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০-এর মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স বা নাম্বার লেংথ যথাক্রমে ০, ০, ০, ০, ০, ০, ০, ০, ০ ও ১। আর ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯ ও ২০-এর নাম্বার লেংথ যথাক্রমে ১, ১, ১, ১, ১, ১, ১, ১, ১ ও ১। একইভাবে ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ২৯ ও ৩০-এর নাম্বার লেংথ যথাক্রমে ১, ১, ১, ১, ২, ২, ২, ২, ২ ও ১। আর ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯ ও ৪০-এর নাম্বার লেংথ যথাক্রমে ১, ১, ১, ১, ২, ২, ২, ২, ২, ২ ও ৩।
এখানে মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলে সহজেই দেখা যাবে, যেসব সংখ্যার যথাক্রমে ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ... ইত্যাদি মাল্টিপারসিসটেন্স রয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট সংখ্যা হচ্ছে যথাক্রমে ১০, ২৫, ৩৯, ৭৭, ৬৭৯, ৬৭৮৮, ৬৮৮৮৯, ২৬৭৭৮৮৯, ২৬৮৮৮৯৯৯, ৩৭৭৮৮৮৮৯৯৯, ২৭৭৭৭৭৭৮৮৮৮৮৮৯৯, ...।
আরও জানিয়ে রাখি, গবেষকেরা জানতে পেরেছেন ১-এর ডানে ২৩৩টি শূন্য বসালে যে সংখ্যা হয়, সে সংখ্যাটির চেয়ে ছোট এমন কোনো সংখ্যা নেই যার মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স ১১-এর চেয়ে ছোট। আবার এমন অনুমিত ধারণাও রয়েছে, ১ অঙ্কবিহীন যেসব সংখ্যার মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স ১১, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সংখ্যা হচ্ছে ৭৭৭৭৭৭৩৩৩৩২২২২২২২২২২২২২২২২২২২। এর অর্থ এই সংখ্যাটির ওপর ১১ বার বা ধাপ গুণন-প্রক্রিয়া চালানোর পর আমরা এর মাল্টিপ্লিকেটিভ ডিজিটাল রুট পাব।
আবার এমন জোরদার অনুমান (গণিতের ভাষায় কনজেকচার) রয়েছে, যেসব সংখ্যার প্রতিটির মাল্টিপ্লিকেটিভ পারসিসটেন্স বা নাম্বার লেংথ ২-এর চেয়ে বড়, সেগুলোর মধ্যে একটি সবচেয়ে বড় ১-বিহীন সংখ্যা রয়েছে, যদিও ১-বিহীন সে সংখ্যাটি কত তা জানা যায়নি
গণিতদাদু