লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
মো: আতিকুজ্জামান লিমন
মোট লেখা:১৮
লেখা সম্পর্কিত
নিজেকে গড়ে তুলুন সফল প্রোগ্রামার হিসেবে
কমপিউটার প্রোগ্রামিং সম্পর্কে বলতে গেলে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে লজিক। প্রোগ্রামার হতে হলে লজিক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। বাস্তব জগতকে কমপিউটার জগতে রূপান্তর করতে লজিক একটি মুখ্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রোগ্রামিং একটি ভাষার ওপর ভর করে তৈরি করা হয় এবং মানুষের মুখের ভাষার মতোই অনুশীলনের মাধ্যমেই এ ভাষা আয়ত্ত করা সম্ভব, তবে এজন্য অবশ্যই অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই। পরিশেষে, প্রকৃত প্রোগ্রামার হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে সমস্যা সমাধানে দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে।
ড. তৌহিদ ভূঁইয়া
বিভাগীয় প্রধান, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
স্বপ্ন যাদের আকাশ ছোঁয়ার, তাদের জন্য প্রোগ্রামিং হতে পারে একটি অন্যতম উপায়। প্রোগ্রামার হতে হলে কমপিউটার সায়েন্সেই পড়তে হবে- এটি ঠিক নয়। পৃথিবীর অনেক নামীদামী প্রতিষ্ঠানে প্রোগ্রামার হিসেবে যারা আছেন, তাদের অনেকেরই কমপিউটার সায়েন্সে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই। তাদের অনেকেরই বিজ্ঞান বিষয়টি শিক্ষাজীবনে ছিল না। তবে গণিত বিষয়ে যেমন যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকাটা অপরিহার্য, সেই সাথে লজিক বা যুক্তিবিদ্যা থাকতে হবে, মূলত যুক্তিবিদ্যাকে কাজে লাগিয়েই প্রোগ্রামিং করা হয়।
কমপিউটার প্রোগ্রামিং কী?
অনেকেই মনে করেন, প্রোগ্রামিং একটি জটিল বিষয়। আসলে এটা অতটা জটিল নয়। কমপিউটার প্রোগ্রামিংকে অনেকে প্রোগ্রামিং, কোডিং অথবা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট হিসেবে চেনে। এটি একটি লিখিত নির্দেশনা, যা কমপিউটার বুঝতে পারে। যেমন- মাইক্রোসফট এক্সেলে যদি কেউ ম্যাক্রো করে, তবে সে নিজেকে প্রোগ্রামার হিসেবে বলতে পারে। এইচটিএমএলে ওয়েব পেজ তৈরি করাও কোডিং লেখার মতো একটি কাজ (তবে অনেকেই এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করবে, তবে সংজ্ঞা অনুযায়ী এটি সঠিক)। যদি কখনও মূলধারার প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে যেমন- বেসিক, প্যাসকেল, সি, জাভা, জাভাস্ক্রিপ্ট অথবা পিএইচপিতে কোডিং করে থাকেন, তবে প্রোগ্রামিংয়ের জগতে প্রবেশ করেছেন।
প্রোগ্রামিং কেন প্রয়োজন?
প্রোগ্রামিং দরকার কারণ, কমপিউটার বেশি স্মার্ট নয়। কমপিউটারকে কোনো নির্দেশনা না দিলে এটি হার্ডওয়্যার ছাড়া আর কিছুই নয়। হার্ডওয়্যারকে চালাতেই সফটওয়্যার অপরিহার্য। কমপিউটার প্রোগ্রামকে অনেকে অ্যাপ্লিকেশন অথবা কমপিউটার সফটওয়্যার হিসেবে চেনেন, যা একত্রিত কিছু নির্দেশনা অথবা কোড, যা এক বা একাধিক প্রোগ্রামার কমপিউটারে তৈরি করে।
যদিও প্রোগ্রামিংয়ের প্রাথমিক কাজ নির্দিষ্ট কোনো এডিটরে কোডিং করা, তবে প্রোগ্রামারের কাজ শুধু কোডিং করা নয়। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে প্রাথমিক ধারণা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ব্যবহারোপযোগী প্রোডাক্ট তৈরি হয়। প্রোগ্রামিং যখন লিখিত কিছু নির্দেশনা, তখন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সফটওয়্যার তৈরি করে বহুসংখ্যক কাজ একত্র করে, যেমন- ব্যবহারকারীদের সাথে কথা বলে (সম্ভাব্য ব্যবহারকারী) সফটওয়্যারের নতুন ফিচার ও ধারণা তৈরি করা।
* সফটওয়্যার কীভাবে চলবে তার নির্দেশনা তৈরি করা।
* অন্যান্য প্রোগ্রামারের সাথে সফটওয়্যারের বৈশিষ্ট্য এবং নকশা তৈরি নিয়ে আলোচনা।
* কোড লেখা।
* কোড টেস্টিং বা পরীক্ষা।
* বাগ ফিক্সিং বা সমস্যা সমাধান।
* সফটওয়্যার রিলিজের জন্য প্রস্ত্তত করা।
* এবং অন্যান্য।
শুরু করবেন কীভাবে?
এ পেশায় ভালো করার একটিই উপায়- ধ্যান-জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা সব কিছুতে শুধু প্রোগ্রামিং থাকতে হবে। সর্বশক্তি নিয়ে প্রোগ্রামিং করতে নামতে হবে। কেউ যদি বলে, প্রোগ্রামিং শেখার কোনো শর্টকাট আছে কি না, সে ক্ষেত্রে খুব সহজেই ‘না’ বলে দেয়া যায়। অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন, দিনে ১০-১২ ঘণ্টা কোডিং অনুশীলন করলে ভালো-দক্ষ প্রোগ্রামার হওয়া যাবে, আসলে ধারণাটি ভুল। মনোযোগের সাথে যদি কেউ ৩-৪ ঘণ্টা অনুশীলন করে, তবে সেটি বেশি কার্যকর হবে। অনেকেরই মনে-প্রাণে-ধ্যানে প্রোগ্রামিং শেখার ইচ্ছে আছে, কিন্তু কীভাবে শুরু করবেন, সে বিষয়টি নিয়ে একটু বিভ্রান্তি চলছে। তাদের জন্য অনলাইন হতে পারে একটি আদর্শ স্থান। যেমন- যারা সি দিয়ে প্রোগ্রামিং শুরু করতে চান, তারা সি বিষয়ে অনলাইনে খোঁজ করলে অসংখ্য টিউটোরিয়াল আসবে, যা দিয়ে প্রাথমিকভাবে শুরু করা যেতে পারে। প্রোগ্রামিং শেখার জন্য ইন্টারনেটের জগৎ বিশাল।
অনেকেরই একটি সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করা ভালো। এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট কোনো উত্তর দেয়া কঠিন। তবে যেকোনো প্রচলিত ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। প্রাথমিক প্রোগ্রামিংয়ের জন্য সি, জাভা, পাইথন যেকোনো একটি দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, শুধু অনলাইনে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে বা বই পড়ে একজন প্রোগ্রামার হওয়া যায় না। প্রোগ্রামার হতে হলে নিজে নিজে কোডিং লিখতে হবে এবং সমস্যা সমাধান করতে হবে।
পর্যালোচনা ও পরামর্শ
ভালো প্রোগ্রামার হতে হলে সবার আগে প্রয়োজন প্রচুর ধৈর্য। কোনো নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধান করার মানসিকতা এবং সর্বোপরি প্রতিটি কাজে বিভিন্ন ধাপ অনুযায়ী সম্পন্ন করা। প্রোগ্রামিং শেখা মজার, আনন্দদায়ক এবং চ্যালেঞ্জিং একটি কাজ। এখানে আপনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজসহ অন্যান্য টেকনোলজি ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন বানাবেন। প্রোগ্রামার হওয়ার যে ইচ্ছেটুকু লালন করে আছেন, তা নিয়ে দৃঢ়সঙ্কল্পে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে, থাকতে হবে প্রযুক্তির সব নতুন নতুন আবিষ্কারের প্রতি প্রবল আকর্ষণ। একটি সময় আসবে, যখন দেখবেন আপনি সেরা প্রোগ্রামারের আসনে বসে আছেন।
কেন প্রোগ্রামার হবেন?
প্রোগ্রামিং একটি চ্যালেঞ্জিং ও উচ্চ বেতনের পেশা। আপনার যদি সময়োপোযোগী প্রোগ্রামিং দক্ষতা থাকে, তাহলে প্রচুর চাকরি আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এই পেশায় আপনি চাইলে আপনার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজের সময় এবং স্থান নির্বাচন করতে পারেন (বাসায় বসে, কফি শপে অথবা অন্য কোনো শহরে)।
ইউএস লেবার ডিপার্টমেন্টের হিসেবে অনুযায়ী, ২০০০ ও ২০১৪ সালের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান ৮-১০টি চাকরিই কমপিউটার সম্পর্কিত। একটি ম্যাগাজিনের জরিপ অনুযায়ী, কমপিউটার সম্পর্কিত চাকরি ১০ নম্বরের মধ্যে। প্রোগ্রামিংয়ে চাকরি তাদের মধ্যে অন্যতম।
ফিডব্যাক : infolimon@gmail.com