লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
কাজী শামীম আহমেদ
মোট লেখা:৯
লেখা সম্পর্কিত
লেখার ধরণ:
উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২
তথ্যসূত্র:
নেটওয়ার্ক সিস্টেম
উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ কোর ফিচার ও আপগ্রেডেশন
আপনি উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ ও ২০০৮ ভার্সন ২-এর মতো উইন্ডোজ ২০১২-কে সার্ভার কোর হিসেবে রান করাতে পারেন। বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস (এটও) সার্ভার থেকে ভিন্ন। কোর সার্ভার ইনস্টলেশনে অনাবশ্যক উইন্ডোজ কম্পোনেন্ট যেমন- ইন্টারনেট এক্সপেস্নারার, উইন্ডোজ মিডিয়া প্লেয়ার ইত্যাদি বাদ দেয়া হয়। এতে সেই পরিচিত গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস সুবিধা পাওয়া যাবে না। সার্ভারে লগ অন করার পর গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসের টাস্কবার স্ক্রিনের পরিবর্তে নিমণরূপ একটি কমান্ড প্রম্পট আপনার সামনে আসবে।
তবে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এ আপনি অনেক গ্রাফিক্যাল টুল ব্যবহার করতে পারবেন, যা ডিফল্ট হিসেবে সার্ভারে থাকে। এছাড়া এর সাথে পাবেন পূর্বপরিচিত অনেক সার্ভার রুলস ও ফিচার। এবার দেখা যাক, কেন ইউজারেরা গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস সার্ভারের পরিবর্তে সার্ভার কোর বেছে নেবেন। সার্ভার কোর ব্যবহারের প্রধান সুবিধাগুলো নিমণরূপ :
০১. উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর কোর সার্ভার ইনস্টলেশনের জন্য প্রয়োজন গ্রাফিক্যাল সার্ভারের, এমনকি উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ডিস্ক স্পেসের প্রয়োজন হয়। সার্ভার কোর দ্রুততার সাথে ইনস্টল করা ও প্রয়োজনে তার ব্যাকআপ নেয়া যায়।
০২. গ্রাফিক্যাল সার্ভারের তুলনায় সার্ভার কোর ইনস্টলেশনের জন্য অপেক্ষাকৃত কম মেমরির প্রয়োজন হয়। সার্ভারের ন্যূনতম ৫১২ মেগাবাইট র্যাসম থাকলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ ইনস্টল করতে পারবেন।
০৩. অনাবশ্যক উইন্ডোজ উপাদানগুলো অন্তর্ভুক্ত না থাকার কারণে এগুলোর আপডেট প্রয়োজন হয় না। এতে করে সময়সহ সিস্টেমের অন্যান্য রিসোর্স সাশ্রয় হয়। এখানে উল্লেখ্য, মাইক্রোসফট প্রতি মাসের দ্বিতীয় মঙ্গলবার সিস্টেম আপডেট রিলিজ করে। মাইক্রোসফট এ দিনকে বলে প্যাছ মঙ্গলবার (Patch Tuesday)। তবে দেখা গেছে, অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অত্যাবশ্যক নয়- এমন কম্পোনেন্ট যেমন ইন্টারনেট এক্সপেস্নারারের জন্য বেশি পরিমাণে আপডেট রিলিজ হয়।
০৪. ম্যালওয়্যার (ক্ষতিকারক কমপিউটার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার) প্রণেতার কাছে আক্রমণের জন্য সার্ভার কোর ইনস্টলেশন মোটেই আকর্ষণীয় লক্ষ্যবস্ত্ত নয়। সাধারণত দেখা যায়, ম্যালওয়্যার ত্রুটিপূর্ণ সফটওয়্যার যেমন- ইন্টারনেট এক্সপেস্নারার, অ্যাক্টিভএক্স, জাভাস্ক্রিপ্ট, অ্যাডোবি ফ্ল্যাশ ও অ্যাডোবি রিডারের মাধ্যমে সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করে। বাই ডিফল্ট সার্ভার কোরে এসব প্রোগ্রাম নেই বলে এটি ম্যালওয়্যার দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
০৫. উইন্ডোজ ২০১২ সার্ভার ইনস্টলেশন কার্যক্রম কমান্ড প্রম্পটভিত্তিক বলে আপনাকে খুব ভালো করে জানতে হবে কোন কমান্ডের ফলাফল কী হবে। গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেসভিত্তিক ইনস্টলেশনে ইউজার না জেনে অনেক গ্রাফিক্যাল কমান্ডে ক্লিক করতে পারেন এবং এতে করে অনেক সময় ভুল বা অপ্রয়োজনীয় কম্পোনেন্ট সিস্টেমে ইনস্টল হয়ে যেতে পারে। ইনস্টলেশন কার্যক্রম শুরু করার আগে ভালো করে জানতে হয় বলে কমান্ড প্রম্পটভিত্তিক ইনস্টলেশনে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে এবং সিস্টেমে যথাযথভাবে আবশ্যক কম্পোনেন্টগুলো ইনস্টল হয়।
০৬. সিস্টেম বা সার্ভারের নিরাপত্তার দিক থেকে সার্ভার কোর হচ্ছে সর্বোত্তম অপশন। আপনার প্রতিষ্ঠান যদি কোনো উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন ওয়েবসাইট বা এফটিপি (FTP) সাইট হোস্ট করতে চায়, তাহলে সার্ভার কোর ওই সাইটগুলোর সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। সাইটের সংখ্যা ও ডাটা কনটেন্টের ব্যাপকতা বিবেচনায়ও সার্ভার কোর বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী অপশন।
০৭. উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এ সার্ভার ইনস্টলেশনের ক্ষেত্রে বা পরিধি ছিল সীমিত। যেমন- উইন্ডোজ ২০০৮-এর সার্ভার কোরে ওয়েবসাইটের জন্য ASP.Net সেবাটি অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা আপনি উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-তে পাচ্ছেন।
০৮. উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর মাধ্যমে সার্ভারের দক্ষতা ও সক্ষমতা আরও বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। সার্ভার ২০১২-এ যুক্ত হয়েছে অত্যন্ত সময়োপযোগী কিছু ফিচার যেমন- সার্টিফিকেট সার্ভার, আপডেট সার্ভার ইত্যাদি। এছাড়া আগের বিশেষ ফিচার যেমন- রাউটিং, রিমোট অ্যাক্সেস এতে অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সার্ভার কোর আপগ্রেড করা
নতুনদের জন্য উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর সার্ভার কোরে ফ্রেশ ইনস্টলেশন থাকা উচিত। তবে আপনি যদি উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর সার্ভার কোর নিয়ে কাজ করতে ইতোমধ্যেই অভ্যস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি নিশ্চয় উইন্ডোজ ২০০৮ বা ২০০৮-এর ভার্সন ২ থেকে সার্ভার কোরকে ২০১২-এর সার্ভার কোরে আপগ্রেড করতে চাইবেন। যখনই উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮ ভিত্তিক কোর ইনস্টলেশনকে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-তে আপগ্রেড করতে যাবেন, তখন নিচের শর্তগুলো মানতে হবে :
আপনাকে অবশ্যই উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর এক্স৮৬-৬৪ বিট ভার্সন রান করাতে হবে।
সার্ভারে কমপক্ষে ১৫ গিগাবাইট খালি ডিস্ক স্পেস থাকতে হবে।
যদি সিস্টেমে উইন্ডোজ ওয়েব সার্ভার ২০০৮ রান করেন, তাহলে একে শুধু উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর স্ট্যান্ডার্ড এডিশনে আপগ্রেড করতে পারেন। আর যদি সার্ভার ২০০৮-এর স্ট্যান্ডার্ড এডিশন রান করেন, তাহলে একে আপগ্রেড করা যাবে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর স্ট্যান্ডার্ড বা ডাটাসেন্টার এডিশনে। এছাড়া উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর এন্টারপ্রাইজ বা ডাটাসেন্টার এডিশনকে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর ডাটাসেন্টার এডিশনে আপগ্রেড করা যাবে।
উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-কে আপগ্রেড করার জন্য সার্ভার ২০১২-এর জন্য যথাযথ ইনস্টলেশন মিডিয়ার প্রয়োজন। মিডিয়া হতে পারে একটি ডিভিডি, ইউএসবি ফ্ল্যাশ ডিভাইস, আইএসও ইমেজ ফাইল, ইনস্টলেশন ফাইল কপি করা আছে এমন হার্ডড্রাইভ বা শেয়ারড নেটওয়ার্ক লোকেশন যখন উপযুক্ত ফরম্যাটে ইনস্টলেশন ফাইল পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে, সার্ভার কোর ইনস্টলেশনের জন্য কোনো AutoPlay ফাংশন বা অপশন পাওয়া যাবে না। সাভার কোর আপগ্রেডেশনের কাজটি যদি আপনি নেটওয়ার্ক লোকেশন থেকে সম্পন্ন করতে চান, তাহলে প্রথমে net.exe-এর সাহায্যে লোকেশনকে ড্রাইভ লেটারে ম্যাপ বা চিহ্নিত করুন। আপগ্রেডিং প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য setup.exe কমান্ড রান করুন।
এবার ইনস্টলেশনের জন্য উইন্ডোজ সেটআপ স্ক্রিনে প্রাপ্ত Install Now বাটনে ক্লিক করুন।
কিছুক্ষণ পর আপনার সামনে গ্রাফিক্যাল উইন্ডোজ সেটআপ স্ক্রিন আসবে। এটি দেখতে প্রায় উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর ক্লিন বা ফ্রেশ ইনস্টলেশন উইন্ডোর মতো।
এবার Get important updates for Windows Setup স্ক্রিনে Go online to install updates now (recommended) অপশন সিলেক্ট করুন। এ অপশনটি কার্যকর করার জন্য সার্ভারে অবশ্যই ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় থাকতে হবে। ইন্টারনেট সিস্টেমে সার্ভার কোর আপগ্রেশন প্রক্রিয়া অনেক বেশি সহজ করে দেবে। আপনি যদি I want to help make the Windows installation better অপশন সিলেক্ট করেন, তাহলে উইন্ডোজ সেটআপ প্রোগ্রাম যেসব তথ্য শনাক্ত করতে সক্ষম হবে না, সেগুলো সংগ্রহ করে মাইক্রোসফটকে পাঠাবে।
এখন Select the operating system you want to install স্ক্রিনে অবস্থিত ইনস্টলেশন অপশনগুলো থেকে কাঙিক্ষত অপশনটি বেছে নিন। অপশনগুলো নির্ভর করবে আপনার বিদ্যমান উইন্ডোজ সার্ভার ২০০৮-এর এডিশনের বা রিলিজ ভার্সনের ওপর। যথাযথ অপারেটিং সিস্টেমটি সিলেক্ট করে আপগ্রেডেশন শুরু করার জন্য ঘবীঃ বাটনে ক্লিক করুন।
উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর জন্য প্রযোজ্য লাইসেন্সের শর্তাদির প্রতি সম্মতি জ্ঞাপনের জন্য ও accept the license terms চেকবক্সে ক্লিক করে Next বাটনে ক্লিক করুন।
এখন আপগ্রেডেশনের জন্য Which type of installation do you want? স্ক্রিনে Upgrade : Install Windows and keep files, settings and applications অপশন সিলেক্ট করুন।
এবাব আপনার সামনে একটি কম্প্যাটিবিলিটি রিপোর্ট আসবে। এ রিপোর্টে আপনি দেখতে পাবেন ওইসব অ্যাপ্লিকেশন ও ড্রাইভারের তালিকা, যেগুলো উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর সাথে কাজ করবে না অর্থাৎ কম্প্যাটেবল নয়। যদি আপনি মনে করেন তালিকায় বিদ্যমান কোনো অত্যাবশ্যক ডিভাইস উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর সাথে কাজ করবে না বা সিস্টেমে সমস্যা হবে, তাহলে আপগ্রেড না করে ওই ডিভাইসটি প্রথমে পরিবর্তন বা আপগ্রেড করে নিতে হবে। আর যদি মনে করেন ইন-কম্প্যাটেবল তালিকায় কোনো গুরুত্বপূর্ণ ডিভাইস বা প্রোগ্রাম নেই, তাহলে আপগ্রেডের জন্য Next বাটনে ক্লিক করুন।
সার্ভার কোর আপগ্রেডেশন ইনস্টলেশন প্রক্রিয়ার অগ্রগতি উইন্ডোজ সেটআপ স্ক্রিনে দেখা যাবে। কত সময়ে ইনস্টলেশন প্রক্রিয়া শেষ হবে তা নির্ভর করছে সার্ভারের রোলস অ্যান্ড ফিচারস, প্রসেসর ক্ষমতা, র্যা ম ও খালি ডিস্ক স্পেস ইত্যাদির ওপর। আপগ্রেডেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ লক স্ক্রিন আসবে। সার্ভারে লগইন করার জন্য Ctrl+Alt+Del চাপুন।
এবার পাসওয়ার্ড টাইপ করে সার্ভারে লগইন করুন। আপগ্রেডেড সার্ভার কোর আপনার সামনে কমান্ড প্রম্পট উপস্থাপন করবে।
ইনস্টলেশন প্রক্রিয়ায় যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে তার রেকর্ড উইন্ডোজ সেটআপ এরর লগ (Error log) হিসেবে সংরক্ষণ করে থাকে। এরর লগ ফাইলের বিষয়বস্ত্ত দেখতে চাইলে কমান্ড প্রম্পটে টাইপ করুন : notepad.exe C:\Windows\SetupErr.log