লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আপাতত ইন্টারনেট ব্যবহারের দাম কমছে না
সম্প্রতি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) ২০১৫-২০১৭ মেয়াদে কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
এতে এমএ হাকিম সভাপতি পদে নির্বাচিত হন। তিনি কমপিউটার জগৎ-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সংগঠনটির নানা পরিকল্পনার কথা জানান। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সোহেল রানা।
আইএসপিএবি’র নতুন সভাপতি হিসেবে আপনার পরিকল্পনা কী?
গত দুই বছর আইএসপিএবি’র সাথে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত আইসিটি সাংবাদিকদের একটা দূরত্ব আমি লক্ষ করেছি। বিশেষ করে পিআর বা এই সেক্টরের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগের কিছু ঘাটতি ছিল। আমি প্রথমত এই দিকটার উন্নয়নে বিশেষ করে আইসিটি সাংবাদিকদের সাথে সংগঠনের দূরত্বটা কমিয়ে আনতে কাজ করব। কারণ, আমাদের সমস্যা-সম্ভাবনা গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করতে পারলে এই সেক্টরটির সামনে এগোনো কঠিন হবে। এজন্য যৌথভাবে সাংবাদিকদের সাথে আমরা ট্রেনিং, ওয়ার্কশপসহ নানা কর্মসূচি আয়োজন করতে চাই। এতে এই খাতের সঠিক তথ্য গণ্যমাধ্যমে তুলে ধরতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে ইন্টারনেট ডোমেইনে তিনটি স্তরে কাজ করছে। যেমন- আইআইজি, আইজি এবং এটিটিএন। আইএসপিগুলো আইআইজি থেকে ব্যান্ডউইডথ কিনে এবং এনটিটিএনের মাধ্যমে ট্রান্সমিশন করে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দিচ্ছে। শুরু থেকেই এনটিটিএন এবং আইএসপি’র মধ্যে মতের পার্থক্য আছে বিভিন্ন কারণে। প্রাইসিং, ট্রান্সমিশনে আমাদের বিনিয়োগ, মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করা, আপ টাইম নিশ্চিত এবং ডাউন টাইম কীভাবে মিনিমাইজ করা যাবে ইত্যাদি নিয়ে এনটিটিএনের সাথে আমাদের মতবিরোধ। অথচ এই দুটি সেক্টর কিন্তু ইন্টারনেট সেবায় ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। আবার আইআইজি’র কাছ থেকে কোয়ালিটি সার্ভিস নিশ্চিত করতে না পারলে, প্রাইস বেনিফিট না পেলে গ্রাহক পর্যায়ে বিশেষ মূল্য সুবিধাও দেয়া যায় না। এই যে একটা চেইন সিস্টেম আছে এগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার। দেখা যায় আইএসপি সবসময় দোষারোপের শিকার হয়। কারণ, এনটিটিএন ও আইআইজি কিন্তু পাবলিক ডিলিংস না করে আইএসপি’র সাথে কাজ করছে। আইএসপি যেহেতু গ্রাহক পর্যায়ে কাজ করছে সেহেতু কারো কোনো সমস্যা হলে আঙ্গুল ওঠে আমাদের সংগঠনের দিকেই। গ্রাহক তো এনটিটিএন ও আইআইজি-কে চেনে না। এই তিনটি স্তরকে কোনোভাবে এক টেবিলে বসে এক মতে আসা যায় কি না সেই চেষ্টা করব। আমি আরো চেষ্টা করব আইআইজি ও আইএসপি নিয়ে একটা আলাদা সংগঠন করা যায় কি না। বিটিআরসি’র সহায়তা নিয়ে এনটিটিএনের সাথে আইএসপি’র যে দূরত্ব আছে তা কিভবে কমিয়ে আনা যায় এই বিষয়ে উদ্যোগ নেব। আমি চেষ্টা করব আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের একটা যেন নিজস্ব আইএক্স (ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জ) থাকে। কারণ ইন্টারনেট এক্সচেঞ্জের জন্য বিডিএক্স কাজ করছে এবং নভো নামের একটি প্রতিষ্ঠান অপারেশনে আসবে। এরা কিন্তু এই সেক্টরে সেভাবে জড়িত নয়। যদিও এদের ট্রাস্টি বের্ডের সদস্যরা জড়িত। তাদের সাথে আমাদের চাহিদা কতটুকু ম্যাচ করবে তা নিয়ে সবসময় আমাদের মধ্যে একটা দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে। আমি আশা করছি, আইএসপি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটা আইএক্স করা হবে, যা শতভাগ অলাভজনক থাকবে এবং ভলেনটারিভিত্তিক কাজ হবে। এতে আমাদের আইএসপি সদস্যগুলো বিনামূল্যে আইএক্সের সেবা নিতে পারবে।
নতুন কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের খরচ কমাতে উদ্যোগ নেবে কি না?
আপাতত মূল্য কমানোর পরিকল্পনা নেই। কারণ বর্তমানে স্বল্পমূল্যে গ্রাহকেরা ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছেন। বাজারে আইএসপিগুলো এখন ১২০০ টাকায় ১.৫ এমবিপিএস ইন্টারনেট অফার করছে। এই টাকার মধ্যে ভ্যাট, আইআইজি, এনটিটিএন ও অন্যান্য কারিগরি সেবার মূল্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে আমরা গ্রাহকদের জন্য সেবার মান আরো বাড়াতে চাই।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণে বর্তমানে কি কি বাধা কাজ করে?
এক্ষেত্রে প্রধান বাধা হচ্ছে ট্রান্সমিশন। এই কাজটি করবে এনটিটিএন। সর্বশেষ বিটিআরসি’র সাথে আমাদের মিটিংগুলোতে প্রস্তাব ছিল এক্ষেত্রে সরকারের যে অবকাঠামো আছে তা লিজ দেয়া যায় কি না। সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। এটি করা হলে বিটিসিএলের যে ট্রান্সমিশন আছে তা নিয়ে একটা উইন উইন সিচুয়েশনে যেতে হবে। সরকার চাচ্ছে স্বল্পমূল্যে কীভাবে ইন্টারনেট সম্প্রসারণ করা যায়। একটা বিষয় দেখতে হবে, প্রাইভেট সেক্টর কিন্তু কোনো সময় সাবসিডি দেবে না। সরকার যদি এই খাতে সাবসিডি দেয় তখন হয়তো আমরাও কিছু দিতে পারি বা মুনাফা কমিয়ে আনতে পারি। সরকার যদি আমত্মঃজেলা কানেকটিভিটি নিশ্চিত করে তাহলে আমরাও কিছুটা সাবসিডি দিতে পারি। এক্ষেত্রে সরকারকেও যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি আমরাও এগিয়ে আসব ইন্টারনেট সম্প্রসারণে। উপজেলা পর্যায়ে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রাইসিং। কারণ এখন কোনো এনটিটিএনের কাছ থেকে ২ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট বা কোনো জেলা শহরে নিতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাগে। এখন ওই জেলাতে যদি ১ এমবিপিএস আমি ৮ হাজার টাকায়ও বিক্রি করি। তখন গ্রাহক কিন্তু এই রেট শুনে বলবেন আইএসপি তো খুবই খারাপ ১ এমবিপিএস ৮ হাজার টাকা নিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এনটিটিএন মোট প্রাইসের ৯০ভাগ এবং অন্য স্টেকহোল্ডারেরা কিছু কিছু করে নিয়ে যায়। এজন্য সরকার যদি আমত্মঃজেলা সংযোগ ফ্রি বা স্বল্পমূল্যে দিত, তাহলে আইএসপিগুলো জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দ্রুত ইন্টারনেট ছড়িয়ে দিতে পারত। ফলে দেশে একদিকে ব্রডব্যান্ড ব্যবহারকারী ও ব্যবসায় বাড়ত পাশাপাশি ইন্টারনেটের প্রাইসও কমে আসত।