লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
বাংলাদেশ চায়ন ফেসবুক দেয় না কেন?
বাংলাদেশ এ পর্যন্ত যতবার তথ্য চেয়েছে ফেসবুকের কাছে, ফেসবুক ততবার ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। কোনো তথ্যই দেয়নি। ফেসবুক বাংলাদেশকে এ-ও জানিয়েছে, ফেসবুক কোনো তথ্যই বাংলাদেশকে দেবে না। কিন্তু কেনো?
এই কেনোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এলো এক চমকপ্রদ কাহিনী। বাংলাদেশ ফেসবুকের এফসিসি ডিসক্লোজারে কোয়ালিফাই করতে পারেনি। ওই এক ব্যর্থতার কারণে ফেসবুক বাংলাদেশের কোনো আবেদনে সাড়া দেয় না।
তবে কয়েকটি ছোটখাটো বিষয় আছে। ওই বিষয়গুলো ফেসবুকের সাথে সরকার অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে ফেসবুক বাংলাদেশের কথা শুনতেও পারে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে অফিস না থাকা এবং কোনো ধরনের সমঝোতা চুক্তি না থাকায় বারবার ‘বিভিন্ন আইডি’র বিপরীতে তথ্য চেয়ে আবেদন করলেও ফেসবুক থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছে না সরকার। ২০০৩ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত তিনবার ফেসবুকের কাছে ৩৪ জনের আইডির বিষয়ে তথ্য চেয়ে আবেদন করেও সরকার কোনো উত্তর পায়নি।
যেসব দেশে ফেসবুকের অফিস বা অ্যাডমিন প্যানেল নেই, সেসব দেশের সরকার কোনো ব্যক্তির তথ্য চেয়ে পাঠালেই ফেসবুক কর্তৃপক্ষ দেয় না। তবে অনুরোধের বিপরীতে যথার্থ কারণ খুঁজে পেলে সংশ্লিষ্ট আইডি ব্লক করে বা ক্ষতিকর পোস্ট সরিয়ে ফেলে ফেসবুক। আর যেসব দেশে অফিস বা অ্যাডমিন প্যানেল রয়েছে বা নিদেনপক্ষে কোনো ধরনের সমঝোতা চুক্তি আছে, সেসব দেশের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য চাওয়া হলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা যাচাই করে দেখে, ওই ব্যক্তি বা আইডি আন্তর্জাতিক শান্তি বিনষ্টের জন্য কাজ করছে কি না। কোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ বা সংঘর্ষের সাথে তার যোগসাজশ পাওয়া গেলে ওই ব্যক্তির তথ্য ফেসবুক সরকারকে সরবরাহ করে থাকে এবং সে দেশের সরকারের চাওয়া-অনুরোধকেও গুরুত্ব দেয়। সংশ্লিষ্ট আইডির আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নম্বর যদি ওই দেশের হয়ে থাকে, তাহলে ফেসবুক সেগুলো বন্ধ করতে পারে বা তথ্য দিয়ে সরকারকে সহায়তা করে। কাঙিক্ষত আইপি সংশ্লিষ্ট দেশের না হলে ফেসবুক সেগুলোর বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয না। এ কারণে কোনো সরকারের চাওয়ার বিপরীতে ফেসবুক শতভাগ তথ্য দেয় না।
২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দুই বছরে বাংলাদেশ তিনবারে ৩৪টি আইডির তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানায় ফেসবুকের কাছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত একটি আবেদনে ১২ জন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সাতটি আবেদনে ১৭ জন এবং একই বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচটি আবেদনে পাঁচজনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানায় সরকার।
প্রসঙ্গত, প্রতি ছয় মাস পরপর ফেসবুক ‘গভর্মেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট’ প্রকাশ করে থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়ে অনুরোধ করে, তা জানা যায়নি। তবে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সবাই বিটিআরসির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। যদিও বিটিআরসি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে না বলে দাবি করেছে।
জানা গেছে, ফেসবুক যুক্তরাষ্ট্রে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি সে দেশের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (এফসিসি) নির্দেশনা মেনে চলে। ফেসবুকের ‘এফসিসি ডিসক্লোজার’ কোয়ালিফাই করতে পারেনি বলেই বাংলাদেশ সরকার কোনো তথ্য পায় না। কোয়ালিফাই করতে পারলে সরকার সব ধরনের তথ্য পাবে। তিনি আরও বলেন, ফেসবুকের সব তথ্যই তো উন্মুক্ত। এর কাছে থাকে শুধু সংশ্লিষ্ট আইডির আইপি ঠিকানা। আইডির তথ্য চাওয়ার অর্থ হলো আইডিটি কোথায় ব্যবহার হয়। এটি ফেসবুক কেন দেবে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ফেসবুক এর গ্রাহকের প্রতি যত্নবান। ফেসবুক কখনই চায় না তার কারণে গ্রাহক বিপদে পড়ুক।
ফেসবুক ভারতের পরিচালক অাঁখি দাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিগগিরই বাংলাদেশে ফেসবুকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট ডটঅর্গের কার্যক্রম শুরু হবে। সে উপলক্ষে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ডটঅর্গের অফিস চালুর সম্ভাবনা আছে। অফিস চালু হলে ওই অফিসের মাধ্যমে ফেসবুক তার দাফতরিক কার্যক্রমও পরিচালনা করবে। বিটিআরসি দেশে ‘অ্যাডমিন প্যানেল’ স্থাপনের আহবান জানিয়ে ফেসবুকের কাছে চিঠি পাঠালে এ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি তার উত্তর পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে ফেসবুক ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে জানা গেছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আরও কিছু বিষয় জানতে চেয়ে চিঠিতে উল্লেখ করেছে। ওই বিষয়গুলো কমিশন বিবেচনা করে চিঠির জবাব পাঠাবে। বিভিন্ন দেশের সরকারের অনুরোধ সম্পর্কে মার্ক জুকারবার্গ বলেছেন, সরকারগুলো মাঝে-মধ্যে ‘তাদের’ দৃষ্টিতে অবৈধ কনটেন্ট আমাদের সরিয়ে ফেলতে বলে। কিন্তু সে অনুরোধ আমাদের কমিউনিটি মানদ- লঙ্ঘন করে না। আমরা এসব সরকারি আদেশ সংক্রান্ত তথ্য আমাদের ‘গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্টে’ সন্নিবেশ করে থাকি। অপ্রয়োজনীয় বা সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে আমাদের কমিউনিটিকে রক্ষা করতে আমরা লড়াই করি।
সম্প্রতি সর্বশেষ গ্লোবাল গভর্নমেন্ট রিকোয়েস্ট রিপোর্ট প্রকাশ সম্পর্কে নিজের ফেসবুক ওয়ালে দেয়া স্ট্যাটাসে একথা জানান তিনি। ওই স্ট্যাটাসে তিনি ফেসবুকের কমিউনিটি শেয়ার নীতিমালা থেকে সরকারি অনুরোধের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। মার্ক জুকারবার্গ লিখেছেন, একটি আদর্শ বিশ্বে আমাদের ইচ্ছেমতো সবকিছু স্বাধীন ও নিরাপদভাবে প্রকাশ করতে পারলে আমরা প্রত্যেকে শক্তিশালী বোধ করব। এ ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রতিটি দেশে আইন রয়েছে, যা জননিরাপত্তা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ রক্ষার্থে আপনাকে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় শেয়ার করতে বাধা দেয়। এদিকে সম্প্রতি এক রিপোর্টে দেখা গেছে সরকার পাঁচ ফেসবুক ব্যবহারকারীকে খুঁজছে। ওই রিপোর্টের কারণে ফেসবুক সম্পর্কিত বিষয়াদি আবার সামনে চলে এসেছে। এবার বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের কাছে পাঁচটি অ্যাকাউন্টের (আইডি) বিশদ তথ্য চেয়ে আবেদনও পাঠিয়েছে। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া যায়নি আবেদনগুলো কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা থেকে করা হয়। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ফেসবুকের কাছে এসব অনুরোধ জানানো হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রসঙ্গত, প্রতি ছয় মাস পরপর ফেসবুক এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ১৭ জনের আইডির তথ্য চেয়ে অনুরোধ করেছিল সরকার। এর আগে ২০১৩ সালের প্রথম ছয় মাসে ফেসবুকের কাছে ১২টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চায় সরকার। তবে এখন পর্যন্ত ফেসবুক কোনো তথ্য বাংলাদেশকে দেয়নি। ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বরে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফেসবুক। এতে দেখা গেছে, বিশ্বের ৮৮ দেশ থেকে ৫০ হাজার ২৩৪ জনের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ২১ হাজার ৭৩১টি আইডির তথ্য চেয়েছে দেশটির সরকার। যুক্তরাজ্যেও এ সংখ্যা কম নয়- ২ হাজার ৮৯০। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকেও এবার তথ্য চাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। ভারত সরকার ফেসবুকের কাছে ৫ হাজার ৪৭৩টি আবেদনের মাধ্যমে ৭ হাজার ২৮১ জনের তথ্য চেয়ে পাঠায়। এর প্রায় ৪৫ শতাংশ তথ্য ফেসবুক ভারতকে দিয়েছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে পাকিস্তান ১০০ আবেদনের মাধ্যমে ১৫২ জনের তথ্য চায় ফেসবুকের কাছে। মোট আবেদনের ৪২ শতাংশ তথ্য পাকিস্তান সরকারকে দিয়েছে বলে ফেসবুকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের প্রথম ছয় মাসের প্রতিবেদন অনুসারে ফেসবুক জানায়, সরকারের পক্ষ থেকে তথ্য চাওয়ার হার গত বছরের শেষার্ধের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেড়েছে। ফেসবুকের তথ্যানুযায়ী, ওই ছয় মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ফেসবুকের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য ৩৪ হাজার ৯৪৬টি অনুরোধ করে। সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ১৫ হাজার ৪৩৩টি অনুরোধের মাধ্যমে ২৩ হাজার ৬৬৭ জন ব্যবহারকারীর তথ্য চেয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৮০ শতাংশ ব্যবহারকারীর তথ্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে দিয়েছে ফেসবুক। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুরোধ করা হয় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে। ভারত থেকে গত বছরের প্রথমার্ধে ৪ হাজার ৫৫৯টি অনুরোধের মাধ্যমে ৫ হাজার ৯৫৮টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ প্রায় ৫১ শতাংশ ব্যবহারকারীর তথ্য সরকারকে দিয়েছে। ৪ হাজার ৯৬০টি কনটেন্ট ব্লক করেছে। একই সময় পাকিস্তান থেকে ১১৬টি অনুরোধে ১৬০টি অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৬ শতাংশ তথ্য দেয়া হয়েছে সরকারকে। কনটেন্ট ব্লক করা হয়েছে ১ হাজার ৭৭৩টি
ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com