• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ফেসবুকের ফেক আইডি চিহ্নিত করার উদ্যোগ বাংলাদেশে
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ফেসবুক
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ফেসবুকের ফেক আইডি চিহ্নিত করার উদ্যোগ বাংলাদেশে
সামাজিক যোগাযোমমাধ্যম ফেসবুকে রয়েছে অগণিত ফেক বা ভুয়া আইডির ছড়াছড়ি। এসব আইডি চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চিহ্নিত করে সেগুলোকে আইনের আওতায় নেয়া হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে আসলের (অরিজিনাল) চেয়ে নকল (ভুয়া) আইডির সংখ্যা বেশি হওয়ায় সরকার এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের উদ্যোগে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০১৫’-এর খসড়ায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির প্রস্ত্ততি চলছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে।
ভুয়া আইডির মাধ্যমে রাজনৈতিক উস্কানি, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানো, কটূক্তি, ছবি বিকৃতি, অন্যের ছবির সাথে ছবি জুড়ে দেয়া, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাশকতামূলক কর্মকা--র ছবি প্রকাশ ইত্যাদি বেড়েই চলেছে। এসব কারণে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা অনিরাপদ বোধ করেন। বিভিন্ন মহল থেকে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েও থামানো যায়নি ভুয়া আইডিধারীদের। এসব কারণেই বিষয়টি আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, অবশ্যই আমাদের কাজটি করতে হবে। এখনই উদ্যোগ না নিলে সামনে হয়তো ফেক আইডিধারীদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ নিয়ে ও বিশেষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করে কীভাবে তাদের আইনের আওতায় আনা যায় সেসব চূড়ান্ত করা হবে বলে তিনি জানান।
২০১১ সালে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১৩ লাখ। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ১০ লাখ বেড়ে তা দাঁড়ায় ২৩ লাখে। পরের বছর (২০১৩) জানুয়ারির ১ তারিখে ফেসবুক ব্যবহারকারী ছিল ৩৩ লাখ ৫২ হাজার ৬৮০। ২০১৪ সালের অক্টোবরে এ সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে যায়। খুব অল্প সময়ে দেশে ফেসবুক ব্যবহারকারী বেড়ে যাওয়ার কারণ থ্রিজি। থ্রিজি চালু হওয়ায় মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীও বেড়ে যায়।
সম্প্রতি ‘সাইবার সিকিউরিটি আইন-২০১৫’-এর নাম বদলে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-২০১৫’ করা হয়েছে। নাম বদলের সাথে সাথে সিদ্ধান্ত হয়েছে আইনের সংজ্ঞা, অপরাধ ও শাসিত্মর পুরো বিষয়টি যাচাই-বাছাইয়েরও। ওই আইনের খসড়া পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত ‘সাইবার সিকিউরিটি ড্রাফট পুনর্গঠন কমিটি’র সদস্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার বলেন, ‘ডিজিটাল ডিভাইস বা ডিজিটাল মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে উপস্থিত হওয়া এবং কোনো অপপ্রচার চালানো শাসিত্মযোগ্য অপরাধ। আমরা ফেক আইডি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি খসড়ায় যুক্ত করব। পরে শাসিত্মর বিষয়টি নির্ধারণ করা হবে।’
মোস্তাফা জববার আরও বলেন, ‘যদিও ফেক আইডি তৈরি করতে গুগল বা ফেসবুক অনুমোদন দিচ্ছে, তবু সেসব আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা কাউকে পরিচয় গোপন করে কিছু করতে দেব না। ধরা পড়তেই হবে এবং তাকে বা তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
নিরপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হবেন কি না-এরই মধ্যে এমন প্রশ্নও উঠেছে। কারণ অনেকে ফেসবুকে পেজ খুলে ব্যবসায়, প্রচার-প্রসারের কাজ চালাচ্ছেন। ছদ্মনামেও আইডি আছে অনেকের। কারও কারও একাধিক আইডি রয়েছে। বিষয়গুলো কীভাবে দেখা হবে সেসব নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ‘আমাদের কাজ হবে ডিজিটাল দুনিয়ায় সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সবার নিরাপত্তা বিধান করা। কেউ যাতে করে অন্যের মাধ্যমে অযথা হয়রানি না হন, ভোগান্তিতে না পড়েন, সেসব বিষয় নিশ্চিত করতে কমিটির সবাই কাজ করছেন। ফেক আইডি চিহ্নিত করার সময় কেউ যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হন, তা খসড়া চূড়ান্ত করার সময় খতিয়ে দেখা হবে।’
সাইবার সিকিউরিটি ড্রাফট পুনর্গঠন কমিটির অপর সদস্য এশিয়ান ওশেনিয়ান কমপিউটিং ইন্ডাস্ট্রিজ অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুলস্নাহ এইচ কাফি বলেন, ‘আমরা ফেসবুকের ভুয়া আইডির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছি। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কোনো ছাড় দেব না। সামনের বৈঠকে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করব।’
আবদুলস্নাহ এইচ কাফি আরও বলেন, শুধু ফেসবুক নয়, ই-মেইল আইডি খোলা ও মোবাইলের সিম কেনার সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরের ব্যবহার নিশ্চিত করতে সুপারিশ করা হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহারের জন্য তার সুপারিশ থাকবে। তার মতে, এসব আইডি খোলার বিপরীতে যেকোনো বৈধ আইডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক থাকলে যেকাউকে চিহ্নিত করার কাজটি সহজ হয়ে যায়।
তিনি জানান, ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা গ্রহীতাদের ই-মেইল আইডি খোলার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে খসড়ায় উল্লেখ থাকবে। তার মতে, এসব ব্যবস্থা নেয়া হলে অনলাইনে ভুয়া আইডি খোলার হার একেবারে কমে যাবে। সাধারণ মানুষ যাতে কোনো হয়রানির শিকার না হয়, সে বিষয়েও তারা সজাগ থাকবেন।
পরিচিত ব্যবহারকারীরা বলছেন, ফেসবুকে ভুয়া আইডি, ভুয়া ই- মেইল আইডি খুলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ সাধারণ মানুষকে হুমকি-ধমকি দেয়ার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে। ব্লগ ও ফেসবুক নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব অভিযোগকে কেন্দ্র করে হত্যাকা--র মতো ঘটনা ঘটছে। তথ্যপ্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, একজনের নামে ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে তাতে লেখা হচ্ছে ধর্ম, রাষ্ট্রবিরোধী মন্তব্যসহ অনেক কিছু।
গত ২৮ জুলাই ডিজিটাল সিকিউরিটি ড্রাফট পুনর্গঠন কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ‘ফার্স্ট ড্রাফট’ আপডেট করা হয়েছে এবং বিভিন্ন বিভাগ ও বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য মোস্তাফা জববার। ৫ আগস্ট আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা। ওই বৈঠকে অনেক কিছুই চূড়ান্ত করা হবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান, ওই বৈঠকের পরে একটি ভালো খবর দেয়া যাবে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জাকারিয়া স্বপন একবার মন্তব্য করেছিলেন, এ দেশে ফেসবুকের ভুয়া আইডি অরিজিনাল আইডির চেয়ে বেশি। তিনি বলেছিলেন, আমি র্যা ন্ডম স্যাম্পলিং করে দেখেছি, একেকজনের ২-৩টা করে আইডি আছে। এসব ভুয়া আইডি দিয়েই বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে বাংলাদেশ অপারেটরস নেটওয়ার্ক গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির জানান, বাংলাদেশে ফেসবুক লাইকারদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। লাইক নিয়ে ব্যবসায় হচ্ছে। দেশে প্রকৃত আইডির চেয়ে ফেক আইডির সংখ্যাও বেশি বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, ফেক আইডি না হলে লাইক ব্যবসায় করা যায় না। তিনি বলেন-বাংলাদেশ, ভারত ও ভিয়েতনামে ভুয়া লাইকের ব্যবসায় খুব বেশি। এসব কারণে তার আশঙ্কা, বাংলাদেশে প্রকৃত ফেসবুক ব্যবহারকারীর চেয়ে ভুয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি।
এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের ফেসবুকে ভুয়া লাইক কেনাবেচার কাজ হচ্ছে। এ কাজের জন্য রাজধানী ঢাকায় একাধিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সংক্ষেপে এদের বলা হচ্ছে ক্লিক ফার্ম। প্রতিষ্ঠানগুলো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করতে কাজ করে। গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের স্বল্প আয়ের কর্মী ও ফ্রিল্যান্সারেরা অল্প টাকায় ভুয়া লাইক বাড়াতে কাজ করছে।’
ভুয়া লাইকের কারণে মানুষ সংশ্লিষ্ট ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভুল ধারণা পায়। মাত্র ১৫ ডলারের বিনিময়ে দেয়া হচ্ছে এক হাজার লাইক।
অন্যদিকে সম্প্রতি ফেক আইডি কা-- ফেসবুক জার্মানিতে একটি মামলায় হেরে গেছে। ফেসবুকের নীতিমালা অনুসারে কেউ নকল বা ছদ্মনামে আইডি খুলতে পারবে না। এসব ক্ষেত্রে ফেসবুকের কাছে জমা দিতে হয় জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অনেক কিছু। এই নিয়মের বিরোধিতা করে জার্মানিতে দায়ের করা একটি মামলায় হেরে গেছে ফেসবুক। ওই রায়ে বলা হয়েছে, কাগজপত্র জমা দেয়া ব্যক্তিগত গোপনীয়তার পরিপন্থী। এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফেসবুকে বিশ্বাসযোগ্য নাম ব্যবহার করলে ফেসবুক ব্যবহারকারীরাই উপকৃত হবে। এতে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
ফেসবুক ছদ্মনাম নিয়ে তাদের নিয়মটি ২০১৪ সালে চালু করে। বলা হয়, ব্যবহারকারীরা তাদের প্রকৃত জীবনের একটি বিশ্বাসযোগ্য নাম ব্যবহার করতে পারবে। তবে জার্মানির হামবুর্গ ওয়াচডগ কর্তৃপক্ষ বলছে, ফেসবুকের ইউরোপীয় অঞ্চলের অফিস আয়ারল্যান্ডে। এই অঞ্চলে আইরিশ আইন দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হয় ফেসবুকের সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তটি জার্মানির মাটিতে বাস্তবায়ন সম্ভব না-ও হতে পারে।
ফিডব্যাক : hitlarhalim@yahoo.com


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস