লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
ব্যবসায় উন্নয়নে সোশ্যাল মিডিয়া
গত বছরের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল ডাটা কর্পোরেশন জানায়, আগামী বছরগুলোতে যে চারটি বিষয় প্রযুক্তিবিশকেব নিয়ন্ত্রণ করবে, তার একটি সোশ্যাল মিডিয়া। ব্যাপারটা হয়েছেও তাই। সোশ্যাল মিডিয়া জালের মতো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এক মাসে শুধু ফেসবুকেই ১৩৫ কোটি মানুষের আনাগোনা ছিল। টুইটারে এই সংখ্যাটা বর্তমানে ২৮.৪ কোটি। গুগল প্লাস, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, পিন্টারেস্টের মতো জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট তো আছেই, নাম না জানা ভৌগোলিক দিক থেকে জনপ্রিয় অনেক সোশ্যাল নেটওয়ার্ক মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এত মানুষ, এত সম্ভাব্য গ্রাহক যেখানে ইতোমধ্যেই আছে, ব্যবসায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে না তা কি হয়? বিশ্বব্যাপী সোশ্যাল মিডিয়াকে বিপণনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে ব্যবসায়িক সাফল্য লাভের অনেক উদাহরণ আছে। বিপণনকারীদের কাছেও এই মাধ্যম বেশ জনপ্রিয়। হাবপোস্টের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সালে ৯২ শতাংশ বিপণন সংক্রান্ত মানুষ বলেছে সোশ্যাল মিডিয়া তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যাদের মাঝে ৮০ শতাংশ বলেছে সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রমের ফলে তাদের ওয়েবসাইটে গ্রাহক বেড়েছে। ধীরে ধীরে হলেও আমাদের দেশে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং জনপ্রিয় হচ্ছে। তবে অনেকেই এই মাধ্যমকে এড়িয়ে যাচ্ছেন, কিংবা এর ব্যাপকতা সম্পর্কে ধারণা নেই। তাদের জন্যই এই লেখা। সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, সে সম্পর্কে এখানে উল্লেখ করা হলো।
ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরি করবে
আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে মানুষকে জানানোর সম্ভাব্য সব রাস্তা ঘেঁটে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়া আপনার ব্র্যান্ড মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার নতুন একটি মাধ্যম। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলো ঘুরে দেখে। নতুন গ্রাহকের কাছে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করে এটি। টুইটারে কেউ আপনাকে ফলো করলেই আপনার সব পোস্ট তার নিউজফিডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। মানুষ জানতে থাকবে, অন্যকে জানাতে থাকবে। এভাবে আপনার ব্র্যান্ড মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হবে।
ব্র্যান্ড লয়ালটি বাড়াতে সাহায্য করে
টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যে ব্র্যান্ডগুলো সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় তার প্রতি মানুষের আনুগত্য বেশি থাকে। অপরদিকে কনভিন্স অ্যান্ড কনভার্ট নামের প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫৩ শতাংশ আমেরিকান সোশ্যাল মিডিয়াতে যেসব ব্র্যান্ড ফলো করে তার প্রতি বেশি অনুগত থাকে।
নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করে
যেকোনো কিছু করার জন্য দরকার সুযোগের, কোনো সম্ভাবনার। বাজারজাত করার একটা গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো কোনো মানুষকে নিজের গ্রাহকে পরিণত করা। আর তা করতে হলে সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে আপনার বার্তা পৌঁছাতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই কাজটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। একই সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সরাসরি আপনার পণ্য বিপণন করতে পারছেন।
বেশি গ্রাহক তৈরিতে সাহায্য করে
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিংয়ের ফলে অন্য মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি গ্রাহক তৈরি সম্ভব হয়। এর কারণ এখানে মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগ হয়। আপনি চাইলেই একটি প্রতিষ্ঠানে গিয়ে আপনার ফিডব্যাক জানিয়ে আসতে পারবেন না, কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় এই কাজটি করতে পারবেন ঘরে বসে, মাউসের বা কীবোর্ডের কয়েক ছোঁয়াতেই। আর এটাই গ্রাহকেরা পছন্দ করে। দীর্ঘদিন ধরে ব্র্যান্ডের প্রতি একটা বিশ্বাস তৈরি হয়, পারস্পরিক নির্ভরতা কাজ করে। ফলে এরা সহজেই আপনার গ্রাহকে পরিণত হয়। কেননা, সোশ্যাল মিডিয়াতে চাইলেই তারা তাদের কথা আপনার কাছে পৌঁছে দিতে পারবে।
ওয়েবসাইট ট্রাফিক বাড়ায়
আপনার ওয়েবসাইট তারাই দেখতে আসবে, যারা আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানেন। যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটে নিজের উপস্থিতি তৈরি করা মানে গ্রাহকের কাছে নিজের ওয়েবসাইটের কনটেন্ট পৌঁছে দেয়া। সেই সাথে এরা যতবার সেটি শেয়ার করবে, ততই নতুন সম্ভাব্য গ্রাহকের কাছে নিজের ওয়েবসাইট উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি হয়। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট তৈরি করতে পারলে এরা নিয়মিতভাবে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করবে।
বিপণনের খরচ কমায়
হাবপোস্টের জরিপে উঠে এসেছে, ৮৪ শতাংশ বিপণনকারীর মতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সপ্তাহে ৬ ঘণ্টা ব্যয় করাই ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট। অর্থাৎ দিনে এক ঘণ্টা খরচ করলেই আপনার ওয়েবসাইট ভিজিটর তথা বিক্রি বাড়বে অনেকাংশে। ফেসবুক বা টুইটারে বিজ্ঞাপনের খরচ অন্যান্য মাধ্যমের তুলনায় অনেক কম, অর্থাৎ কম খরচে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে।
সার্চ রেজাল্টে শীর্ষে রাখে
সার্চ ইঞ্জিনে তালিকার শীর্ষে থাকা মানে ওয়েবসাইটে বেশি ভিজিটর পাওয়া। কিন্তু গুগল বা বিংয়ের মতো সার্চ ইঞ্জিন সবসময় নিজেদের সময়ের সাথে হালনাগাদ করতে থাকে। এখন শুধু নিয়মিত ব্লগ হালনাগাদ কিংবা মেটা টাইটেল, ট্যাগ, ডেসক্রিপশনের ওপর ভিত্তি করে সার্চ র্যালঙ্কিং হয় না। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে যত সক্রিয় তার ব্র্যান্ড ভ্যালু এবং লয়ালটি তত বেশি। আর সার্চ ইঞ্জিন ব্র্যান্ডের ওপর অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে শুরু করেছে। পাশাপাশি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টগুলোও সার্চ রেজাল্টে দেখায়। ফলে পোস্টে আপনার ওয়েবসাইটের লিঙ্ক থাকলে সেখান থেকেও আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর বাড়বে।
গ্রাহকসেবা অনেক বেশি কার্যকর
সোশ্যাল মিডিয়াতে ই-মেইল বা ফোন কলের মতোই ঘরে বসে গ্রাহকসেবা দেয়া সম্ভব হয়। তবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের সুবিধা হলো আগে কোন গ্রাহককে কী, কীভাবে, কত দ্রুত সেবা দিয়েছেন তা অন্য গ্রাহক দেখতে পায়। আপনার গ্রাহকসেবা ভালো হলে সেখান থেকে অনেকেই পণ্য কিনতে অনুপ্রাণিত হতে পারে। যেমন- ফেসবুকে কেউ আপনার পণ্য সম্পর্কে অভিযোগ করল। এটা আপাত দৃষ্টিতে খারাপ মনে হলেও ভেবে দেখুন আপনি যদি পেশাদারিত্বের সাথে দ্রুত পদক্ষেপ নেন, ভুলের জন্য ক্ষমা চান এবং দ্রুত নিষ্পত্তি করেন তো ব্যাপারটা আপনার জন্য ইতিবাচক হবে। মানুষ পণ্যের ত্রুটি নয় বরং গ্রাহকসেবা দেখে আকৃষ্ট হবে। আর যদি কেউ আপনার পণ্যের গুণগান গেয়ে সুপারিশ করে, নিশ্চয় তা নিজের ঢোল নিজে পেটানোর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হবে।
বাজার গবেষণা অনেক সহজ
বাজার যাচাই এবং গ্রাহকদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়ার অন্যতম উৎস সোশ্যাল মিডিয়া। ধরুন, আপনার পোস্টে গ্রাহকদের কমেন্ট থেকেই জানতে পারবেন এরা আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে কী ভাবে।
প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখে
বাজারে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে থাকতে হবে। তবে এটা মনে রাখতে হবে, প্রতিযোগীরা ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়াতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। আপনি যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেন, তবে সম্ভাব্য ক্রেতারা আপনার প্রতিযোগীর গ্রাহকে পরিণত হবে। অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় আপনি হেরে যাবেন। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনি যত দ্রুত সক্রিয় হবেন, ততই গ্রাহক বাড়াতে পারবেন। ফলাফল, প্রতিযোগিতায় শুধু টিকেই থাকবেন না, এগিয়েও থাকবেন অন্যদের তুলনায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় সফল হওয়ার কৌশল
সোশ্যাল মিডিয়া আপনার ব্যবসায়ের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখতে পারে, তা তো জানলেন। কিন্তু এটা তখনই সম্ভব হবে যখন আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে বিপুলসংখ্যক ফলোয়ার থাকবে, আপনার সোশ্যাল মিডিয়া উপস্থিতি সফল হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে সফল করার অনেক কৌশল আছে। সেগুলো জানতে হবে, পাশাপাশি কিছু কৌশল নিজেকে খুঁজে বের করতে হয়। জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়াও অনেক সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার ওয়েবসাইট আছে, যেখানে মানুষের নিয়মিত আনাগোনা আছে, সেগুলো সম্পর্কেও জানতে হবে। এখানে কিছু কৌশল দেয়া হলো, যেগুলো মেনে চললে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নিজেকে বা নিজের প্রতিষ্ঠানকে সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
০১. প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ : সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের উপস্থিতি নিশ্চিত করার আগে ভেবে দেখতে হবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কী করতে চান, এটা কী উপকারে আসবে এবং এখানে লক্ষ্য কী। সে অনুযায়ী আপনাকে পরিকল্পনা তৈরি করে এগোতে হবে। যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে চান, তা ভালোভাবে জেনে নিন। ধরুন, আপনার সম্ভাব্য ক্রেতারা সবাই বাংলাদেশী। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ফেসবুক ব্যবহার করতে হবে। তাই ফেসবুকের সুযোগ-সুবিধা ভালো করে জেনে নিতে হবে।
০২. নিজেকে প্রতিষ্ঠান নয় মানুষ হিসেবে পরিচিত করুন : আপনার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে একটা পণ্যের লিঙ্ক কিংবা ব্লগে লেখা কোনো নিবন্ধের লিঙ্ক পোস্ট করলেই কী হয়ে গেল? বারবার সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে হবে। কে কী পোস্ট বা কমেন্ট করছে, প্রয়োজন অনুসারে তার উত্তর দিতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে সবার পোস্ট খুব গুরুত্ব নিয়ে পড়ছেন। সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ নতুন কোনো পোস্টে নতুন পাঠকের পাশাপাশি পুরনো সেই ব্যবহারকারীকেও পাওয়া যায়।
০৩. তাদের প্রয়োজন বুঝতে চেষ্টা করুন : আপনার পাঠকেরা কী চাচ্ছেন বা তাদের আগ্রহের বিষয় কী তা জানতে চেষ্টা করুন। তাদের সাথে আন্তরিকতা যত বেশি থাকবে, তাদের সম্পর্কে ততই ভালো জানতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটটিকে সেভাবেই তৈরি করুন। যখন তাদের চাহিদা অনুসারে সবকিছু হাতের নাগালে পাবে, তখনই তারা বারবার ফিরে আসবে আপনার ওয়েবসাইটে।
০৪. ওয়েবসাইটে সোশ্যাল নেটওয়ার্কের আইকন যুক্ত করুন : ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক ওয়েবসাইটের প্রোফাইল লিঙ্কসহ আইকন যোগ করতে ভুলবেন না। এতে আপনার ওয়েবসাইটের পাঠক তার পছন্দের বিষয়বস্ত্ত পেলে আপনার সাথে যুক্ত থাকার চেষ্টা করবে। তবে কনটেন্টের মাঝে যেখানে-সেখানে আইকন থাকা বিরক্তিকর। ওপরে-নিচে বা কোনো একপাশে সব আইকন রাখতে পারেন। যাতে ইচ্ছে করলে তারা আপনার সাথে যুক্ত থাকার একটা মাধ্যম খুঁজে পায়। আপনি জোর করে তাদের সাথে যুক্ত হতে চাইবেন, এমনটা কখনও করা যাবে না।
০৫. আপনার প্রোফাইলে ওয়েব ঠিকানা যোগ করুন : এবার উল্টো কাজটা করুন। আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের পাঠকদের জানতে দিন যে আপনার একটি ওয়েবসাইট আছে। সব প্রোফাইলে সেই ওয়েবসাইটের ঠিকানা জুড়ে দিন।
০৬. আপনার নতুন প্রোফাইল সবাইকে জানিয়ে দিন : সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট খোলার পর সবাইকে জানাতে হবে যে কোথায় আপনার সাথে যোগাযোগ করতে হবে। ই-মেইলের বন্ধুদের জানাতে পারেন। তা ছাড়া আপনার ই-মেইল বা কন্ট্যাক্ট লিস্ট অনুযায়ী বন্ধু বা ফলোয়ার যোগ করারও সুযোগ আছে। আপনার বিজনেস কার্ডই বা বাদ যাবে কেন? সেখানেও একটা লিঙ্ক যোগ করে দিন। ই-মেইলের ফুটারে কিংবা অফিসিয়াল প্যাডে মোটকথা সবাইকে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো সম্পর্কে জানাতে হবে। একই সাথে বন্ধুদের অনুরোধ জানাতে পারেন আপনার প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক বা টুইটার পেজটি সবার সাথে শেয়ার করতে। তবে মানুষের মাঝে বিরক্তি তৈরি করে এমনভাবে প্রচার চালানো যাবে না।
০৭. সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার কর্মকা--র হিসাব রাখুন : গত সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী ফেসবুকে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৮৬.৪ কোটি মানুষ ঢুঁ মারে। এই গড় ব্যবহারকারীর ৮২.২ শতাংশের বাস আমেরিকা বা কানাডার বাইরে। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে, সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এখন নিছক বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ নয় বরং ব্যবসায়ের একটা বিশাল ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাই আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এখন অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব, যা অন্য কোনোভাবে করতে গেলে প্রচুর ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। তাই খুব গুরুত্বের সাথে প্রত্যেকটি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের কর্মকা--র পরিকল্পনা এবং তার হিসাব রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মার্কেটিং ক্যালেন্ডার তৈরি করে নিলে খুব ভালো হয়। কবে, কী করবেন তা সেখানে লিখে রাখলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
০৮. ব্যবহারকারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট শেয়ার করুন : আপনার ব্লগে বা ওয়েবসাইটে তো বটেই, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট তৈরি করুন। আগেই বলা হয়েছে, ব্যবহারকারীর চাহিদা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ কনটেন্ট তৈরি করলে মানুষের মাঝে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বা ওয়েবসাইট সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে।
০৯. এসইও’র কৌশল মাথায় রাখুন : সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) সম্পর্কে কমবেশি সবাই জানেন। এসইও অনেকটা গুগলকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। গুগলে সবাই যে শব্দগুলো বেশি খোঁজে তা দিয়েই নিজের ওয়েবসাইট সাজাতে দেখা যায় অনেককে। সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রোফাইলের বর্ণনা এবং পোস্টগুলো লেখার সময় এই কাজটা করতে হবে। গুগল কিওয়ার্ড প্ল্যানারের সাহায্যে জেনে নিতে পারেন আপনার ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কিত কোন শব্দটি মানুষ বেশি খুঁজে দেখছে। টুইটারে ট্রেন্ডিং কিওয়ার্ডগুলো মূল পাতার বাম পাশে দেখানো হয়, সেখান থেকেও সাহায্য নিতে পারেন।
১০. হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে ভুলবেন না : হ্যাশট্যাগের ধারণা নতুন হলেও চমৎকার কাজ দেয়। আপনার ফলোয়ার তালিকায় নেই এমন অনেক মানুষ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে আপনার পোস্ট পড়তে পারবে, আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারবে। তবে অবশ্যই আপনার পোস্টের কনটেন্ট সম্পর্কিত কিওয়ার্ড হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করবেন। অযথা ভিন্ন কিছু কিংবা অত্যধিক হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করলে আপনার পোস্টগুলোকে স্প্যাম ভেবে এড়িয়ে যাবে অনেকেই।
১১. মাঝে মাঝে বিনামূল্যে কিছু সেবা দিন : আপনার সোশ্যাল মিডিয়া পেজ ফলো বা লাইক করার আগে মানুষের মাঝে প্রশ্ন জাগবে এখানে আমি কেন ফলো করতে যাব। সেবামূলক ওয়েবসাইট হলে মাঝে মাঝে কিছু ট্রায়াল সেবা দিতে পারেন। হয়তো বিনামূল্যে কোনো ই-বুক বা ডিজিটাল কোনো কনটেন্ট শেয়ার করতে পারেন। শুধু সেই সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য কিছু ডিসকাউন্ট কোড দিতে পারেন। সবার মাঝে আগ্রহ তৈরি করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ।
১২. ফেসবুক বা টুইটারে সীমাবদ্ধ থাকা যাবে না : বাংলাদেশে ফেসবুক বেশি ব্যবহার করা হলেও আরও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক আছে, যেগুলো ব্যবহার হয় বিশেষায়িত কোনো কাজের জন্য। অন্য কোনো দেশের গ্রাহক আকৃষ্ট করতে হলে ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন কিংবা ইনস্টাগ্রামে সীমাবদ্ধ না থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরে দেখুন। যেমন- রিভিউ ওয়েবসাইটে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গ্রাহকদের পর্যালোচনা সংগ্রহ করতে পারেন কিংবা ফোরস্কয়ারে চেক ইন করে আপনার প্রতিষ্ঠানের অবস্থান জানাতে পারেন।
১৩. মাঝেমধ্যে ক্যুইজের আয়োজন করতে পারেন : মাঝেমধ্যে ছোট ছোট ক্যুইজের আয়োজন করতে পারেন। সম্ভব হলে ছোটখাটো পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে পারেন। পুরস্কার না হলেও সমস্যা নেই। সেখনে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে তাকে অভিনন্দন জানাতে ভুলবেন না।
১৪. পোস্ট করার সময়ের সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে : কিছুদিন ঘন ঘন পোস্ট করার পর দেখা গেল আপনার আর কোনো খবর নেই, তাহলে ফলোয়ার হারাতে থাকবেন। যেটা প্রায়ই দেখা যায়। তাই পোস্ট করার ক্ষেত্রে মাথায় রাখতে হবে, আপনি কবে, কতদিন পরে পোস্ট করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে ঘন ঘন পোস্ট করা কমিয়ে গড় সময় পরপর নিয়মিত পোস্ট করুন।
১৫. নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্ব নিন : আপনার হয়ে অন্য কেউ যদি সে কাজ করে, তবে এতটুকু নিশ্চিত করুন যে, সে আপনার হয়ে আপনার মতোই গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। তা না হলে আপনাকে হয়তো গ্রাহক হারাতে হবে।
১৬. গবেষণা করুন, প্রাপ্ত তথ্য ঘেঁটে দেখুন : ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসায়ের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার কৌশল ভিন্ন হবে। যেমন- রেস্টুরেন্টের ফেসবুক পেজে মানুষ খাবার অর্ডার করে বেশি। কিন্তু ল্যাপটপ কমপিউটারের পেজে মানুষ স্পেসিফিকেশন জানতে চায় বেশি। কীভাবে বেশি শ্রোতা পাওয়া যায়, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করুন। তথ্য সংগ্রহ করুন এবং তা বিশ্লেষণ করে গ্রাহকদের প্রবণতা বোঝার চেষ্টা করুন
১৭. ফলো করার জন্য কারণ দিন : আপনার প্রোফাইল মানুষ কেন ফলো করবে, তাদেরকে এজন্য একটা কারণ অন্তত দিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় মাঝেমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পোস্ট করা যেটা তারা জানতে চায়। যেমন- স্মার্টফোন প্রস্ত্ততকারক প্রতিষ্ঠানের ফেসবুকে পেজে মানুষ সবসময় মূল্য জানতে চেয়ে পোস্ট দেয়। তাদেরকে তা জানান।
১৮. সোশ্যাল মিডিয়া হতে পারে আপনার গ্রাহক সেবাকেন্দ্র : সবকিছুর পরও যদি কোনো অভিযোগ পান, তবে দক্ষতার সাথে তার ব্যবস্থা নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব তাদের অভিযোগের উত্তর দিন। উত্তর দিয়ে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে ভুলবেন না। সোশ্যাল মিডিয়াকে গ্রাহকসেবা কেন্দ্রে পরিণত করতে পারেন।
১৯. সবার প্রশ্নের উত্তর দিন : আপনার প্রোফাইলে ক্লায়েন্টদের পোস্ট করা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, বারবার করা প্রশ্ন এবং তার উত্তর সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন। পাশাপাশি প্রশ্নোত্তর পর্ব পরিচালনা করতে পারেন। এতে মার্কেট ট্রেন্ড যেমন ধরতে পারবেন, তেমনই আপনার ফলোয়ারদের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর হবে।
২০. পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে থাকুন : পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে হবে। আপনার প্রোফাইলে সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষ আনার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করে দেখুন। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে দেখুন কোনটা বেশি কাজে দেয়, কোনটা আপনার ব্যবসায়ের উন্নয়নে বেশি অবদান রাখছে, তারপর সেই পরিকল্পনায় স্থির থেকে এগোতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়াকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে আপনার ব্যবসায়িক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর কাজে লাগাতে হলে সঠিক কৌশল বা কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করে এগোতে হবে। জনপ্রিয় এই মাধ্যম ব্যবহার করতে যত দেরি করবেন, ততই পিছিয়ে পড়বেন
ফিডব্যাক : mhasanbogra@gmail.com