লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - ফেব্রুয়ারী
চার দেশে জুকারবার্গের ফ্রি ইন্টারনেট
গত ১৪ জানুয়ারি ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জুকারবার্গ কলম্বিয়ায় উদ্বোধন করলেন একটি ফ্রি ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশন। ডেভেলপিং মার্কেটগুলোকে অনলাইনে আনার উদ্যোগের একটি অংশ হিসেবে কলম্বিয়ায় এই ফ্রি ইন্টারনেট চালু করা হলো। কলম্বিয়া হচ্ছে লাতিন আমেরিকার প্রথম ও বিশ্বের চতুর্থ দেশ, যেটি এই নতুন ইন্টারনেট ডটঅর্গ (Internet.org) সার্ভিস সুবিধা লাভ করল। এর আগে এই ইন্টারনেট ডটঅর্গ সার্ভিস চালু করা হয় তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া ও জাম্বিয়ায়।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর ইন্টারনেট ডটঅর্গ সার্ভিসটি চালু করা হয় তাঞ্জানিয়ায়। চালু করার দিন থেকে ইন্টারনেট ডটঅর্গ অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিসের সুযোগ পাচ্ছে তাঞ্জানিয়ার টিগো (Tigo) মোবাইল গ্রাহকেরা।
এই অ্যাপ্লিকেশনটি গত বছরের জুলাইয়ে এয়ারটেল গ্রাহকদের জন্য জাম্বিয়ায় চালু করা হয়। এর মাধ্যমে সেখানকার মানুষ ইন্টারনেটে ফ্রি অ্যাক্সেস সুবিধার আওতায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অর্থায়ন, চাকরি, যোগাযোগ, স্থানীয় তথ্য ও সেবা বিষয়ে ব্রাউজ করতে পারছেন কোনো ডাটা চার্জ তথা ব্যান্ডউইডথ চার্জ ছাড়াই। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর ইন্টারনেট ডটঅর্গ অ্যাপ্লিকেশন চালু করা যায় কেনিয়ায়। সেখানকার এয়ারটেল গ্রাহকেরা এ সার্ভিসটি পাচ্ছেন। জাম্বিয়া ও কেনিয়ার গ্রাহকেরাও তাঞ্জানিয়ার গ্রাহকদের মতোই উল্লিখিত সাইটগুলোতে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস সুবিধা পাচ্ছেন।
এই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটির লক্ষ্য প্রধানত গ্রামীণ স্বল্পআয়ের লোকদের ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া। কলম্বিয়ায় এই সার্ভিস উদ্বোধন উপলক্ষে বগোটায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ফেসবুকের কোটিপতি প্রতিষ্ঠাতা জুকারবার্গ বলেন- ‘এই সার্ভিস দ্রুত আরও ছড়িয়ে পড়বে। কারণ, গ্রাহকেরা এই সার্ভিস ব্যবহার শুরু করলে মোবাইল অপারেটরেরা তাদের রাজস্ব আয় বাড়িয়ে তোলার সুযোগ পাবে। আমাদের লক্ষ্য ইন্টারনেট ডটঅর্গ সার্ভিসটি বিশ্বজুড়ে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া এবং সব মানুষকে ইন্টারনেটেরে সাথে সংযুক্ত করা। আমরা আশা করছি, আগামী কয়েক বছরে অনেক দেশ এ সার্ভিসের আওতায় আসবে। আমি দাবি করছি, বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সার্ভিস সম্প্রসারণের জন্য মোবাইল অপারেটরেরা শিগগিরই এই অ্যাপ্লিকেশন মোবাইলে ডিফল্ট করবে। মোবাইল গ্রাহকেরা বাই ডিফল্ট তা ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। যেসব মোবাইল অপারেটর এই সার্ভিস অফার করবে না, তারা পিছিয়ে পড়বে।’
ইন্টারনেট ডটঅর্গ
এটি একটি অলাভজনক সংগঠন। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ। আর ইন্টারনেট ডটঅর্গ হচ্ছে এর ওয়েবসাইট। ইন্টারনেট ডটঅর্গ হচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সার্ভিস কোম্পানি ‘ফেসবুক’ ও ছয়টি মোবাইল ফোন কোম্পানির (স্যামসাং, এরিকসন, মিডিয়াটক, নোকিয়া, অপেরা সফটওয়্যার ও কুয়ালকম) অংশীদারী প্রতিষ্ঠান। এর লক্ষ্য অ্যাফোর্ডেবিলিটি ও দক্ষতা বাড়িয়ে এবং ইন্টারনেট অ্যাক্সেসে নতুন বিজনেস মডেল সৃষ্টি করে সবার কাছে অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সুযোগ করে দেয়া।
ইতিহাসের পাতায়
এর ইতিহাস খুব দীর্ঘ নয়। ইন্টারনেট ডটঅর্গ উদ্বোধন করা হয় ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট। ফেসবুকের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সিইও মার্ক জুকারবার্গ এর রূপকল্প তথা ভিশন তুলে ধরে ১০ পৃষ্ঠার একটি হোয়াইটপেপার রচনা করেন। এই হোয়াইটপেপারে তিনি লেখেন, ফেসবুকের অতীত উদ্যোগেরই একটি বাড়তি পদক্ষেপ হচ্ছে ইন্টারনেট ডটঅর্গ। যেমন- বিশ্বব্যাপী মানুষের ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস উন্নয়নের লক্ষে্য নেয়া ‘ফেসবুক জিরো’ পদক্ষেপ। তিনি এতে আর বলেন, ‘কানেকটিভিটি ইজ অ্যা হিউম্যান রাইট’। অপরদিকে ফেসবুক জিরো হচ্ছে মোবাইল ফোনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল প্রোভাইডারদের সহযোগে সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সার্ভিস কোম্পানি ফেকবুকের একটি উদ্যোগ, যেখানে প্রোভাইডারেরা তাদের মোবাইল ওয়েবসাইট 0.facebook.com or zero.facebook.com (as opposed to the ordinary mobile website m.facebook.com that also loads pictures)-এ একটি স্ট্রিপড-ডাউন টেক্সট-ওনলি ভার্সনে ফোনের মাধ্যমে ফেকবুকে এক্সেসের বেলায় ডাটা (ব্যান্ডউইডথ) চার্জ (জিরো-রেট নামে পরিচিত) ছাড় দেয়। এই স্ট্রিপড-ডাউন ভার্সন পাওয়া যাবে শুধু সেইসব প্রোভাইডারের মাধ্যমে, যারা ফেকবুকের সাথে চুক্তিবদ্ধ। বাই ডিফল্ট ফটো লোড হবে না। ফটো ব্যবহারের বেলায় রেগুলার ডাটা চার্জ দিতে হবে।
জুকারবার্গ তার ভিশন আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ‘টেকক্রানচ ডিজরাপ্ট’ নামে একটি ভিডিওর মাধ্যমে। ২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ফেসবুক ও ইন্টারনেট ডটঅর্গ বিস্তারিত তুলে ধরে হাজারগুণ ফিউচারিস্টিক টেকনোলজি, যার লক্ষ্য ইউনিভার্সেল অ্যাফোর্ডেবল ইন্টারনেট অ্যাক্সেস। ওই বছর ৩০ সেপ্টেম্বর জুকারবার্গ ইন্টারনেট ডটঅর্গের লক্ষ্য ব্যাখ্যা করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।
২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত হয় ‘মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস’। সেখানে কিনোট প্রেজেন্টেশন দেন জুকারবার্গ। এর আগেই ইন্টারনেট ডটঅর্গ উন্মোচন করে বেশ কয়েকটি প্রকল্প : নোকিয়া ও স্থানীয় ক্যারিয়ার এয়ারটেল এডএক্স রুয়ান্ডা সরকারের সাথে মিলে ‘সোশ্যাল এডু’ নামে একটি অংশীদারী প্রকল্প, ভারতের ইউনিলিভারের সাথে মিলে একটি প্রকল্প এবং এরিকসনের সাথে মিলে এর মেনলো পার্কের সদর দফতরে একটি ‘ইন্টারনেট ডটঅর্গ ইনোভেশন ল্যাব’। উল্লিখিত প্রেজেন্টেশনে জুকারবার্গ ১৯০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে মোবাইল মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp) কিনে নেয়ার কথা জানান, যা ইন্টারনেট ডটঅর্গ ভিশনের সাথে ঘনিষ্টভাবে সংশ্লিষ্ট। টেকক্রানচের মতে, ইন্টারনেট ডটঅর্গ নিয়ে জুকারবার্গের ভিশন নিমণরূপ : The idea, he said, is to develop a group of basic internet services that would be free of charge to use— ‘a 911 for the internet.’
এগুলো হতে পারে ফেসবুকের মতো একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সার্ভিস, একটি মেসেজিং সার্ভিস, সার্চ ইঞ্জিন বা এ ধরনের অন্য কিছু। ব্যবহারকারীদেরকে চার্জ ফ্রি একটি বান্ডল প্রোভাইড করার ক্ষেত্রে এটি কাজ করবে এক ধরনের গেটওয়ে ড্র্যাগ।
২০১৪ সালের মার্চের প্রথম দিকে অনানুষ্ঠানিক গুজব ছিল, ফেসবুক ইন্টারনেট ডটঅর্গের ভিশন আরও সম্প্রসারিত করার জন্য ৬ কোটি ডলার দিয়ে কিনে নিচ্ছে ড্রোন উৎপাদক কোম্পানি টাইটান এয়ারোস্পেস। গত বছর ২৭ মার্চ ফেসবুক ইন্টারনেট ডটঅর্গ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল একটি কানেকটিভিটি ল্যাবের। লক্ষ্য ছিল ড্রোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সবার কাছে পৌঁছানো। ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর দিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ইন্টারনেট ডটঅর্গ সামিটে মার্ক জুকারবার্গ ঘোষণা দেন, ইন্টারনেট ডটঅর্গ ১০ লাখ ডলার পুরস্কারের একটি প্রতিযোগিতা চালু করছে। এর লক্ষ্য ভারতের মানুষের কাছে এই ওয়েবের চাহিদা সৃষ্টি করা। গত বছরের ৯ ও ১০ অক্টোবর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ইন্টারনেট ডটঅর্গ সামিটের প্রাথমিক লক্ষ্য এ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ, কর্মকর্তা ও শিল্প খাতের নেতাদের সম্মিলন ঘটিয়ে ইংরেজির বাইরে অন্যান ভাষায় তথা স্থানীয় ভাষায় ইন্টারনেট সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর উপায় উদ্ভাবনের পথ খোলা