লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - সেপ্টেম্বর
দেশে পর্নো সাইট বন্ধে বিটিআরসির নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করা হোক
দেশে পর্নো সাইট বন্ধে বিটিআরসির নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করা হোক
তথ্যের মহাসাগর ইন্টারনেট আমাদের জ্ঞান-বিকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠায় ছাত্র-ছাত্রীদের ইন্টারনেট অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আর এ কারণেই সচেতন অভিভাবক তাদের সমন্তানদের আধুনিক যুগ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে সবসময় আপডেট থাকার জন্য বাসায় ইন্টারনেটের ব্যবহারকে সম্পূর্ণরূপে অবাধ ও স্বাধীন করে দিয়েছেন। যেখানে নেই কারও কোনো নজরদারি। এমনকি ছাত্র-ছাত্রীদের বেডরুমে ইন্টারনেট সংযোগ দেখা যায়।
আমাদের মনে রাখতে হবে, ইন্টারনেট হলো এক বিশাল তথ্যের ভা-ার, যেখানে ভালো-মন্দ সব ধরনের তথ্য পাওয়া যায়। এমনকি প্রাপ্তবয়স্কদের উপযোগী কনটেন্টও খুব সহজে পেতে পারে যেকোনো বয়সের ছেলে-মেয়ে। আর এ ধরনের প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট ইন্টারনেটের কারণে সহজলভ্য হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম খুব সহজেই বিপথগামী হতে পারে।
লক্ষণীয়, কোনো কোনো ব্রাউজারে প্রাপ্তবয়ষ্কদের কনটেন্ট ফিল্টার করলেও তা যে খুব দৃঢ়ভাবে করা হয়েছে তা বলা যাবে না। প্রাপ্তবয়ষ্কদের কনটেন্টে যাতে সহজে অ্যাক্সেস করা না যায়, সেজন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাসহ ইন্টারনেট গেটওয়ে। এজন্য অনলাইনে পর্নোগ্রাফি প্রচার বন্ধে দেশের ছয় মোবাইল ফোন অপারেটরসহ সব ওয়াইম্যাক্স ও ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারকে (আইএসপি) নির্দেশনা দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সম্প্রতি আদালতের এক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরসহ এ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অপারেটরকে প্রাপ্তবয়স্কদের সাইটগুলো যাতে দেশে বন্ধ করে দেয়া হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। এতে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব এ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা নিয়ে সেটি আবার বিটিআরসিকে জানাতে হবে।
অবশ্য এ বিষয়ে অপারেটরগুলোর করণীয় খুবই কম। সার্বিকভাবে পুরো ইন্টারনেটের ওপর ফিল্টারিং করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কেননা, প্রযুক্তিগত কারণে একটি বা দুটি সাইট বন্ধ করা সম্ভব হতে পারে। আবার অশস্নীল সাইটগুলো বন্ধ করতে না পারার কারণে যে ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ করে দেবেন, তাহলে তা হবে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো।
অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা যাতে পর্ণোগ্রাফী সাইটগুলোতে ভিজিট করতে না পারে সেজন্য অভিভাবকদের প্রথম ও প্রধান কাজ হলো তাদের বাসার কমপিউটারগুলো এমনভাবে সেট করা উচিত যাতে সবার নজরে থাকে এবং যথাযথবাবে প্রাইভেসী সেট করা। এছাড়া সরকার, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, ইন্টারনেট গেটওয়ে, মোবাইল অপারেটরগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ চাই যাতে ইন্টারনেটে পর্ণোগ্রাফী সাইটগুলো বন্ধ করা হয়।
করিম আলী
গোলারটেক, ঢাকা
বাংলাদেশ রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরকে ঢেলে সাজানো হোক
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যেগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে কোনো কোনোটি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হলেও বেশিরভাগ উদ্যোগ বা কর্মসূচি বাস্তবায়নে চলছে সীমাহীন অবহেলা, অব্যবস্থাপনাসহ নানা দুর্নীতি, যা প্রকারান্তরে ডিজিটাল গড়ার কর্মকা-কে ব্যাহত করছে। বলা হয়ে থাকে, দুর্নীতি ও অবহেলার কারণে কখনও কখনও পুরো কর্মসূচি বা প্রকল্পটি ব্যর্থতায় পর্যবসতি হয় কিংবা নানামুখী ক্ষতির মুখে পড়ে। দেশের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগণের বাস গ্রামে। এসব গ্রামের অধিবাসীরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত থাকলেও অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো জমি-জমা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিরোধ ও মামলা-মোকাদ্দমা। জমি-জমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মাঝে-মধ্যে খুনাখুনির মতো নৃশংস ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। এসব অনাকাঙিক্ষত ঘটনার কারণ হলো দুর্বল ভূমি রেকর্ড ও জরিপ ব্যবস্থাপনা।
সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশের রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। শোনা যায়, বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হলো ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতর। সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমি জরিপ পরিচালনা করতে পদক্ষেপ নিলেও নানা অজুহাতে সে পদক্ষেপ এখনও খাতাপত্রেই সীমাবদ্ধ। অধিদফতরের ভেতরে থাকা একটি শক্তিশালী চক্র চাইছে না তাদের কার্যক্রম ডিজিটায়িত হোক। কারণ, তাহলে তাদের দীর্ঘদিনের ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ জনগণ কোনো না কোনো সমস্যায় জর্জরিত। এসব সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো জমি-জমা সংক্রান্ত। জমি-জমা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষকেই নানা ধরনের জটিল সমস্যায় পড়তে হয়। এসব সমস্যা থেকে বাঁচার পথ এসব সাধারণ মানুষের জানা নেই। তাই এই ধরনের সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকশ’ বছরের পুরনো ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক তথা ডিজিটাল করার কথা বলা হচ্ছে। দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালায়নের জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ সরকার নিলেও সেগুলো আলোর মুখ দেখছে না। মুখ থুবড়ে পড়ে আছে এসব বিষয়ক যাবতীয় প্রকল্প। এর পেছনে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবহেলার পাশাপাশি যুগ যুগ ধরে, জমির দলিলপত্র নিয়ে কারসাজি করে টাকা রোজগারের অসাধু চক্রগুলোর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ।
গত কয়েক বছর ধরে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তব্যে ভূমি ব্যবস্থাপনা ডিজিটালায়নের ওপর জোর দিয়ে অর্থ বরাদ্দের কথা বললে তা আসলে খাতাপত্রেই রয়ে গেছে। এবারের বাজেট বক্তব্যেও ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে ১৫২টি উপজেলার ‘ল্যান্ড-জোনিং ম্যাপ’ সংবলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী। আরও ৪০টি উপজেলায় তা প্রণয়নের কাজ চলছে বলে জানান। তাছাড়া জামালপুর সদর উপজেলার তিনটি মৌজায় ডিজিটাল ভূমি জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে মূলত ভূমি মালিকানা সনদ চালু করার জন্য। বরগুনা জেলার আমতলী ও রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলায় একই কার্যক্রম চলছে। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভূমির নকশা ও খতিয়ান তৈরির জন্য ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার ৪৮টি মৌজায় একটি কার্যক্রম চলছে।
কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাভার ও পলাশ উপজেলায় পাইলট প্রকল্পের কাজ ধীরগতিতে চলছে। প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘুষের বিনিময়ে সরকারি জমি ব্যক্তির নামে, আবার ব্যক্তির জমি সরকারের নামে রেকর্ড করার মতো গুরুতর অভিযোগ আছে। এছাড়া কোনো কোনো জমির ডিজিটাল জরিপের জন্য ৩০ হাজার টাকার ঘুষের দাবিও করেন কেউ কেউ। নরসিংদীর পলাশে ২০০৯ সালে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নকশা ও খতিয়ান তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু অবহেলা ও দুর্নীতির কারণে ছয় বছরে তা বাস্তবায়িত হয়নি আমরা মনে করি, ভূমি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বিদ্যমান অব্যবস্থাপনা, ঘুষ-দুর্নীতি দূর করতে হলে এর সামগ্রিক কার্যক্রমকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই এই ডিজিটালায়নের পথে বিদ্যমান সব বাধা দূর করে, এ সম্পর্কিত কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ফিরিয়ে আনতে হবে। যারাই এ কাজে বাধা সৃষ্টি করবে তাদের কঠোর শাসিত্মর আওতায় আনতে হবে। তাহলে দেশের ডিজিটালায়ন সম্ভব হবে।
সাইফুল ইসলাম
আজিমপুর, ঢাকা