• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স অকার্যকর : ৫ বছর ধরে ঝুলছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্ক্রিনশট সাইট
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: হিটলার এ. হালিম
মোট লেখা:২২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৪ - আগস্ট
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ডিজিটাল বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স অকার্যকর : ৫ বছর ধরে ঝুলছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্ক্রিনশট সাইট
ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ ফোরাম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এটি গঠনের পর প্রায় ছয় বছর পার হতে চললেও এই দীর্ঘ সময়ে বৈঠক হয়েছে মাত্র একটি!
বিগত চার বছর ধরে দ্বিতীয় বৈঠক আয়োজনের কথা শোনা গেলেও এখনও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স এখন অকার্যকর। শিগগিরই এটি কার্যকর হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
আইসিটি টাস্কফোর্স থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্স হওয়ার পর বর্তমান সরকারের গত মেয়াদে একটিমাত্র বৈঠক হয়েছে ২০১০ সালের আগস্টে। তারপর আরও চার বছর চলে গেছে, সভা আর হয়নি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের যে নির্বাহী কমিটি আছে তার বৈঠকের সংখ্যাও হাতেগোনা। এ সময়ে ৩-৪টি বৈঠক করেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি। এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাইমুজ্জামান মুক্তা বলেন, পরবর্তী বৈঠকের এজেন্ডাসহ সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে। এ বিষয়ক সভাও হয়েছে এরই মধ্যে। এখন টাস্কফোর্সের বৈঠক হতেই যা বাকি।
টাস্কফোর্সের বৈঠকের বিষয় জানতে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সদস্য না হওয়ায় এ ব্যাপারে তার কিছুই জানা নেই বলে যারা এ বিষয়ে জানেন তাদের সাথে কথা বলা পরামর্শ দেন তিনি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সদস্য সচিব ও আইসিটি সচিব নজরুল ইসলাম খান অবশ্য বললেন, বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী সময় দিলেই বৈঠক হবে।
সূত্র জানায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অন্তত তিন মাস পরপর একটি বৈঠক আয়োজনের। কিন্তু সাড়ে পাঁচ বছরে তিনটির বেশি বৈঠক হয়েছে বলে মনে করতে পারলেন না টাস্কফোর্সের সদস্য তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার।
তিনি বলেন, তিন মাস পরপর বৈঠক হলেও এ খাতে অনেক অগ্রগতি হতো। তিনি জানান, তিন মাস পরপর নির্বাহী কমিটির বৈঠক হলে এ খাতের বিরাজমান ৯০ শতাংশ সমস্যা দূর করা সম্ভব হতো। এই বৈঠক তো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপার। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতির কোনো প্রয়োজন নেই। তারপরও নির্বাহী কমিটিকে সক্রিয় না করে টাস্কফোর্সটিকেই আড়ালে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, এটুআই এবং আইসিটি বিভাগের মধ্যে একটি বিরোধ রয়েছে। এই দুটি পক্ষের কেউই একে অপরের সাথে বসতে চায় না। দুই পক্ষই নিজেরা নিজেরা সব করতে চায়। ফলে নির্বাহী কমিটিকেও সক্রিয় রেখে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না। সভাও ডাকা হয় না। সভা ডাকা না হলে নির্বাহী কমিটির সদস্যরা তাদের সমস্যার কথা বলবেন কোথায়। দীর্ঘ সময় ধরে টাস্কফোর্সের বৈঠক না হওয়ার পেছনে এটা বড় একটি কারণ বলে মনে করে ওই সূত্রটি।
জানা গেছে, পৃথক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয় গঠন, ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো, কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারে সফটওয়্যার পার্ক স্থাপন, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে ল্যাপটপ এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত হয় টাস্কফোর্সের ওই একমাত্র বৈঠকে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, একটি মাত্র বৈঠকে এত কাজ হলে বা নিয়মিত ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের সভা হলে আরও অনেক অগ্রগতি হতো এ খাতের।
টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভায় ভূমি ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। বৈঠক না হওয়ায় এ কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই

ঝুলে আছে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্ক্রিনশট সাইট
এখনও ইন্টারনেটে দেখা যাচ্ছে একটিমাত্র স্ক্রিনশট দিয়ে তৈরি ডিজিটাল বাংলাদেশের ওয়েবসাইট। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই অকার্যকর সাইটটি ইন্টারনেটে ঝুলে আছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতা দেখাতে পাঁচ বছর আগে তড়িঘড়ি করে ডিজিটাল বাংলাদেশ ডট গভ ডট বিডি নামে একটি ডোমেইনে স্ক্রিনশট জুড়ে দিয়ে হোস্টিং করা হয়। ফলে কখনই প্রযুক্তিপ্রেমীরা এ সাইটে ঢুকে কোনো তথ্য পাননি। জানতে পারেননি ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতা, অগ্রগতি সম্পর্কে।
অতি সম্প্রতি (১৪ জুলাই) ডিজিটাল বাংলাদেশের ওয়েবসাইটে (www.digitalbangladesh.gov.bd) ঢুকে দেখা যায় সাইটটি এখনও নির্মাণাধীন! গত পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরেই এমন একটি বার্তা ঝুলছে সাইটে।
সাইটে ঢুকে দেখা যায়, ‘দিস পেজ ইজ আন্ডার মেইনটেন্যান্স’ লেখা। ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রগতি, সাফল্য, আগামী দিনের পরিকল্পনা কোনো কিছুই এখান থেকে জানা যায় না। সাইটটির বর্তমান অবস্থার মতো ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্রিয়াও সাধারণ মানুষের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। সাইটটিতে মাত্র একটি ছবি দিয়েই সব কাজ শেষ করা হয়েছে। কোথাও কোনো অপশন নেই। এতদিনেও একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেনি সরকার।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ নাইমুজ্জামান মুক্তা বলেন, সাইটটি তো এখন ইন্টারনেটে থাকার কথা নয়। এটিকে তো অনেক আগেই আমরা বাতিল বলে ঘোষণা করেছি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নামে কোনো পূর্ণাঙ্গ এবং সক্রিয় সাইট তৈরি করা হবে কি না জানতে চাইলে নাইমুজ্জামান মুক্তা বলেন, জাতীয় তথ্যবাতায়নই (ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল) হলো ডিজিটাল বাংলাদেশের ওয়েব পোর্টাল। এই পোর্টালে রয়েছে ২৫ হাজারের বেশি সাইট। এটি থাকলে আগেরটি থাকার কোনো দরকার নেই।
অথচ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটের প্রয়োজন দীর্ঘদিন থেকেই অনুভূত হচ্ছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তিবিদদের মনে। তাদের মতে, এ ধরনের একটি বিশেষায়িত ওয়েবসাইট থাকলে চটজলদি একনজরে এর সাফল্য, ব্যর্থতা, অগ্রগতি, অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। এ বিষয়ে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তাফা জববার বলেন, এ ধরনের (স্ক্রিনশট) সাইট থাকা হাস্যকর, লজ্জাজনকও বটে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যারা জানি তাদের কথা আলাদা। কিন্তু যারা মোটেও জানে না, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে কোথা থেকে জানবে? জাতীয় তথ্যবাতায়ন থেকে অনেক তথ্য জানা সম্ভব হলেও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে এ ধরনের একটি বিশেষায়িত সাইটের দাবি জানান মোস্তাফা জববার।

আসছে দেশীয় ডেভেলপারদের তৈরি ১০০ মোবাইল অ্যাপস
আগামী নভেম্বরে দেশীয় ডেভেলপারদের ডেভেলপ করা ১০০ মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বা অ্যাপ পাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ সরকারের।
প্রতিদিনের জীবনযাপনে মানুষ যে ধরনের প্রয়োজনীয়তার মুখোমুখি হয়, সেসব সমস্যার সমাধান করতে এসব অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর ফলে মানুষের জীবনযাত্রা আরও সহজ হয়ে উঠবে। নভেম্বর মাসেই অ্যাপগুলো মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা যাবে বলে তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
অনেক অ্যাপসই নির্মাণের একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নভেম্বর মাসের মধ্যে ১০০টির নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হবে। পাইপলাইনে চলে আসবে আরও প্রায় ১০০ অ্যাপস।
আইসিটি বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম খান জানান, অ্যাপস তৈরিতে অসাধারণ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অ্যাপস ডেভেলপার তৈরি করা হবে। এরা দেশে-বিদেশে এসব অ্যাপস বিক্রি করবে। তিনি বলেন, কমপিউটার জানা ছেলেমেয়েদের আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে তৈরি করছি। এই ফ্রিল্যান্সারদের উদ্যোক্তা তৈরি করা হচ্ছে। আর এই উদ্যোক্তাদেরকেই শিল্পপতি হিসেবে প্রস্ত্তত করা হবে।
এরই মধ্যে অ্যাপস তৈরি বিষয়ে (অ্যান্ড্রয়িড) ২ হাজার ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আরও ২৫ হাজার তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে বলে তিনি জানান।
নজরুল ইসলাম খান দ্রুত বিকাশমান মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের বাজার প্রসঙ্গে জানান, ২০১২ সালে অ্যান্ড্রয়িডের বাজার আকার ছিল ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা ২০১৩ সালে ২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পরিণত হয়েছে। এই বিশাল বাজারে দেশের তরুণদের ভাগ বসানোর আহবান জানান তিনি।
অ্যাপস তৈরির আগে আগ্রহীদের কাছ থেকে ধারণাপত্র নেয়া হয়। তারপর সেগুলোর উপযোগিতা যাচাই করে ধারণাপত্র জমাদানকারীদের সাথে অ্যাপস ডেভেলপারদের বসিয়ে দিয়ে এর কাঠামো ঠিক করা হয়। তারপর তৈরি হয় কাঙিক্ষত অ্যাপস।
আইসিটি বিভাগ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাদাভাবে বসে জানার চেষ্টা করেছে মন্ত্রণালয়গুলোর কী ধরনের অ্যাপস প্রয়োজন। প্রয়োজন অনুসারেই তৈরি করা হচ্ছে অ্যাপস। ধারণা করা হচ্ছে, নভেম্বরের পরে সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব অ্যাপস থাকবে। এতে সেবা গ্রহীতারা আরও সহজে সেবা পাবেন।
এরই মধ্যে দেশের প্রতিটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে আইসিটি বিভাগ থেকে অ্যাপস তৈরির ওপর পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি জেলায়ও অ্যাপস ডেভেলপার তৈরিতে অনুরূপ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জাতীয় পর্যায়ে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নে সচেতনতা ও দক্ষতা বাড়ানোর কর্মসূচির আওতায় গত বছর থেকে আইসিটি বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি বিভাগে বুট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কাজের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ কোটিরও বেশি টাকা।
এ ছাড়া একই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত জেলা পর্যায়ে ৬২টি প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে ২ হাজার ৩৪৭ শিক্ষার্থীকে অ্যান্ড্রয়িড অ্যাপ্লিকেশন উন্নয়নের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পে ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এমসিসি লিমিটেড ও ইএটিএলের সাথে যৌথভাবে কাজ করছে বেসিস, মাইক্রোসফট, গ্রামীণফোন, রবি, নকিয়া, সিম্ফনি, এসওএল কোয়েস্ট, গুগল ডেভেলপার গ্রম্নপ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, কিউবি ও টেলিটক।

ফিডব্যাক : hitlar.halim@gmail.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৪ - আগস্ট সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা