লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - সেপ্টেম্বর
সহজে যেকোনো সংখ্যার বর্গ বের করা
সহজে যেকোনো সংখ্যার বর্গ বের করা
আমরা জানি, যেকোনো সংখ্যার বর্গ করার অর্থ হচ্ছে এই সংখ্যাকে ওই সংখ্যা দিয়ে গুণ করে গুণফল বের করা। যেমন ৪-এর বর্গ = ৪ গুণ ৪ = ১৬ এবং ১০-এর বর্গ = ১০ গুণ ১০ = ১০০। এভাবে যেকোনো সংখ্যাকে ওই সংখ্যা দিয়ে গুণ করে ওই সংখ্যার বর্গ সংখ্যাটি যেকেউ বের করে নিতে পারেন। এখানে তাকে শুধু গুণ করার নিয়ম জানলেই হলো। তবে সংখ্যা যদি বেশ বড় হয়, তখন ওই গুণের কাজটিও বেশ বড় ও কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ হয়। তাই যেকোনো সংখ্যার বর্গ বের করার সহজতর কোনো কৌশল জানা থাকলে ভালো। এখানে সে কৌশল জানার চেষ্টাই করব। একটি সূত্রকে ভিত্তি ধরে বর্গ করার এই সহজ কৌশলটি জানতে পারি।
আমরা জানি, a2 - b2 = (a + b) (a - b)
অতএব, a2 - n2 = (a + n) ( a - n)
অথবা, a2 = (a + n) ( a - n) + n2
এখানে ধ = যে সংখ্যার বর্গ নির্ণয় করতে হবে সে সংখ্যা ধরলে এবং হ
= অন্য যেকোনো সংখ্যা ধরলে এই সূত্রটি দাঁড়ায় এমন :
যেকোনো সংখ্যা a-এর বর্গ = (ওই সংখ্যা a + যেকেনো সংখ্যা n) ( a - n) + n2
কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যাক। ধরা যাক, আমরা জানতে চাই ৮-এর বর্গ কত?
এখানে আমরা ৮-কে a এবং ২-কে n ধরলে ওপরের a2 = (a + n) ( a - n) + n2 ফর্মুলা থেকে পাই, 82 = (8 + 2) (8 - 2) + 22
= 10 ´ 6 + 4
= 60 + 4
= 64
এভাবে ৮-এর বর্গ ৬৪ সহজেই বের করে নিতে পারি। এবার ধরা যাক, আমরা জানতে চাই ১০৩-এর বর্গ কত? এখানে ১০৩-কে a এবং ৩-ক n ধরলে হিসাব করতে সুবিধা হবে। আগের মতো একই সূত্র মতে আমরা লিখতে পারি,
১০৩২ = (১০৩ + ৩) ( ১০৩ - ৩) + ৩২
= ১০৬ ক্ম ১০০ + ৯
= ১০৬০০ + ৯
= ১০৬০৯
একইভাবে,
৭৯২ = (৭৯ + ১) (৭৯ - ১) + ১১
= ৮০ ´ ৭৮ + ১
= ৬২৪০ + ১
= ৬২৪১
এবং
৯৯৯৬২ = (৯৯৯৬ + ৪) (৯৯৯৬ - ৪) + ৪২
= ১০০০০ ক্ম ৯৯৯২+ ১৬
= ৯৯৯২০০০০ + ১৬
= ৯৯৯২০০১৬
আশা করি, উদাহরণগুলো থেকে এই নিয়মটি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে।
কেনো ০.৯৯৯৯... = ১?
আমরা স্কুলে জেনেছি, যখন কোনো দশমিক সংখ্যার আসন্ন মান নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যক ঘর পর্যন্ত লিখি, তখন এর পরের ঘরে যদি ৫, ৬, ৭, ৮ বা ৯ থাকে তবে আগের ঘরের অঙ্কের সাথে ১ যোগ করতে হয়। যেমন ২.৩৪৫৮১৭-কে দশমিকের পরের দুই ঘর পর্যন্ত লিখতে হলে লিখব ২.৩৫। তিন ঘর পর্যন্ত লিখলে লিখতে হবে ২.৩৪৬। চার ঘর পর্যন্ত লিখতে হলে লিখতে হবে ২.৩৪৫৮। আর পাঁচ ঘর পর্যন্ত লিখলে হবে ২.৩৪৫৮২।
এই নিয়মে আমরা সহজেই লিখতে পারি :
০.৯৯ = ১.০ = ১
০.৯৯৯ = ১.০০ = ১
০.৯৯৯৯ = ১.০০০ = ১
..................................
০.৯৯৯৯... = ১
প্রশ্ন হচ্ছে, কেনো ০.৯৯৯৯... = ১ হবে?
০.৯৯৯৯... সংখ্যাটিতে রয়েছে দশমিকের আগে শূন্য (০)। আর দশমিকের পর রয়েছে অসংখ্য ৯, যার কোনো শেষ নেই। কিন্তু যখন কেউ প্রথম জানবে এই সংখ্যাটির মান আসলে ১-এর সমান, তখন কিছুটা খটকা লাগতেই পারে। কিন্তু এর পেছনের গাণিতিক যুক্তি বা প্রমাণ জানলে সেই খটকা কেটে যাবে। এর প্রথম যুক্তি বা প্রমাণ হতে পারে এমন :
০.৯৯৯৯... সংখ্যাটিকে ক ধরলে,
ক = ০.৯৯৯৯...,
অতএব ১০ক = ৯.৯৯৯৯...,
তাহলে ১০ক - ক = ৯.৯৯৯৯ - ০.৯৯৯৯...
বা, ৯ক = ৯.০০০০...
বা, ৯ক = ৯
বা, ক = ১
অর্থাৎ ০.৯৯৯৯... = ১
কারণ ০.৯৯৯৯... সংখ্যাটিকে ক ধরেই এই হিসাবটা আমরা শুরু করেছিলাম।
এ সম্পর্কিত ধারণাকে আরও কিছুটা স্পষ্ট করার জন্য আরেকটি যুক্তি এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে। ৭-কে ২০ দিয়ে ভাগ করলে ভাগফল হয় ০.৩৫। এখানে দশমিকের পর দুই ঘরের ফলটা পাওয়া গেছে। কিন্তু ০.৯৯৯৯... সংখ্যাটিতে দশমিকের পর রয়েছে বিরতিহীন অসংখ্য ঘর। কিন্ত ০.৩৫-কেও আমরা এভাবে দশমিকের পর অসংখ্য ঘর পর্যন্ত সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারি। আমরা জানি, যেকোনো দশমিক সংখ্যার শেষে যত ইচ্ছে শূন্য বসালে এর মানের কোনো পরিবর্তন হয় না। তাহলে-
০.৩৫ = ০.৩৫০০০...
বা, ০.৩৪৯৯৯...
দশমিক সংখ্যার এই যে নিয়ম-কানুন আমরা গণিতে প্রয়োগ করি, তা কারও কারও কাছে অনেকটা গোঁজামিল বলে মনে হতে পারে। কারণ, দশমিক সংখ্যার দশমিকের পরের ঘরের সম্প্রসারণ সম্পর্কে তাদের কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। আসলে এরা বিশ্বাস করতে চায় না, দশমিক সংখ্যা দুইভাবে প্রকাশ করা যেতে পারে। এখানে স্পষ্ট করার প্রয়াস পাব, আসলে দশমিকে সংখ্যা প্রকাশের অর্থটা কী। হয়তো মনে আছে, স্কুল-কলেজে আমরা জেনেছি- দশমিকে সম্প্রসারণের বিষয়টি ১০-এর ধনাত্মক বা ঋণাত্মক ঘাত বা পাওয়ারের সাথে সংশ্লিষ্ট। দশমিকের বাম পাশের ক-তম স্থানের অঙ্ক সংশ্লিষ্ট ১০ক -এর সাথে। আর দশমিকের ডান পাশের ক-তম স্থানের অঙ্কের সাথে সংশ্লিষ্ট ১০-ক -এর সাথে। এখন দশমিকের ডানে-বামের বিভিন্ন স্থানের বা ঘরের অঙ্কগুলোকে এর ১০-এর সংশ্লিষ্ট পাওয়ার বা ঘাত দিয়ে গুণ করে যদি সবগুলো যোগ করি, তবে সংখ্যাটির মান পেয়ে যাব। অতএব ০.৯৯৯৯. সংখ্যাটি আসলে একটি অসীম যোগফলকেই নির্দেশ করে।
০.৯৯৯৯... = ৯/১০ + ৯/১০০ + ৯/১০০০ + ৯/১০০০০ + ...
এটি একটি জ্যামিতিক সিরিজ, যার যোগফল ১, তা করে দেখানো যাবে। লক্ষ করুন,
১.০০০... = ১ + ০/১০ + ১/০০ + ১/০০০ + ১/১০০০০ + ...
অতএব আবারও প্রমাণ মিলে ০.৯৯৯৯... = ১।