• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দেশে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রাউডফান্ডিং
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: এআর হোসেইন
মোট লেখা:২
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
রির্পোট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দেশে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রাউডফান্ডিং
কমপিউটার জগৎ-এর আগস্ট ১৫ সংখ্যায় ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ক্রাউডফান্ডিং কী এবং কেন তার পাশাপাশি সেখানে বংলাদেশে ক্রাউডফান্ডিংয়ের যাত্রা নিয়েও লেখা হয়েছিল। স্বল্প পরিসরে আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে ক্রাউডফান্ডিং কার্যক্রম। আমাদের অনেকেরই জানা আছে, দেশের প্রথম ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম প্রজেক্ট ডটসিও’র কথা । মাহবুব উসমান ও তার টিমের ক্যাম্পেইনের কথা। গত সংখ্যায় ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে প্রতিবেদনের পর অনেকেই নতুন করে ক্রাউডফান্ডিংয়ের কার্যক্রম শুরু করেছেন আমাদের দেশে। এই সংখ্যায় বাংলাদেশে ক্রাউডফান্ডিংয়ের যাত্রা ও এর কিছু সফলতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ই-ক্যাব : নতুন দিগন্ত উন্মোচন
ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জন্য সরকার অনুমোদিত ট্রেডিং অ্যাসোসিয়েশন ‘ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’ বা ‘ই-ক্যাব’ ক্রাউডফান্ডিংয়ের ইতিহাসে ছোট্ট একটি মাইলফলক রচনা করেছে গত মাসের ২৪ তারিখ। মাত্র চার ঘণ্টার ক্যাম্পেইনে তাদের একজন সদস্যের জন্য প্রয়োজনীয় ১৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করার প্রতিশ্রম্নতি পেয়েছে। সাতক্ষীরা শপ ডটকমের জন্য এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেন ই-ক্যাবের সদস্যসহ মোট ৮০ জন সহায়তাকারী। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদের সাথে এ নিয়ে আমাদের কথা হয়, তিনি বলেন : ‘হাসান রাজ, সাতক্ষীরা শপ ডটকমের স্বত্বাধিকারীর পণ্যের মান যাচাই পরীক্ষার জন্য ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন ছিল। ২৫ আগস্ট আমি এ নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডি ও ই-ক্যাব গ্রুপে পোস্ট দিলে ব্যাপক সারা পেতে থাকি এবং মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যেই প্রতিশ্রম্নতি ১৭ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ক্রাউডফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে একটি নজির স্থাপন করেছে বলা যায়। এই প্রতিশ্রম্নতির বেশিরভাগই এসেছে ই-ক্যাবের সদস্যদের মধ্য থেকে। ই-ক্যাব সব সময় তার সদস্যদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে ভাবে। এই বিশ্বাস আরও দৃঢ় হয়েছে সবার মধ্যে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০০৬ সাল থেকে ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে আগ্রহী ছিলাম, কিন্তু তেমন এগোতে পারিনি। ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ গ্রুপের উদ্যোক্তাদের দেখে এ স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার শক্তি পেয়েছি। আমি আশা করি, ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সুফল বয়ে আনবে।’
যারা ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে কাজ করতে চান, তাদের প্রতি পরামর্শ চাইলে রাজিব আহমেদ বলেন- ‘যারা ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে কাজ করতে চান, তাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে প্রথমে ক্রাউডফান্ডিং সম্পর্কে ভালোভাবে পড়াশোনা করে নিতে। সৎভাবে চেষ্টা করুন এবং ক্রাউডফান্ডিংকে কোনোভাবেই এমএলএমের সাথে মিলিয়ে ফেলবেন না। আমি মনে করি, এখনই শুরু করতে পারলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবে।’
সাতক্ষীরা শপ ডটকমের জন্য সফল একটি ফান্ডিং কার্যক্রম ই-ক্যাবের জন্য সম্ভাবনার অনেক দুয়ার খুলে দিয়েছে। ক্রাউডফান্ডিং মেথডের মাধ্যমে দেশীয় উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারব আমরা।’
ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে
ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ মূলত একটি ফেসবুক গ্রুপ। বাংলাদেশে ক্রাউডফান্ডিং পদ্ধতির থে সবাইকে পরিচিত করিয়ে দেয়া, সাধারণ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে এর অনুশীলন করাই হলো ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ গ্রুপের উদ্দেশ্য। ভবিষ্যতে বাংলাদেশে একটি ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম গড়ে তোলাই এর লক্ষ্য। এ বিষয়ে কথা হয় ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশের অন্যতম উদ্যোক্তা ‘জামদানি মেলা’র স্বত্বাধিকারী শায়েখ আহমেদ মুনসুরের সাথে। তিনি কমপিউটার জগৎকে জানান- ‘ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ একটি ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে ক্রাউডফান্ডিংয়ের অনুশীলন করে যাচ্ছে এর উদ্যোক্তা ও সদস্যরা যাতে ক্রাউডফান্ডিং সম্পর্কে বাস্তব একটি ধারণা পায়। এর জন্য আমরা ছোট্ট একটি পদক্ষেপ শুরু করেছি গ্রুপের মাধ্যমে। আমরা দুইজন ছেলের জন্য ফান্ডিং করছি, যাদের একজন রকিব একটি কমপিউটার ও ইন্টারনেট মডেম পেলে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। ইতোমধ্যেই মাহবুব উসমান নামে এক উদ্যোক্তা তার প্রতিষ্ঠানে রকিবকে কাজের সুযোগ ও আরও উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা এখন তাই সবার কাছ থেকে রকিবের জন্য একটি ল্যাপটপ ও একটি ইন্টারনেট মডেম কেনা বাবদ ৩৫ হাজার টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্যদিকে বাপ্পির নিজের একটি ডেস্কটপ কমপিউটার আছে। সে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী। এর জন্য যথাযথ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন তার। আমরা যাচাই করে দেখেছি ১৫ হাজার টাকা হলেই বাপ্পির জন্য আমরা একটি ভালো মানের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। তাই গ্রুপে আমাদের মোট ক্যাম্পেইন হচ্ছে ৫০ হাজার টাকার জন্য। আগস্ট মাসের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা ১০ হাজার টাকা হাতে পেয়েছি এবং প্রতিশ্রম্নতি পেয়েছি আরও অনেক। আশা করি, সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আমাদের ফান্ডিং কার্যক্রম সফলভাবে শেষ হবে। আর ইতোমধ্যেই একজন সদস্য আমাদের জানিয়েছেন, যদি আমরা এমন কাউকে খুঁজে পাই যে চলাচল করতে এবং বাইরে গিয়ে কাজ করতে অক্ষম, কিন্তু একটি কমপিউটার ডিভাইস দিলে সে তা দিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারবে, তাহলে তিনি আমাদের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে একটি ল্যাপটপ দিতে আগ্রহী আছেন।’
গ্রুপের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় আরেকজন উদ্যোক্তা আবদুল্লাহ আল নাসেরের সাথে- ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জন্য একটি ক্রাউডফান্ডিং প্লাটফর্ম তৈরি করা। আমরা এখন নানা সময়ে একক বা নির্দিষ্ট কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে যেসব ফান্ডিং কার্যক্রম দেখতে পাই, তার সবগুলোকে একটি প্লাটফর্ম থেকে পরিচালিত করাই আমাদের উদ্দেশ্য। যেমন- অর্ণব হেঁটে বা তার নিজের ফেসবুক পেজ থেকে গান বিক্রি করে থাকে, শিশু কেসপারের জন্যও আমরা এগিয়ে এসেছিলাম যদিও দুঃখজনকভাবে শেষ পর্যন্ত সে আমাদের ছেড়ে চলে যায়, ই-ক্যাবের একজন সদস্যের জন্য ফান্ডিং করা একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে ক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য। আমরা চাই, এই উদ্যোগগুলোকে একটি প্লাটফর্মের মাধ্যমে ফান্ডিং করার জন্য।’
সার্বিকভাবে এ কথা এখন বলা যায়, মানুষ এখন ক্রাউডফান্ডিং সম্পর্কে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানতে পারছেন। অনেক বেশি এ নিয়ে আগ্রহী হচ্ছেন। অনেকেই এগিয়ে আসছেন ক্রাউডফান্ডিং নিয়ে কাজ করার জন্য। সম্ভাবনার পাশাপাশি এ খাতে সমস্যাও অনেক। অনেকেই এখনও ক্রাউডফান্ডিং বিষয়টিকে একটি দান-অনুদানের কার্যক্রম ভাবেন। তবে ক্রাউডফান্ডিং শুধু দান-অনুদানের কোনো বিষয় নয়। এটি একটি ব্যবসায়িক কার্যক্রমও বটে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের উদ্যোক্তারা নিজেদের কাছে জমানো টাকা এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন। ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসায়ের প্রচার-প্রসারের পাশাপাশি একটি বিনিয়োগও সংগ্রহ করেন। এরপর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে বিনিয়োগ নিয়ে অথবা ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসায়কে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যান।
আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের জন্যও ক্রাউডফান্ডিং বৈপস্নবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। তবে এর জন্য শুরুতে প্রয়োজন মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা। ক্রাউডফান্ডিং একটু এগিয়ে গেলেই এ নিয়ে নানা মহলের নানা কটু কথার পাশাপাশি প্রতারক মহলও বসে থাকবে না। নানাভাবে এরা প্রতারণার জাল ছড়িয়ে দেবে। ক্রাউডফান্ডিং বাংলাদেশ গ্রুপ থেকে বাংলায় যেমন অনেক তথ্য-উপাত্ত পাবেন, তেমনি পাবেন ইংরেজিতে প্রচুর আর্টিকল। গ্রুপের ঠিকানা fb.com/ groups/CrowdFundingBD। আমাদের দেশেও ক্রাউডফান্ডিংয়ের অনুশীলন হোক। ক্রাউডফান্ডিং এগিয়ে যাক। উদ্যোক্তাদের সাথে সুর মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই- ‘কোনো ভালো উদ্যোগ যেন শুধু টাকার অভাবে থেমে না থাকে।’

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - সেপ্টেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস