সিকি শতাব্দী ধরে মাসিক কমপিউটার জগৎ-এর নিয়মিত প্রকাশনার মধ্য দিয়ে সেই মুখ্য কাজটি কবে আসছে, এর নাম বাংলাদেশের আইসিটি খাতের উন্নয়ন আন্দোলন। এই সময়ে কমপিউটার জগৎ যেমনি অর্জন করেছে পাঠক-নান্দিকতা, তেমনি এ দেশের আইসিটি আন্দোলন আর এই পত্রিকাটি যেনো হয়ে উঠেছে সমান্তরাল। আর একই সাথে এই পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ অধ্যাপক মরহুম আবদুল কাদেরের নাম সমভাবে আজ উচ্চারিত বাংলাদেশের আইসিটি আন্দোলনের অগ্রপথিক অভিধায়। কমপিউটার প্রযুক্তিকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর মহান লক্ষকে সামনে রেখে আমাদের সেই আন্দোলন সামনের দিকে এগিয়ে নিতে আমরা আমাদের ইতিবাচক সেই সাংবাদিকতা এখনও জারি রেখেছি। যেখানে যখন যেটা বলা প্রয়োজন, সেখানে সেটা আমরা এখনও বলে যাচ্ছি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমরা লক্ষ করেছি, বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে ই-কমার্সের এক সম্ভাবনায় বাজার। এ বাজার ধরতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক লাভবান হতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনার দুয়ার যেন অনেকটা ছিটকে পড়েছে আমাদের চোখের সামনে দিয়েই। সেই বাজার দখল করে নিচ্ছে অন্যসব দেশ। অথচ আমরা যদি ই-কমার্সের বিশাল বাজারের সম্ভাবনার কথা দেশবাসীর কাছে যথার্থভাবে তুলে ধরতে পারতাম, তবে ই-কমার্স খাতের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ আমাদের দখলে চলে আসত। তাই কমপিউটার জগৎ সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ই-কমার্স মেলা আয়োজনের একটি ব্যাপকভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার সূচনা করে। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ই-কমার্স প্রসারের লক্ষকে সামনে রেখে কমপিউটার জগৎ, বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন ও হাইটেক পার্ক অথরিটির সহযোগিতা চলতি বছরের প্রথম দিকে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশালে ই-বাণিজ্য মেলার আয়োজন করে। এবং ২০১৩ সালের ৭, ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনে আয়োজন করা হয় প্রথম ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার। একই ধারাবাহিকতায় লন্ডনে দ্বিতীয়বারের মতো চলতি মাসের ১৩ ও ১৪ তারিখে আয়োজন হতে যাচ্ছে ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার। এ মেলা বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত আন্তর্জাতিক পরিম-লে আরও সুপ্রসারিত করে তুলবে, তাতে কোনো সন্দেহ। এ মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের ই-বাণিজ্যের পরিধির সীমানা আরও বেড়ে উঠছে। এ ব্যাপারে মেলার আহবায়ক ও কমজগৎ টেকনোলজিসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আবদুল ওয়াহেদ তমাল জানান, এটি একটি নিছক ই-বাণিজ্য মেলা নয়। এটি লন্ডনে ডিজিটাল বাংলাদেশের আংশিক উপস্থাপন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ই-বাণিজ্য প্রবাসী বাংলাদেশীরা যেমনি জানার সুযোগ পাবেন, তেমনি মেলায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের পণ্য ও সেবা বৃহত্তর পরিসরে দেশের বাইরে প্রদর্শনের সহজ সুযোগ পাবে।
গত ২৯ অক্টোবর লন্ডনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেলা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে বলা হয়- মেলায় বাংলাদেশ সরকারের দুইজন মন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অংশ নেবেন বলে কথা রয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় মেলার প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক লিমিটেড। ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার দুটি দেশের ই-কমার্সসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান স্টেকহোল্ডারদের একই ছাতার নিচে নিয়ে আসবে। মেলায় ৫০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়ে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করবে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, ই-কমার্স খাতের প্রায় ৫ হাজার পেশাজীবী সদস্য মেলায় অংশ নিয়ে অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন।
১৩ নভেম্বর লন্ডনে স্থানীয় সময় সকাল ৯টায় উদ্বোধন করা হবে দ্বিতীয় ইউকে-বাংলাদেশ ই-কমার্স ফেয়ার। মেলার আয়োজকদের প্রণীত বিভিন্নধর্মী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মেলা বাংলাদেশের ই-কমার্সের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে বলে আমরা আশা করি। এই মেলা আয়োজনের পেছনে যারা রয়েছেন, তাদের সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক মোবারকবাদ। সেই সাথে মেলা সম্পন্নের শতভাগ সাফল্য কামনা করছি।