• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ইন্টারনেটে আপনার শিশুকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মদ জাবেদ মোর্শেদ চৌধুরী
মোট লেখা:৫১
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৫ - নভেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সিকিউরিটি
তথ্যসূত্র:
ইন্টারনেট
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ইন্টারনেটে আপনার শিশুকে যেভাবে নিরাপদ রাখবেন
ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনেক সময় শিশুরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয় অথবা অনাকাঙিক্ষত পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। শিশুরা অনলাইনে যাদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলে, অনেক সময় তাদের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় না। অনলাইনে তাদের সত্যিকারের পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না বলেই ম্যালওয়্যার আক্রমণ কিংবা বিপজ্জনক সিস্টেম হ্যাকিংয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়। এছাড়া পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট কিংবা হানাহানির দৃশ্য শিশুদের কোমল মনে ভীতির সঞ্চার করতে পারে।
যেহেতু ছোট বয়সে ভালো-মন্দ বোঝার ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম থাকে, তাই বাবা-মা হিসেবে আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আপনার সন্তান ইন্টারনেটে কতটুকু নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্য। বিশেষজ্ঞেরা এর নাম দিয়েছেন ‘অনলাইন প্যারেন্টিং’, যেখানে ‘বাস্তব জীবনের’ পেরেন্টিংয়ের মতোই সবসময়ই চাইবেন আপনার সন্তান কিছু নিয়মকানুন মেনে চলুক ও তার স্বাভাবিক বিকাশ হোক।
ধরা যাক, বাস্তব জীবনে আপনার সন্তান কখন কার সাথে দেখা করছে, কাদের সাথে মিশছে, কোথায় কোথায় যাচ্ছে তা জানতে চাচ্ছেন। আপনি চান আপনার সন্তান যেন কোনো কিছুতে আসক্ত হয়ে না পড়ে। যদি সন্তান আপনার কথা না শুনে তবে তাকে বোঝানের চেষ্টা করেন, তাকে শাসন করেন। তার চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করেন। অনলাইন পেরেন্টিংয়ে বিষয়গুলো প্রায় একই ধরনের থাকে। আপনি নিশ্চিত করতে চান, আপনার সন্তান তার বয়স অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ ওয়েবসাইটগুলোই শুধু অ্যাকসেস করুক, কোনো অযাচিত বা অ্যাডাল্ট সাইটে সে ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অ্যাকসেস না করুক। আপনি চান না আপনার সন্তান ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ুক। সারাবিশে^ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই নিয়ে গবেষণা হচ্ছে। তবে সাধারণভাবে অনলাইন পেরেন্টিংয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা যেতে পারে।
নিরাপদ যন্ত্রের ব্যবহার
বাড়িতে সব ইন্টারনেট সুবিধার যন্ত্রগুলো নিরাপদে রাখুন। শিশু যদি শুধু ডেস্কটপ ব্যবহার করে, সেটিকেও নিরাপদ রাখুন। শিশুরা সাধারণত তার মা-বাবার ফোন বা ল্যাপটপে গেম খেলে। আপনার মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা ডেস্কটপে নিরাপদ সফটওয়্যার ইনস্টল করে রাখুন। হালনাগাদ নিরাপত্তা সফটওয়্যার সক্রিয় থাকলে এসব যন্ত্রে সহজে ভাইরাস ঢুকতে পারবে না। তাই সবসময় অ্যান্টিভাইরাসকে আপডেটেড রাখতে হবে। আর নিজের ডিভাইসকে কোনো অবস্থাতেই আনঅ্যাটেন্ডেড রাখা যাবে না।
নিরাপদ ইন্টারনেট সংযোগ
কমপিউটারে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সিস্টেম চালু রাখুন। প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড সেট করে দিন। শিশুদের অ্যাডমিন পাসওয়ার্ড জানানোর প্রয়োজন নেই।
ব্রাউজার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিরাপদ রাখুন
শিশুদের উপযোগী ব্রাউজার ও তাদের গেম খেলা বা প্রকল্প তৈরির জন্য আলাদা ব্রাউজার ঠিক করুন। শিশুদের ই-মেইল অ্যাকাউন্ট কিংবা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে প্রাইভেসির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। শিশুরা যাতে শুধু পরিচিতজনের সাথেই যোগাযোগ করে, সে বিষয়টিতে পরামর্শ দিন। জিপিএস, ওয়েবক্যাম নিষ্ক্রিয় করে রাখুন। পপআপ ব্লক করে দিন।
সময় ঠিক করে দিন
আপনার সন্তান যখন কিশোর বয়সী, তখন তারা গেম খেলা ও ভিডিও দেখতে বেশি আগ্রহী হয়। যখন-তখন যাতে ইন্টারনেটে যেতে না পারে, সেজন্য ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখুন। কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করুন এবং তারা কোন ওয়েবসাইটে যাবে তা ঠিক করে দিন। কখন তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করবে, সে সময়ও নির্ধারণ করে দিন।
দরকারি শিক্ষা
বাস্তব জীবনে যে বিষয়গুলো শেখার প্রয়োজন, অনলাইন দুনিয়ায় সেই বিষয়গুলো শিক্ষা দিন। শিশুকে সচেতন হওয়ার শিক্ষা দিন। সংযত হয়ে কথা বলা কিংবা কার সাথে কীভাবে কথা বলবে, সে বিষয়টিও শিখিয়ে দিন।
যোগাযোগ
নিয়মিত শিশুর খোঁজখবর রাখুন। তার সাথে কথা বলুন এবং তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। শিশুর অনলাইন দুনিয়ার অভিজ্ঞতা শুনুন। সাইবার জগতের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তাকে জানান। বন্ধুদের কেউ এরকম কোনো সমস্যায় পড়েছে কি না, তা জেনে নিন।
নজরদারিতে রাখুন
আপনার শিশুকে একা একা পার্কে কি খেলতে দেবেন? নিশ্চয়ই নয়। অনলাইনের ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি মনে রাখুন। শিশুর ব্যবহৃত কমপিউটার অবশ্যই সবার সামনে রাখবেন, আর কমপিউটারে স্ক্রিনটি দরজা বরাবর রাখবেন। অর্থাৎ শিশুদের আপনার চোখের আড়ালে কোনোরূপ যোগাযোগ করতে দেবেন না।
বিনামূল্যে কিছু পাওয়ার লোভ সামলান
অনলাইনে কোনো কিছু বিনামূল্যে পাওয়ার অফার সম্পর্কে শিশুদের সতর্ক করুন। আমরা সবাই জানি, বিনামূল্যে কিছুই পাওয়া যায় না, তাদেরও সেটা বোঝান। বিনামূল্যে ওয়ালপেপার, গেম, পোস্টার প্রভৃতি ডাউনলোড না করার জন্য বলুন। এ ধরনের অফারের সাথে ম্যালওয়্যার থাকতে পারে, যা বিভিন্ন তথ্যের বিনিময়ে ইনবক্সে চলে আসে।
শোবার সময় মোবাইল নয়
ঘুমানোর আগে কোনো যন্ত্র, এমনকি মোবাইল ফোন যেন শিশুর সাথে না থাকে, সে বিষয়টি খেয়াল রাখুন। রাতের খাবারের পর কোনো চ্যাটিং, টেক্সটিং কিংবা ই-মেইল দেখা না হয়, সেটিই নিয়ম করে দিন।
নৈতিক শিক্ষা
শিশুদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই নৈতিক শিক্ষা দিন। চ্যাটরুমে যাওয়া, কোনো কিছু কপি পেস্ট করে নিজের নামে চালানো, অবৈধভাবে কোনো গান বা ছবি ডাউনলোড করতে না করুন। কারও সাথে অনলাইনে বিবাদ না করতে, কাউকে গালি না দিতে, বয়স লুকিয়ে কোনো সামাজিক যোগাযোগের সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে কিংবা কোনো গুজব ছড়ানোর বিষয়ে তাদের সতর্ক করুন।
চিন্তা করতে শেখান
অনলাইনে শিশুদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি বিষয় শেখাবেন। থামো, চিন্তা করো, তারপর যোগাযোগ করো। কোনো বিষয়ের জবাব দিতে, টুইট করতে, কোনো কিছু লাইক করতে বা পোস্ট করার আগে সেটি ঠিক হচ্ছে কি না, তা একটু সময় নিয়ে ভেবে তারপর করা উচিত।
রিসোর্স : অনলাইন প্যারেন্টিং বা সেফ ইন্টারনেট বিষয়ে বেশকিছু সাইট আছে, যা আপনাকে ও আপনার সন্তানকে সাহায্য করতে পারে।
01.http://www.cybersmart.gov.au/Parents/Guide to online safety/Guide%...
02. http://www.staysmartonline.gov.au/
03. http://www.cyberpatrol.com/
04. http://www.netnanny.com/
05. http://www.cybersmart.gov.au/ Young Kids.aspx
06. http://www.youtube.com/watch? v=H5XZp-Uyjsg
বাবা-মা হিসেবে আপনার সন্তানকে নতুন নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানানো ও তার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আপনার কর্তব্য। এজন্য তাদের সাথে বেশি বেশি সময় কাটান এবং তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদেরকে এই বিশ্বাস দিন যে, তাদের ওপর অযাচিত নজরদারি করছেন না বরং তাদেরকে ইন্টারনেটের অজানা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছেন। বাবা-মায়ের এই প্রয়াস আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কমপিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে অনেক বেশি নিরাপদ ও কার্যকরী করবে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেট হচ্ছে শিক্ষা, বিনোদন ও যোগাযোগের চমৎকার একটি উৎস। এটি ভবিষ্যতের একটি টুল। ইন্টারনেট থেকে শিশুকে শিক্ষা নিতে বাধা দেবেন না। এর পরিবর্তে তাদের এই টুলটির যথাযথ ব্যবহার কীভাবে করা যায়, তা বুঝতে শিশুদের সাহায্য করুন
ফিডব্যাক : jabedmorshed@yahoo.com

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৫ - নভেম্বর সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস