লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
উইলসন প্রাইম নাম্বার: ৫, ১৩ ও ৫৬৩
ইংরেজ গণিতবিদ জন উইলসনের (৬ আগস্ট ১৭৪১-১৮ অক্টোবর ১৭৯৩) নামানুসারে উইলসন থিওরেম এবং উইলসন প্রাইম নাম্বারের নাম দেয়া হয়েছে।
শুরুতেই গাণিতিক চিহ্ন ফ্যাকটরিয়াল (!) সম্পর্কে সাধারণ পাঠককে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। কারণ, এ লেখায় ওই ফ্যাকটরিয়াল চিহ্নটি ব্যবহার করা হবে। এখানে আমরা কোনো কোনো সংখ্যার সাথে বা ডানপাশে এই ফ্যাকটরিয়াল চিহ্নটি ব্যবহার করব। ইংরেজিতে ফ্যাকটরিয়াল চিহ্নটি আমাদের বাংলাভাষার আশ্চর্যবোধক চিহ্নের (!) মতো। যেমন- ফ্যাকটরিয়াল ৪ বোঝাতে লিখব ৪!, আর ফ্যাকটরিয়াল ৯ বোঝাতে লিখব ৯!। আর আমরা এ ক্ষেত্রে বুঝব:
১! = ১
২! = ১*২ = ২
৩! = ১*২*৩ = ৬
৪! = ১*২*৩*৪ = ২৪
৫! = ১*২*৩*৪*৫ = ১২০
৬! = ১*২*৩*৪*৫*৬ = ৭২০
..................................................
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক।
উইলসন থিওরেম বলে, কোনো প্রাইম বা মৌলিক সংখ্যা থেকে ১ বিয়োগ করে যেসংখ্যা পাওয়া যায়, এর ফ্যাকটরিয়ালের সাথে ১ যোগ করলে পাওয়া সংখ্যাটি সব সময় প্রথমে নেয়া প্রাইম নাম্বার দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হবে। গণিতের ভাষায় এই থিওরেমটি আমরা এভাবে লিখতে পারি:
(p – 1)! + 1 = x হলে, এই x দিয়ে p-কে সব সময় নিঃশেষে ভাগ করা যাবে, যেখানে pএকটি প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যা। সাধারণ পাঠকদের মনে করিয়ে দিই, সেসব সংখ্যাই মৌলিক যেগুলোকে শুধু ওই সংখ্যা ও ১ ছাড়া আর কোনো সংখ্যা দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় না। যেমন- ১, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭, ১৯, ... ইত্যাদি সংখ্যা মৌলিক।
তাহলে আমরা উইলসন থিওরেম থেকে জানলাম, p প্রাইম নাম্বার হলে(p – 1)! + 1 নিঃশেষে বিভাজ্য হবে p দিয়ে।
উদাহরণ: ৫ একটি মৌলিক সংখ্যা। আর ফ্যাকটরিয়াল (৫ - ১) +১ = (৫ - ১)! +১ = ৪! +১ = ১*২*৩*৪ + ১ = ২৪ + ১ = ২৫। আর ২৫ সংখ্যাটি এখানে নেয়া প্রাইম নাম্বার ৫ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য।
আরেকটি উদাহরণ: ৮ কিন্তু মৌলিক সংখ্যা নয়। এখন (৮ - ১)! + ১ = ৭! + ১ = ১*২৮৩*৪*৫*৬*৭ + ১ = ৫০৪০ + ১ = ৫০৪১। আর এই ৫০৪১ সংখ্যাটি কিন্তু ৮ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য নয়।
এখানে বর্ণিত উইলসন থিওরেমে শুধু প্রাইম নাম্বার বা মৌলিক সংখ্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে উল্লেখ আছে। কিন্তু এই থিওরেমকে আরেকটু সম্প্রসারণ করে উইলসন আমাদের উপহার দিয়েছেন মজার সংখ্যা ‘উইলসন প্রাইম নাম্বার’ বা ‘উইলসন মৌলিক সংখ্যা’। সম্প্রসারিত এই তথ্যে বলা হয়েছে: উইলসন প্রাইম নাম্বারPw হলেএবং (Pw – 1)! + 1= x হলে,এই xনিঃশেষে বিভাজ্য হবে Pw দিয়ে। একই সাথে এই x/Pw সংখ্যাটিও Pw দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য হবে। যেসব প্রাইম নাম্বার ক্ষেত্রে এই উভয় শর্ত মানবে, সেসব সংখ্যার নামই দেয়া হয়েছে উইলসন প্রাইম নাম্বার। সব প্রাইম নাম্বারের বেলায় এই উভয় শর্ত সত্য নয় বলে সব প্রাইম নাম্বার উইলসন প্রাইম নাম্বার নয়।
আমরা জানি ৫ একটি প্রাইম নাম্বার। আর (৫ - ১)! + ১ = ৪! + ১ = ১*২*৩*৪ + ১ = ২৪ + ১ = ২৫। এই ২৫-কে ৫ দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যায় এবং এই ভাগফল দাঁড়ায় ৫, যা আবার মূল প্রাইম নাম্বার ৫ দিয়েও নিঃশেষে বিভাজ্য। অতএব ৫ একটি উইলসন প্রাইম নাম্বার।
আবার ১৩ একটি প্রাইম নাম্বার। আর (১৩ - ১)! + ১ = ১২! + ১ = ১*২*৩*৪*৫*৬*৭*৮*৯*১০*১১*১২* + ১ = ৪৭৯,০০১,৬০০ + ১ = ৪৭৯,০০১,৬০১, যা ১৩ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। ৪৭৯, ০০১, ৬০১-কে ১৩ দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায়, তা-ও ১৩ দিয়ে বিভাজ্য। অতএব নিশ্চিতভাবেই ১৩ আরেকটি উইলসন প্রাইম নাম্বার।
কিন্তু প্রাইম নাম্বার ৫৬৩-এর ব্যাপারে কী বলা যায়? এখানে স্পষ্টতই (৫৬৩ - ১)! + ১ বা ৫৬২! + ১ একটি অনেক বড় সংখ্যা। তা এখানে লেখা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষের জন্য তা কল্পনা করাও কঠিন। তবে গণিতবিদেরা গবেষণা করে দেখেছেন (৫৬৩ - ১)! + ১ সংখ্যাটি ৫৬৩ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। আর এ সংখ্যাটিকে ৫৬৩ দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায়, তা-ও ৫৬৩ দিয়ে নিঃশেষে বিভাজ্য। অতএব ৫৬৩ সংখ্যাটিও একটি উইলসন প্রাইম নাম্বার।
সংখ্যা নিয়ে মজার তথ্য
গবেষণায় জানা গেছে, কিছু কিছু সংখ্যা আছে যেগুলোর যতগুলো উৎপাদক বা ফ্যাক্টর আছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎপাদকটি বাদ দিয়ে বাকিগুলোর যোগফল ওই সংখ্যার সমান হয়। এমন চারটি সংখ্যা হচ্ছে: ৬, ২৮, ৪৯৪, ৮১২৮।
আমরা জানি, ৬ সংখ্যাটির রয়েছে চারটি উৎপাদক : ১, ২, ৩, ৬। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎপাদকটি হচ্ছে ৬। বাকি তিনটি হলো : ১, ২ ও ৩, যেগুলোর যোগফল মূলসংখ্যা ৬-এর সমান।
২৮ সংখ্যাটির উৎপাদকগুলো হলো : ১, ২,৪, ৭, ১৪, ২৮। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎপাদক ২৮ ছাড়া বাকি উৎপাদকগুলোর সমষ্টি = ১ + ২ + ৪ + ৭ + ১৪ = ২৮, যা মূল সংখ্যাটির সমান।
৪৯৬ সংখ্যাটির ফ্যাক্টর বা উৎপাদকগুলো হলো: ১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩১, ৬২, ১২৪, ২৪৮, ৪৯৬। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উৎপাদকটি ছাড়া বাকিগুলোর যোগফল মূল সংখ্যা ৪৯৬-এর সমান।
একইভাবে ৮১২৮ সংখ্যাটির উৎপাদকগুলো হলো: ১, ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২, ৬৪, ১২৭, ২৫৪, ৫০৮, ১০১৬, ২০৩২, ৪০৬৪ ও ৮১২৮। এ ক্ষেত্রেও সবচেয়ে বড় উৎপাদকটি ছাড়া বাকি উৎপাদকগুলোর সমষ্টি মূল সংখ্যা ৮১২৮-এর সমান।
কয়েকটি মজার নার্সিসটিক নাম্বার
নার্সিসটিক নাম্বার সম্পর্কে আগের একটি পর্বে আলোচনা করেছি। এ পর্বে শুধু এর সংজ্ঞাটি মনে করিয়ে দিয়ে কয়েকটি মজার নার্সিসটিক নাম্বার উপস্থাপন করছি। বিনোদনমূলক নাম্বার থিওরিতে একটি সংখ্যাকে তখনই নার্সিসটিক নাম্বার বলা হয়, যা এর অঙ্কগুলোর প্রতিটিতে এর অঙ্কের সমান ঘাতবিশিষ্ট করে এগুলোর সমষ্টির আকারে প্রকাশ করা যায়। যেমন:
১৫৩ = ১৩ + ৫৩ + ৩৩
৩৭০ = ৩৩ + ৭৩ + ০৩
৩৭১ = ৩৩ + ৭৩ + ১৩
৪০৭ = ৪৩ + ০৩ + ৭৩
৪১৫০ = ৪৪ + ১৪ + ৫৩ + ০৪
৮২০৮ = ৮৪ + ২৪ + ০৪ + ৮৪
৯৪২৪ = ৯৪ + ৪৪ + ২৪ + ৪৪
৫৪৮,৮৩৪ = ৫৬ + ৪৬ + ৮৬ + ৮৬ + ৩৬ + ৪৬
আর এ ধরনের সবচেয়ে বড় নার্সিসটিক নাম্বারটি হলো :১১৫,১৩২,২১৯,০১৮,৭৬৩,৯৯২,৫৬৩,০৯৫, ৫৪৭,৯৭৩, ৯৭১, ৫২২, ৪০১।
জানিয়ে রাখি, নার্সিসটিক নাম্বার আবার পস্নুপারফেক্ট ডিজিটাল ইনভেরিয়েন্ট (পিপিডিআই), আর্মস্ট্রং নাম্বার, প্লাস পারফেক্ট নাম্বার নামেও অভিহিত হয়।
গণিতদাদু