লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
ই-ক্যাব ও ইউআইইউর উদ্যোগে পালিত হলো ই-কমার্স দিবস
বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ই-কমার্স সম্পর্কে সচেতন করতে এবং অনলাইনে কেনাকাটাকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল প্রমবারের মতো বাংলাদেশে ই-কমার্স দিবস
উদযাপন করে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছর ই-ক্যাব ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) যৌথভাবে গত ৭ এপ্রিল ‘ই-কমার্স দিবস ২০১৬’ উদযাপন করে। এ উপলক্ষে ইউআইইউর ধানম-- ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এবারের ই-কমার্স দিবসের সেস্নাগান ছিল- ‘নিরাপদে হোক অনলাইন কেনাকাটা’। অনুষ্ঠানটি তিনটি পর্বে বিভক্ত ছিল। প্রথম পর্বে ই-কমার্স নীতি নিয়ে পলিসি ডায়ালগ, দ্বিতীয় পর্বে ই-কমার্স দিবস উদযাপন অনুষ্ঠান এবং তৃতীয় পর্বে ই-কমার্স বুটক্যাম্প। ই-কমার্স নীতির ওপর আয়োজিত পলিসি ডায়ালগ সেশনটি সঞ্চালনা করেন ডিরেক্টর (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) সেজান সামস। রেজওয়ানুল হক জামী বলেন, ‘বাংলাদেশে ইকমার্স ২০০৯ সালের পর থেকে দ্রুতগতিতে বেড়েছে, কিন্তু এখনও এ খাতে অনেক সমস্যা বিদ্যমান। ই-ক্যাবের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতকে সুসংহত করা এবং এর সমস্যাগুলো সমাধান করা। এ লক্ষ্যেই আইসিটি ডিভিশন ই-ক্যাবকে ই-কমার্স নীতি প্রস্ত্তত করার দায়িত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ১৩৫ পাতার একটি খসড়া নীতি জমা দেয়া হয়েছে।’ ই-কমার্স নীতি প্রস্ত্তত করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতেরর প্রবৃদ্ধিকে আরও সুসংহত করা; এ পলিসিতে ই-সিকিউরিটি, ডেলিভারি লজিসটিক্স, আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করা; উনড়বত পণ্য ও সেবা সরবরাহ নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর জোর দেয়া। এতে বক্তব্য রাখেন ইউআইইউর উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান, আজকের ডিল ডটকমের পরিচালক ফাহিম মাশরুর, এসএসএল ওয়্যারলেসের মহাব্যবস্থাপক আশীষ চμবর্তী, ২০১৬ সালের জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের (জেসিআই) ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট শাখাওয়াত হোসেন মামুন, আইটি কনসালট্যান্টসের (কিউ ক্যাশ) ডিরেক্টর (বিজনেস) ওসমান হায়দার, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ তানভীর আহমেদ রনি এবং ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ। দ্বিতীয় পর্বের মূল বিষয় ছিল ই-কমার্স দিবস ২০১৬ উদযাপন। ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোস্তাফা জববার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এশিয়ান-ওশেনিয়ান কমপিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) সাবেক চেয়ারম্যান ও ই-ক্যাবের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল্লাহ এইচ কাফি, ইত্তেফাক গ্রম্নপ অব পাবলিকেশন্স লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক তারিন হোসেন মঞ্জু, ২০১৬ সালের জেসিআই ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট শাখাওয়াত হোসেন মামুন, রাইট চয়েস বিডি ডটকমের চেয়ারম্যান মাহবুব এইচ মজুমদার এবং ই-ক্যাব সভাপতি রাজিব আহমেদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ই-ক্যাব পরিচালক নাছিমা আক্তার নিশা। মোস্তাফা জববার তার মূল বক্তব্যে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার যে মন্তব্য করেছিলেন তা ভুল প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের মানুষ। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে প্রথম দিকে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য এলেও বিশ্বের অনেক দেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মতো পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ডিজিটাল ভারত পরিকল্পনা নিয়েছেন। মালদ্বীপও বাংলাদেশের ডিজিটাল বাংলাদেশের অনুসরণে ডিজিটাল মালদ্বীপ গঠনের
উদ্যোগ নিয়েছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অংশই হচ্ছে ই-কমার্স। তিনি বলেন, ই-কমার্স ভবিষ্যতের বাণিজ্য এবং সে লক্ষ্যে বাংলাদেশে একটি সুসংহত ও শক্তিশালী ই-কমার্স খাত গড়ে তোলা যুগের দাবি। তিনি সরকারকে ই-কমার্স দিবসকে জাতীয় ই-কমার্স দিবস করার এবং সংবিধানে সব মানুষের ইন্টারনেট সংযোগের অধিকারকে তুলে ধরার আহবান জানান। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সে লক্ষ্য অর্জনে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ হয়েছে। আর মাথাপিছু আয় বেড়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৫০৭ টাকা। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট অর্জন। দেশের অভ্যন্তরে এখন বিশাল একটি মধ্যবিত্ত ভোক্তা সমাজ তৈরি হয়েছে এবং ই-কমার্সের মাধ্যমে এ ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, সরকার দেশব্যাপী ই-শপের আওতায় ১০ লাখ উদ্যোক্তা গড়ে তোলার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এতে একদিকে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে যেমনি ই-কমার্স ছড়িয়ে পড়বে, তেমনি অনেক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। তৃতীয় পর্বে আয়োজিত হয় ই-কমার্স বুটক্যাম্প। এ বুটক্যাম্পের আয়োজন করে ই-ক্যাব ইয়ু ফোরাম। এই বুটক্যাম্পের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল এসএসএলকমার্জ, এনএসহাট এবং আপনজন ডটকম। ই-কমার্স ব্যবসায় শুরুর দিকনির্দেশনা, ফেসবুক মার্কেটিং, ই-মেইল ও এসএমএস মার্কেটিং, এসইও’র মাধ্যমে অনলাইন সেলস বাড়ানোর কৌশল, ই-কমার্সে অনলাইন পেমেন্ট ও নিরাপত্তা নিয়ে আয়োজিত পাঁচটি সেশনে ২৫০ তরুণ উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেন ইক্যাব ইয়ু ফোরামের সভাপতি আসিফ আহনাফ, টেনথিটার সিটিও তানভীর রেজওয়ান, জেটাবাইট গেজেটসের সিটিও ওমর শরীফ, মার্কেটেভারের ফাউন্ডার ও এসইও এক্সপার্ট আল-আমিন কবির এবং এসএসএল ওয়্যারলেসের হেড অব ই-কমার্স সাকিব নাইম। আয়োজনের পরবর্তী সেশনে একটি প্যানেল আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন অ্যাকসেস-টু-ইনফরমেশনের পরিচালক (ইনোভেশন) মোহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, ই-ক্যাব উপদেষ্টা কাউন্সিলের দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও মোহাম্মদ ইকবাল জামাল, ই-ক্যাব ইয়থু ফোরামের সভাপতি আসিফ আহনাফ, এসএসএল ওয়্যারলেসের হেড অব ই-কমার্স সাকিব নাইম, কেইমুর কান্ট্রি ম্যানেজার কাজী জুলকারনাইন ইসলাম এবং ই-ক্যাব পরিচালক নাছিমা আক্তার নিশা। অনুষ্ঠান শেষে অংশ নেয়াদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়। অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল মাসিক কমপিউটার জগৎ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল হক ও ই-ক্যাব ডিরেক্টর মো: আফজাল হোসেন