লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
প্রত্যাশিত আইসিটি বাজেট এবং কতিপয় প্রস্তাব
সাংবাৎসরিক জাতীয় বজেট অত্যাসন্ন। আইসিটি খাত এই বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য খাত। এই আইসিটি খাতের বাজেট নিয়ে আমাদের প্রত্যাশার শেষ নেই। প্রতিবছর বাজেট আসার আগে আইসিটি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল ও অংশীজনেরা আইসিটি বাজেট প্রশ্নে তাদের প্রত্যাশা তুলে ধরে বিভিন্ন সুপারিশ পেশ করেন। কিন্তু সেই প্রত্যাশা খুব কম মাত্রায়ই বরাবর পূরণ হতে দেখেছি। জাতীয় আইসিটি নীতিমালায় আইসিটি খাতে জিডিপির যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেয়া আছে, তা আইসিটি বাজেটে একটি বারের মতোও পূরণ হয়নি। অজুহাত তহবিল স্বল্পতার। সে যাই হোক, আমাদের প্রত্যাশা- অন্তত এবার আইসিটি নীতিমালায় জিডিপির যে পরিমাণ আইসিটি খাতে বরাদ্দ দেয়ার কথা, তা এবারের বাজেটে পূরণের চেষ্টা চলবে আন্তরিকভাবে। কারণ, ভুললে চলবে না- আমাদের মতো স্বল্প আয়ের দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হলে আইসিটি খাতকেই করতে হবে আমাদের মোক্ষম হাতিয়ার।
আমরা লক্ষ করেছি, অন্যান্য বারের মতো এবারও আইসিটি খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল আইসিটি বাজেটে সমন্বয়ের প্রত্যাশায় বেশ কিছু বাজেট-প্রস্তাব রেখেছে। আমরা জানতে পেরেছি, এ খাতে বাজেট প্রস্তাব এসেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি), অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটর্স অব বাংলাদেশ (অ্যামটব)-এর পক্ষ থেকে। একই সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রেখেছে।
সার্বিকভাবে আইসিটি বাজেটে সমন্বয়ের জন্য যেসব প্রস্তাব এসেছে, এসবের মাঝে আছে- সাধারণ মানুষের কাছে ইন্টারনেট মডেম জনপ্রিয় করে তুলতে এর ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে। মোবাইল কোম্পানির ক্ষেত্রে করের হার কমিয়ে এনে অন্যান্য শিল্পের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। তাছাড়া পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত মোবাইল কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানি যদি ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে, সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াত দিতে হবে। টেলিযোগাযোগ শিল্পের জন্য ব্যবসায়িক ক্ষতির জের ১০ বছর পর্যন্ত বাড়াতে হবে, ব্যবসায়ের প্রসারে সিম-রিমের সাবসিডি ট্যাক্স বিয়োজনযোগ্য ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে অনুমোদন করতে হবে এবং রিম-সিম কার্ড ও কার্ডের ট্যারিফ মূল্য কমাতে হবে। ই-কমার্স সম্পর্কিত সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ০১. ই-কমার্স খাতের ওপর আরোপিত সব ধরনের কর আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত মওকুফ করতে হবে, ০২. ই-কমার্সের যাবতীয় লেনদেনের ওপর সব ধরনের ব্যাংকচার্জ ১ শতাংশের নিচে রাখতে হবে, ০৩. ই-কমার্স সংশ্লিষ্ট ট্রেড লাইসেন্স ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না এবং ০৪. শুধু অনলাইন লেনদেনের ওপর ২০২৫ সাল পর্যন্ত সব ধরনের ভ্যাট মওকুফ করতে হবে।
আর ইন্টারনেট সার্ভিস সম্পর্কিত বাজেটপূর্ব যেসব সুপারিশ এসেছে তার মধ্যে এসেছে- ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, ইন্টারনেট ইকুইপমেন্টের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, অপটিক্যাল ফাইবার, অপটিক্যাল ফাইবার বান্ডল ও ক্যাবলের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, উইন্ডিং ওয়্যার অব কপার ও ইউটিপি ক্যাবলের শুল্ক প্রত্যাহার, কো-অ্যাক্সিয়াল ক্যাবল ও অন্যান্য কো-অ্যাক্সিয়াল ইলেক্ট্রনিক কন্ডাক্টরের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার, আইএসপি সেবাকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অন্তর্ভুক্তি, কর্পোরেট কর কমানো, আইটিইএসকে মূসক অব্যাহতি দেয়া, আইসিটি শিল্পকে বাড়ি-ভাড়ার মূসক পুরোপুরি অব্যাহতি দেয়া, ইন্টারনেট শিল্পকে কর অবকাশের আওতাভুক্ত করা এবং এনটিটিএন সংযোগের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার।
আমরা লক্ষ করেছি, বিভিন্ন মহল থেকে আসা এসব সুপারিশের প্রতি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ সমর্থন আছে। মন্ত্রণালয় যেসব বাজেট প্রস্তাব রেখেছে, তাতে এসব প্রস্তাবে প্রায় সবই রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বাইরে আইসিটি শিল্পের সার্বিক উন্নয়নে কিছু আইনের সংশোধনী প্রস্তাবও রেখেছে, যা যথার্থ যৌক্তিক বলেই মনে হয়েছে।
আমরা মনে করি, এখানে উল্লিখিত বিভিন্ন মহলের বাজেটপূর্ব প্রস্তাবগুলো আসন্ন নতুন অর্থবছরের বাজেটে সমন্বিত করতে পারলে তা আমাদের আইসিটি খাতকে সমৃদ্ধিতর করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। তাই আমাদের প্রত্যাশা- বাজেট প্রণেতাদের কাছে এসব প্রস্তাব ও সুপারিশ যথাযথ গুরুত্ব পাবে।