• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > আগামী আইসিটি বাজেট ও বাজেটপূর্ব নানা প্রস্তাবনা
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মুনীর তৌসিফ
মোট লেখা:৩৩
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
আইসিটি
তথ্যসূত্র:
বাজেট ও ‍আইসিটি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
আগামী আইসিটি বাজেট ও বাজেটপূর্ব নানা প্রস্তাবনা
প্রতিটি অর্থবছর শেষে নতুন অর্থবছরের বাজেট কার্যকর হয়। এটাই স্বাভাবিক। আর নতুন অর্থবছরে বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মহল ও অংশীজনের সাথে মতবিনিময় করে তাদের মতামত বাজেটে সাধ্যমতো সমন্বিত করে থাকেন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও নিজ নিজ খাতের উন্নয়নে বাজেট প্রণয়নের আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগে তাদের সুপারিশ রাখে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ও এ থেকে ব্যতিক্রম নয়। এবারও আইসিটি মন্ত্রণালয় আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেছে। এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ আমাদের হাতে এসেছে। এছাড়া ই-কমার্স খাতের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব), ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) তাদের নিজ নিজ খাতের উন্নয়নে বাজেটপূর্ব প্রস্তাবনা ও দাবি উপস্থাপন করেছে। এসব বিষয়কে অনুষঙ্গ করেই বক্ষমাণ এই প্রতিবেদন।
অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (অ্যামটব) আসন্ন বাজেটে ইন্টারনেট-মডেমের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার চায়। ইতোমধ্যেই এরা এজন্য ভ্যাট আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। গত ২৬ এপ্রিল ঢাকায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত সম্মেলনে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে এই দাবি তুলে ধরা হয়। এই আলোচনামূলক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো: নজিবুর রহমান।
সম্মেলনে অ্যামটবের জেনারেল সেক্রেটারি টিআইএম নুরুল কবির বলেন, সাধারণ জনগণের কাছে ইন্টারনেট-মডেম জনপ্রিয় করে তুলতে হলে এর ওপর থেকে ভ্যাট তুলে দিতে হবে। এর ফলে অপারেটরদের আয় বাড়বে এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ঘটবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইন্টারনেট-মডেমের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হয়।
প্রাক-বাজেট এই আলোচনায় অ্যামটবের পক্ষ থেকে মোবাইল কোম্পানির ক্ষেত্রে করের হার কমিয়ে এনে অন্যান্য শিল্পের সাথে সামঞ্জস্য বিধানের দাবিও জানানো হয়। তাছাড়া পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত মোবাইল কোম্পানির ক্ষেত্রে কোম্পানি যদি ৩০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে, সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করের ওপর ১০ শতাংশ কর রেয়াতের প্রস্তাবও দিয়েছে এই সংগঠন। এছাড়া অ্যামটবের পক্ষ থেকে টেলিযোগাযোগ শিল্পের জন্য ব্যবসায়িক ক্ষতির জের ১০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো, ব্যবসায়ের প্রসারে সিম-রিমের সাবসিডি ট্যাক্স বিয়োজনযোগ্য ব্যবসায়িক খরচ হিসেবে অনুমোদন করা এবং রিম-সিম কার্ড ও কার্ডের ট্যারিফ মূল্য কমানোসহ একগুচ্ছ প্রস্তাব করা হয়।
আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান অ্যামটব প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, মোবাইল টাওয়ারগুলোর দিকে একটু নজর দেবেন। এগুলো জনস্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি যেনো না করে সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
এছাড়া মোবাইল অপারেটরদের কাছে যে বকেয়া রাজস্ব রয়েছে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা পরিশোধের আহবানও তিনি জানান। আলোচনায় অ্যামটবের অন্যান্য প্রতিনিধি ও এনবিআরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) দেশের ই-কমার্সের উন্নয়নে খাতভিত্তিক বেশ কিছু বাজেটপূর্ব সুপারিশ প্রকাশ করেছে। তাদের সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- ০১. ই-কমার্স খাতের ওপর আরোপিত সব ধরনের কর আগামী ২০২৫ সাল পর্যন্ত মওকুফ করতে হবে। ০২. ই-কমার্সের যাবতীয় লেনদেনের ওপর সব ধরনের ব্যাংকচার্জ ১ শতাংশের নিচে রাখতে হবে। ০৩. ই-কমার্সসংশ্লিষ্ট ট্রেড লাইসেন্স ফি ৩ হাজার টাকার বেশি করা যাবে না। ০৪. শুধু অনলাইন লেনদেনের ওপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত সব ধরনের ভ্যাট মওকুফ করতে হবে।
দেশের ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর শীর্ষ ফেডারেশন এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে ই-ক্যাব এসব সুপারিশ বাংলাদেশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। ই-ক্যাব কর্মকর্তারা মনে করেন, বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতকে এগিয়ে নিতে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন অতীব জরুরি। তাই তাদের প্রত্যাশা- উল্লিখিত এসব সুপারিশের প্রতিফলন থাকবে আগামী বাজেটে।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) বিগত দুই দশক ধরে তথ্যপ্রযুক্তিসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে্য কাজ করছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আইএসপিএবি সম্প্রতি ১১ দফা বাজেট প্রস্তাব রেখেছে।
ইন্টারনেটের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার : ইন্টারনেটের ওপর থেকে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক, যাতে সাধারণ মানুষের কাছে সুলভে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেয়া যায়।
ইন্টারনেট যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক প্রত্যাহার : ইন্টারনেট মডেম, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কমপিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারিসহ সব ধরনের ইন্টারনেট যন্ত্রপাতির ওপর বর্তমানে আরোপিত ২২.১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।
অপটিক্যাল ফাইবার, অপটিক্যাল ফাইবার বান্ডল ও ক্যাবলের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার : অপটিক্যাল ফাইবার, অপটিক্যাল ক্যাবল বান্ডল এবং ক্যাবলের ওপর শুল্ক শূন্য শতাংশ করা হোক।
উইন্ডিং ওয়্যার অব কপার ও ইউটিপির শুল্ক কমানো : উইন্ডিং ওয়্যার অব কপার এবং ইউটিপি ক্যাবলের ওপর বিদ্যমান ৫৯.১৮ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপরি প্রত্যাহার করতে হবে।
কোঅ্যাক্সিয়াল ক্যাবল ও অন্যান্য কোঅ্যাক্সিয়াল ইলেকট্রিক কন্ডাক্টরের শুল্ক কমানো : কোঅ্যাক্সিয়াল এবং অন্যান্য কোঅক্সিয়াল ইলেকট্রিক কন্ডাক্টরের ওপর থেকে বিদ্যমান ৯২.০২ শতাংশ শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।
আইএসপি সেবাকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবায় অন্তর্ভুক্তি : বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি সেবায় সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবায় (আইটিইএস) অন্তর্ভুক্ত আছে, কিন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার সেবাকে এর বাইরে রাখা হয়েছে। আইএসপি সেবাকে আইটিইএসের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো : বর্তমানে কর্পোরেট ট্যাক্স ৩৭.৫ শতাংশ। এটি একটি উচ্চহারের ট্যাক্স। আইসিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই হার কমাতে হবে।
আইটিইএসে মূসক অব্যাহতি : ১৯৯১ সালের মূসক আইনের অধীনে এসআরও ২৩৯-আইন ২০১২/৬৫৬-মূসকের যথাযথ সংশোধন করে এই খাতকে মূসক অব্যাহতি দেয়া হোক।
আইসিটি শিল্পকে বাড়িভাড়ার মূসক থেকে অব্যাহতি : ইন্টারনেট সেবা প্রদানে ব্যবহারের বাড়ি বা স্থানের ওপর আরোপিত মূসক পুরোপুরি অব্যাহতি দেয়া হোক। উল্লেখ্য, বর্তমানে এই মূসক ৯ শতাংশ হারে প্রযোজ্য।
ইন্টারনেট শিল্পের কর অবকাশ : আইসিটি শিল্প তথা ইন্টারনেটের সর্বোচ্চ বিকাশের জন্য আইএসপি প্রতিষ্ঠানকে ট্যাক্স হলিডে দিতে হবে।
এনটিটিএন সংযোগের ওপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার : ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের (এনটিটিএন) ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ হারের ভ্যাট প্রত্যাহার করে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সুপারিশ
বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় এ খাতের সংশ্লিষ্ট মহল ও অংশীজনের সাথে মতবিনিময় করেছে। পর্যালোচনা করেছে এ খাতের সার্বিক পরিস্থিতি। এসব মতবিনিময় ও পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে আইসিটি মন্ত্রণালয় আইসিটি খাতের সার্বিক অগ্রগতির স্বার্থে আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রেখেছে।
এ সুপারিশের শুরুতেই বলা হয়েছে- ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের (১৯৮৪ সালের ৩৬ নম্বর অধ্যাদেশ) ষষ্ঠ তফসিলের পার্ট-এ’র ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে। এই সংশোধনের মাধ্যমে আইটিইএসের সংজ্ঞায় বাদ পড়া বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বলা হয়েছে- ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যাংশে যেসব বিষয়কে আইটিইএস বোঝানো হয়েছে, সেগুলোর সাথে আরও ২২টি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এগুলো হলো- ০১. আইটি অবকাঠামো পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ; ০২. সার্ভার ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ; ০৩. হার্ডওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ; ০৪. ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবহারকারীদের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের ডেভেলপ করা বা ওপেনসোর্স করা সফটওয়্যার; ০৫. বাংলাদেশে নিবন্ধিত স্থানীয় কোম্পানির মাধ্যমে অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন; ০৬. সাইবার সিকিউরিটি সার্ভিস; ০৭. আইটি প্রশিক্ষণ; ০৮. ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা; ০৯, আইটি পরামর্শসেবা বা কনসালট্যান্সি; ১০. আইটি প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বা পরামর্শসেবা; ১১. আইএসপি’র সেবা; ১২. ফিন্যান্স ও অ্যাকাউন্টিং আউটসোর্সিং; ১৩. এইচআর আউটসোর্সিং; ১৪. লিগ্যাল প্রসেস আউটসোর্সিং; ১৫. সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট আউটসোর্সিং; ১৬. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট; ১৭. অ্যানালাইটিকস; ১৮. আইটি হেলফ ডেস্ক; ১৯. ডাটা সিকিউরিটি ও বিগডাটা ম্যানেজমেন্ট; ২০. ই-হেলথ; ২১. রোবটিকস প্রসেস আউটসোর্সিং এবং ২২. আইটি ম্যানেজমেন্ট ও সার্ভিস আউটসোর্সিং।
উল্লেখ্য, বর্তমানে বিদ্যমান আইনের ব্যাখ্যা মতে- আইটিইএস বলতে বোঝায়- ডিজটাল কনটেন্ট ডেভেলপন্টে ও ম্যানেজমেন্ট, অ্যানিমেশন (টুডি ও থ্রিডি), (জিআইএস), আইটি সহায়তা ও সফটওয়্যার রক্ষণাবেক্ষণ সেবা, বিপিও, ডাটা এন্ট্রি, ডাটা প্রসেসিং, কলসেন্টার, গ্রাফিক্স ডিজাইন (ডিজিটাল সার্ভিসেস), সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ওয়েব লিস্টিং, ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং, ডকুমেন্ট কনভার্সন, ইমেজিং ও আর্কাইভিং।
প্রস্তাবিত এই সংশোধনীর পক্ষে যৌক্তিকতা তুলে ধরে বলা হয়- আইটিএসের বর্তমান সংজ্ঞায় বর্ণিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ পড়ায় এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সেবার বিপরীতে প্রযোজ্য ভ্যাট বা অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবা কোম্পানিগুলোর আইটিইএসের বর্তমান সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দ্বিতীয় প্রস্তাব হচ্ছে- এসআরও নম্বর-২১৭-আইন/২০১৫/৭৩৬-মূসক সংশোধন। এই সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে- সব ধরনের ডাটাবেজ সফটওয়্যার, অ্যান্টিভাইরাস ও অপারেটিং সিস্টেমকে এইচএস কোড ৮৫২.২৯.১২, ৮৫২৩.৪৯.২১-এর অধীন বিবেচনা করা উচিত। সে ক্ষেত্রে ডাটাবেজ, অপারেটিং সিস্টেম এবং ডেভেলপিং টুলস ও অন্যান্য কমপিউটার সফটওয়্যারকে সুস্পষ্টভাবে নিমণরূপ উল্লেখ/ব্যাখ্যা প্রয়োজন।
ক. ডাটাবেজ সফটওয়্যার বলতে বোঝাবে- অ্যাক্সেস (জেট, এমএসডিই), অ্যাডাবাস ডি, অ্যাডাপটিভ সার্ভার অ্যানিহয়ার, অ্যাডাপটিভ সার্ভার এন্টারপ্রাইজ, অ্যাডভান্টেজ ডাটাবেজ সার্ভার, ডাটাকম, ডিবি২ এভরিপ্লেস, ফাইলমেকার, আইডিএমএস, ইনগ্রেস টু, ইন্টারবেজ, মাইএসকিউএল, ননস্টপ এসকিউএল, পারভেসিভ এসকিউএল ২০০০ (বিট্রিভ), পারভেসিভ এসকিউএল ওয়ার্কগ্রম্নপ, প্রগ্রেস, কোয়াডবেজ এসকিউএল সার্ভার, আর বেজ, আরডিবি, রেড ব্রিক, এসকিউএল সার্ভার, এসকিউএল বেজ, সুপ্রা, টেরাডাটা, ইয়ার্ড এসকিউএল, টাইমসটেন, অ্যাডাবাস, মডেল ২০৪, ইউনিডাটা, ইউনিভার্স, ক্যাশে, ক্লাউড স্কোপ, ডিবি২, ইনফরমিক্স ডায়নামিক সার্ভার ২০০০, ইনফরমিক্স এক্সটেনেডেড প্যারালাল সার্ভার, ওরাকল লাইট, ওরাকল ৮১, পয়েন্টবেজ এমবেডেড, পয়েন্টবেজ মোবাইল, পয়েন্টবেজ নেটওয়ার্ক সার্ভার, পোস্টগ্রি এসকিউএল, ইউনি এসকিউএল, জেসমিন টু, অবজেক্ট স্টোর, অবজেকটিভিটি ডিবি, পয়েট অবজেক্ট সার্ভার স্যুট, ভারসেন্ট, রাইমা ডাটাবেজ ম্যানেজার, ভেলোসিস ডিবি লিনআক্স, ডিবি স্টার, আইএমএস ডিবিসহ অন্যান্য ডাটাবেজ সফটওয়্যার।
খ. অপারেটিং সিস্টেম বলতে বুঝাবে- উইন্ডোজ/ম্যাক ওএস/ রেডহ্যাট লিনআক্সের সব ভার্সন এবং অন্য সব অপারেটিং সিস্টেম।
গ. বাজারে প্রচলিত সব অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার।
ঘ. আইটি/আইটিইএসসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ে অস্পষ্টতা দেখা দিলে তা দূর করতে কমপিউটার কাউন্সিলের মতামত নেয়া হবে।
এই সংশোধনীর যৌক্তিকতা সম্পর্কে বলা হয়, সফটওয়্যার ও টুল বিপত্তির মুখে পড়েছে, তা দূর করতেই এই সংশোধনী প্রয়োজন।
আইসিটি মন্ত্রণালয়ের তৃতীয় প্রস্তাব হচ্ছে ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ সংশোধন। প্রস্তাবে বলা হয়- সরকার ঘোষিত আয়কর অব্যাহতি সুবিধা যাতে সফটওয়্যার ও আইটি কোম্পানিগুলো পেতে পারে জেন্য ১৯৮৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশের ৫২ ধারার ৩-এ নিচে বর্ণিত একটি নতুন অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে সরকারের ঘোষিত আয়কর অব্যাহতির প্রশাসনিক বাস্তবায়ন করা যেতে পারে- ‘আয় সংক্রান্ত নীতিমালার ষষ্ঠ তফসিলের ৩৩ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সফটওয়্যার ও আইটিইএস আয়করমুক্ত হওয়ায় উক্ত ধারায় বর্ণিত পণ্য বা সেবাগুলোর জন্য অগ্রিম আয়কর কর্তন প্রযোজ্য হবে না এবং এর জন্য কোনো ধরনের প্রত্যয়নপত্র প্রয়োজন হবে না।’
এই সংশোধনীর যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রস্তাবে বলা হয়েছে- আয়কর সংক্রান্ত নীতিমালার ষষ্ঠ তফসিলের অনুচ্ছেদ ৩৩ অনুযায়ী সফটওয়্যার ও আইটিইএস আয়কমুক্ত হলেও বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ও আইটিইএসের আয়কে সাপ্লায়ার/কন্ট্রাক্টর/ প্রফেশনাল সার্ভিস হিসেবে বিবেচনা করে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) হিসেবে কর্তন করে থাকে, যা কখনও ফেরত পাওয়া যায় না। এর ফলে সরকার ঘোষিত আয়কর অব্যাহতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া শুধু সফটওয়্যার ও আইটিইএস কোম্পানিগুলোর জন্য আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুবিধার্থে একটি পৃথক আয়কর মেলা আয়োজন করা যেতে পারে, যেখানে সব রিটার্ন দাখিলকারী আইটি কোম্পানিকে ‘আয়কর অব্যাহতির সনদ’ দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
চতুর্থ প্রস্তাব হচ্ছে- কর ও ভ্যাট অব্যাহতি দিতে হবে শুধু অফিস স্পেস রেন্টের ওপর। এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়- একটি আইটি/বিপিও কোম্পানির ওপর স্পেসের ওপর কর ও ভ্যাট ওভারহেড কস্ট বাড়িয়ে তুলে। এর ফলে বিদেশি গ্রাহক আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী প্রতিযোগীর সাথে আমরা টিকে থাকতে পারি না। এছাড়া রফতানিনীতি ২০১৫-১৮-এর ৩.৩ অনুচ্ছেদে সফটওয়্যার ও আইটিইএস, আইসিটি পণ্যগুলোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এসব খাতের উন্নয়নে তৈরি পোশাকসহ কয়েকটি খাতের জন্য জায়গা ভাড়ার ওপর ট্যাক্স ও ভ্যাট ইতোমধ্যেই প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে বলেছে- ইন্টারনেট মডেম, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কমপিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারিসহ সব ইন্টারনেট ইকুইপমেন্টের ওপর বর্তমানে আরোপিত ২২.১৬ শতাংশ ভ্যাট ও শুল্ক প্রত্যাহার করে শূন্য শতাংশ করা যেতে পারে। কারণ- ইন্টারনেট সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে নেটওয়ার্ক ইকুইপমেন্টের প্রয়োজন হয়। নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা ও সুলভ মূল্য আইসিটি খাতের উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার। ইন্টারনেট যন্ত্রপাতি যেমন- মডেম, ইথারনেট ইন্টারফেস কার্ড, কমপিউটার নেটওয়ার্ক সুইচ, হাব, রাউটার, সার্ভার ব্যাটারির ওপর বর্তমানে ২২.১৬ শতাংশ হারে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপিত রয়েছে, যা এ শিল্পের প্রসারের পথে একটি বড় বাধা।
আইসিটি মন্ত্রণালয় এছাড়া আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে আরও ১৬টি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখেছে। একটি প্রস্তাবে বলা হয়- ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানির বিনিয়োগ করা অর্থের লভ্যাংশের ওপর দুইবার কর কর্তনের (ডাবল ট্যাক্সেশনের) পরিবর্তে শুধু একবার আয়কর দেয়ার বিধান রাখা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশের ওপর প্রযোজ্য আয়কর একবার দেয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। এ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হচ্ছে- ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি সাধারণত বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তা স্টার্টআপ ও সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ করে। নির্দিষ্ট সময় পরে বিনিয়োগ করা অর্থে যে লভ্যাংশ অর্জিত হয়, তা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিকে ফেরত দেয়া হয়। এ সময় লভ্যাংশের ওপর আয়কর আরোপ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি যখন মূল বিনিয়োগকারীকে লভ্যাংশসহ অর্থ ফেরত দেয়, তখন আরও একবার আয়কর দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে দুবার কর আরোপের ফলে বিনিয়োগকারীদের অর্থ কমে যায়। তাই ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিতে কেউ বিনিয়োগে আগ্রহী হয় না।
বিভিন্ন সফটওয়্যার কোম্পানি তাদের প্রয়োজনে ই-ডেলিভারির মাধ্যমে সফটওয়্যার আমদানি ডেলিভারি করে থাকে। এ ব্যাপারে প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সফটওয়্যার আমদানির ছাড়পত্র নিতে হতো, যা বর্তমানে বেসিস দিয়ে থাকে। এরপর প্রতিবার আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক নির্ধারণের জন্য কাস্টম হাউস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে থাকে। এতে প্রচুর সময়ক্ষেপণ হয়। তাই আইসিটি মন্ত্রণালয় প্রস্তাব করেছে- ই-ডেলিভারির মাধ্যমে সফটওয়্যার আমদানির ওপর প্রযোজ্য শুল্ক আদায়ের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে প্রতিবার আলাদভাবে পত্র জারির পরিবর্তে শুল্কহার ধার্য করে কাস্টমসকে ক্ষমতা দিলে বিষয়টি সদস্য কোম্পানির জন্য অনেক সহজতর হবে। যথেষ্ট সময়ও সাশ্রয় হবে।
মন্ত্রণালয় আরেকটি প্রস্তাবে বলেছে- গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ব্যক্তি পর্যায়ের আয়কর ৫ শতাংশ হারে নির্ধারণ করা যেতে পারে। এতে গবেষণা ও উন্নয়ন কাজে আগ্রহ বাড়বে, যা দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে অবদান রাখবে। মন্ত্রণালয় চায়- গবেষণা ও উন্নয়নের কাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদির আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ করা হোক। এতে গবেষণার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে।
ই-কমার্স খাত প্রশ্নে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব হচ্ছে, বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজার ত্বরান্বিত করার সার্থে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই খাতকে করমুক্ত রাখতে হবে। ই-কমার্স লেনদেনের ক্ষেত্রে সব ধরনের ব্যাংকচার্জ ১ শতাংশের নিচে রাখতে হবে। ই-কমার্স ট্রেড লাইসেন্সের লাইসেন্স ফি ৩ হাজার টাকার বেশি হবে না। ২০২৫ সাল পর্যন্ত অনলাইন লেনদেন ভ্যাটমুক্ত রাখতে হবে।
আইসিটি মন্ত্রণালয় মনে করে, ফাইবার অপটিক ক্যাবলের ওপর আরোপিত ভ্যাট ও শুল্ক সর্বনিমণ রাখা প্রয়োজন। অপটিক্যাল ফাইবার, অপটিক্যাল ফাইবার বান্ডল ও ক্যাবলের ওপর থেকে শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, ইন্টারনেট সংযোগ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মূল উপকরণ ফাইবার অপটিক ক্যাবল। এর ওপর বর্তমানে ৩৭.৮৩ শতাংশ হারে শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়। এর ফলে আশানুরূপ সুলভে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
মন্ত্রণালয় ইন্টানেটের ওপর থেকে বর্তমানের ১৫ শতাংশ ভ্যাটহার আরও কমিয়ে ৪.৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রেখেছে। মন্ত্রণালয় মনে করে, গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছ দেয়ার জন্য ইন্টারনেটের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার জরুরি। সবস্তরে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যমান ভ্যাট একটি বাধা হিসেবে কাজ করছে।
উইন্ডিং ওয়্যার অব কপার এবং ইউটিপি ক্যাবলের ওপর কর কমানোর প্রস্তাবও করেছে এই মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবে বলা হয়েছে- উল্লিখিত পণ্যের ওপর আরোপিত ৫৯.১৮ শতাংশ হারের ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ, এই শুল্কারোপ ইন্টারনেট প্রসারের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। প্রস্তাব রয়েছে কো-অ্যাক্সিয়াল ক্যাবল ও অন্যান্য কো-অ্যাক্সিয়াল ইলেকট্রিক কন্ডাক্টরের ওপর থেকে বর্তমানে বিদ্যমান ৯০.০২ শতাংশ হারের ভ্যাট ও শুল্ক পুরোপরি প্রত্যাহার করতে হবে। এই শুল্কারোপও ইন্টারনেট প্রসারের পথে একটি বাধা।
অপর এক প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯৯১ সালের মূসক আইনের অধীনে জারি করা এসআরও ২৩৯-আইন ২০১২/৬৫৬-মূসকের যথাযথ সংশোধনী এনে এই খাতকে মূসক অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর সেবাকে আয়কর অব্যাহতি দেয়া হলেও মূসক অব্যাহতি দেয়া হয়নি। ন্যায়ানুগ আচরণের স্বার্থে এই সেবাকে মূসক অব্যাহতি দেয়া প্রয়োজন।
ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নেটওয়ার্ক সংযোগের ক্ষেত্রে আইএসপিদের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করে থাকে। এই ভ্যাট প্রত্যাহার করে গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। কেননা, এটিও গ্রাহক পর্যায়ে সুলভে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে কাজ করছে।
মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আইসিটি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কর্পোরেট ট্যাক্সের বর্তমান ৩৭.৫০ শতাংশ উচ্চহার কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা প্রয়োজন। বিদ্যমান উচ্চহারের কর্পোরেট ট্যাক্স ব্যবসায় প্রসারে বাধা হিসেবে কাজ করছে


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস