লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
কে এম আলী রেজা
মোট লেখা:১৫৩
লেখা সম্পর্কিত
উইন্ডোজ নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেমে নতুন যা থাকছে
উইন্ডোজ সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমের কদর আগের যেকোনো তুলনায় এখন অনেক বেশি। এর ব্যবহারও ক্রমেই বাড়ছে। উইন্ডোজ সার্ভার ১২-এর সামনের দিনে আর যেসব সার্ভার ভার্সন বাজারে আসছে, তাতে আরও চমকপ্রদ বিশেষ নেটওয়ার্কিং ফিচার যুক্ত হতে যাচ্ছে। এ ধরনের কয়েকটি ফিচার এ লেখায় আলোচনা করা হয়েছে।
ক. নেটওয়ার্ক কন্ট্রোলারের সাহায্যে ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কিং : জটিল প্রকৃতির ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক তৈরির জন্য সার্ভার প্লাটফর্মের বেশ কিছু সক্ষমতা যুক্ত করা হয়েছে। এতে সার্ভিস প্রোভাইডারেরা তাদের নিজস্ব ক্লাউড সার্ভিস তৈরি করতে পারবে। কিন্তু কনফিগারেশন পদ্ধতি বেশ জটিল এবং কাজটি করতে হয় PowerShell-এর মাধ্যমে। সার্ভারের এ কাজটি এখন করা যাচ্ছে Network Controller-এর মাধ্যমে। সার্ভারের Network Controller ফিচার ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল উভয় ধরনের নেটওয়ার্ক কনফিগারেশনের কাজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া এটি নেটওয়ার্ক এনভায়রনমেন্টের অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারে।
আপনি দেখতে পাবেন Windows Server Technical Preview-এর আওতাধীন Network Controller সার্ভার রোলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক, ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ক এবং নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস।
খ. আইডেন্টিটি এবং অ্যাক্সেস ম্যানেজমেন্ট : বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত ইউজারদের ওপর উইন্ডোজ সার্ভারের অধিকতর নিয়ন্ত্রণ এ ব্যবস্থায় কিন্তু থাকছে। বিভিন্ন রিসোর্সে ইউজারের সময়ভিত্তিক অ্যাক্সেসের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এটি তৈরি করা হবে পাওয়ার শেলের জেইএ (JEAÑJust Enough Admin) ফিচারকে ভিত্তি করে। জেইএ এমন একটি ফিচার, যা অ্যাডমিনিস্ট্রেটরকে সুনির্দিষ্ট কিছু পাওয়ারশেল কমান্ডলেটস, সুনির্দিষ্ট মডিউল বা কমান্ডলেটের মধ্যে কিছু প্যারামিটারে অ্যাক্সেস ক্ষমতা সীমিত করে দিতে পারে। তদুপরি জেইএ কনফিগার করা হয় সার্ভারে একটি স্থানীয় অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে। এতে সার্ভারে নেটওয়ার্ক পর্যায়ে অনুমোদনের কোনো তথ্য জমা থাকে না, যা ব্যবহার করে অন্য ইউজারেরা কোনো সুবিধা নেবে।
গ. মাল্টিপয়েন্ট সার্ভিসেস : রিমোট ডেস্কটপ সার্ভিসের সহযোগে মাল্টিপয়েন্ট সার্ভিসেস ফিচারটি একাধিক ইউজারকে একই সময়ে একই কমপিউটারে অ্যাক্সেসের সুবিধা দেয়। এ প্রক্রিয়ায় কোনো থিন ক্লায়েন্ট বা অতিরিক্ত কোনো হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন হয় না। স্ট্যান্ডার্ড ইউএসবি এবং ভিডিও ডিভাইস ব্যবহার করে মাল্টিপয়েন্ট সার্ভিস ক্লায়েন্ট সরাসরি সার্ভারে যুক্ত হতে পারে। এই ফাংশনটি মূলত উইন্ডোজ মাল্টিপয়েন্ট সার্ভার ২০১২ হিসেবে বাজারে এসেছিল। এর প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের কমপিউটার ডিসপ্লেতে যা দেখানো হবে, তা যেন শ্রেণীশিক্ষক সহজেই ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ঘ. ডিএনএস পলিসিজ : টেকনিক্যাল রিভিউ বা অন্য কোনো আলোচনায় এ ফিচারটি এখনও উঠে আসেনি। তবে মাইক্রোসফট ঘোষিত উইন্ডোজ সার্ভারের ডিএনএস পলিসি (DNS Policies) ব্যবহার করে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ডিএনএস সার্ভারকে এমনভাবে কনফিগার করতে পারবেন, যাতে নির্দিষ্ট থাকবে সার্ভার কখন এবং কীভাবে ক্লায়েন্ট কমপিউটার থেকে প্রাপ্ত অনুরোধে সাড়া দেবে। মাইক্রোসফট বলছে ডিএনএস সার্ভার সাড়া দেয়ার বিষয়টি অর্থাৎ রেসপন্স মেকানিজম যার ওপর ভিত্তি করে কনফিগার করা যেতে পারে, তা হচ্ছে সময় এবং ডিএনএস ক্লায়েন্টের পাবলিক আইপি, যেখান থেকে অনুরোধ পাঠানো হয়। এর বাইরেও কিছু প্যারামিটার ভিত্তি করে ডিএনএস সার্ভারের রেসপন্স ম্যাকানিজম আপনি কনফিগার করতে সক্ষম হবেন। সার্ভারের এ ধরনের কনফিগারেশন কিছু ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর প্রমাণ হতে পারে। যেমন- ক্লায়েন্টের মধ্যে রোড ব্যালান্সিং অথবা ক্লায়েন্টের ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থাৎ কোনো বিশেষ এলাকা বা জোনের কমপিউটার অন্যান্য এলাকার কমপিউটার থেকে সার্ভার রেসপন্সের বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে। এ ফিচারটির কাছাকাছি একটি ফিচার এখন বিদ্যমান রয়েছে, তাহলো উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এর পলিসিভিত্তিক ডিএইচসিপি ফাংশন।
ঙ. আইপি অ্যাড্রেস ম্যানেজমেন্ট : আইপ্যাম বা আইপি অ্যাড্রেস ম্যানেজমেন্ট উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ সালে চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ডিএইচসিপি এবং ডিএনএস সার্ভিস ব্যবস্থাপনা এবং মনিটরিংয়ের কাজগুলো সহজে ও সূচারুভাবে সম্পন্ন করা যায়। এর মূল ফোকাস হচ্ছে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ (রিলিজ ২)-এর ডিএইচসিপি এবং আইপি অ্যাড্রেস স্পেস। উইন্ডোজ সার্ভার টেকনিক্যাল প্রিভিউ ডিএনএস সার্ভার এবং আইপি অ্যাড্রেস স্পেসের বিদ্যমান ফাংশনালিটিকে আরও অনেক সমৃদ্ধ করেছে। পাশাপাশি এটি অ্যাকটিভ ডিরেক্টরি এবং ফাইল-ব্যাকড ডিএনএস সার্ভারে ডিএনএস জোন এবং রিসোর্স রেকর্ড ব্যবস্থাপনার অনুমোদন দেয়।
চ. ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন প্রক্সি : এটি সর্বপ্রথম উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ (রিলিজ ২)-এ কোর উইন্ডোজ সার্ভিস হিসেবে যুক্ত হয় এবং রিভার্স প্রক্সি হিসেবে কাজ করতে থাকে। এ ফিচারটি কর্পোরেট নেটওয়ার্কের অভ্যন্তরে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে বাইরের ক্লায়েন্টকে অ্যাক্সেস সুবিধা দেয়। উইন্ডোজ সার্ভার টেকনিক্যাল প্রিভিউ এ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, এটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন প্রক্সিতে নতুন সক্ষমতা যুক্ত করবে। এটি এইচটিটিপি এবং এইচটিটিপিএসভিত্তিক ওয়েবসাইট রিডাইরেকশনের কাজ ক্লেইমভিত্তিক বা ইন্টিগ্রেটেড উইন্ডোজ অথেনটিকেশনের জন্য অতিরিক্ত সাপোর্ট দিতে পারবে।
ছ. উইন্ডোজ সার্ভার নেক্সট : উইন্ডোজ সার্ভার টেকনিক্যাল প্রিভিউ আমাদেরকে উইন্ডোজভিত্তিক সার্ভার ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্তের আভাস দিচ্ছে। মাইক্রোসফট ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছে, উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২ (রিলিজ ২) হচ্ছে আমাদের প্রাইভেট ক্লাউডভিত্তিক নেটওয়ার্কিংয়ের ভিত্তি। এ প্রেক্ষেতে উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এ যেসব প্রধান ফিচার যুক্ত করা হচ্ছে বা বিদ্যমান ফিচারের কর্মক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, তা হচ্ছে হাইপার-ভি, স্টোরেজ স্পেস, আইপি অ্যাড্রেস ব্যবস্থাপনা এবং মাল্টিটেন্যান্ট সাইট-টু-সাইট ভিপিএন ইত্যাদি। সার্ভারের এসব উন্নত ফিচারগুলো বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অটোমেশন ও দক্ষতা বাড়াতে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। নেটওয়ার্কিংয়ের জগতে মাইক্রোসফটের বৃহত্তম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উইন্ডোজ সার্ভার টেকনিক্যাল প্রিভিউ নিঃসন্দেহে প্রাথমিক ধাপ বা উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এখানে এর যেসব গুরুত্বপূর্ণ ফিচার নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, তা আমাদের অনেকের কাছেই নতুন। তবে এসব নতুন ফিচার প্রাইভেট ক্লাউডভিত্তিক নেটওয়ার্কিং বা কমপিউটিং সিস্টেম তৈরি ও ব্যবস্থাপনায় যে নতুন যুগের সূচনা করবে, সে বিষয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com