• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > মোবাইল ফোনের সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ৪জি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: জাভেদ চৌধুরী
মোট লেখা:১৪
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১০ - সেপ্টেম্বর
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
মোবাইল
তথ্যসূত্র:
মোবাইলপ্রযুক্তি
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
মোবাইল ফোনের সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা ৪জি
এক সময় মোবাইল ফোন মানেই শুধু কথা বলার যন্ত্র ছিল। মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন বহুমাত্রিক। শুধু কথা বলার কাজেই এখন একে আর ব্যবহার করা হয় না। এটি অফিস ও ব্যবসায়ের কাজের পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও বলা যায়, মোবাইল সেট ফ্যাশন, রুচি ও ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশও বটে। ইদানীং ধীরে ধীরে কমপিউটিংয়ের কাজকর্মও মোবাইল ফোনে করা যাচ্ছে। যেমন ওয়ার্ড প্রসেসিং, ইন্টারনেট ই-মেইল লেনদেন ইত্যাদি এখন অনেক কম দামের মোবাইল ফোনেই করা যাচ্ছে। সেই সাথে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কেরও উন্নতি ঘটছে। জিএসএম, জিপিআরএস পেরিয়ে মোবাইল ফোন প্রযুক্তি এখন ৪জি নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

মোবাইলপ্রযুক্তি বিভাগের এই সংখ্যায় আলোচনা করা হয়েছে ৪জি প্রযুক্তি সম্পর্কে। ৪জি বলতে আসলে চতুর্থ জেনারেশনের মোবাইল ফোন বুঝায়। এর আগে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক আরো তিনটি জেনারেশন পার করে এসেছে। তবে এর মানে এই নয়, নতুন এই জেনারেশন উদ্ভাবনের সাথে সাথেই পুরো বিশ্বে ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে। বরং বলা যেতে পারে, এই নতুন ধরনের নেটওয়ার্ক আসছে পুরো বিশ্ব রাজত্ব করতে।

৪জি-কে নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্ক না বলে নতুন একটি নেটওয়ার্কের স্ট্যান্ডার্ড বলা যেতে পারে। কারণ, পুরনো জিএসএম নেটওয়ার্ক এই নেটওয়ার্কের মূলে আছে। আগের ২জি ও ৩জি’র উত্তরসূরি হচ্ছে এ নেটওয়ার্ক। আগের প্রজন্মের সার্ভিসের বেস এখানে আমূল পরিবর্তিত হয়েছে এবং সার্ভিসের ধরনও পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে আগের প্রজন্মের ব্যাকওয়ার্ড কম্প্যাটিবিলিটি পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ এখন চালু থাকা ৪জি সাপোর্ট করে না এমন মোবাইল ফোন ৪জি নেটওয়ার্কে চলবে না। আর সেই সাথে এতে যুক্ত হয়েছে নতুন ফ্রিকোয়েন্সি ব্যান্ড।

৪জি প্রযুক্তির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জিএসএম বা ১জি প্রযুক্তির আবির্ভাব হয়েছে ১৯৮১ সালে। এটি ছিল পুরোপুরি সনাতন অ্যানালগ প্রযুক্তিভিত্তিক নেটওয়ার্ক। অ্যানালগ প্রযুক্তির বদলে ট্রান্সমিশন প্রযুক্তি ডিজিটাল করে ২জি নেটওয়ার্কের নাম দেয়া হয় ১৯৯২ সালে। এই প্রযুক্তির উত্তরসূরি হচ্ছে ৩জি, যার নাম দেয়া হয় ২০০২ সালে। ৩জি প্রযুক্তিতে যুক্ত করা হয় মাল্টিমিডিয়া সাপোর্ট। মাল্টিমিডিয়া সাপোর্টের পাশাপাশি এর স্পেকট্রাম বা ফ্রিকোয়েন্সিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা আগের তুলনায় বেশি তথ্য ধারণ করতে পারে।

৪জি প্রযুক্তি মূলত আইপিভিত্তিক এক ধরনের নেটওয়ার্ক। এখানে প্রত্যেক সেলের আলাদা আলাদা আইপি ও আইডেন্টিটি আছে। অনেকটা ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করা পিসির মতো। তবে এদের ব্যান্ডউইডথ আগের যেকোনো প্রজন্মের চেয়ে বেশি, তা বলাই বাহুল্য। শুধু তাই নয়, সিডিএমএভিত্তিক ওয়াইম্যাক্সের চাইতে ৪জি’র ব্যান্ডউইডথ বেশি। যার ফলে ডাটা ট্রান্সমিশন এবং রিসিভ আগের যেকোনো প্রজন্মের প্রযুক্তির চাইতে ভালোভাবে ও দ্রুতগতিতে করা সম্ভব হবে।

৪জি নেটওয়ার্কের ফিচার আইপিভি ৬ সাপোর্ট

ক্রমবর্ধমান আইপির অভাব থেকেই আইপি ভার্সন ৪-এর পর আইপি ভার্সন ৬ বা আইপিভি ৬-এর আবির্ভাব ঘটে। ৪জি প্রযুক্তি যেহেতু আইপিভিত্তিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা, সেহেতু পুরনো আইপিভি ৪-এর ওপরে ভিত্তি করে নেটওয়ার্ক তৈরি করার কোনো অর্থ হয় না। ৪জি নেটওয়ার্কের অন্যতম ফিচার হচ্ছে আইপিভি ৬।

আইপিভি ৪ থেকে আইপিভি ৬-এ যাওয়ার বিষয়টি বেশ কিছু দিন ধরে সঙ্কটময় অবস্থায় ছিল। কারণ, বাড়তে থাকা আইপিভি অ্যাড্রেসের চাহিদা ও পৃথিবীব্যপী আইপিভি ৪ প্ল্যাটফর্মে জায়গার অভাবের জন্য। আইপিভি ৪ অ্যাড্রেসের জায়গা শেষ হয়ে আসা, সারা পৃথিবীতে বাড়তে থাকা নতুন অ্যাড্রেসের চাহিদা ও সম্প্রচার নেটওয়ার্কে ছড়িয়ে পড়ার ফলে বিষয়টির জন্য সময়মতো নতুন উপায় অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। আইপিভি ৬-এ ১২৮ বিট আছে আইপিভি ৪-এ ৩২ বিটের জায়গায়। এটা একটা পরিমাপযোগ্য ইন্টারনেট প্রযুক্তি, যা পুরো বিশ্বের প্রয়োজন মেটাতে পারে। ইউএসএ, ইইউ, জাপান ও অন্যান্য দেশ এখন আইপিভি ৬ প্রয়োগ করছে। আইপিভি ৬-এর কাজ শুধু ইন্টারনেট সুবিধে পাওয়ার জন্য নয়, প্রতিরক্ষা, ই-গভর্নেন্স, অন্যান্য সরকারি জরুরি প্রকল্পেও এর প্রচুর প্রয়োজন। আইপিভি ৬-এ আইপি নিরাপত্তা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা দেয়, যার অর্থ হচ্ছে ডাটা যেখান থেকে তৈরি হয়, সেই ওয়ার্ক স্টেশন থেকে বিভিন্ন পথে যেসব ওয়ার্ক স্টেশনে যাবে, পুরোটাই নিরাপদ।

অ্যাডভান্সড অ্যান্টেনা সিস্টেম

৪জি নেটওয়ার্কিং সিস্টেমে অ্যাডভান্সড অ্যান্টেনা সিস্টেম ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় একটি অ্যান্টেনা ব্যবহার করে সিগন্যাল ধরা হয়। কিন্তু ৪জি নেটওয়ার্কে হ্যান্ডসেটে একাধিক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তিকে মিমো বলা হয়। এর ফলে ব্যান্ডউইডথ ভালো পাওয়া যায় এবং উচ্চমানের ভয়েস ট্রান্সমিশন ও রিসিভ করা সম্ভব।

সফটওয়্যার ডিফাইন্ড রেডিও

এতে ব্যবহার করা হয়েছে ওপেন ওয়্যারলেস আর্কিটেকচার নামের এক প্রযুক্তি। এর ফলে রেডিও সিগন্যালগুলোকে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আরো ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। এটাও ৪জি প্রযুক্তির একটি বৈশিষ্ট্য। এই প্রযুক্তি বর্তমানে শুধুই আমেরিকান সেনাবাহিনীতে ব্যবহার হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে ৪জি প্রযুক্তিতে দেখা যাবে।

অ্যাক্সেস স্কিম

নেটওয়ার্ক সিস্টেমের মডুলেশন ব্যবস্থার সর্বশেষ সংযোজন করা হয়েছে এই ৪জি প্রযুক্তির অ্যাক্সেস স্কিমে। এর মধ্যে আছে ৩জিপিপি লং টার্ম ইভ্যালুয়েশন ব্যবস্থা। এটিই হচ্ছে জিপিআরএস/এজ নেটওয়ার্কের সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড।

এতসব প্রযুক্তির সন্নিবেশ ঘটানো হয়েছে ৪জি প্রযুক্তির নেটওয়ার্কে। তাই বলা যায়, সিডিএমএভিত্তিক ওয়াইম্যাক্স নয়, ৪জি হতে যাচ্ছে মোবাইল ফোনের সর্বাধুনিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ অনেক দেশ তাদের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় ৪জি যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে। অবশ্য আমাদের দেশে কবে এর ব্যবহার শুরু করা যাবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ, এখন আমাদের দেশে এজ নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থায় (২.৫জি) মোবাইল ফোন চালানো হয়, যা অদূর ভবিষ্যতে ৩জি ও ওয়াইম্যাক্স নেটওয়ার্ক ব্যবস্থায় পরিবর্তিত হতে যাচ্ছে।

তবে তাই বলে মোবাইল ফোন নির্মাতারা কিন্তু বসে নেই। এরা ইতোমধ্যে ৪জি কম্প্যাটিবল মোবাইল ফোন তৈরি করা শুরু করে দিয়েছে। এমন একটি ফোন হচ্ছে স্যামসাংয়ের স্প্রিন্ট। খুব শিগগিরই আরো অনেক মোবাইল ফোন নির্মাতা তাদের ৪জি কম্প্যাটিবল হ্যান্ডসেট বাজারে আনছে।


কজ ওয়েব

ফিডব্যাক : javedcse1982@yahoo.com
পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস
অনুরূপ লেখা