• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: ভবিষ্যৎ দুনিয়া বদলে দেবে যে প্রযুক্তি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: আনোয়ার হোসেন
মোট লেখা:৭৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি
তথ্যসূত্র:
দশদিগন্ত
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: ভবিষ্যৎ দুনিয়া বদলে দেবে যে প্রযুক্তি
মিরপুর স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ক্রিকেট ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়া। টিকেটের চড়া মূল্য! বহু চেষ্টা করেও আপনি একটি টিকেট নামের সোনার হরিণের দেখা পাননি। আবার খেলা শুরুর পর টিভিতে খেলার মাঠে আপনার বন্ধুকে খেলা উপভোগ করতে দেখে আপনার আফসোস গেল আরও বেড়ে। চিমত্মার কিছু নেই। অচিরেই আপনি খেলার মাঠে না গিয়েও আপনার বন্ধুর সাথে বা যেকোনো মাঠে উপস্থিত থাকা সব দর্শকের মতো করে খেলা উপভোগ করতে পারবেন!
বিশ্বের অনেক নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ সবার হয় না। কেমন হয়- আপনি যদি আপনার ঘরে বসেই বিশ্বের নামি-দামি কোনো কোর্স করতে পারেন একেবারে ক্লাসে উপস্থিত থেকে শিক্ষা নেয়ার পুরো অভিজ্ঞতা সহকারে! আপনি হয়তো কঠিন কোনো রোগে ভুগছেন। দেশের চিকিৎসা শেষে এখন বিদেশের কোথাও চিকিৎসা সেবা নিতে চাচ্ছেন। কিন্তু চাইলেই তো আর সবার সব কিছু হয় না। কেননা, খরচের একটি ব্যাপার আছে। কেমন হয় যদি আপনার ঘরে বসেই সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথের বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো নামি চিকিৎসকের সামনে মুখোমুখি বসে তার পরামর্শ নিতে?
উপরের সবকিছু করতে পারবেন আপনার ঘরে বসে। আপনার দরকার হবে শুধু একটি চোখে পরিধান করার চশমা। এসব কিছু হতে যাচ্ছে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে- এমন ঘোষণা দিয়েছেন ফেসবুকপ্রধান মার্ক জুকারবাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের চেতনা উদ্যোগকারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনা বা অনুভবে বাস্তবতা কিংবা কল্পবাস্তবতা। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরি হয়, যাতে খুব অসম্ভব কাজকে সম্ভব করা হয়। ব্যবহারকারীকে মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে (HMD), হাতে ডাটা গ্লোভ (Data Glove) বা একটি পূর্ণাঙ্গ বডি সুইট (Body Suit) পরতে হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কোনো ধরনের শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতা দেয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে যেসব কাজ করা হতো, সেগুলো হলো- ০১. ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ, ০২. ড্রাইভিং নির্দেশনা, ০৩. ফ্লাইট সিমুলেশন, ০৪. মহাশূন্য অভিযান।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) বা কাল্পনিক বাস্তবতার অভাবনীয় অভিজ্ঞতা পেতে আপনাকে পরিধান করতে হবে এক বিশেষ ধরনের ডিভাইস, যা মাথায় বা চোখে পরিধেয় এবং আপনার মাথার নড়াচড়াকে ট্র্যাক করে সৃষ্ট ত্রিমাত্রিক জগতের সাথে আপনাকে একাত্ব করে। অর্থাৎ আপনি যেদিকেই ফিরে তাকাবেন, ত্রিমাত্রিক পরিবেশও সেভাবে ঘুরে যাবে। এতে মনে হবে আপনি ওই ত্রিমাত্রিক জগতের সাথেই মিশে গেছেন। ইদানীং এই প্রযুক্তি উপযোগী বহু গেম ও সিনেমা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।
সত্তর দশক থেকে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে বিভিন্ন চেষ্টা চললেও খুব সম্প্রতি অকুলাস রিফট (Oculus Rift) এই প্রযুক্তিকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে তারা সহজে পরিধানযোগ্য হেডসেটের (Headset) দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে ছেড়েছে। এই হেডসেট মাথায় পরে ইউএসবির মাধ্যমে পিসির সাথে সংযুক্ত করতে হয় এবং পিসির নির্দিষ্ট সফটওয়্যারের (DVI) মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক গেম বা ভিডিও চালাতে হয়। অকুলাস রিফট মাথার সামান্যতম নড়াচড়াও ট্র্যাক করে এবং ৩৬০ ডিগ্রির ত্রিমাত্রিক পরিবেশে ব্যবহারকারীকে একাত্ব করে। বর্তমানে এটির দাম রাখা হয়েছে ৫৯৯ ডলার।
২০১৪ সালের মার্চে ফেসবুক অকুলাস রিফটকে ২ বিলিয়ন ডলারে একীভূত করে প্রযুক্তিবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। তখন থেকেই নড়েচড়ে বসেন সবাই। সবাই ঠিক তখন থেকেই বুঝতে পারেন- সামনের দিনগুলো হবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির, যা নিশ্চিত করেই আর গেমের দুনিয়াতে আবদ্ধ থাকবে না।
অকুলাস রিফটকে ফেসবুকের সাথে একীভূত করার পর মার্ক জুকারবাকের কথাতেও ভবিষ্যতের দুনিয়া কেমন হবে তার একটি ধারণা পাওয়া যায়, যা লেখার শুরুতে বলা হয়েছে। ফেসবুক ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জগতে চলে এলে গুগল বসে থাকবে কেন। গুগল প্রযুক্তিপ্রেমীদের কাছে এ বিষয়ে একেবারে ভিন্নধর্মী বার্তা পাঠায়। তারা চলে আসে এমন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পণ্য নিয়ে, যা সবার নাগালের মধ্যে। গত জুনে ডেভেলপারদের সম্মেলনে গুগল ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পণ্য বাজারে নিয়ে আসে। যার নাম কার্ডবোর্ড (Cardboard)। নামের সাথে এর মিলও অনেক। এর পণ্য উপাদানগুলো খুবই সাধারণ (যেমন কার্ডবোর্ড, একটি ম্যাগনেট, একটি রাবার ব্যান্ড এবং ভ্যাল ক্রো)। ব্যাস, এসবের সমন্বয়ে যেকেউ পেতে পারেন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জগতের অভাবনীয় অভিজ্ঞতা। আর দাম মাত্র ১৯.৯৬ ডলার।
বসে নেই স্যামসাংও। তারা অকুলাস রিফটের সহায়তায় বাজারে এনেছে স্যামসাং গিয়ার ভি আর (Samsung Gear VR)। হাল্কা ওজনের এই প্লাস্টিক ডিভাইসে গ্যালাক্সি নোট ফোর ট্যাব ঢুকিয়ে থ্রিডি ইমেজ দেখতে হয়। ট্যাবটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির হার্ডওয়্যার ও ডিসপ্লে হিসেবে কাজ করে। এর দাম ৯৯ ডলার।
এদিকে মাইক্রোসফটও উঠে-পড়ে লেগেছে। আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে মাইক্রোসফট কাজ করছে হোলোলেন্স (HoloLense) প্রযুক্তি নিয়ে। একে তারা বলছে আগমেন্ট রিয়েলিটি (Augmented Reality)। মানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থেকে বেশি কিছু। হোলোলেন্স দেখতে অনেকটা সানগস্নাসের মতো। এর লেন্স ভার্চুয়াল জগতকে মিশিয়ে দেয় বাস্তব জগতের সাথে। মনে করুন, আপনি একটি খোলা মাঠে বসে আছেন হোলোলেন্স পরে, মুহূর্তেই আপনি যদি চান দেখতে পারেন একটি এফ-২২ ফাইটার বিমান মাঠের ওপর ল্যান্ড করে আছে; এমনকি আপনি চাইলে বিমানটির বিভিন্ন অংশ খুলেও দেখতে পারেন। এটাই হলো আগমেন্ট রিয়েলিটি। বাস্তবের মাঠে ভার্চুয়াল বিমান। হোলোলেন্স এখনও বাজারে আসেনি। আশা করা যাচ্ছে, ২০১৬ সালের মধ্যেই এটি বাজারে আসবে। দাম ৩০০০ ডলার মাত্র!

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস