‘গ্লোবাকম সিস্টেমস অ্যান্ড সলিউশন’ মূলত স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন টেকনোলজি কোম্পানি হিসেবে বিটিআরসির লাইসেন্স নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। এরা ভি-স্যাট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন পণ্য দেশে বাজারজাত করে যাচ্ছে। কিন্তু সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে বাংলাদেশের সংযুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ের ধারা টেকনোলজির অন্য দিকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করে। আর এরই পথ ধরে প্রতিষ্ঠানটি ভার্চুয়াল ডেস্কটপ ডিভাইস ‘এনকমপিউটিং’ নামে নতুন একটি পণ্য বাজারজাত করতে শুরু করে, যা ইতোমধ্যে সাড়া ফেলেছে। সম্প্রতি কমপিউটার জগৎ প্রতিনিধিকে একথা জানিয়েছেন গ্লোবাকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ সৈয়দ বদরুল বারী।
‘এনকমপিউটিং’ একটি প্রযুক্তিপণ্য এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি কমপিউটারকে সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করে একাধিক ব্যবহারকারীকে সম্পৃক্ত করে কাজ করা সম্ভব। সেজন্য প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য একটি মনিটর, কীবোর্ড এবং মাউস হলেই চলবে। আর প্রতিটি ক্লায়েন্ট কমপিউটার একটি এনকমপিউটিং ডিভাইসের মাধ্যমে মূল কমপিউটারের সাথে যুক্ত থাকবে। এর ফলে প্রত্যেক ক্লায়েন্ট কমপিউটারের জন্য পৃথক সিস্টেম ইউনিট কিনতে হবে না। অর্থের যেমন সাশ্রয় হবে তেমনি এতে বিদ্যুৎ-এর সাশ্রয় হবে যথেষ্ট।
গ্লোবাকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ সৈয়দ বদরুল বারী
বদরুল বারী বলেন, স্যাটেলাইট পণ্য ভি-স্যাটের বাজার ক্রমেই কমতে থাকায় আমরা ভাবি এমন একটি প্রযুক্তিপণ্য বাজারে নিয়ে আসা দরকার যা সত্যিকার অর্থে দেশের জন্য প্রয়োজন। আমাদের গবেষণায় একটি বিষয় স্পষ্ট, দেশে যেকোনো ছোট পণ্যের চাহিদা খুবই বেশি। কারণ, এটি সহজলভ্য এবং খরচ কম। আর এনকমপিউটিং হচ্ছে এধরনের একটি পণ্য, যা অর্থ সাশ্রয়ের বিষয়টির পাশাপাশি মেইনটেনেন্স খরচ থাকছে শূন্যের কোটায়। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেখানে কমপিউটারায়ন হচ্ছে অতি দ্রুত এবং ভবিষ্যতে এর প্রসার যে ব্যাপক হবে, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় এখনই। আর এক্ষেত্রে যদি এমন পণ্য বাজারজাত করা যায়, যাতে শুধু কম অর্থই ব্যয় হবে না, বরং আনুসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ও সাশ্রয় হবে।
এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের একাধিক ব্যবহারকারী একটি সিস্টেম ইউনিটের সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে, যা হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে আর্থিক বিনিয়োগের পরিমাণ ৭৫ ভাগেরও বেশি কমাতে সক্ষম হবে। লক্ষণীয়, আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এনকমপিউটিং ব্যবহার করলে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর জন্য পৃথক সিস্টেম ইউনিট ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না। সেখানে একটি এনকমপিউটিং ডিভাইসে ১-৫ ওয়াট বিদ্যুৎ খরচ করে একটি পরিপূর্ণ পিসি ব্যবহারের স্বাদ পাওয়া যাবে। ফলে বিদ্যুৎ খরচ কম হবে ৯৫ শতাংশেরেও বেশি। এরপর হলো বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়। যেমন ২০টি কমপিউটারের পণ্য আমদানি করতে যে পরিমাণ অর্থ লাগবে, সেক্ষেত্রে একটি কমপিউটার আমদানি করে বাকিগুলোর জন্য একটি করে এনকমপিউটিং ডিভাইস ব্যবহার করা গেলে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।
তিন ধরনের এনকমপিউটিং ডিভাইস রয়েছে : যেমন X-সিরিজ, L-সিরিজ ও U-সিরিজ। খুব সহজেই ইনস্টলযোগ্য এ পণ্যগুলোতে রয়েছে ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য।
একটি এক্স-সিরিজ ডিভাইসের সাহায্যে ৩-৫টি পিসি ব্যবহার করা সম্ভব। তবে যদি সার্ভার পিসিতে একাধিক পিসিআই সস্নট থাকে, তবে সেখানে একাধিক ডিভাইস ব্যবহার করে অধিক পিসিতে কাজ করা সম্ভব। এসটিপি ক্যাবলের সাহায্যে ৩০ ফুট দূরে কোনো পিসি স্থাপন করে সহজেই কাজ করা যায়। এটি ১৬ বিট কালার ডিসপেস্ন দিতে সক্ষম।
এল-সিরিজ হচ্ছে এনকমপিউটিংয়ের অন্য একটি ডিভাইস, যা সার্ভার পিসির সাথে ক্লায়েন্ট পিসিগুলো সংযুক্ত থাকবে একটি ইথারনেট ডিভাইসের মাধ্যমে। এক্স-সিরিজের মতো এতে তারের দূরত্বের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই অর্থাৎ পছন্দ অনুসারে এটি রাখা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে সার্ভার পিসির সাথে ১০০টিরও বেশি ক্লায়েন্ট পিসি সংযোগ করা যেতে পারে। এল-সিরিজের মাধ্যমে ২৪ বিটে গ্রাফিক্স ডিসপেস্ন উপভোগ করা যাবে ।
ইউ-সিরিজের ডিভাইস হোস্ট পিসির সাথে ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে যুক্ত হবে। এর পর একাধিক ইউএসবি হাব ব্যবহার করে একাধিক পিসি ব্যবহার করা সম্ভব। এতে রয়েছে সর্বোচ্চ ৬৪বিট কালার ডিসপেস্ন করার ক্ষমতা।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, একাধিক ব্যবহারকারী একটি পিসির সাথে যুক্ত হলে এর পারফরমেন্স কম হবে কি না? কোনো একটি পিসি সার্ভার হিসেবে ব্যবহার করতে হলে পিসির ক্ষমতা যে খুব বেশি হতে হবে তা নয়। তবে একাধিক ব্যবহারকারী সেটি ব্যবহার করলে ৫-১০ ভাগ পারফরমেন্স কম হতে পারে। তবে অন্যান্য দিকে যে পরিমাণ সাশ্রয় হয় তাতে এটুকু কোনো সমস্যাই নয় বলে এর ব্যবহারকারীদের মতামত। যেমন একটি কোর টু ডুয়ো প্রসেসরের পিসিতে ২-৩ গি.বা. র্যা ম ব্যবহার করলে অনায়াসে ৩০ জন কাজ করতে পারে।
এ পণ্যটি ইতোমধ্যে এ দেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এবং বেশকিছু নামীদামী প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহার করছে। এদের মধ্যে পদ্মা গ্রম্নপের নাম উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া একটি ব্যাংকও এ পণ্য ব্যবহার করছে। ব্র্যাকের সহযোগী একটি প্রতিষ্ঠান টাইগার টুর এনকমপিউটিং সম্পর্কে ইতিবাচক মন্তব্য করেছে।
সরকারের ঘোষণা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া। সেক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযুক্তিপণ্য ও বিদ্যুৎ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব পাবে- একথা নিঃসন্দেহে সত্য। এ প্রসঙ্গে ভারতের অন্ধপ্রদেশের উদাহরণ দেয়া যায়। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের সরকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে এনকমপিউটিং প্রযুক্তির সাহায্যে একাধিক শিক্ষার্থীকে কম খরচে কমপিউটার ব্যবহার করার সুযোগ করে দিয়েছে। একইভাবে একটি প্রতিষ্ঠানে ২০টি কমপিউটারের ব্যবস্থা করতে হলে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া দরকার হবে, সেক্ষেত্রে একটি এনকমপিউটিং ডিভাইসের মাধ্যমে অনেক কম টাকা খরচ করে ২০টি কমপিউটারই চালু রাখা সম্ভব। এতে অর্থের পাশাপাশি বিদ্যুতের খরচও বেশ কম হবে।
কজ ওয়েব