• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > সময়ের দাবি : ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সম্পাদক
মোট লেখা:৩১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৬ - জুন
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
সময়ের দাবি : ব্যাংক খাতের সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন
বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে সাইবার চোরদের সবচেয়ে বড় ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী হামলাটি ঘটে গত ফেব্রম্নয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে। সাইবার চোরেরা এখানেই থেমে থাকেনি। এরা এখন হামলার লক্ষ্যবস্ত্ততে পরিণত করছে বাংলাদেশের আরও অনেক ব্যাংক-প্রতিষ্ঠানকে। আমত্মঃব্যাংক ট্রান্সফার মেসেজ ও সাইবার নিরাপত্তাদাতা প্রধান গ্রম্নপটিও এ কথাই বলছে। সুইফট নামের ফিন্যান্সিয়াল ট্র্যানজেকশন সিস্টেম সম্প্রতি এর গ্রাহকদের জানিয়েছে হামলাকারীদের মোকাবেলা করার জন্য ‘অ্যালায়েন্স অ্যাক্সেস ইন্টারফেস সফটওয়্যার’ বাধ্যতামূলকভাবে ইনস্টল করতে। উল্লেখ্য, বিশ^ব্যাপী সুইফটের ১১০০ গ্রাহক ব্যাংক রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার জন্য ভাড়া করা ‘ফায়ার আই’ নামের সাইবার সিকিউরিটি গ্রম্নপ বলেছে, তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সাইবার চোরদের বাংলাদেশের অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর সাইবার হামলা কর্মকা- চলমান।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে যে আরও সাইবার হামলা ঘটার সমূহ সম্ভাবনা জোরালো হয়ে উঠেছে, তা সহজেই অনুমেয় সাম্প্রতিক আরেকটি খবর থেকে। গত ২৪ মে একটি দৈনিক তাদের খবরে জানিয়েছে, ভয়াবহ এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে রূপালী ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। খবর মতে- সিকদার শহিদুল ইসলাম নামে একটি এটিএম কার্ড ইস্যু করা হয় রূপালী ব্যাংকের নিউমার্কেট শাখা থেকে। তার ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল মাত্র ১৪ হাজার টাকা। কিন্তু ওই গ্রাহকের অজান্তে তার ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে ৫০ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে উল্লিখিত অর্থ তার ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করে উত্তোলন করা হয়। এটিএম কার্ড জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবে আত্মসাৎ করা হয়েছে রূপালী ব্যাংকের প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এত বড় আর্থিক জালিয়াতির ঘটনা ঘটলেও ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা সম্প্রতি রূপালী ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, এটিএম কার্ড জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত গ্রাহকদের বেশিরভাগ হিসাবে নামমাত্র কিছু টাকা জমা ছিল। অথচ ওইসব গ্রাহকের হিসাবে এটিএম কার্ড ব্যবহার করে সর্বনিমণ ৫০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে, যা গ্রাহকেরা জানেন না। প্রতিবেদন মতে, একটি চক্র দীর্ঘ সময় নিয়ে রূপালী ব্যাংকে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
বস্ত্তত এটিএম কার্ডের মাধ্যমে জালিয়াতি এর আগেও ঘটেছে প্রাইম ব্যাংকের এলিফ্যান্ট রোড শাখায়। এবং তা ঘটেছে গত মে মাসেই। এ জালিয়াতিতে ধরা পড়েছে এক চীনা নাগরিক। সেইন জু নামের এ চীনা নাগরিক একটি জালিয়াত চক্রের সদস্য। পুলিশ বলেছে, তার সহযোগীরা পালিয়ে গেছে। এখানেই শেষ নয়। কিছুদিন আগে আরেকটি বেসরকারি ব্যাংকেও এটিএম কার্ড জালিয়াতি হয়েছে। সেখানে বিপুল অঙ্কের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক এ সম্পর্কিত একটি গাইডলাইন ব্যাংকগুলোতে পাঠায়। কিন্তু এরপরও ব্যাংকগুলোতে এই প্রযুক্তিনির্ভর জালিয়াতির ঘটনা থামছে না। এখন ধারণা স্পষ্ট হচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাংক খাতকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করানোর লক্ষ্য নিয়ে একটি অথবা একাধিক জালিয়াত চক্র কাজ করছে। সন্দেহের অবকাশ নেই, এই জালিয়াতি চক্রের সাথে দেশী-বিদেশীরা জড়িত।
শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশে^র অন্যান্য দেশেরও এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্র সক্রিয়। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে জাপানেও বড় ধরনের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। আড়াই ঘণ্টার মধ্যে সেখানে ১৪০০ বুথ থেকে ১৫০ কোটি ইয়েন চুরি করা হয়। বিবিসি ও গার্ডিয়ানের খবর থেকে জানা যায়, জালিয়াতেরা নকল একটি এটিএম কার্ড ব্যবহার করে এই অঘটন ঘটিয়েছে। নকল এটিএম ক্রেডিট কার্ডগুলো ইস্যু করা হয়েছে সাউথ আফ্রিকান ব্যাংক থেকে।
এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনা সর্বসম্প্রতিক নয়, দুই-তিন বছর আগে ২০-২৫টি দেশ থেকে একই পদ্ধতিতে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকার মতো অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে জালিয়াত চক্র। যতই দিন যাচ্ছে, এটিএম কার্ড জালিয়াতির বিষয়টি যেন ওদের কাছে সহজতর হয়ে উঠছে। এতে বাংলাদেশসহ বিশে^র প্রায় সব দেশে এ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
বিদ্যমান এই প্রেক্ষাপটে আমাদের ব্যাংক খাতে সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তি উন্নয়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। এই উন্নয়নের বিষয়টি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। কারণ, সাইবার চোরেরা নতুন নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে এসব জালিয়াতি অব্যাহত রেখেছে। কিছুতেই যেন এদের ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই সাইবার নিরাপত্তা প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে অব্যাহতভাবে গবেষণাও চালিয়ে যেতে হবে। নইলে কিছুতেই আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। তা সম্ভব না হলে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে নেমে আসবে বিপর্যয়। গ্রাহকেরা ব্যাংকের প্রতি হারিয়ে ফেলবে আস্থা।


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৬ - জুন সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস