লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন কর্মকান্ড অবিলম্বে শুরু হোক
অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন কর্মকান্ড অবিলম্বে শুরু হোক
বিশ্বের যেকোনো দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার সার্বিক উন্নতি বহুলাংশেই নির্ভর করে সে দেশের পরিকল্পিত এবং কার্যকর ইকোনমিক জোনের সংখ্যাধিক্যের ওপর। বাংলাদেশে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি সুপরিকল্পিত ইকোনমিক জোন তথা অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক জোন গড়ে না তোলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের সঠিক অবস্থা নিরূপণ করাও সবসময় যেমন সঠিক হয়ে ওঠে না, তেমনি বিদেশীদেরকে দেশে বিনিয়োগের জন্য কার্যকরভাবে আকৃষ্ট করাও সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর ফলে অনেক সময় ব্যবসায়ীদেরকে ব্যবসায়ে ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। অথচ পরিকল্পিত অর্থনৈতিক জোন থেকে যদি ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়, তাহলে খুব সহজেই ব্যবসায়ীরা জানতে পারবেন দেশে-বিদেশে কোন পণ্যের বাজার চাহিদা কেমন, ব্যবসায়ের ধারা কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী তারা পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা করতে পারবেন, যা প্রকারান্তরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
দেশের অর্থনৈতিক জোনের গুরুত্ব অনুধাবন করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের উন্নয়ন কর্মকান্ডর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এগুলো হলো- আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোন, একে খান ইকোনমিক জোন, আমান ইকোনমিক জোন, বে ইকোনমিক জোন, মেঘনা ইকোনমিক জোন, মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন, মিরসরাই ইকোনমিক জোন, পাওয়ারপ্যাক ইকোনমিক জোন, সাবরং ট্যুরিজম পার্ক এবং শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে এই দশটি ইকোনমিক জোনের ভিত্তিপ্রস্তব স্থাপন করেন। এগুলো হবে দেশে এ ধরনের প্রথম অর্থনৈতিক জোন।
ইতোমধ্যে ২০১০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক আইন প্রণয়ন করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যা এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান এবং আর ৪ হাজার কোটি ডলারের রফতানি বাড়াবে। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় ইতোমধ্যেই ৫৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করার লক্ষে্য প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ ব্যবহারের আওতায় জোন ডেভেলপার নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি উদ্বোধন করা এই ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকর্ম শেষ হলে এবং নির্ধারিত সময়ে তা চালু হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। এর মাধ্যমে যেমন বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, তেমনি ব্যাপকভাবে বাড়বে রফতানি আয়ও। এসব রফতানি অঞ্চল গড়ে তোলায় আমরা পাব বিপুল পরিমাণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। উল্লিখিত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি আগামী দেড় দশকে অঞ্চলপ্রতি ১ বিলিয়ন ডলার করেও বিনিয়োগ করা হয়, তবে মোট বিনিয়োগ আসবে ১০০ বিলিয়ন তথা ১০ হাজার কোটি ডলার। ধরে নেয়া যায়, এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় হবে একটি বিপুল অঙ্কের অর্থ। এর মধ্যে আইসিটি অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ নিছক কম হবে না। এর ১০ শতাংশও যদি আইসিটি অবকাঠামো নির্মাণে বিনিয়োগ হয়, তবে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ আইসিটি অবকাঠামো খাতে ব্যয় হবে। সেটুকুতে ভাগ বসাতে আমরা জাতি হিসেবে কতটুকু প্রস্ত্তত, সে প্রশ্নও কিন্তু পাশাপাশি এসে যায়। আমরা যদি সেজন্য নিজেদের যথাযথভাবে প্রস্ত্তত করতে না পারি, তবে অবকাঠামো খাতের অর্থ চলে যাবে বিদেশীদের হাতে, বিশেষ করে ভারতীয়দের হাতে। তাই আইসিটি খাতের অবকাঠামোয় যাতে আমরা নিজেরা বিনিয়োগ করতে পারি, সে ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি খাতকে সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যে বিনিয়োগ হবে, তার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ বিনিয়োগ হবে আইসিটি অবকাঠামো খাতে। কারণ, আজকের দিনে শিল্প খাতের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন এক অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। চাইলেই ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন আমরা এড়িয়ে চলতে পারব না। তাই উল্লিখিত অর্থনৈতিক জোনগুলো থেকে সত্যিকারের উপকার পেতে হলে নিজেদেরকে ডিজিটালে প্রস্ত্তত করার কথাটি যেনো আমরা ভুলে না যাই। সবশেষে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে গড়ে উঠতে যাওয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো সফল বাস্তবায়নের কামনা রইল।
ফেরদৌস আহমেদ
কলাবাগান, ঢাকা
বাংলাদেশে মোবাইল ও চিপ তৈরির কারখানা স্থাপনে উৎসাহিত করা হোক
বাংলাদেশের শ্রমমূল্য বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় গার্মেন্টস শিল্পসহ বেশ কিছু শিল্প-স্থাপনা ইতোমধ্যে যেমন গড়ে উঠেছে, তেমনি উপনীত হয়েছে এক ঈর্ষণীয় অবস্থানে। এমন অবস্থানে আমরা আইসিটি, টেলিকমিউনিকেশনসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও উপনীত হতে পারি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ ও অবকাঠামোগত অবস্থার উন্নয়ন করে। যেহেতু দেশে ইতোমধ্যে টেলিকমিউনিকেশনসহ আইসিটি ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণে প্রশিক্ষেত মানবসম্পদ গড়ে উঠেছে, যারা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অবদান রাখতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম তার ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, সুইডেনের প্রতিষ্ঠান এরিকসন বাংলাদেশে স্বল্পমূল্যে মোবাইল হ্যান্ডসেট সরবরাহ করার জন্য মোবাইল ও চিপ তৈরির কারখানা খুলতে আগ্রহী। কম মূল্যে দেশের সব জনগণের হাতে আধুনিক প্রযুক্তির মানসম্পন্ন স্মার্টফোন ও উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে চান তারানা হালিম। বাংলাদেশে একটি মোবাইল কারখানা স্থাপন করে স্বল্পমূল্যের স্মার্টফোন তৈরির জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন হ্যান্ডসেট প্রস্ত্ততকারক কোম্পানির সাথে কথাও বলেছেন প্রতিমন্ত্রী। একটি প্রকল্পের আওতায় গরিব মানুষের হাতে কিস্তিতে দ্রুত স্মার্টফোন পৌঁছে দেয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে তার। তারানা হালিম আরও লিখেছেন- ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সবসময় গ্রাহক সেবা ও সন্তুষ্টির জন্য কাজ করছে। এজন্য দেশের সব জনগণের হাতে কম দামে আধুনিক প্রযুক্তির মানসম্পন্ন স্মার্টফোন ও উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে। সে লক্ষ্যে তিনি এরিকসন কোম্পানির সাথে কথা বলেছেন। তারা আমাদের দেশে মোবাইল ও চিপ তৈরির কারখানা খুলতে আগ্রহী, যেখান থেকে আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী মোবাইল ফোন উৎপাদন করতে পারবে এবং দেশের ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
যেহেতু বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আইসিটিসহ টেলিকমিউনিকেশন শিল্পসংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শ্রমমূল্য অনেক কম, তাই গার্মেন্টস শিল্পের মতো মোবাইল খাতেও শিল্পের বিকাশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে প্রচুর। এজন্য দরকার শুধু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলাসহ মধ্যস্বত্বভোগী বা কমিশনভোগীদেরকে সমূলে উৎপাটন করা। আমরা জানি, ইতোপূর্বে কমিশনভোগীদের লোলুপ দৃষ্টির কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগে প্রত্যাশিত অনেক কোম্পানি তাদের সব কার্যক্রম এ দেশ থেকে গুটিয়ে নেয়। সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এদিকে বিশেষভাবে নজর দেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
রিতা ভাদুরি
পাঠানটুলি, নারায়ণগঞ্জ