লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ইউটিউব থেকে আয়
ইউটিউব থেকে যে আয় করা যায়, এ ব্যাপারটি অনেকের কাছে অজানা। অনেকেই জানেন আয় করা যায়, কিন্তু কীভাবে তা করতে হয়, সে ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা নেই। আবার কেউ কেউ ইউটিউবে আয় করার ব্যাপারে জানেন এবং কাজের প্রস্ত্ততি নিচ্ছেন, তবে সঠিক দিক-নির্দেশনার অভাবে দোটানায় ভুগছেন। তাই এই প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি সাজানো হয়েছে ইউটিউবের আদ্যোপান্ত ও তা থেকে আয় করার খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে। সুতরাং লেখাটি ইউটিউব থেকে আয়ের ব্যাপারে গাইড হিসেবে কাজ করবে।
ইউটিউবের নাম শুনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অনলাইনে ভিডিও দেখার কথা এলে প্রথমেই মাথায় আসে ইউটিউবের কথা। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ারিং সাইট হিসেবে অন্যান্য ভিডিও শেয়ারিং সাইটের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে আছে ইউটিউব। কয়েক লাখ নিয়মিত ভিজিটর নিয়ে এই সোশ্যাল মিডিয়া সাইটটি প্রতিনিয়তই আরও নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করছে। শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এই সাইট সমাজের নানা অনিয়ম, অবক্ষয়, অপরাধ, ষড়যন্ত্র ইত্যাদি বিষয় প্রকাশ্যে সবার কাছে তুলে ধরার কাজ করে এক নবজাগরণ শুরু করেছে। টিভি মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে বিজ্ঞাপনের প্রসারের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই ইউটিউব। নানা বর্ণের-গোত্রের ভিজিটরদের আনাগোনা এই সাইটে। প্রত্যেক ভিজিটরের রয়েছে নিজস্ব পছন্দ। কেউ আসেন বিনোদিত হতে, কেউ আসেন তথ্য সংগ্রহের জন্য, কেউ আসেন অজানাকে জানতে, কেউ আসেন সচেতনতা বাড়াতে, আবার কেউ আসেন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। আমাদের এ লেখার মূল লক্ষ্য হচ্ছে কীভাবে ইউটিউবকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়।
ইউটিউব কী?
ইউটিউব হচ্ছে অনলাইনে ভিডিও শেয়ার, ভিডিও স্ট্রিমিং ও লাইভ ভিডিও দেখার ওয়েবসাইট। এখানে যেকেউ ভিডিও আপলোড করতে পারবেন বিনামূল্যে এবং সবাইকে দেখানোর জন্য উন্মুক্ত করতে পারবেন। এখানে অন্যদের আপলোড করা ভিডিওগুলো বিনা বাধায় দেখা যায় এবং কোনো মূল্য দিতে হয় না। ইউটিউবে রেজিস্ট্রেশন করে নিজের ভিডিও আপলোড করে তা অনলাইনে সংরক্ষণের পাশাপাশি প্রাইভেট করে রাখারও ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে অন্য কেউ তা দেখতে না পারে। সার্চ ইঞ্জিনের জগতে গুগলের পরেই ইউটিউব হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন। এমনকি বিং, ইয়াহু এবং আস্কের সমন্বিত রূপের চেয়েও এটি অনেক বড়। প্রতিমাসে ৩ বিলিয়ন সার্চ করা হয় ইউটিউবে।
ইউটিউবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের সান ব্রম্ননো নামের এক শহরে তিনজন প্রতিভাবান ব্যক্তির হাতে জন্ম লাভ করে ইউটিউব। ২০০৫ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিষ্ঠানটির পেছনে ছিলেন মূলত পেপ্যালের তিন সাবেক চাকরিজীবী। তারা হলেন আমেরিকান চ্যাড হার্লে, তাইওয়ানিজ স্টিভ চ্যান আর বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত জাওয়েদ করিম। হার্লে ডিজাইন বিষয়ে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া এবং স্টিভ ও জাওয়েদ একসাথে কমপিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অন ইলিনয় অ্যাট আরবানা-শ্যাম্পেইনে পড়াশোনা করেছেন। ইউটিউবের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিমের জন্ম ২৮ অক্টোবর ১৯৭৯ সাবেক পূর্ব জার্মানির মার্সেবার্গে। জাওয়েদ করিমের পিতা-মাতা ছিলেন বিজ্ঞানী। তার পিতা নাইমুল করিম ছিলেন একজন রসায়নবিদ এবং তার মা ক্রিস্টিন করিম ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার প্রাণরসায়ন (বায়োকেমিস্ট্রি) বিষয়ের অধ্যাপিকা।
জাওয়েদ করিমের মাথায় প্রথম অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্মের আইডিয়া আসে। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ২০০৪ সালে জেনেট জ্যাকসন নামের সংগীতশিল্পীর একটি ভিডিও ক্লিপ অনলাইনে অনেক খোঁজ করার পরও তা পাননি। তখন চিমত্মা করেন এমন একটি ওয়েবসাইটের, যেখানে সবাই ভিডিও শেয়ার করতে পারবে কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই। অর্থাৎ এক জায়গা থেকে কোনো ভিডিও শেয়ার করে মুহূর্তেই তা পৌঁছে দেয়া যাবে বিশ্বের প্রতিটি নেট ব্যবহারকারীর কাছে। তার আইডিয়া বাস্তবায়নে সঙ্গী হিসেবে যোগ দেন চ্যাড ও স্টিভ।
আইডিয়া ও কাজ করার জন্য তিন প্রতিভাবান বন্ধু প্রস্ত্তত। কিন্তু এই রকম বড় একটা সাইট চালাতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা তাদের কাছে ছিল না। ভাগ্যও সহায় ছিল। তাই তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল সেকুয়া ক্যাপিটাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি এ প্রজেক্টে ১১.৫ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করেছিল। Youtube.com ডোমেইনটি নিবন্ধন করা হয় ২০০৫ সালের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ১৪ ফেব্রম্নয়ারিতে। তারপর ওয়েবসাইট বানানোর কাজ শেষ হলো একই বছরের ২৩ এপ্রিলে। একই দিনে আপলোড করা হলো ইউটিবের প্রথম ভিডিও। ভিডিওটি আপলোড করেন জাওয়েদ করিম, যার শিরোনাম হচ্ছে Me At The Zoo। ইউটিউবে সার্চ দিলে এখনও এটি দেখতে পাবেন। এটি দেখা হয়েছে ৩,১৫,৯৬,৩৮৪ বার। এতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,২২,১৯৮টি মন্তব্য করা হয়েছে। লাইক পড়েছে ৪,৮২,৬৭৪টি এবং ডিলাইক করেছে ২৩,০২২ জন।
গুগলের নজর পড়ল ইউটিউবের দিকে, যা বছর না পেরোতেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ২০০৬ সালের ১৩ নভেম্বর ১.৬৫ বিলিয়ন বা ১৬৫ কোটি ডলার দিয়ে ইউটিউবের সব শেয়ার কিনে নেয় গুগল। তিন প্রতিষ্ঠাতা রাতারাতি মিলিয়নিয়ার হয়ে পড়েন। বর্তমানে ইউটিউব গুগলের অধীনে রয়েছে। ২০১০ সালের মার্চ মাস থেকে ইউটিউব সরাসরি সম্প্রচার শুরু করে। খেলাধুলা বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান এখন সরাসরি ইউটিউবে দেখা যায়।
ইউটিউব থেকে আয় কাদের জন্য?
বর্তমানে বিভিন্ন ব্লগে, ফোরামে, ফেসবুকে সহজে অনলাইনে টাকা উপার্জন করার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক লেখালেখি চলছে। এমন কিছু লেখাও পাওয়া যায়, যাতে বলা হয় রাতারাতি ফ্রিল্যান্সিং করে অনেক টাকার মালিক হয়ে গেছেন নতুন কোনো ফ্রিল্যান্সার। সকালে অ্যাকাউন্ট খুলে বিকেলের মধ্যেই অনেক ডলার আয় করেছেন। ইন্টারনেটে এরকম অনেক মিথ্যা তথ্যের ছড়াছড়ি। এসব ভুল ও বানোয়াট গল্পের কারণে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ইন্টারনেটে আয় করা খুব সহজ কাজ, এ কথা পুরোপুরি মিথ্যা। তবে ইন্টারনেট থেকে অনেক আয় করার সম্ভব, এ কথা সত্যি। ইন্টারনেটে আয় করার জন্য অনেক ধৈর্য থাকতে হয় এবং অনেক কষ্টও করতে হয়। তাহলেই এখানে অনেক আয় করা সম্ভব। যারা মনে করছেন খুব সহজে ইউটিউব থেকে আয় করা যাবে, তাদের ধারণা ভুল। ইউটিউব থেকে আয় করতে হলে থাকতে হবে মেধা, সৃজনশীলতা, যোগ্যতা, ধৈর্য, সততা ও পরিশ্রম করার মানসিকতা। তাই ইউটিউব থেকে আয় করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার সেই মনমানসিকতা, সামর্থ্য ও সাহস আছে কি না? যদি থাকে তবেই শুধু এ পথে এগোন। যদি খুব সহজে অনলাইনে আয় করতে চান, তবে ইউটিউব আপনার জন্য নয়।
ইউটিউব থেকে আয় সত্য না মিথ্যা?
ইউটিউব সম্পর্কে অনেক কিছুই তো জানা হলো। এবার আসা যাক আসল প্রসঙ্গে। ইউটিউব থেকে আয় করা কি আদৌও সম্ভব? ইউটিউব থেকে আয় করা যায় তা সত্য। কিন্তু কীভাবে তা নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন উঁকি দেয়। ভুল প্রচার এবং মিথ্যা সংবাদের কারণে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে থাকেন এবং এ থেকে অর্থ উপার্জনে ব্যর্থ হন। সঠিক ও ভুলের এই বেড়াজাল দূর করার জন্যই এ লেখা।
প্রতিনিয়ত এখানে অনেক ভিডিও আপলোড করা হয়। কেউ হয়তো নিজস্ব বা ব্যান্ডের গানের ভিডিও আপলোড করেন তো কেউ করেন কোম্পানি প্রোডাক্টের প্রমোশনাল ভিডিও। আবার কেউ আপলোড করেন মজার মজার হাস্যকর ভিডিও। আবার কেউ করেন শিক্ষণীয় ভিডিও। কিন্তু এ থেকে কীভাবে আয় করা যায়? যেহেতু সব ভিডিও বিনামূল্যেই দেখা যাচ্ছে? আসলে ভিডিও থেকে বা ভিডিও দেখার কারণে নয়। ভিডিও দেখার সময় যে বিজ্ঞাপন দেখা যায়, সেই বিজ্ঞাপনের জন্যই আসলে আয় করা সম্ভব। ইউটিউবে ভিডিও দেখার সময় লক্ষ করে থাকবেন সব ভিডিওতে বিজ্ঞাপন থাকে না। যদি কেউ তার চ্যানেলের বিজ্ঞাপন দেখানোর জন্য অনুমোদন দেয় তবেই বিজ্ঞাপন দেখানো হবে। আর সেই বিজ্ঞাপন থেকে গুগলের আয় হওয়া একটি অংশ চ্যানেলের মালিককে দেয়া হয়। এটি প্রধানত গুগল অ্যাডসেন্সের (Google AdSense) একটি অংশবিশেষ।
সহজ কথায় বলা যায়, ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে নিজের ভিডিও জনপ্রিয় করার মাধ্যমেই অর্থ উপার্জনের উপায়। অনেকের মনে প্রশ্ন আসে, ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করলে টাকা আসবে কেমন করে? আগে ইউটিউবে কোনো ঝামেলা ছাড়াই ভিডিও দেখা যেত। ভিডিওতে কোনো বিজ্ঞাপন ছিল না। কিন্তু ইউটিউবের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু হওয়ার পর থেকে ভিডিও দেখায় কিছুটা বিরক্তি আসে। কিন্তু এর ফলে অনলাইনে আয়ের এক নতুন দুয়ার উন্মুক্ত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভিডিওর নিচের অংশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখা যায়। আর এই বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারবেন। আপনার ভিডিও যত বেশি দেখা হবে, অ্যাকাউন্টে তত বেশি টাকা জমা হবে। অর্থাৎ সহজ কথায় আপনার আপলোড করা ভিডিওর যত বেশি ভিউ হবে, আয়ও তত বেশি হবে। ইউটিউবের ভিডিওতে বিজ্ঞাপনগুলো পপআপ হয়ে দেখাতে পারে, ফ্লোটিং উইন্ডো হিসেবেও আসতে পারে অথবা যে ভিডিওটি দেখতে চাচ্ছেন তার আগে একটি অ্যাড আসবে, সেটি দেখা শেষ হলে মূল ভিডিও আসবে।
ইউটিউব সম্পর্কিত কিছু প্রয়োজনীয় শব্দ
ইউটিউব থেকে আয় করার আগে ইউটিউব সম্পর্কিত কিছু শব্দের অর্থ জেনে নিতে হবে। এতে নতুনদের কাজ করতে বেশ সুবিধা হবে। সংক্ষেপে ইউটিউবের কিছু বিষয়বস্ত্ত তুলে ধরা হলো।
কমেন্টস বা মন্তব্য : ইউটিউবে পোস্ট করা ভিডিওর মান কেমন তা ভিডিওটিতে দেয়া লাইক বা ভিউয়ের সংখ্যা দেখে মোটামুটি অনুমান করা যায়। কিন্তু ইউটিউবে ভিডিওতে করা কমেন্টস বা মন্তব্যের ভিত্তিতে পুরোপুরিভাবে বোঝা যায় ভিডিওটির মান কেমন হয়েছে। ভিডিও দেখে ব্যবহারকারীরা নানা ধরনের মন্তব্য করেন। কেউ প্রশংসা করেন, কেউবা মন্দ কথাও বলেন। সবাই প্রশংসা করবেন এমনটা ভাবা উচিত নয়। তাই ঠা-া মাথায় প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর সুন্দর করে দিতে হবে, যেন পাঠক মন্তব্যটি বুঝতে পারেন এবং আবার চ্যানেলটিতে ভিডিও দেখতে আসেন। নেগিটিভ মন্তব্যগুলোতে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে যেন ভিউয়ারের ভুল ধারণাটি ভেঙে যায়। ভিডিওতে কোনো ভুল থাকলে সেটা স্বীকার করে নেয়াই ভালো। এতে ভিউয়ারদের আস্থা অর্জন করা যায়। মন্তব্য কিন্তু চ্যানেলের র্যাংরক বা জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে থাকে। তাই মন্তব্যকে লক্ষ্মী হিসেবেই ভাবতে হবে, হোক না তা ভালো কিংবা মন্দ।
ব্যাকলিঙ্ক : কথায় আছে প্রচারেই প্রসার। আপনার ভিডিও যত প্রচার পাবে, তত বেশি ভিউ পাওয়া যাবে। তাই যত বেশি সম্ভব ব্যাকলিঙ্ক তৈরি করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন ব্লগে পোস্ট, গুগল প্লাস, টুইটার ও ফেসবুকে বেশি করে ভিডিওটির লিঙ্ক শেয়ার করতে হবে। তবে এলোমেলোভাবে শেয়ার না করে বিষয়ভিত্তিক এবং কৌশলে শেয়ার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেউ যাতে লিঙ্ক শেয়ারকে স্প্যামিং না ভাবেন। এতে ইউটিউব চ্যানেলটির বিষয়ে খারাপ ধারণাও হতে পারে অনেকের। ফলে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে টার্গেট অডিয়েন্সকে লক্ষ করে অবশ্যই শেয়ার বাড়াতে হবে। তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে লিঙ্কটি।
লাইক বা ডিজলাইক : ফেসবুকের মতো ইউটিউবেও লাইক অপশন রয়েছে। ভিডিওটি পছন্দ না হলে ডিজলাইক বাটনও রয়েছে। যেকোনো ব্যবহারকারী এ অপশন দুটি ব্যবহার করতে পারেন। ভিডিও র্যানঙ্কিং অনেকাংশে লাইক ও ডিজলাইকের ওপর নির্ভর করে থাকে। যত বেশি লাইক পাওয়া যাবে, সার্চ রেজাল্টে তত আগে ভিডিও দেখার সুযোগ তৈরি হবে।
কপিরাইট : ইউটিউব কর্তৃপক্ষ কপিরাইটের ব্যাপারে বেশ কঠোর। চ্যানেলে অন্য কারও ভিডিও ডাউনলোড করে সেটা আপলোড না করাই উচিত। কেননা, কপিরাইট ভিডিও ইউটিউব পাবলিশ করতে অনুমতি দেয় না। অনেক সময় কপিরাইট জটিলতার কারণে চ্যানেলটি সাময়িকভাবে ব্লক করে দিতে পারে কর্তৃপক্ষ।
ফলস ভিউ : অনেক ইউটিউব চ্যানেলের মালিক নিজের আইডি দিয়ে বারবার ভিডিওটি প্লে করে ভিউ বৃদ্ধি করে থাকেন। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতটা বোকা নয় ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যান হতে পারে অ্যাকাউন্টটি।
কিওয়ার্ড : সার্চে ভালো ফল পেতে ভিডিও আপলোড করার আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সঠিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। কারণ, সবাই সার্চে প্রথমে সাবজেক্ট লিখেই কোনো কিছু খুঁজে থাকেন। ভিউয়ারেরা কি শব্দ ব্যবহার করে সার্চে লিখবেন তার সঠিক অনুমান করে কিওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার না করাই ভালো।
ইউটিউব থেকে আয়ের উপায়
বেশিরভাগ মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করে সম্পূর্ণ মজার খোরাক হিসেবে। কিন্তু যেসব মানুষ প্রতিনিয়ত ইউটিউব ব্যবহার করেন শুধু শখের বসে, তারা জানেনই না যে- আপনার আপলোড করা এই ভিডিওগুলো অনায়াসে হতে পারে আয়ের উৎস। খুব সহজ সাধারণ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে অনলাইনে আয়ের যেকোনো ক্ষেত্র থেকে অনেক দ্রুত আয় করা যায় ইউটিউব থেকে। শুধু জানতে হয় আয়ের সঠিক পথ। এবার দেখে নেই কী কী উপায়ে আপনি ইউটিউব থেকে আয় করতে পারবেন।
উপায়-১ : ইউটিউব মনেটাইজেশন
ইউটিউব মনেটাইজেশন থেকে আয় হচ্ছে সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। আগেই বলা হয়েছে, ইউটিউব হচ্ছে গুগলের একটি সার্ভিস বা সেবা। আবার গুগল অ্যাডসেন্স ও গুগলের। তাই ইউটিউবের ব্যাপারে গুগলের প্রাধান্য অনেক। কোনো ব্লগের জন্য গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রম্নভ করা বেশ কঠিন। কিন্তু কয়েকটি ভালোমানের ছোট ছোট ভিডিও দিয়েই একটি অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট অ্যাপ্রম্নভ করা যাবে। ভবিষ্যতে হয়তো কিছুটা কড়াকড়ি হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউটিউবে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাপ্রম্নভ করানোটা সহজ। ইউটিউব থেকে যারা আয় করেন তাদের অনেকেই লক্ষ, আবার কেউ কেউ আছেন কোটি টাকাও আয় করছেন।
ইউটিউব মনেটাইজেশনের জন্য ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে গুগল অ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। এই অ্যাডসেন্সের মাধ্যমেই ভিডিওতে অ্যাড এবং টাকা পাওয়া যাবে। ইউটিউবে লগইন করার পর বাম পাশের Channel Ackb থেকে Monetization অপশনে ক্লিক করে ডান পাশে Enable Monetization বাটন থেকে Monetization অ্যাকটিভ করে নিতে হবে। তারপর নিচের দিকে How Will Paid নামে আরেকটি অপশন পাবেন। সেখানে associate an AdSense account-এ ক্লিক করে Next-এ ক্লিক করে আপনার Gmail ID-এর মাধ্যমে লগইন করে যাবতীয় তথ্য দিলেই আপনার AdSense Request চলে যাবে। এখন ২-৩ দিনের মধ্যে আপনার AdSense Approve-এর মেইল আপনার ইনবক্সে চলে আসবে। তবে অ্যাডসেন্স এনাবল করার আগে চ্যানেলে বেশ কিছু মানসম্পন্ন নিজস্ব ভিডিও রাখা আবশ্যক।
উপায়-২ : প্রোডাক্ট রিভিউ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
প্রোডাক্ট রিভিউ ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইউটিউব থেকে আয়ের আরেকটি মাধ্যম। এতে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্টের ভিডিও রিভিউ করে সেই প্রোডাক্টের লিঙ্ক ভিডিও ডেসক্রিপশনে দিয়ে দিতে হয়। এতে ভিডিও রিভিউ দেখার পর যদি কেউ সেই লিঙ্কে ক্লিক করে ই-কমার্স সাইটে গিয়ে সেই পণ্য কেনে, তবে ভিডিও আপলোডকারী কিছুটা কমিশন পান। এ ক্ষেত্রে অনেকে অ্যামাজন, ই-বে বা অন্য কোনো অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্কের পণ্যের অ্যাফিলিয়েশন করে থাকেন। এ পদ্ধতিতে খুবই কম খরচে বা বিনা খরচে সহজেই মাস গেলে অনেক টাকা কামিয়ে নিতে পারবেন।
উপায়-৩ : ইউটিউব পার্টনার
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি ইউটিউব পার্টনার আছেন। পার্টনারেরা ভাড়ার ভিত্তিতে ভিডিও ওভারলে (Overley) করে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করেন এবং আয় ইউটিউবের সাথে ভাগাভাগি করে নেন। যারা ভিডিও ওভারলে করতে পারেন, তাদেরকে অনেক সময় বড় বড় কোম্পানি তাদের ভিডিও মার্কেটার হিসেবে চাকরির অফার করে থাকে। তারা নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের জন্য বিশেষ ভিডিও তৈরি করে অনেক টাকা উপার্জন করেন। ইউটিউব পার্টনার হওয়ার জন্য আপনার তৈরি করা চ্যানেলে বাম পাশের অপশন তেকে My Channel-এ ক্লিক করলে YouTube Channel দেখতে পাবেন। চ্যানেলটির নামের উপরে Video Manager নামে যে অপশনটি রয়েছে, তাতে ক্লিক করুন। এখন বাম পাশের চ্যানেল অপশনে ক্লিক করার পর ডানে আপনার নামের পাশে থাকা Partner থেকে মোবাইল নাম্বার দিয়ে Partner Verified করতে হবে। Partner Verified না করলে আপনার ভিডিওগুলোকে Monetized করতে পারবেন না।
উপায়-৪ : নিজস্ব পণ্য বিক্রি
মনে করুন, আপনার কাপড়ের দোকান আছে। দোকানের ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের কাপড়ের বিশেষত্ব নিয়ে আপনি কিছু ভিডিও বানাতে পারেন। অনেকটা টিভির অ্যাডের মতো করে বানানো এই ভিডিও ক্লিপগুলো ইউটিউবে আপলোড করে দিন। টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়াতে অ্যাড দেয়া বেশ ব্যয়সাধ্য ব্যাপার। ইউটিউবে বিনামূল্যেই নিজের পণ্যের মার্কেটিং করে নেয়ার বিশাল সুযোগ রয়েছে। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কতজনই বা ভিডিও দেখে আপনার পণ্য কিনবে? একটি ইউটিউব চ্যানেল জনপ্রিয় করতে পারলে তার ভিজিটরের সংখ্যা অনেক বাড়ানো সম্ভব। পণ্য কেনার আগে অনেকেরই প্রথম পছন্দ হচ্ছে ইউটিউবে সেই পণ্যের রিভিউ দেখা। তাই ভিজিটর বাড়াতে পারলে পণ্য বিক্রি নিয়ে কোনো চিমত্মা করতে হবে না।
উপায়-৫ : ভিডিও ডেসক্রিপশন লিঙ্ক বিক্রি
আপনার চ্যানেল যখন বেশ জনপ্রিয় হবে এবং অনেক ভিজিটর থাকবে, তখন আপনি ভিডিও ডেসক্রিপশন লিঙ্ক বিক্রি করতে পারবেন। মনে করুন, মোবাইল ফোন ও এক্সেসরিজ রিভিউ নিয়ে আপনার বেশ জনপ্রিয় একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। এখন এই ধরনের পণ্য যে বিক্রি করে সে আপনাকে তার দোকানের লিঙ্ক আপনার ভিডিও ডেসক্রিপশনে দেয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ অফার করতে পারে। এভাবে তার পণ্যের মার্কেটিংও হলো আর আপনার কিছু আয়ও হলো। ভালো করে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বা এসইও করতে পারলে লিঙ্ক বিক্রি করে ভালো উপার্জন করা যায়। এককালীন অথবা দীর্ঘমেয়াদী শর্তে একটা লিঙ্ক বিক্রি করতে পারেন, যা সাময়িক সময়ের জন্য বা লম্বা সময়ের জন্য আপনার ভিডিও ডেসক্রিপশনে থাকবে।
এই ধরনের আরও কিছু উপায় আছে ইউটিউব থেকে আয় করার। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো কাজ করার মানসিকতা। নিয়মিত কাজ করলে যেকোনো উপায়েই আয় করতে পারবেন। কিংবা আপনি নিজেও আরও ভালো ভালো উপায় খুঁজে পাবেন আয় করার।
ইউটিউব চ্যানেল
ইউটিউব বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট। খুব সহজে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে ভিডিও দেখা এবং নিজের ভিডিও অন্যের সাথে শেয়ার করার ব্যাপারে ইউটিউবের কোনো জুড়ি নেই। ইউটিউবের মূল পাতায় গিয়ে ভিডিও খোঁজা যায়। অনেকেই হয়তো জানেন না- ইউটিউবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর বিভিন্ন চ্যানেল। চ্যানেলগুলো ইউজারের আপলোড করা ভিডিও, প্রিয় ভিডিও, প্লেলিস্ট ইত্যাদি সব কিছুকে এক জায়গায় নিয়ে আসে। ইউটিউব চ্যানেল বানিয়ে নিলে অন্য ইউজারেরা তখন সে চ্যানেলের গ্রাহক হতে পারেন। তারপর চ্যানেল নির্মাতার নতুন ভিডিও আপলোড হলে বা তার কোনো আপডেট পোস্ট করা হলে সাথে সাথেই গ্রাহকেরা জানতে পারেন। সব বড় বড় প্রতিষ্ঠানের অনলাইন চ্যানেল রয়েছে, যেখানে তারা তাদের ভিডিও শেয়ার করে থাকেন। অনলাইনে লেখকেরা লেখালেখি বা ব্লগিং করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ওয়েব কনটেন্ট হলো টেক্সট ও ইমেজ। কিন্তু ইউটিউবের ক্ষেত্রে ওয়েব কনটেন্ট হলো ভিডিও। তাই ভিডিও আপলোড করে তার প্রচার ও প্রচারণা বাড়ানোকে বলা হয় ভিডিও ব্লগিং বা সংক্ষেপে ভস্নগিং (Vloging), ইউটিউব চ্যানেলগুলোকে বলা যায় ভস্নগ এবং যে ভিডিও আপলোড করছেন সে হচ্ছে ভস্নগার।
ইউটিউবে আয়ের জন্য যা যা লাগবে
০১. গুগল অ্যাকাউন্ট, ০২. ইউটিউব অ্যাকাউন্ট, ০৩. ইউটিউব চ্যানেল, ০৪. ভালো রেজ্যুলেশনের ভিডিও ক্যামেরা বা হাই মেগাপিক্সেল ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল ফোন, ০৫. গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট, ০৬. ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ ও ০৭. ভিডিও এডিটিং টুল।
গুগল অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
যারা কমবেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের বেশিরভাগেরই একটি জি-মেইল অ্যাকাউন্ট আছে। এই জি-মেইল অ্যাকাউন্টটিই মূলত গুগল অ্যাকাউন্ট। এই একটি অ্যাকাউন্ট দিয়ে গুগলের বিভিন্ন পণ্য যেমন- ব্লগার, ইউটিউব, গুগল প্লাস, গুগল অ্যাডসেন্স, গুগল অ্যাডওয়ার্ড, গুগল ম্যাপস, গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল ড্রাইভ, গুগল ডকস, গুগল সস্নাইডস, গুগল শিটস, গুগল ওয়ালেট, গুগল ফটোস ইত্যাদি সেবা নেয়া যায়। শুধু তাই নয়, যারা অ্যান্ড্রয়িড ফোন ব্যবহার করেন, তাদের জন্য গুগল অ্যাকাউন্ট অপরিহার্য, যদি সে গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপস বা গেম ডাউনলোড করতে চান। যারা ইয়াহু মেইল বা অন্য মেইল ব্যবহার করেন এবং জি-মেইল ব্যবহার করেন না, তারা একটি জি-মেইল বা গুগল অ্যাকাউন্ট খুলে নিন অতিসত্বর। গুগলে অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপগুলো নিচে দেয়া হলো।
০১. গুগল অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য https://accounts.google.com এই ঠিকানায় গিয়ে নিচের দিকে Create Account লেখা লিঙ্কে ক্লিক করুন।
০২. এতে গুগল অ্যাকাউন্ট খোলার ফরম আসবে। এখানে নিজের নাম, ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড, জন্ম তারিখ, মোবাইল নাম্বার এবং ই-মেইল অ্যাড্রেস (যদি অন্য কোনো মেইল অ্যাকাউন্ট খোলা থাকে, তবে তা দিতে হবে) লিখুন।
০৩. ক্যাপচা টাইপ করে প্রমাণ করুন আপনি মানুষ, মেশিন নন।
০৪. এখানে গুগলের টার্মস অব ইউজ ও প্রাইভেসি পলিসি পড়ে তাতে টিক চিহ্ন দিয়ে পরবর্তী ধাপে যান।
০৫. প্রোফাইলের জন্য নিজের একটি সুন্দর ছবি নির্বাচন করুন এবং পরবর্তী ধাপে যান।
০৬. Get Started লেখায় ক্লিক করে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট বানানোর প্রক্রিয়া সমাপ্ত করুন।
ইউটিউব অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
গুগল অ্যাকাউন্ট থাকলে ইউটিউব অ্যাকাউন্ট আর খোলা লাগবে না। ইউটিউবের মূল পাতায় গিয়ে ডানে উপরের দিকে সাইনইন নামের লিঙ্কে ক্লিক করলে গুগল অ্যাকাউন্ট পেজ আসবে। এখানে আপনার গুগল অ্যাকাউন্ট আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। এখন মূল পেজে কিছুটা পরিবর্তন দেখতে পাবেন। যেমন- উপরে হোম ও ট্রেন্ডিং অপশনের পাশে সাবস্ক্রিপশনস নামে নতুন অপশনে বাম পাশের প্যানেলে নতুন কিছু মেনু দেখতে পাবেন। এগুলো হলো সাবস্ক্রিপশনস, হিস্টোরি, ওয়াচ লেটার, লাইকড ভিডিও ও ম্যানেজ সাবস্ক্রিপশনস লিঙ্ক।
ইউটিউব চ্যানেল খোলার নিয়ম
প্রথমে ইউটিউবের ওয়েবসাইটে গিয়ে ডান পাশের উপরের কোনা থেকে সাইনইন লিঙ্কে ক্লিক করে গুগল আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। যদি বাম পাশে কোনো প্যানেল না দেখতে পান, তবে বামে উপরের দিকের ইউটিউব লোগোর পাশে তিনটি আড়াআড়ি দাগ দেয়া আইকনে (হ্যামবার্গার আইকন) ক্লিক করলে বাম পাশের প্যানেল দেখাবে। ইউটিউব চ্যানেল খোলার জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
০১. প্রথমে হোম মেনুর নিচে মাই চ্যানেল লেখায় ক্লিক করতে হবে।
০২. এতে একটি উইন্ডো আসবে, যার শিরোনাম থাকবে Set up your channel on YouTube.
০৩. এখানে আপনার ছবি ও অন্যান্য তথ্য ঠিকভাবে দেয়া আছে কি না তা চেক করে দেখুন। গুগল অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা এখানে দেখাবে। সব ঠিক থাকলে Continue বাটনে ক্লিক করুন।
০৪. এরপর পরবর্তী পেজের বামের চ্যানেলের জন্য লোগো বা আইকন সেট করতে পারবেন।
০৫. বক্সে ক্লিক করলে চ্যানেলের আইকন হিসেবে ইমেজ সিলেক্ট করার অপশন আসবে।
০৬. এখানে কমপিউটারের হার্ডডিস্ক থেকে ব্রাউজ করে ভালো দেখে একটি ছবি দিন।
০৭. এরপর ছবিটি রিসাইজ করার অপশনে প্রয়োজন মতো ক্রপ করে সেভ করে নিন।
০৮. এবার প্রোফাইল সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু লিখুন এবং সেভ করে রাখুন।
০৯. উপরের দিকে মাঝখানে Add channel art নামের নীল বাটনে ক্লিক করে একটি ছবি নির্বাচন করে তা চ্যানেল আর্ট হিসেবে সেভ করে নিন (এটি অনেকটা ফেসবুক কভার পেজের মতো)।
আপনার পছন্দমতো বিভিন্ন ছবি দিয়ে চ্যানেল আইকন ও চ্যানেল আর্ট সেট করে ইউটিউব চ্যানেলের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিন। চ্যানেল ডেসক্রিপশনের জায়গায় ভালোভাবে চ্যানেলের বর্ণনা লিখুন, যাতে সহজেই যেকেউ তা পড়ে বুঝতে পারে চ্যানেলটিতে সে কী কী দেখতে পাবে বা চ্যানেলটির উদ্দেশ্য কী?
ইউটিউবে ভিডিও আপলোড
ইউটিউব চ্যানেল তৈরি ও সাজানোর কাজ শেষ হলে আসবে ভিডিও আপলোডের পালা। ভিডিও আপলোড করার ধাপগুলো নিচে দেয়া হলো।
০১. ভিডিও আপলোড করার জন্য ইউটিউবে লগইন করা অবস্থায় ইউটিউব চ্যানেলের পেজের ডানে উপরের দিকে Upload লেখা বাটনে ক্লিক করুন।
০২. এরপর যে বক্স আসবে, সেখানে ড্র্যাগ করে ভিডিও ফাইলটি ছেড়ে দিলে বা আপলোড আইকনটি ক্লিক করে হার্ডডিস্ক থেকে ভিডিও ফাইল দেখিয়ে দিলেই তা আপলোড করা শুরু হয়ে যাবে।
০৩. ভিডিও আপলোড চলাকালে ওপরের দিকে একটি বারে আপলোডের পরিমাণ শতকরায় দেখাতে থাকবে। আপনার ইন্টারনেটের গতির ওপর নির্ভর করে যতটা সময় লাগবে, ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। এ সময় বসে না থেকে ভিডিওটির একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় নাম, বর্ণনা, ট্যাগ লেখা এবং ভিডিওটি পাবলিক-প্রাইভেট নাকি আনলিস্টেড হবে তা সিলেক্ট করুন।
০৪. ভিডিও আপলোড হওয়ার পর কিছু থাম্বনেইল ছবি জেনারেট হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। যে স্ক্রিনশটটি পছন্দ হয়, তা সিলেক্ট করে নিন। যদি কোনোটি পছন্দ না হয়, তবে ম্যানুয়ালি ভিডিও পজ করে প্রিন্ট-স্ক্রিন নিয়ে তা আপলোড করে ভিডিও থাম্বনেইল সেট করুন।
০৫. ভিডিও গুগল প্লাস ও টুইটারে শেয়ার করতে চাইলে বামে থাকা অপশন থেকে তা করতে পারবেন।
ভিডিও আপলোড করার কিছু কার্যকর টিপস
♦ নিয়মিত ভিডিও আপলোড করবেন।
♦ ট্যাগ নির্বাচন করবেন সঠিকভাবে।
♦ ভিডিও ডেসক্রিপশন যেন প্রাঞ্জল ভাষায় হয়, সেদিকে লক্ষ রাখবেন।
♦ ভিডিওর মান যেন ভালো হয়।
♦ ভিডিও যেন খুব বেশি বড় না হয়।
♦ চ্যানেলের ধরনের দিকে লক্ষ রেখে ভিডিও আপলোড করবেন।
♦ ভালো সফটওয়্যারের সাহায্যে ভিডিও এডিট করলে ভালো হয়।
♦ দর্শকের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিন।
♦ দর্শকের রুচি অনুযায়ী ভিডিও আপলোড করুন।
♦ ক্যামেরা ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
♦ সময় নিয়ে সুন্দর ও নিখুঁত করে কাজ করার চেষ্টা করুন।
ভিডিও বানানো
ভিডিও আপলোড করার আগে আপনার কাছে ইউটিউবে প্রকাশ করার উপযোগী ভিডিও থাকতে হবে। অন্য কোনো চ্যানেলে প্রকাশ পেয়েছে, ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করা ভিডিও এবং অন্য কারও কপিরাইট করা ভিডিও আপলোড করলে সেটা ইউটিউব ধরতে পারবে এবং আপনার চ্যানেলের রেপুটেশন খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই এমন ভিডিও নির্বাচন করুন, যার মধ্যে রয়েছে স্বকীয়তা বা নিজস্বতা এবং যার মাধ্যমে আপনার সৃজনশীলতা প্রকাশ পাবে। ভিডিও বানানোর জন্য লাগবে ভালোমানের ভিডিও ক্যামেরা। হাই রেজ্যুলেশনের মোবাইল ক্যামেরা দিয়েও ভিডিও বানাতে পারেন। এখন অনেক মোবাইল আছে, যা ফোর-কে (4K) রেজ্যুলেশনে ভিডিও ধারণ করতে সক্ষম। যতটা ভালোমানের ভিডিও করা সম্ভব ততটা করার চেষ্টা করুন। যদি টিউটরিয়াল ধাঁচের ভিডিও বানাতে চান কমপিউটারের সাহায্যে, তবে স্ক্রিন রেকর্ডার সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।
স্ক্রিন রেকর্ডার সফটওয়্যারগুলোর মধ্যে ক্যামতাসিয়া নামের সফটওয়্যারটি বেশ জনপ্রিয়। স্ক্রিন রেকর্ডের জন্য সফটওয়্যারটি ইনস্টল করে রান করাতে হবে। সফটওয়্যার রান করলে Record the Screen বাটনে চাপলে রেকর্ড হওয়া শুরু হবে ভয়েজসহ। এজন্য ভালোমানের মাইক্রোফোন ব্যবহার করতে হবে। রেকর্ড করা শেষ হলে স্টপ বাটনে ক্লিক করে তা বন্ধ করা যাবে। এরপর রেকর্ড করা ফাইলে সেভ করে নিন।
আগের কোনো ভিডিও ফাইল এডিট করে তা দিয়ে নতুন ভিডিও বানিয়েও আপলোড করতে পারেন। যেমন- একটি কমেডি মুভির শুধু কমেডি সিনগুলো কেটে তা জোড়া দিয়ে ৫-১০ মিনিটের একটি ভিডিও বানিয়ে নিতে পারেন। তবে যাই বানান না কেনো, ভিডিও বানানোর আগে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে- আপনার ভিডিওটি অবশ্যই মজাদার বা শিক্ষণীয় ও ভালো মানের হতে হবে। কারও কোনো ভিডিও নকল করে কিংবা সামান্য পরিবর্তন করে কাজটি করা যাবে না। তাহলে আপনি ইউটিউবের কাছে কপিরাইটের দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন।
ইউটিউবে আয় বাড়ানোর কিছু কৌশল
ভিডিওটির বর্ণনা দেয়া : নতুন ভিডিও আপলোড করার পর সাথে সাথে ভিডিওটি সম্পর্কে তার নিচে বর্ণনা দিলে ইউটিউব সহজে আপনার ভিডিওটি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে যাবে। এতে ইউটিউব নির্ধারিত টপিক অনুযায়ী ভিজিটরদের কাছে ভিডিওটি পৌঁছে দেবে।
নিয়মিত ভিডিও তৈরি : নিয়মিত নিত্যনতুন ও ভালোমানের ভিডিও আপলোড করার চেষ্টা করলে আপনার চ্যানেলটির দর্শক বাড়তে থাকবে। আর দর্শক বাড়া মানেই আপনার আয় বেড়ে যাওয়া।
ভিডিও শেয়ার করা : ভিডিও পাবলিশ করার পর বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, যেমন- ফেসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি সাইটে আপনার ভিডিও শেয়ার করতে পারেন।
ব্যাক লিঙ্ক তৈরি : আপনি যে বিষয় নিয়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল বা ভিডিও তৈরি করছেন. এরকম অন্য জনপ্রিয় সাইটগুলোতে আপনার ভিডিওটির লিঙ্ক দিয়ে দিলে সেখান থেকেও আপনার সাইটে প্রচুর ভিজিটর পেয়ে যাবেন।
শেষ কথা
যেহেতু ইউটিউব হলো গুগলের অংশ, সেহেতু এখানে নিজের মেধা ও পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে বিশ্বস্ততার সাথে টাকা আয় করা সম্ভব। এখানে আরেকটি বড় সুবিধা- সাইটের জন্য কোনো ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন বা ভিডিও আপলোড করার জন্য হোস্টিং সার্ভার কেনা লাগছে না। তার ওপর গুগলের নিজস্ব সেবা গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করার ব্যবস্থা রয়েছে। সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেলে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে যে কতটা আয় করা যায় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ইউটিউবে আয় করা অন্যান্য অনলাইন আয়ের পদ্ধতি থেকে অনেকটা সহজ ও নিরাপদ। কারণ আপনার সাথে রয়েছে বিশ^স্ত গুগল ও তার অতূলনীয় সার্ভিস বা সেবা
ইউটিউবের কিছু জানা-অজানা তথ্য
ইউটিউবের প্রথম ভিডিও: ২০০৫ সালের ২৩ এপ্রিল সহপ্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিম আপলোড করেন প্রথম ভিডিও। যার শিরোনাম ছিল Me At The Zoo। ১৯ সেকেন্ডের এই ভিডিওটি ধারণ করা করেছিল তার হাই স্কুলের রাশিয়ান বন্ধু ইয়াকব লাপিটস্কাই এবং স্থানটি ছিল সান দিয়াগো চিড়িয়াখানা ।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও (নন-মিউজিক্যাল) : নন-মিউজিক্যাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রদর্শিত ভিডিওটি হলো ‘Charlie Bit My Finger’- যা প্রায় এ পর্যন্ত ৮৪০,০১৩,৯৪৬ বারের মতো প্রদর্শিত হয়েছে ।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও (মিউজিক্যাল) : মিউজিক্যাল বিভাগে সবচেয়ে প্রদর্শিত মিউজিক ভিডিওটি হলো জুলাই ১৫, ২০১২ সালে আপলোড হওয়া ভিডিও গ্যাংনাম স্টাইল। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থিত গ্যাংনাম নামে একটি এলাকার জনগোষ্ঠীদের বিলাসবহুল জীবনযাপনকারীদের ব্যঙ্গ করেই এ গান গাওয়া হয়েছে। গানটির কথা যতটা না মজার, তার চেয়ে বেশি অদ্ভুত দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গীতশিল্পী সাইরে ঘোডা-নাচ। গ্যাংনাম স্টাইল ডান্স তো বেশ জনপ্রিয় হয়ে গিয়েছিল ভিডিওটি পাবলিশ হওয়ার পর।
দর্শক : ইউটিউব ভিজিটরদের মধ্যে ৮০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের। বিশেষ করে সৌদি আরব এবং আরব আমিরাত হলো এই তালিকার শীর্ষে। এসব দেশে বেশ কিছু টিভি চ্যানেল ও মিডিয়া বন্ধ থাকায় এখানে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা বেশি। প্রায় ৮৮টি দেশের স্থানীয় সংস্করণসহ ৭৬টির বেশি ভাষায় ইউটিউব ব্যবহার করা যায়।
সবচেয়ে বেশি ডিজলাইক হওয়া ভিডিও : ইউটিউবের ইতিহাসে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হলো জাস্টিন বিবারের বেবি নামের মিউজিক ভিডিওটি। অন্যান্য শীর্ষ ডিজলাইক হওয়া ভিডিওগুলোর মধ্যে রয়েছে আমেরিকান ইউটিউবার রেবেকা বস্ন্যাকের ফ্রাইডে, মাইলি সাইরাসের রেকিং বল এবং নিকি মিনাজের অ্যানাকোন্ডা নামের মিউজিক ভিডিও।
ইউটিউবের আরও কিছু তথ্য
* ইউটিউব তৈরির ১৮ মাসের মাথায় গুগল এটি কিনে নেয় ১.৬৫ বিলিয়ন ডলারে।
* ইউটিউবের বার্ষিক ব্যয় ৬,৩৫০,০০০,০০০ ডলার।
* ইউটিউব থেকে ২০১৪ সালে গুগলের বার্ষিক আয় হয় ৮,০০০,০০০,০০০ ডলার।
* প্রতি মিনিটে প্রায় ৪০০ ঘণ্টার ভিডিও আপলোড হচ্ছে ইউটিউবে।
* গড়ে প্রতি মিনিটে টুইটারে এমন ৪০০ টুইট হয় যাতে ইউটউব লিঙ্ক সংযুক্ত থাকে।
* ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে ইউটিউব উন্মোচন করে ফুল হাই ডেফিনেশন (এইচডি) ভিডিও ফিচার।
* ইউটিউবের রয়েছে ৮০০ মিলিয়নের বেশি ইউনিক ভিজিটর, যা সারা ইউরোপের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।
* বলা হয়ে থাকে, ইউটিউবের যত ভিডিও আছে তা দেখে শেষ করতে ১৭০০+ বছর লাগতে পারে।
* ইউটিউব দর্শকদের প্রায় অর্ধেক স্মার্টফোন কিংবা ট্যাবলেট ব্যবহারকারী।
ফিডব্যাক : shmahmood21@gmail.com