লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
আর পিছিয়ে থাকতে চাই না
আর পিছিয়ে থাকতে চাই না
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তার নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন, যা তরুণ প্রজন্মকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। শুধু তাই নয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নির্বাচনের ফলাফলেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে বলা যায়। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মনে জন্ম দেয় এক নতুন উদ্দামতা, সৃষ্টি করে এক নতুন কর্মচাঞ্চল্য। বিস্ময়করভাবে এরপরও আমরা বিশ্বের বিভিন্ন র্যা ঙ্কিংয়ের মানদ-- বরাবরই পিছিয়ে পড়ছি।
এ কথা সত্য, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষিত হওয়ার পরপরই সরকার বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নেয়, যার কোনোটি ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে, কোনোটি বাস্তবায়ন হওয়ার পথে, আবার কোনোটি চলছে খুব ধীরগতিতে। এসব কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে তা কেউই জানে না। কিন্তু ঘোষিত সময়ের মধ্যে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া শুধু ঘোষণার মধ্যেই থেকে যাবে, যা আমাদের কাম্য নয়।
লক্ষণীয়, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ঘোষণার পরও বাংলাদেশ প্রতিবছরই ইন্টারনেট ব্যবহারে বিশ্ব র্যা ঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পঞ্চম। ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৬ : ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, দেশে ১০ কোটি মানুষ এখনও ইন্টারনেট সেবার বাইরে রয়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকারি সেবার মান উন্নত করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
সরকার তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কাজ করে যাচ্ছে তা অস্বীকার করার যেমন উপায় নেই, তেমনি সত্য- সরকার তার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যে গতিতে কাজ করছে তা মোটেও সমেত্মাষজনক নয়। তার প্রমাণ বিশ্বব্যাংকের দেয়া ‘ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৬ : ডিজিটাল ডিভিডেন্ডস’ প্রতিবেদন।
লক্ষণীয়, পুরো বিশ্বই আজ এগিয়ে চলছে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশে টিকে থাকতে হলে আমাদেরকেও সেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এর অন্যথা হলে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমরা যে গতিতে কাজ করে যাচ্ছি এবং সেই ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আগামীতেও আমরা আরও পিছিয়ে পড়ব বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায়। এই পিছিয়ে পড়ার অর্থ ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট র্যা ঙ্কিংয়েও পিছিয়ে পড়া। শুধু তাই নয়, ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট র্যাডঙ্কিংয়ে পিছিয়ে পড়ার অর্থ আইসিটিতে বিনিয়োগের প্রত্যাশাও কমে যাওয়া।
সুতরাং সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব এ দেশের সাধারণ জনগণকে বেশি থেকে বেশি ইন্টারনেটের সেবার আওতায় আনা, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা এবং কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সরকারি সেবার মান উন্নত করা।
মাহবুব হোসেন
হেমায়েতপুর, কেরানীগঞ্জ
ম্যালওয়্যার আক্রমণে ৩ নম্বরে বাংলাদেশ : আমরা প্রস্ত্তত কী?
কমপিউটারের ব্যাপক ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। এনেছে কাজের গতি ও আস্থা। আর এ কারণে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রার প্রায় পুরোটাই কমপিউটারনির্ভর হয়ে পড়েছে। তবে সম্প্রতি ভাইরাস, ম্যালওয়্যার প্রভৃতি স্বাভাবিক কমপিউটিং জীবন অনেকখানিই ব্যাহত করেছে। ম্যালওয়্যার হলো ম্যালিশাস সফটওয়্যারের সংক্ষিপ্ত রূপ। এই প্রোগ্রামটি মূলত ব্যবহার হয় স্মার্টফোন বা কমপিউটারের তথ্য হাতিয়ে নেয়ার জন্য। সহজ কথা- ম্যালওয়্যার হলো এক ধরনের ক্ষতিকর প্রোগ্রাম, যা কমপিউটারে ইনস্টল হয়ে কার্যকর করে অনাকাঙিক্ষত কাজ, চুরি করে নেয় পাসওয়ার্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য তথ্য। ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ম্যালওয়্যার হামলায় অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন ঘটনার খবর আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারছি।
মাইক্রোসফটের সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এমএসআই) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ম্যালওয়্যারপ্রবণ দেশের তালিকায় সবার ওপরে পাকিস্তান। এরপর ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও নেপালের অবস্থান। আর সবচেয়ে কম ম্যালওয়্যার আক্রমণের শিকার হয় জাপান। এরপরের অবস্থান যথাক্রমে ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেনের।
মাইক্রোসফটের ব্যবস্থাপক অ্যালেক্স ওয়েইনার্ট জানান, বেশি আক্রমণপ্রবণ দেশগুলোতে প্রতিদিন গড়ে এক কোটিরও বেশি ম্যালওয়্যার আক্রমণ হয়। তবে সব আক্রমণ সফল হয় না। মূলত এশিয়া অঞ্চল থেকেই বেশি ম্যালওয়্যার আক্রমণ করা হয়। পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা থেকে মোট আক্রমণের এক-তৃতীয়াংশ হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই ম্যালওয়্যার হামলার প্রতিরোধে আমরা কতটুকু প্রস্ত্তত? আমাদের দেশের সরকার, নীতি-নির্ধারকসহ আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো কি দেশের ম্যালওয়্যার সংক্রমণ প্রতিরোধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে বা নিতে যাচ্ছে? ম্যালওয়্যার প্রতিরোধে আমাদের দেশের আইসিটিসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো জনসচেতনতামূলক কী ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে, তা আমাদের সবার কাছে তুলে ধরা উচিত।
শাওন
ডেমরা, ঢাকা
হাইটেক পার্কের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অনুদান
বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে। সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যবসায়ের সঠিক অবস্থা নিরূপণ করা সব সময় যেমন সঠিক হয়ে ওঠে, তেমনি বিদেশীদেরকে দেশে বিনিয়োগের জন্য কার্যকরভাবে আকৃষ্ট করাও সম্ভব হয়ে ওঠে। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক জোন থেকে যদি ব্যবসায় পরিচালনা করা হয়, তাহলে খুব সহজেই ব্যবসায়ীরা জানতে পারবেন দেশে-বিদেশে কোন পণ্যের বাজার চাহিদা কেমন, ব্যবসায়ের ট্রেন্ড বা ধারা কোনদিকে ধাবিত হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী তারা পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাত করার পরিকল্পনা করতে পারবেন, যা প্রকারান্তরে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং হাইটেক পার্কের উন্নয়নে অতিরিক্ত ১৩০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কের উন্নয়ন ছাড়াও নতুন করে সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাংক জানায়, দেশের কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এ ছাড়া প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে (পিপিপি) দেশে দুটি হাইটেক পার্ক হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে আরও সাতটি হাইটেক পার্ক লাইসেন্স পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানায়, ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে দুটি হাইটেক পার্ক কাজ শুরু করেছে। আর তিনটি প্রতিষ্ঠান রাজধানীর কারওয়ান বাজারের জনতা টাওয়ারের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে কাজও শুরু করেছে।
বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং হাইটেক পার্কের উন্নয়নে যে অর্থ বরাদ্দ করেছে তা যেন যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয় এবং সংশ্লিষ্ট কাজে যেন পর্যাপ্ত নজরদারি থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ভুলে গেলে চলবে না, ইতোপূর্বে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করেছিল তা দুর্নীতির অভিযোগে ফিরিয়ে নেয়, যদিও এ দুর্নীতির অভিযোগটি ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাই প্রত্যাশা করি, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং হাইটেক পার্কের উন্নয়ন কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে এবং সেখানে থাকবে না দুর্নীতির কোনো অভিযোগ বা চিহ্ন।
আবুল কালাম আজাদ
লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী