লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
বাংলাদেশে বিপিও : এক নতুন সম্ভাবনার নাম
বিপিও। পুরো কথায় বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং। নাম থেকে স্পষ্ট, এটি আউটসোর্সিংয়ের একটি বিষয়। এর সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে একটি সুনির্দিষ্ট বিজনেস প্রসেস পরিচালনার দায়িত্ব তৃতীয়পক্ষের সার্ভিস প্রোভাইডারকে দেয়ার একটি চুক্তি। মূলত এই বিপিও সংশ্লিষ্ট ছিল বৃহদাকার উৎপাদন কারখানার সাথে। যেমন- কোকা-কোলা কোম্পানি এবং সাপ্লাই চেইনের বড় অংশটাই আউটসোর্স করত। বিপিওকে চিহ্নিত করা হয় ব্যাক অফিস আউটসোর্সিং হিসেবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে অভ্যন্তরীণ ব্যবসায়িক কর্মকা-। যেমন- মানবসম্পদ বা ফিন্যান্স ও অ্যাকাউটিং এবং ফ্রন্ট অফিস আউটসোর্সিং, যার সাথে সংশ্লিষ্ট কাস্টমার-রিলেটেড সার্ভিস, যেমন- কন্ট্রাক্ট সেন্টার সার্ভিস। যেসব বিপিও কন্ট্রাক্ট করা হয় কোম্পানির দেশের বাইরের দেশের সাথে, সেগুলোকে বলা হয় অফশোর আউটসোর্সিং। আবার যেসব বিপিও কন্ট্রাক্ট করা হয় কোম্পানির প্রতিবেশী দেশের সাথে, সেগুলোকে বলা হয় নিয়ারশোর আউটসোর্সিং।
বিপিও’র মূল উপকারিতা হচ্ছে, এটি একটি কোম্পানির নমনীয়তা বাড়ায়। তা সত্ত্বেও বেশ কিছু সোর্সের রয়েছে বিভিন্ন উপায়, যেখানে এরা অর্জন করে প্রাতিষ্ঠানিক নমনীয়তা। একুশ শতাব্দীর শুরুতে বিপিও’র সবকিছুই ছিল ব্যয়-দক্ষতার বিষয়। এর মাধ্যমে একটি পর্যায় পর্যন্ত উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনা যেত। শিল্প খাতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি ও পরিবর্তনের ফলে, বিশেষত উৎপাদনভিত্তিক থেকে সেবাভিত্তিক কন্ট্রাক্টে পরিবর্তন হওয়ার ফলে কোম্পানিগুলো নজর দিচ্ছে ব্যাক-অফিস আউটসোর্সিংয়ের দিকে, সময়ের নমনীয়তা ও সরাসরি মান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে। বিপিও বিভিন্নভাবে জোরদার করে তুলে একটি কোম্পানির নমনীয়তা।
সময়ের সাথে বাংলাদেশে বিপিও ক্রমেই জোরদার হতে শুরু করেছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের বিপিও খাত মাত্র ৩শ’ কর্মী নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে এই খাতে ৩ হাজার কর্মী কাজ করছেন। এই খাত ক্রমেই ব্যবসায়িক খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে এ খাতে ১ লাখ তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে এবং ১০০ কোটি ডলার আয়ের পরিকল্পনা করছে সরকার। বাংলাদেশে বিপিও’র যথাযথ প্রসার ও এর গতি ত্বরান্বিত করার লক্ষে্য গত ২৮-২৯ জুলাই দেশে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ‘বিপিও সামিট-২০১৬’। নিঃসন্দেহে এই সামিট বাংলাদেশে বিপিও প্রসারে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তরুণেরা বিপিও সম্পর্কে ক্রমেই আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বাংলাদেশে বিপিও একটি নতুন সম্ভাবনার নাম। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত থেকে জানা যায়, বর্তমানে বিশ^জুড়ে বিপিও’র বাজার বছরে ৫০ হাজার কোটি ডলার। সেখানে বাংলাদেশ ১০০ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারেনি। জানা যায়, বাংলাদেশ সবে মাত্র ১৮ কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখলে আনতে পেরেছে। বাংলাদেশ যদি বিপিও খাতে যথার্থ নজর দেয়, তবে সহজেই শত শত কোটি ডলারের বিপিও বাজার দখল করতে পারে। পোশাক শিল্প খাতের মতো বিপিও খাতও হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস।
বিপিও খাতে সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় রয়েছে ভারত, ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কা। ছোট্ট দেশ শ্রীলঙ্কার এ খাতের আয় এরই মধ্যে ছাড়িয়ে গেছে ৩শ’ কোটি ডলারের অঙ্ক। ভারত বলি আর শ্রীলঙ্কা বলি, এ দুটি দেশই আমাদের দেশের মতো একই ধরনের পরিবেশ-প্রতিবেশের দেশ। তাই ভাবতে অবাক লাগে, ভারত ও শ্রীলঙ্কা যদি বিপিও খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখাতে পারে, তবে বাংলাদেশ কেনো তা পারবে না। নিশ্চিত করে বলা যায়, সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিয়ে কাজে নামলে বাংলাদেশের পক্ষেও তা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন এখনই সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে কাজে নেমে পড়া।
এ ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো, আমাদের দেশে রয়েছে বিপুলসংখ্যক মেধাবী তরুণ। এদের অনেকেই বেকার। আবার এর একটি অংশকে টিউশনি করে চলতে হয়। এদের বিপিও খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পারলে দেশের বিপিও খাত যেমনি প্রসার লাভ করবে, তেমনি বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। এ কথা ঠিক, আমাদের দেশের বিপুলসংখ্যক তরুণ-তরুণী কোনো না কোনোভাবে প্রযুক্তির সাথে কম-বেশি জড়িত। এদের সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে বিপিও খাতে নিয়োজিত করতে পারলে, নিঃসন্দেহে আমাদের বিপিও খাত উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবে। তাই আমাদের তরুণ সমাজকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে বিপিও খাতে কাজে লাগানো যেতে পারে। এর ফলে তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতাও কমবে।