লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
উইন্ডোজ ১০-এ যেসব ফিচার ডিজ্যাবল করতে পারবেন
মাইক্রোসট প্রায় সময় তার উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের কমপিউটিং জীবনকে সহজ থেকে সহজতর করার জন্য যুক্ত করে আসছে নতুন নতুন ফিচার। তবে লক্ষণীয়, উইন্ডোজের সব নতুন আপডেটেড ভার্সনে যুক্ত হওয়া নতুন ফিচারগুলো যে সবসময় কাজে লাগবে বা অপরিহর্য, তা কিন্তু নয়। অর্থাৎ উইন্ডোজের বিভিন্ন ভার্সনে যুক্ত হওয়া কিছু কিছু নতুন ফিচার আপনি ইচ্ছে করলে ডিজ্যাবল করে দিতে পারেন নিশ্চিন্তে। এ ধারাবাহিকতা উইন্ডোজ ১০ এর ক্ষেত্রেও অব্যাহত রয়েছে। তাই উইন্ডোজ ১০-এর যেসব ফিচার তেমন সহায়ক হবে না বলে মনে করেন, সেগুলো খুব সহজেই ডিজ্যাবল করে দিতে পারেন কোনো ঝামেলা ছাড়াই।
উইন্ডোজ ১০-এর যেসব ডিফল্ট ফিচার এবং সেটিং ডিজ্যাবল করতে পারবেন, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হয়েছে। ব্যবহারকারীরা কীভাবে এবং কেন উইন্ডোজ ১০-এর এসব ফিচার ডিজ্যাবল করবেন তা নিচে আলোকিত হয়েছে।
আপনি কি সম্প্রতি অনিচ্ছাকৃতভাবে সিস্টেমকে উইন্ডোজ ১০-এ আপগ্রেড করেছেন? যদি আপনি উইন্ডোজ ১০-এর এক্সপ্রেস ইনস্টলেশন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে তা আয়ত্ত করার আগে আপনাকে হয়তো কিছু সেটিং টোয়েক করতে হতে পারে প্রাইভেসি, স্পিড এবং সুবিধার জন্য। এ লেখায় ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে উইন্ডোজ ১০-এর ১০টি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো বাইডিফল্ট অন থাকে, তবে ইচ্ছে করলে সেগুলো ডিজ্যাবল করে দিতে পারেন অনায়াসে।
ফাইল শেয়ারিং আপডেট
উইন্ডোজ ১০-এর অন্যতম এক নতুন ফিচার হলো অপটিমাইজড আপডেট ডেলিভারি সিস্টেম, যা আপনাকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে শুধু মাইক্রোসফটের নিজস্ব সার্ভার থেকে নয় বরং অন্যান্য উইন্ডোজ ১০ কমপিউটার থেকেও আপডেট ডাউনলোড করার সুযোগ দেবে। যদি মাইক্রোসফটের সার্ভার ব্যস্ত থাকে, তাহলে উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম এবং উইন্ডোজ স্টোর অ্যাপ অন্যান্য কমপিউটার থেকে হতে পারে, তা আপনার লোকাল নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট থেকেও উইন্ডোজ ১০-এর আপডেট গ্র্যাব করতে পারে। অবশ্যই আপনার কমপিউটার অন্যান্য উইন্ডোজ ১০ ব্যবহারকারীদের জন্য একটি আপডেট শেয়ারিং হাব হিসেবে ব্যবহার হতে থাকবে।
এই ফিচার বাইডিফল্ট সক্রিয় থাকে, তবে আপনি তা নিষ্ক্রিয় করতে পারেন Settings→Update & security→Advanced options→Choose how updates are delivered পাথে নেভিগেট করে।
বিরক্তিকর নোটিফিকেশন
উইন্ডোজ ১০ অ্যাকশন সেন্টার হলো আপনার সব নোটিফিকেশন, যেমন- অ্যাপ, রিমাইন্ডার, সম্প্রতি ইনস্টল করা প্রোগ্রামের জন্য এক সহায়ক কেন্দ্রীয় হাব। তবে নোটিফিকেশন ওভারলোড অবশ্যই একটি বিষয়, বিশেষ করে মিশ্রণে অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন যুক্ত করার ক্ষেত্রে। যেমন- উইন্ডোজ টিপস বা ফিডব্যাক হাব থেকে কোনো জিজ্ঞাস্য।
নোটিফিকেশনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য Settings→System→Notifications & actions সিলেক্ট করে Show me tips about Windows-এর মতো ফিচার এবং স্বতন্ত্র অ্যাপ নোটিফিকেশন বন্ধ করুন।
স্টার্ট মেনুর অ্যাডস
মাইক্রোসফট সত্যি সত্যিই চেষ্টা করে যাচ্ছে একটি নতুন উইন্ডোজ অ্যাপ স্টোরের জন্য। এর ফলে আপনি স্টার্ট মেনুতে এমন সব অ্যাপ দেখতে পারবেন, যা কখনই ডাউনলোড করা হয়নি। আসলে সাজেস্ট করা অ্যাপগুলো হলো বিজ্ঞাপন বা অ্যাড।
বিরক্তিকর এসব বিজ্ঞাপন বন্ধ করার জন্য Settings→Personalization→Start→Occasionally show suggestions in Start সিলেক্ট করুন। এবার টোগাল অফ করে সেটিং মেনু অফ করুন।
থার্ডপার্টি অ্যাপ থেকে টার্গেট করা অ্যাড
মাইক্রোসফট স্পষ্টত উইন্ডোজ ১০-এ আপনার প্রেফারেন্স এবং ব্রাউজিং অভ্যাসকে ট্যাবে ধরে রেখেছে। মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্টে আপনার জন্য থাকবে একটি ইউনিক অ্যাডভারটাইজিং আইডি, যা কোম্পানি ব্যবহার করে থাকে টার্গেট করা বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করানোর জন্য। মাইক্রোসফট এই অ্যাডভারটাইজিং আইডি/প্রোফাইল উইন্ডোজ স্টোর থেকে থার্ডপার্টি অ্যাপের সাথে শেয়ারও করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি ইনফরমেশন শেয়ারিং ব্যবস্থাকে বন্ধ না করছেন।
অ্যাডভারটাইজিং আইডি বন্ধ করার জন্য Settings→Privacy→General→Let my apps use my advertising ID for experiences across apps অপশন। এ অপশন বন্ধ করলে আপনার আইডি রিসেট হবে।
গেট টু নো
মাইক্রোসফটের তৈরি উইন্ডোজ ১০-এর জন্য কর্টনা হলো সত্যিকার অর্থে ইন্টেলিজেন্ট পার্সোনাল অ্যাসিসট্যান্ট। কর্টনা রিকগনাইজ করতে পারে ভয়েজ এবং রাইটিং ও পিসির কোনো কিছু খুঁজে বের করাসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা করে। কর্টনা হ্যান্ড রাইটিং প্যাটার্ন, স্পিচ ভ্যারিয়েশন, ক্যালেন্ডার ইভেন্ট, কন্টাক্ট ধরনের কাজগুলো করে থাকে। যদি আপনি কর্টনার সহায়তামূলক এ ধরনের কাজ না করেন এবং উইন্ডোজ ১০-কে থামাতে চান কর্টনার গেটিং টু নো ইউ ফিচারকে বন্ধ করতে পারেন বা ডিজ্যাবল করতে পারেন।
কর্টনা ফিচারকে থামানো, যাতে আপনাকে জানতে না পারে এবং ডিভাইস থেকে সব তথ্য মুছে ফেলার জন্য Settings→Privacy→ Speech, inking, & typing-এ নেভিগেট করে Stop getting to know me -এ ক্লিক করুন।
ব্যাকগ্রাউন্ডে যেসব অ্যাপ রান করে
উইন্ডোজ ১০-এ বাইডিফল্ট অনেক অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে রান করবে। এমনকি সেগুলো ওপেন না থাকলেও। এ অ্যাপগুলো রিসিভ করতে পারে ইনফরমেশন, নোটিফিকেশন সেন্ড করতে পারে, ডাউনলোড এবং ইনস্টল করতে পারে আপডেট। অন্যথায় প্রচুর ব্যান্ডউইডথ অধিগ্রহণ করে এবং ব্যাটারির আয়ু অপচয় হয়। যদি আপনি একটি মোবাইল ডিভাইস বা মেটারড (metered) কানেকশন ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে এ ফিচারকে বন্ধ করে দিতে পারেন।
মোবাইল ডিভাইস বা মেটারড কানেকশন বন্ধ করার জন্য Settings→Privacy→Background apps-এ গিয়ে প্রতিটি অ্যাপের স্বতন্ত্রভাবে টোগাল অফ করুন।
লক স্ক্রিন
উইন্ডোজ ১০ হলো ইউনিভার্সাল অপারেটিং সিস্টেম, যার অর্থ এটি ডিজাইন করা হয়েছে টাচস্ক্রিন এবং নন-টাচস্ক্রিন ডিভাইসের জন্য। এ কারণে এর জন্য রয়েছে একটি লকস্ক্রিন এবং একটি লগইন স্ক্রিন, যা জনগণের জন্য বিরক্তিকর, বিশেষ করে যারা খুব তাড়াতাড়ি তাদের ডিভাইসে লগইন করতে চান। আপনি লকস্ক্রিন ডিজ্যাবল করতে পারেন এবং লগইন স্ক্রিনে সরাসরি যেতে পারবেন, তবে এজন্য আপনাকে উইন্ডোজ রেজিস্ট্রিতে মনোনিবেশ করতে হবে। খুব সতর্কতার সাথে এবং সুনিশ্চিত না হয়ে রেজিস্ট্রি এডিটের কাজ না করা উচিত। রেজিস্ট্রি এডিট করার জন্য নিচে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
স্টার্ট বাটনে ডান ক্লিক করে পপআপ মেনু থেকে Run সিলেক্ট করুন। রান ডায়ালগ বক্সে regedit টাইপ করে Ok করুন। এর ফলে User Account Control উইন্ডোর মুখোমুখি হবেন এবং Yes-এ ক্লিক করুন।
এবার রেজিস্ট্রি এডিটরে HKEY_LOCAL_ MACHINE\SOFTWARE\Policies\Microsoft\Windows পাথে নেভিগেট করুন।
রেজিস্ট্রি এডিটরে উইন্ডোজ ফোল্ডারে ডান প্যানে ডান ক্লিক করে ঘবসিলেক্ট করে key সিলেক্ট করুন। এরপর আবির্ভূত হওয়া New Key #1 ফোল্ডারকে Personalization-এ রিনেম করুন এবং ফোল্ডারকে সিলেক্ট করুন ক্লিক করে।
এবার পার্সোনালাইজেশন ফোল্ডারে রেজিস্ট্রি এডিটরের ডান প্যানে ডান ক্লিক করে New সিলেক্ট করে DWORD (32-bit) Value সিলেক্ট করুন। এবার রেজিস্ট্রি এডিটরে ডান দিকের প্যানে একটি নতুন পপআপ আইটেম দেখতে পারবেন এবং এটি রিনেম করে করুন NoLockScreen।
এর ভ্যালু ডাটাকে ওপেন করার জন্য NoLockScreen-এ ডাবল ক্লিক করুন। Value data-এর অন্তর্গত ভ্যালুকে ০ থেকে ১ করে Ok করুন। এবার রেজিস্ট্রি এডিটর থেকে বের হয়ে পিসিকে রিবুট করলে লকস্ক্রিন আর দেখা যাবে না।
সিনসিং
উইন্ডোজ ১০ প্রায় সিনসিং ধরনের। সবকিছুই যেমন সিস্টেম সেটিং, থিমস, পাসওয়ার্ড, সার্চ হিস্টোরি ইত্যাদি বাইডিফল্ট সব সাইনড-ইন ডিভাইস জুড়ে সিঙ্ক হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই চান না যে তাদের ফোন থেকে শুরু করে কমপিউটার পর্যন্ত সবকিছুর সার্চ হিস্টোরি সিঙ্ক হোক। সুতরাং সিনসিং ফিচার বন্ধ করার জন্য নিচে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।
থিম এবং পাসওয়ার্ডসহ সিনসিং সেটিং ফিচার বন্ধ করার জন্য Settings→Accounts→Sync your settings-এ অ্যাক্সেস করুন। এবার ইচ্ছে করলে সব সেটিং সিনসিং বন্ধ করতে পারেন বা সুনির্দিষ্ট কিছু সেটিং বন্ধ করে দিতে পারেন।
সার্চ হিস্টোরি সিনসিং বন্ধ করার জন্য কর্টনা ওপেন করে নেভিগেট করুন Settings→My device history-এ এবং My search history-এ অ্যাক্সেস করুন।
চমৎকার ভিজ্যুয়াল ইন্টারফেস
উইন্ডোজ ১০-এর ইন্টারফেসটি চমৎকার। তবে ইচ্ছে করলে বেছে নিতে পারেন দ্রুত এবং সহজ-সরল ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট। দ্রুত এবং সহজ-সরল ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ উইন্ডোজ ১০-এর ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট বন্ধ করতে পারেন স্টার্ট বাটনে ডান ক্লিক করে System→Advanced system settings-এ গিয়ে। এরপর অ্যাডভ্যান্সড ট্যাবের অন্তর্গত Performance গিয়ে Settings-এ ক্লিক করুন এবং এরপর সব ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট আনচেক করুন, যেগুলো আপনি দেখতে চান না।
অটোমেটিক আপডেট
উইন্ডোজ ১০ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড এবং ইনস্টল করে আপডেট। বাস্তবে এগুলো অফ করতে পারবেন না। এগুলো বন্ধ করা উচিত হবে না। একটি আপ-টু-ডেট অপারেটিং সিস্টেম হলো নিরাপদ অপারেটিং সিস্টেম। কোনো কারণে যদি আপনি স্বয়ংক্রিভাবে উইন্ডোজ ১০-এর আপডেট ডাউনলোড এবং ইনস্টল প্রতিরোধ করতে চান, তাহলে ম্যানুয়ালি ডাউনলোড এবং ইনস্টল করতে পারেন
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com