লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
সফটওয়্যার রফতানিতে রেকর্ড
চলতি মাসের শুরুতে আমাদের সফটওয়্যার খাতের একটি সুখবর জানা গেল গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সূত্রে। সুখবরটি হচ্ছে, তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ এবার সফটওয়্যার রফতানিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এবার বাংলাদেশ ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলারের সফটওয়্যার রফতানি করেছে। সরকারের আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) তথ্য-উপাত্ত সূত্রে দাবি করেছে, এবার এই রেকর্ড পরিমাণ সফটওয়্যার বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা হয়েছে। কিন্তু সফটওয়্যার রফতানিতে বাংলাদেশের রেকর্ড পরিমাণ রফতানির এই সুখবরটি কিছুটা হলেও হোঁচট খায় যখন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বলছে, সফটওয়্যার রফতানির পরিমাণটা আসলে ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলার নয়। ইপিবি’র দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ সফটওয়্যার রফতানি করেছে ১৫১ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন (১৫ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার) ডলারের।
সফটওয়্যার রফতানি সম্পর্কিত পরিসংখ্যানে এই বিস্তর পার্থক্য থাকাটা মেনে নেয়া খুবই বিষম ঠেকে। কারণ আইসিটি বিভাগ ও ইপিবি দুটিই সরকারি কর্তৃপক্ষ। এর মাধ্যমে দেশের সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার করুণ চিত্রটাই ফুটে ওঠে। তা ছাড়া এ কথা স্বীকার্য, একটি দেশের পরিসংখ্যান যত বেশি যথার্থ, সেই পরিসংখ্যান বা তথ্য-উপাত্তনির্ভর পরিকল্পনা বা কর্মসূচির সাফল্যের মাত্রাও তত বেশি। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক ক্ষক্ষত্রেই হয় কোনো তথ্য-পরিসংখ্যান নেই, নয়তো থাকলেও তার ওপর নির্ভর করা কঠিন। এই দুর্বলতা আমাদের বরাবরের। আর এই দুর্বলতার কারণেই আমরা অনেক ক্ষক্ষত্রে সঠিক পরিকল্পনা বা কর্মসূচি প্রণয়ন করতে পারি না। এ জন্য আমাদের দেশে পরিকল্পনা বা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাফল্যের হার খুবই কম। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের যথাসচেতনতা প্রদর্শনের এখন চূড়ান্ত সময়। আশা করি, শুধু এ ক্ষক্ষত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষক্ষত্রেও যাতে সঠিক পরিসংখ্যান বের করে আনা যায়, দায়িত্বশীলেরা সে দায়িত্ব পালনে আরও সচেতন হবেন। নয়তো এ ধরনের সামঞ্জস্যহীন পরিসংখ্যান নিয়ে বিভিন্ন মহলের মধ্যে যেমন মতবিরোধ আরও বাড়বে, তেমনি সঠিক পরিকল্পনা নেয়াও কঠিন হয়ে পড়বে। এ ধরনের পরিসংখ্যানের ক্ষক্ষত্রে সবাই নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্যই শুধু কথা বলবেন। সফটওয়্যার রফতানির পরিসংখ্যান নিয়ে এখন কার্যত তাই চলছে। এ প্রসঙ্গে বেসিস সভাপতি মোস্তাফা জববার দাবি করেছেন, সফটওয়্যার রফতানি সম্পর্কে সঠিক তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই বলেই ইপিবি ভুল পরিসংখ্যান দিচ্ছে।
সে যাই হোক, আমরা মনে করি বাংলাদেশ সফটওয়্যার রফতানি খাতে আশা-জাগানিয়া অগ্রগতি অর্জন করছে এবং বাংলাদেশ এ ক্ষক্ষত্রে শিগগিরই আরও বড় মাপের অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হবে। আমরা এও আশা করছি, শিগগিরই বাংলাদেশ বিশ্ব সফটওয়্যার বাজারে এর অবদানের মাত্রাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হবে। বর্তমান সরকারও সে ব্যাপারে সমধিক আশাবাদী। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার রফতানির স্বপ্ন দেখছে। তা ছাড়া ২০১৮ সালে এই রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনাও সরকারের আছে। সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ইতিবাচক ব্র্যান্ডিং চান বাংলাদেশের সফটওয়্যার রফতানিতে জড়িত উদ্যোক্তারা। তারা বলছেন, সফটওয়্যার রফতানির প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হলেই ২০২১ সালে ৫০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার রফতানি সম্ভব হবে। এ ক্ষক্ষত্রে রফতানি বাজার তৈরিতে উদ্যোক্তারা সরকারের বিনিয়োগও চান।
সফটওয়্যার রফতানি বাড়াতে সরকারের ভূমিকা ইতিবাচক বলেই মনে হয়। সরকারি তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ৭ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী রয়েছেন। বেসিসের দেয়া তথ্যমতে, তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর পেশাজীবী ছাড়াও দেশে ফ্রিল্যান্স ও আউটসোর্সিংয়ে জড়িত আছেন সাড়ে ৪ লাখ লোক। সরকারি-বেসরকারিভাবে আরও প্রায় ২ লাখ তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী তৈরির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ লাখ পেশাজীবী তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। সবকিছু ঠিকভাবে চললে ২০২১ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হবে- এমন দৃঢ় বিশ্বাস আমরাও লালন করি।