লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
বছরের উল্লেখযোগ্য কিছু ফ্রি ফটো এডিটর
ফোন ক্যামেরা বর্তমানে সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ছবি তোলা ও শেয়ার করার প্রবণতা আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। আর তাই ফটো এডিটিং সফটওয়্যারের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
আমাদের দেশে অনেকেই ফটো এডিটিং সফটওয়্যার বলতে অ্যাডোবি ফটোশপকে বুঝে থাকেন, যা খুব ব্যয়বহুল। অ্যাডোবি ফটোশপ ছাড়াও অনেক ফটো এডিটিং সফটওয়্যার আছে, যেগুলো ফ্রি এবং অ্যাডোবি সফটওয়্যারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
এ লেখায় বেশ কিছু সেরা ফ্রি ফটো এডিটর সফটওয়্যারের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। এসব ফটো এডিটর সফটওয়্যারের ফিচারের রেঞ্জ সহজ-সরল থেকে শুরু করে ফুল-ফিচারড ফটোশপের ক্লোন করা, ফিল্টার যুক্ত করা এবং ফেভারিট সণ্যাপে প্রভাব বিস্তার করা পর্যন্ত সবকিছুই।
জিআইএমপি
লেয়ার, কাস্টোমাইজ যোগ্য ব্রাশ, অ্যাডভ্যান্সড ফিল্টার এবং ডজনের বেশি পস্নাগইনসহ জিআইএমপি (GIMP) নামের ফ্রি ইমেজ এডিটরটি অনেকেরই পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। ফ্রি ফটো এডিটিং টুল জিআইএমপি হলো GNU Image Manipulation Program-এর সংক্ষক্ষপ্ত রূপ। ফটো এডিটিং টুল জিআইএমপির ফুল-ফিচার্ড ক্রশ-প্ল্যাটফরম হলো জনপ্রিয় ফটোশপের প্রতিদ্বন্দ্বী। এ টুলটি একটি ওপেন সোর্স ইমেজ এডিটং অ্যাপ্লিকেশন, যা ব্যবহার হতে পারে একটি সাধারণ পেইন্ট প্রোগ্রাম হিসেবে, একটি এক্সপার্ট ফটো রিটাচ প্রোগ্রাম হিসেবে, একটি অনলাইন ব্যাচ প্রসেসিং সিস্টেম হিসেবে, একটি ইমেজ ফরম্যাট কনভার্টার হিসেবে, কম্পোজিটিং এবং ইমেজ তৈরি করার জন্য। এ টুলটি জিএনইউ/লিনআক্স, ওএস এক্স, উইন্ডোজসহ অপারেটিং সিস্টেম সাপোর্ট করে। যেহেতু এটি ফ্রি সফটওয়্যার, তাই এর সোর্স কোড পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যায়।
জিআইএমপি টুলটি ক্র্যাশ ও গিস্নচমুক্ত নয়। জিআইএমপির কিছু ফিল্টার প্রায় অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে, যেমনটি ২০ বছর আগে ছিল। যদি আপনি একটি ফ্রি ডেস্কটপ ফটো এডিটরের খোঁজ করে থাকেন, তাহলে জিআইএমপির কথা ভাবতে পারেন।
ফটোস্ক্যাপ
ফটোস্ক্যাপ হলো এক বিস্ময়কর ফ্রি ফটো এডিটর। ফটোস্ক্যাপের (PhotoScape) অন্যতম প্রথম আকর্ষণীয় উপাদান হলো এর আনকমন ইন্টারফেস ডিজাইন এবং কোনো কোনো ক্ষক্ষত্রে ফটোশপের চেয়ে আকর্ষণীয় এর ডিজাইনটি চোখের জন্য এ টুলটি সম্পৃক্ত করে প্রচুর পরিমাণে এমন সব ফিল্টার, টুল ও স্পেশাল ইফেক্ট, যা দেখে আপনার বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে যে এটি একটি ফ্রি টুল।
ফটোস্ক্যাপ নামের ফটো এডিটর টুলটি সম্পৃক্ত করে এমন সব ফিচার, যা ফটো ভিউ, অপটিমাইজ, এডিট, প্রিন্ট ও ফটো নিয়ে মজার মজার কিছু কাজ করতে যা যা দরকার তার সবকিছুই পাওয়া যাবে টুলে। আসলে ফটোস্ক্যাপ টুলটি এতটাই পরিপূর্ণ ও বাস্তবতাসম্পন্ন যে, এটিকে মনে হবে ফটোশপের বিকল্প এক টুল হিসেবে। যদিও এ টুলটিকে পুরোপুরি ফটোশপের মানের টুল হিসেবে গণ্য করা যায় না।
গুগল নিক কালেকশন
সারাবিশ্বের ফটো কৌতূহলীরা তাদের প্রতিদিনের ইমেজ থেকে সেরাটি বের করার জন্য ব্যবহার করে থাকেন গুগল নিক কালেকশন (Google Nik Collection)। গুগল নিক কালেকশন ধারণ করে অ্যাডোবি ফটোশপ, অ্যাডোবি লাইটরুম ও অ্যাপল অ্যাপারচারসহ সাত সেটের ডেস্কটপ পস্নাগইন, যা দেয় ফটো এডিটিংয়ে সক্ষম এক রেঞ্জ শক্তিশালী টুল, যেমন- ফিল্টার অ্যাপ্লিকেশন, যা কালার কারেকশন উন্নত করে, রিটাচিং ও ক্রিয়েটিভ ইফেক্ট, ইমেজ শার্পেনিং, যা বের করে আনে সব হিডেন ডিটেইলস, ইমেজের কালার ও টোনালিটি অ্যাডজাস্টমেন্টের সক্ষমতা। এ টুলব্যাগে আরও সম্পৃক্ত রয়েছে ভিন্টেজ ক্যামেরা ফিল্টার, বস্ন্যাক অ্যান্ড হোয়াইট কন্ট্রোল, এইচডিআর ইফেক্ট, নয়েজ রিডাকশন, কালার কারেকশন, কালার অ্যানহ্যান্সমেন্ট ও শার্পেনিং ফিচার। সম্পূর্ণ স্যুটটি ফ্রি ডাউনলোড করা যাবে গুগল বা ম্যাক বা উইন্ডোজ সাইট থেকে।
পিক্সলর এডিটর
পিক্সলর এডিটর (Pixlr Editor) তুলনামূলকভাবে কিছু অ্যাডভ্যান্সড ও এক শক্তিশালী ফ্রি অনলাইন ইমেজ এডিটর। এটি একটি অ্যাড-সাপোর্টেড অনলাইন ফটো এডিটর, যা দুটি ফ্লেভারে বা প্যাকেজে পাওয়া যাচ্ছে। পিক্সলর প্যাকেজটি অধিকতর সুসজ্জিত ও সাময়িক ব্যবহারকারীদের জন্য, যারা তাদের ডিজিটাল ফটোকে শেয়ার করার আগে সরাসরি উন্নত করার উপায় খোঁজ করছে। আর পিক্সলর এক্সপ্রেস বড় ধরনের প্যাকেজ বস্নট না করেই যথাযথ অ্যাপস্নাই করা হয় ক্যুইক ফিক্স। যাই হোক, পিক্সলর এডিটর দ্বিতীয় গ্রম্নপের অন্তর্গত এবং দেখতে পুরোপুরি পিক্সলরভিত্তিক ইমেজ এডিটরের মতো, যা ওয়েব ব্রাউজারে রান করে। যারা অ্যাডোবি ফটোশপ ব্যবহারে অভ্যস্ত, তারা পিক্সলর এডিটর ব্যবহার করতে শুধুই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন তা নয়, খুব সাবলীলভাবে পিক্সলর এডিটর ব্যবহার করতে পারবেন।
কিছু কিছু পিক্সলর এডিটরের টুল বিশেষ করে ফিল্টারের ব্যবহার করতে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কেননা, আপনি এতে যথাযথভাবে প্রিভিউ করতে পারবেন না। লেয়ার, মাস্ক ও ফুলস্ক্রিন মোডে সাপোর্টের কারণে এটি ডেস্কটপ অ্যাপ হিসেবে কাজ করতে পারবে।
ফুটর
ফুটর হলো প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফটো উন্নতকারক তথা অ্যানহ্যান্সার, যা একটি ফটো এডিটরের চেয়ে বেশি কিছু যদি সুনির্দিষ্ট ক্ষক্ষত্রে রিটাচিংয়ে আপনার দরকার হয়, যেমন- ক্লোন ব্র্যাশ বা হিলিং টুল, যেগুলোর সুবিধা থেকে আপনি বঞ্চিত। তবে এটি সম্পৃক্ত করে একগুচ্ছ হাই-এন্ড ফিল্টার, যা এ কাজটিকে প্রকৃত অর্থে উজ্জ্বলতা দেবে।
ফুটর ফটো এডিটরে বেশ কিছু বেসিক ফিচার আছে ১-ট্যাপ অ্যানহ্যান্স, রিসাইজ, ক্রপ, রোটেড ও স্ট্রেইটথেনসহ অনেক ইউনিক ফিচার রয়েছে। এ টুলের জন্য রয়েছে ব্যাপক বিসত্মৃত রেঞ্জের ফিল্টার ও ইফেক্ট ফিচার, যেমন- ফটো ইফেক্ট, লোমো ইফেক্ট, কুল ইফেক্ট, ফাঙ্কি ইফেক্ট, ব্লার ইফেক্ট ও ওয়েবক্যাম ইফেক্ট। এতে আরও রয়েছে ফটো ফ্রেম, স্টিকার, টেক্সট, কালার স্পস্ন্যাশ, মোজাইক ও টিল্ড শিফট টুল।
ফুটর সবচেয়ে ব্রিলিয়েন্ট ফাংশন হলো এর ব্যাচ প্রসেসিং টুল যা অনেক ফটো এডিটিং প্যাকেজে নেই।
ভিন্টেগার
ভিন্টেগার হলো এক মজার, সৃজনশীল ও সহজে ব্যবহার করা যায় এমন এক সফটওয়্যার, যা ব্যবহারকারীদেরকে প্রদান করে বেশ কিছু স্পেশাল ইফেক্ট, যা আপনার ফটোতে প্রয়োগ করা যাবে, যাতে সেগুলোতে রেট্রো/ভিন্টেজ স্টাইল প্রদান করা যায়। প্রফেশনাল ও শিল্প-কৌশলী লুক সহজে অর্জন করা যায় এই অ্যাপ্লিকেশনের বিভিন্ন ধরনের ফিল্টার, ইফেক্ট ও ফটো অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে। ক্রপ, রিসাইজ ও রোটেড প্রভৃতি ফাংশন আপনার ছবির বিভিন্ন অংশ আলাদা করার ও আপনার চাহিদামতো সেগুলোকে কাস্টোমাইজ করার সুযোগ দেবে, যাতে আপনার ছবি পরিণত হয় রিয়েল আর্টওয়ার্কে। ইচ্ছে করলে আপনার ছবির চারদিকে ফাইনাল টাচ দেয়ার জন্য ফ্রেম যুক্ত করতে পারেন।
উইন্ডোজে ক্ল্যাসিক ভিন্টেগ লুকের জন্য আপনি ফ্রি ফটো এডিটর ভিন্টেগারে খুব বেশি কিছু করতে পারবেন না। আপনি হাইলাইট ও শ্যাডো অ্যাডজাস্ট করতে পারবেন। ভিন্টেগার সম্ভবত আপনার প্রাইমারি ফটো প্রসেসিং টুল নাও হতে পারে। ভিন্টেগার টুলে খুব সহায়ক কিছু ফটো কোলাজ মোড রয়েছে, যা কম্পাইল করতে পারে সর্বোচ্চ পাঁচটি স্বতন্ত্র টোয়েক শুট এক সিঙ্গেল হোলে।
সুমো পেইন্ট
সুমো পেইন্ট ক্লাউডভিত্তিক এক সৃজনশীল শক্তিশালী অল-ইন-ওয়ান ফটো এডিটর, যা ওয়েব/মোবাইল ব্রাউজারে কাজ করে ডিভাইসে কোনো কিছু ইনস্টল না করে। সুমো পেইন্টের পরিপূর্ণ ফিচার বিভিন্ন ধরনের চারুশিল্পসম্মত টুল ও পেইন্টব্রাশসহ অবস্থান করে ব্রাউজারে। সুমো পেইন্টে রয়েছে ফটোশপের প্রায় সব বেসিক ফিচার এবং থ্রিডি ইফেক্ট ও ফিল্টার, অ্যানিমেটেড ব্রাশ, বিশ্বের সেরা গ্র্যাডিয়েন্ট টুলসহ অনেক ফিচার, যা খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে সুমো অ্যাপ্লিকেশন ও গেম রয়েছে। সুমো পেইন্ট বর্তমানে এক সেরা অনলাইন ড্রয়িং টুল, যা দিয়ে ফটো এডিটিংয়ের কাজও করা যায়। আপনি ইমেজকে ওপেন ও সেভ করতে পারবেন হার্ডড্রাইভে অথবা ক্লাউডে সেভ করতে পারবেন। বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব সুমো অ্যাপ্লিকেশন সম্পন্ন হবে সুমো স্ক্রিপ্ট দিয়ে, যাতে সবকিছু HTML5-এর সাথে কাজ করতে পারে কোনো কিছু ইনস্টল করার প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com