লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম:
লুৎফুন্নেছা রহমান
মোট লেখা:১৪১
লেখা সম্পর্কিত
২০১৬’র সেরা কয়েকটি ব্যাকআপ সফটওয়্যার
ব্যাকআপ ইউটিলিটি হলো এমন এক প্রোগ্রাম, যাকে ডিজাইন করা হয় ডাটার সুরক্ষার জন্য একটি সেকেন্ডারি লোকেশনে ডাটার কপি তৈরি করে। ইদানীং জটিল কমপিউটিং পরিবেশে অনেক অর্গানাইজেশনের আইটি টিম বিভিন্ন ধরনের ব্যাকআপ ইউটিলিটির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন সিস্টেমে ডাটার কপি তৈরি করে রাখে। একটি ইউটিলিটি ব্যবহার হতে পারে ল্যাপটপে ও ডেস্কটপে ডাটা ব্যাকআপ করার জন্য, আবার কোনো ইউটিলিটি ব্যবহার হতে পারে ফিজিক্যাল সার্ভারে ও এমনকি আরেকটি ভার্চুয়াল ডেস্কটপে যাতে ডাটা সুরক্ষক্ষত থাকে। একটি ব্যাকআপ ইউটিলিটি একটি ব্যাকআপ টার্গেটের জন্য নির্দিষ্ট করা হতে পারে অথবা ডিজাইন করা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের টার্গেটের সাথে কাজ করার জন্য অনেকগুলো ডিভাইস, যেমন- ডিস্ক, টেপ বা ক্লাউড থেকে ডাটা ব্যাকআপ করার জন্য।
যে কারণে ডাটা ব্যাকআপ অপরিহার্য
ডাটা ব্যাকআপ ডাটা ব্যবহারকারীদের কাছে খুবই মূল্যবান। কারণ, ডাটা তৈরি করতে প্রচুর সময়, শ্রম ও প্রচেষ্টার দরকার। কখনও কখনও কোনো কোনো ডাটা আবার তৈরি করাও যায় না। যেহেতু ডাটা তৈরি করতে প্রচুর সময় ও শ্রমের প্রয়োজন হয়, তাই এর নিরাপত্তার জন্য যথাযথ পদক্ষক্ষপ নেয়া উচিত। সাধারণত ডাটা চারটি কারণে হারিয়ে যেতে পারে বা নষ্ট হতে পারে। যেমন- হার্ডওয়্যার ফেইল্যুর, সফটওয়্যার বাগ, হিউম্যান অ্যাকশন তথা ব্যবহারকারীর আচরণ প্রাকৃতিক বিপর্যয়। আধুনিক হার্ডওয়্যার যথেষ্ট বিশ্বস্ত হলেও মাঝে-মধ্যে বিপর্যয় ঘটে থাকে।
কমপিউটিং সিস্টেমে ডাটা স্টোরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো হার্ডডিস্ক, যা নির্ভর করে ছোট ম্যাগনেটিক ফিল্ডের ওপর। আধুনিক সফটওয়্যারগুলোও তেমন নির্ভরযোগ্য নয়, অবশ্য রক সলিড প্রোগ্রামগুলো এর ব্যতিক্রম। এ ছাড়া কমপিউটার ব্যবহারকারীরাও তেমন নির্ভরযোগ্যও নন। কারণ, ব্যবহারকারীরা ভুল করতে পারেন, যার কারণেও সমস্যা হতে পারে। আবার ডাটা ম্যালিশাসে আক্রান্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এসব কারণে ডাটা ব্যাকআপ নেয়া অপরিহার্য।
যথাযথভাবে ডাটা ব্যাকআপ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফিজিক্যাল বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত অন্য সবকিছুর মতো ডাটাও কোনো এক সময় নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা হারিয়ে যেতে পারে। যথাযথভাবে ডাটা ব্যাকআপ করে ঠিকভাবে কাজ করছে কি না তা নিশ্চিত করা ডাটা ব্যাকআপেরই অংশ।
কিন্তু বিস্ময়করভাবে তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই তাদের পিসির সিস্টেম, ডকুমেন্ট ও মিডিয়া ফাইলের ব্যাকআপ নেয়ার জন্য সময় ও শ্রম ব্যয় করতে চান না। যার ফলে তাদেরকে কখনও কখনও চরম মূল্য দিতে হয়। যেমন- গত আগস্টে ডেল্টা এয়ারলাইন্সকে ১৩শ’র বেশি ফ্লাইট ব্যধ্য হয়ে বাতিল করতে হয়। এ জন্য ডেল্টা এয়ারলাইন্সকে ১০ কোটি ডলারের বেশি ক্ষতি স্বীকার করতে হয়। অবশ্য দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বা যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে এমনটি হয়নি, বরং হয়েছে কোম্পানির কমপিউটার সিস্টেমের বিপর্যয়ের কারণে। ডেল্টার মতো একটি বড় কর্পোরেশনে যদি এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে সাধারণ ব্যবহারকারীদের কেমন অবস্থা হতে পারে, তা সহজে বুঝা যায়।
সব ধরনের টেকনোলজি হতে পারে নতুন আইম্যাক, মহাশূন্য যান, হোবার বোর্ড, ওয়েব মেইল সার্ভার অথবা উইন্ডোজ ভিস্তাচালিত দশ বছরের পুরনো পিসিও মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। সিস্টেম ক্র্যাশের জন্য হার্ডড্রাইভ সাধারণের কাছে খুবই কুখ্যাত এবং র্যাসনসামওয়্যার কমপিউটার কনটেন্টে অ্যাক্সেস করাকে ব্যাহত করে। এ ছাড়া কিছু কিছু বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যেগুলো প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট নয়। যেমন- আগুন, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও পিসিকে রেন্ডার করতে এবং অন্যান্য প্রাযুক্তিক হার্ডওয়্যার অপারেটে অযোগ্য হতে পারে। তা ছাড়া ল্যাপটপ চুরিও হতে পারে। ডিজিটাল কনটেন্ট যেমন বিজনেস অ্যাসেট-ডকুমেন্ট, প্ল্যান, ফিন্যান্সিয়াল স্প্রেডশিট ইত্যাদি ব্যাকআপ সফটওয়্যার দিয়ে রক্ষা করার গুরুত্ব দিনে দিনে শুধু যে বেড়েই চলছে তা নয়, বরং পারিবারিক ছবি, ভিডিও এবং মিউজিক ইত্যাদি রক্ষা করার গুরুত্ব বেড়ে গেছে আগের চেয়ে অনেক বেশি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উইন্ডোজ ও ম্যাক ওএস এক্স তাদের বিল্টইন ব্যাকআপ টুলগুলোকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মাইক্রোসফট সম্পৃক্ত করে ফাইল হিস্ট্রি ফিচার ও একটি সম্পূর্ণ ডিস্ক ব্যাকআপ ফিচার এবং ওএস এক্স সম্পৃক্ত করে টাইম মেশিন নামের এক সফটওয়্যার। উভয় সফটওয়্যার ভালোই কাজ করে ডাটা ব্যাকআপ করার ক্ষক্ষত্রে, যদিও এদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
যেভাবে ব্যাকআপ সফটওয়্যার কাজ করে
ব্যাকআপ সফটওয়্যারের ধারণাটিকে খুব সাধারণভাবে বলা যায় স্টোরেজে আপনার ফাইলের একটি কপি তৈরি করা, যা হবে মূল হার্ডড্রাইভ থেকে আলাদা। এ স্টোরেজটি হতে পারে অন্য আরেকটি ড্রাইভ, একটি এক্সটারনাল ড্রাইভ, একটি NAS, একটি রিরাইটেবল ডিস্ক অথবা একটি অনলাইন স্টোরেজ ও সিনসিং। আপনি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল হারিয়ে ফেলতে পারেন। হতে পারে তা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে অথবা ভুল করে ফাইল মুছে ফেলার কারণে অথবা ফাইলগুলো ওভাররাইট করার কারণে। তবে যেভাবেই ডাটা হারিয়ে যাক না কেন, তা রিস্টোর করতে পারবেন সেভ করা কপি থেকে।
এ কাজ করার জন্য নিয়মিতভাবে আপনার ফাইলগুলোকে আপডেট করতে হবে। বেশিরভাগ ব্যাকআপ সফটওয়্যারই সুযোগ দেবে আপনার হার্ডড্রাইভের নতুন ও পরিবর্তিত ফাইলগুলোকে দৈনিক, সপ্তাহ বা মাসিকভাবে শিডিউল স্ক্যানের। তবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ব্যাকআপ সফটওয়্যারগুলো যেন আপনার হার্ডড্রাইভের পরিবর্তন এবং নতুন ফাইলগুলো অবিরতভাবে মনিটর করতে থাকে। বেশ কিছু সফটওয়্যার অফার করে অবিরত ব্যাকআপ অপশন।
ডাটা ব্যাকআপের জন্য রয়েছে অধিকতর অপশন। হতে পারে তা ফুল, ইনক্রিমেন্টাল বা ডিফারেন্সিয়াল। স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান, প্রথম অপশনটি চমৎকার। এটি ব্যাকআপ করার জন্য আপনার সিলেক্ট করা সব ডাটা অখ- অবস্থায় কপি করবে। ইনক্রিমেন্টাল ব্যাকআপ সবশেষ ইনক্রিমেন্টাল ব্যাকআপ থেকে ফাইলের পরিবর্তনগুলো ব্যাকআপ করার মাধ্যমে ইনক্রিমেন্টাল ব্যাকআপ সিস্টেম রিসোর্স সেভ করে ও ডিফারেন্সিয়াল ব্যাকআপ সবশেষ ফুল ব্যাকআপ থেকে পরিবর্তনগুলো সেভ করে। ইনক্রিমেন্টাল ব্যাকআপে আপনার দরকার সবশেষ ফুল ব্যাকআপ এবং মধ্যবর্তী ব্যাকআপ ডাটা ফাইলগুলোকে রেস্টোর করে এর মূল অবস্থায়, যেখানে ডিফারেন্সিয়াল ব্যাকআপে দরকার সবশেষ ডিফারেন্সিয়াল ব্যাকআপ ডাটা সেট এবং প্রথম ফুল ব্যাকআপটি।
ব্যাকআপ সেটিংয়ের সময় সাধারণত কিছু সিকিউরিটি অপশন পাবেন, যেমন- পাসওয়ার্ড প্রটেকশন ও এনক্রিপ্টশন। আপনি যেসব ডাটা ব্যাকআপ করছেন, সেগুলো যদি খুব বেশি সংবেদনশীল হয়, তাহলে এগুলোর মধ্যে উভয়ই ব্যবহার করা ভালো। বেশ কিছু ব্যাকআপ অ্যাপ্লিকেশন অফার করে আরেকটি অপশন। এটি আগের ভার্সনের কতগুলো ফাইল আপনি সংরক্ষণ করতে চান এবং কতদিনের জন্য তা নির্দিষ্ট করার সুযোগ আপনাকে দেবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ স্থানীয়ভাবে ব্যাকআপ স্টোর করার জন্য সবচেয়ে বেশি নির্দিষ্ট করা উচিত, বিশেষ করে যখন অনলাইন ব্যাকআপ হোস্টের জন্য বার্ষিক কোনো চার্জের প্রয়োজন হয় না। যেকোনো ক্ষক্ষত্রে ইনক্রিমেন্টাল পরিবর্তন তেমন স্পেস ব্যবহার করে না।
একটি সাধারণ ফাইল কপি করার চেয়ে একধাপ এগিয়ে হলো সিস্টেম ফাইলসহ সম্পূর্ণ হার্ডড্রাইভ কপি করা, যাকে বলে ডিস্ক ইমেজ। এটি হার্ডড্রাইভের প্রতিটি বিট ডাটা ধারণ করে এবং অফার করে অধিকতর শক্তিশালী প্রটেকশন। যেহেতু হার্ডড্রাইভ ফেইল্যুরের পরে সিস্টেমকে আবার তৈরি করতে আপনাকে সক্ষম করে তুলবে। কিছু কিছু প্রোডাক্ট ডিস্ক ইমেজকে প্রায় অবিরতভাবে আপডেট করতে পারে। তবে বাড়তি প্রটেকশনের জন্য দরকার জটিল সেটিং এবং রিস্টোরিং। একটি প্রি-বুট এনভায়রনমেন্ট রান করানোর জন্য আপনার দরকার হবে স্টার্টআপ মিডিয়া থেকে একটি সিস্টেম ইমেজ রিস্টোর করা। এমনটি করতে হবে যেহেতু মূল ওএসে সম্ভব নয়।
ডাটা ব্যাকআপের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ্রোচ হলো অনলাইনে ব্যাকআপ করা, যা আমাদের সবার কাছে ক্লাউড ব্যাকআপ হিসেবে পরিচিত। সার্ভিস যেমন ওউৎরাব এবং SOS Online Backup নিরাপদে আপনার ডাটা ইন্টারনেটে সেন্ড করে এবং তা রিমোট ফাইল সার্ভারে এনক্রিপ্টেড ফর্মে সেভ করে। এ অপশনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো স্থানীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ডাটা থাকে সুরক্ষক্ষত। আর ক্লাউড ব্যাকআপের ডাউনসাইড হলো এর জন্য বার্ষিক ফি দিতে হয় এবং স্থানীয় কপি লোড করার চেয়ে ব্যাকআপ আপলোডিং ও ডাউনলোডিং হয় বেশ ধীরগতিতে। কিছু লোকাল ব্যাকআপ তৈরি করার জন্য অনলাইন ব্যাকআপ সার্ভিস যেমন- CrashPlan ও SOS Online Backup সম্পৃক্ত করে সফটওয়্যার।
ব্যাকআপ থেকে রিস্টোর করা
যেভাবে আপনার ব্যাকআপ সেটআপ করবেন, সেভাবে তা রিস্টোর করতে পারবেন। যদি আপনি সম্পূর্ণ হার্ডডিস্ক ইমেজ ব্যাআপ করে থাকেন, তাহলে সিস্টেমকে স্টার্ট করতে হবে বুটেবল মিডিয়া থেকে, যেমন- ডিভিডি অথবা ইউএসবি স্টিক থেকে, যা আপনি সফটওয়্যারে তৈরি করেছেন। আরেকটি এক্সটারনাল ড্রাইভ অ্যাটাচ করা আপনার দরকার হতে পারে, যা ধারণ করে বুট মিডিয়াসহ ব্যাকআপ ডাটা। কয়েকটি প্রোগ্রাম আপনাকে এক পিসি থেকে আরেক পিসিতে ডাটা রেস্টোরের সুযোগ দেয়, যাদের হার্ডওয়্যার ভিন্ন। এ ফিচারটি খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখে, বিশেষ করে যখন নতুন পিসি হার্ডওয়্যারে মাইগ্রেট করা হয়, যা প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রিকোভারের বিপরীত।
স্বতন্ত্র ফাইল রিস্টোর করার জন্য বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন যেমন- Acronis True Image ও Paragon Backup & Recovery আপনাকে আগের ভার্সনে সেভ করা ফাইলগুলোর মধ্য থেকে একটি বেছে নেয়ার অপশন দেবে। রিস্টোর করার জন্য কোন ফাইল ভার্সন রয়েছে, তা নির্ভর করে কত ঘন ঘন আপনি ব্যাকআপ রান করছেন তার ওপর। আর এসব কারণে অবিরত ব্যাকআপ অপশন তুলনামূলকভাবে অধিকতর পছন্দের। এ অপশনে যখনই একটি ফাইল সেভ করা হয়, তা ব্যাকআপ হয়। এর ফলে আগের যেকোনো পয়েন্ট বা অবস্থা ফিরে পাওয়া যায়
ফিডব্যাক : mahmood_sw@yahoo.com