ইন্টেল থান্ডারবোল্টের জন্ম দিয়েছিল ২০১১ সালে। মূলত দ্রুতগতির সংযোগের উন্নয়নের লক্ষক্ষ্য ইউএসবির পরিবর্তে এ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়। ইউএসবি বর্তমানে তৃতীয় প্রজন্মে উন্নীত হলেও এর গতি মাত্র ৫ গিগাবিট/সেকেন্ড। অন্যদিকে প্রথম প্রজন্মের থান্ডারবোল্ট তারচেয়ে দ্বিগুণ পরিমাণে ডাটা বিনিময়ের ক্ষমতা অর্জন করেছিল। এ ছাড়া শুধু স্টোরেজের জন্য সিরিয়াল ডাটা নয় বরং ডিসপ্লের জন্য ভিডিও ডাটাও প্রদান করতে সক্ষম। তবে এ পণ্যের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় এবং সেইসাথে প্রচলিত কমপিউটার জাতীয় পণ্যে থান্ডারবোল্ট পোর্টের অনুপস্থিতি থাকায় এটি উল্লেখযোগ্য সাড়া জাগাতে পারেনি। ফলে ইউএসবি বাজারে বেশ আধিপত্য বজায় রেখে চলেছিল। গত জুন মাসে ইন্টেল আলপিন রিজ তথা থান্ডারবোল্ট ৩ বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দেয়, যা শুধু গতি নয় বরং ইন্টারফেসের ক্ষক্ষত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করবে অর্থাৎ ভিন্ন ধরনের ইন্টারফেস নয় বরং ইউএসবি ৩.১ (টাইপ সি) কন্ট্রোলার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ফলে ইউএসবি ইন্টারফেস (মাইক্রো ইউএসবি) ধারণ করবে। ফলে থান্ডারবোল্ট ৩ ইউএসবি ইন্টারফেস প্রযুক্তিতে বিলীন হয়ে যাবে। থান্ডারবোল্ট পোর্টে এখন থেকে থান্ডারবোল্ট ছাড়া ডিসপ্লে পোর্ট, ইউএসবি ৩ এবং পিসিআই এক্সপ্রেস ব্যবহার করা যাবে। যদিও ইন্টেল তাদের তালিকায় পিসিএক্স প্রেসকে অন্তর্ভুক্ত করেনি, তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন এটি করা যাবে। থান্ডারবোল্ট ৩-এ ব্যান্ডউইডথ আনা হয়েছে ৪০ গিগাবিট/সেকেন্ড তথা ৫ গিগাবাইট/সেকেন্ড, যা পিসিআই একপ্রেস ২.০-এর তুলনায় সামান্য কম। তবে দুটো ৪-কে ৬০ হার্টজ ডিসপ্লে তথা মনিটরে এটি ডাটা প্রদান করতে সক্ষম হবে।
থান্ডারবোল্টের অসুবিধা হলো এর ব্যয়বহুল ক্যাবলিং। তবে ইন্টেল হালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নয়ন ঘটিয়েছে। ২ মিটার প্যাসিভ ক্যাবলে ২০ জিবি/এস এবং অ্যাকটিভ ক্যাবলে ৪০ জিবি/এস সংযোগ প্রদানে সক্ষম হবে। যদিও অপটিক্যাল ক্যাবলে ৪০ জিবি/এস গতিতে ৬০ মিটার পর্যন্ত টেনে নেয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ল্যাপটপ চার্জ হয়ে যাবে পাশাপাশি (১০০ ওয়াট পর্যন্ত)। ফলে থান্ডারবোল্ট ৩-এ যা পাওয়া যাবে তা হলো-
ইন্টেল এ কারণে থান্ডারবোল্টকে নিয়ে এক সেস্নাগান চালু করেছে- ‘সবাইকে শাসন করবে এক ক্যাবল’। যদিও ভার্সন ১ ও ২-এ ইন্টেল সফল হতে পারেনি, তবে তারা এবার সফলতার মুখ দেখবে বলে আশাবাদব্যক্ত করেছে। কারণ, একমাত্র অ্যাপল তার পণ্য ম্যাকবুক প্রো, ম্যাক প্রো ও আই ম্যাকে উপরোক্ত দুটি প্রযুক্তি (১ ও ২) ব্যবহার করেছিল। এটি যে ক্রমান্বয়ে ফায়ার-ওয়্যারের মতো মুখ থুবড়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তা থেকে পরিত্রাণ পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এটি অবমুক্ত হওয়ার পর। এ ছাড়া ইন্টেল থান্ডারবোল্ট চিপের দাম বেশ কমিয়েছে- মাত্র ৮ ডলার। কমপিউটার নির্মাতারা যখন ভলিউম পরিমাণে ক্রয় করবে, তখন এর দাম ৫ ডলারের চেয়েও কম দামে পাবে। ফলে নতুন মাদারবোর্ড ও পিসি, ল্যাপটপ ও ট্যাবলেটসহ যাবতীয় পণ্যে এটি অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হয়ে যাবে এবং ক্রমান্বয়ে এটি বাজার দখল করতে সমর্থ হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
এইচপির মাইক ন্যাশ জানিয়েছেন, থান্ডারবোল্ট ৩ কর্পোরেট ল্যাপটপের ক্ষক্ষত্রে আবেদন রাখবে এ কারণে যে, একটিমাত্র ক্যাবলের মাধ্যমে তারা ডক ও চার্জিংয়ের সুবিধা পাবে। তবে থান্ডারবোল্টের বড় সক্ষমতা হচ্ছে ল্যাপটপে এক্সটারনাল গ্রাফিক্স ব্যবহার করা, যা বেশ অভিনব। এর ফলে অতিশয় পাতলা ল্যাপটপে গেম খেলার সুযোগ সহজ হয়ে পড়বে।
ল্যাপটপে থান্ডারবোল্ট ৩ বেশ কার্যকারিতা দিলেও ডেস্কটপে এটি তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে কিছু ভেন্ডর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এদিকে ইন্টেল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পিসি ভেন্ডরদের কাছে এ প্রযুক্তি বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এটাকে তারা ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবে দেখছেন। তাইওয়ানে একটি কেন্দ্র খুলেছে যাতে করে দ্রুত পণ্যের অনুমোদন দেয়া যায়। ইন্টেল সত্যিই বিশ^াস করে, ‘এক তার দিয়ে সব কাজ করা সম্ভব’ সেস্নাগানটি অচিরেই বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।
ইন্টেলের প্রতিদ্বন্দ্বী এএমডি তাদের এক্সটারনাল ভিডিও কার্ডের জন্য থান্ডারবোল্ট ৩ ড্রাইভার বাজারে ছেড়েছে।
থান্ডারবোল্ট-পরবর্তী কী?
উচ্চ রেজ্যুলেশনসমৃদ্ধ কিছু ডিসপ্লে চালাবার জন্য ব্যান্ডউইডথ বাড়াবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। যেমন- ইউএইচডি ৮-কে (৭৬৮০ বাই ৪৩২০) ডিসপ্লে ৩৩.২ মেগাপিক্সেলের প্রয়োজন হয়। ফলে ৮০ জিবি/সেকেন্ড পর্যন্ত ব্যান্ডউইডথকে উন্নীত করার প্রয়োজন হতে পারে। বর্তমানে অ্যামবেডেড ডিসপ্লে পোর্ট ভার্সন ১.৪এ নির্মাণ করেছে ভেসা নামের সমিতি, যা অচিরেই ১.৪বি-তে উন্নীত হবে। বর্তমানে প্রচলিত ডিসপ্লে প্রোটোকলে এ প্রযুক্তি সন্নিবেশিত হলে তা থান্ডারবোল্টে গড়াবে তাতে সন্দেহ নেই।
থান্ডারবোল্টের সীমাবদ্ধতা
যদি ভোক্তারা থান্ডাবোল্টের মাধ্যমে পিসিআই এক্সপ্রেস বাসকে সম্প্রসারিত করে, তাহলে তা পিসি সিস্টেমে লো-লেভেল তথা নিমণপর্যায়ে প্রবেশাধিকার প্রদান করতে পারে। ফলে এটি নিরাপত্তা বলয়ে একটি ফাটল প্রদান করতে পারে ডিএমএ (ডাইরেক্ট মেমরি অ্যাক্সেস) আক্রমণের মাধ্যমে। যদিও এটি পিসি কার্ড, এক্সপ্রেস কার্ড ও ফায়ারওয়্যারের মাধ্যমেও সম্ভব ছিল। থান্ডারবোল্ট ইন্টারফেস ক্ষতিকর ডিভাইস সংযোগ করে অনায়াসে অপারেটিং সিস্টেম-প্রদত্ত সব নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে সিস্টেম মেমরিতে রিড/বাইট করতে সক্ষম হতে পারে এবং ম্যালওয়্যারকে ঢুকিয়ে দিতে পারে। তবে আইওএমএমইউ (IOMMU) কৌশল প্রয়োগ করে এ অপতৎপরতা বন্ধ করে দেয়া যেতে পারে