• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > দ্রুতগতিতে টেলিকম টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নে দুষ্টচক্রের হাত!
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: সম্পাদক
মোট লেখা:৩১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - জানুয়ারী
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
সম্পাদক
তথ্যসূত্র:
সম্পাদকীয়
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
দ্রুতগতিতে টেলিকম টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্নে দুষ্টচক্রের হাত!
আন্তর্জাতিক কোনো উৎস থেকে সরকারি কেনাকাটার টেন্ডার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হওয়ার কাজটিকে বাংলাদেশে সুদীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া হিসেবেই আমরা জানি। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিকে একটি আন্তর্জাতিক ক্রয়প্রক্রিয়া মাত্র চার দিনে সম্পন্ন করার নজির সৃষ্টি করেছে। দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে রাজধানীর সংযোগ গড়ে তোলার এই কাজটির দরপত্রের যাবতীয় কাজ মাত্র চার দিনে সম্পন্ন করায় বিষয়টি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞেদের পক্ষ থেকে।
এই চার দিন সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান বিটিসিএল আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান, গ্রহণ, মূল্যায়ন, অনুমোদন ও চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি সবই সম্পন্ন করেছে। এটি বাংলাদেশে সরকারি ক্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্নের একটি রেকর্ড সময় ধরে নেয়া যায়। অধিকন্তু বিটিসিএল বিক্রেতার কাছ থেকেও সরবরাহ পেয়ে গেছে। আর এই বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে আরেকটি সরকারি সংস্থা টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টিএসএস) থেকে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করে। আইনজীবীরা মনে করেন, এটি আদালত অবমাননার শামিল।
ক্রয়সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এ ধরনের একটি আন্তর্জাতিক ক্রয়ের কাজ চার দিনে সম্পন্ন করা কিছুতেই সম্ভব নয়। কারণ, এজন্য বেশ কয়েকটি সময়ক্ষেপী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিউ) মহাপরিচালক ফারুক হোসেইন বলেছেন, ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ-ছয়টি পদক্ষেপ সম্পন্ন করতে হয়। প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পন্ন করতে কয়েক দিন সময় প্রয়োজন। আলোচ্য ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেয়েছি অতিদ্রুততার সাথে এসব কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। মনে হয়, টিএসএস ও বিটিসিএল কর্মকর্তারা একযোগে সম্মিলিতভাবে এই কাজটি সম্পন্ন করেছেন। তিনি আরও বলেন, যদিও এটি একটি সরাসরি ক্রয়, তাই এর জন্য সরবরাহকারীকে অফার দেয়ার পর কমপক্ষে ১৪ দিন সময় দেয়া প্রয়োজন। সাধারণত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি সাত দিন সময় নেয় একটি প্রস্তাবে ভালো-মন্দ বিস্তারিত পরীক্ষা করে দেখার জন্য। বোর্ডকে তা অনুমোদন দিতে হয়। প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে আছে আরও নানা আনুষ্ঠানিকতা। এরপর চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এমনটিই জানিয়েছেন ফারুক হোসেইন। অথচ যেসব কর্মকর্তা এই সরকারি ক্রয়কাজের দায়িত্বে ছিলেন, তারা বলছেন সংশ্লিষ্ট নিয়মকানুন মেনেই এই কাজ সম্পন্ন করেছেন।
এই ক্রয়প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ৯ নভেম্বর, যখন বিটিসিএল বোর্ড এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয় সরাসরি কেনার ব্যবস্থার আওতায় ঢাকা-কুয়াকাটা ট্রান্সমিশন সিস্টেম স্থাপনের। বৈঠকের কার্যবিরণী স্বাক্ষর হয় ১৩ নভেম্বর। তা সত্ত্বেও দলিল মতে টিএসএস ক্রয়প্রস্তাব পেশ করে ১০ নভেম্বর। টিএসএস কখনই এ ধরনের সিস্টেম তৈরি বা সংযোজন করেনি। এটি সিদ্ধান্ত নেয় প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আনবে ভারতীয় কোম্পানি ‘তেজাস নেটওয়ার্ক’। ভেতরের একটি সূত্র মতে, এর অর্থ দাঁড়ায় বিটিসিএল থেকে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে টিএসএস অভিজ্ঞতা, কারিগরি ও আর্থিক সার্টিফিকেট নেয় তেজাস নেটওয়ার্ক থেকে। ১০ নভেম্বর বিটিসিএল একটি কমিটি গঠন করে টিএসএসের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য। কমিটি টিএসএসের পক্ষে সম্মতি জ্ঞাপন করে ১৩ নভেম্বর। কারণ, ১১ ও ১২ নভেম্বর ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিল। এক দিন পর একটি জরুরি বোর্ড মিটিংয়ে বিটিসিএল ক্রয়প্রস্তাবটি অনুমোদন করে। ১৫ নভেম্বর বিটিসিএল ও টিএসএসের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ২০০৮ সালের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল চুক্তি স্বাক্ষরের আগে পারফরম্যান্স সিকিউরিটি নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার পর টিএসএস একটি চিঠির মাধ্যমে বিটিসিএলকে নিশ্চিত করে, এটি যথাসম্ভব সংক্ষেপ্ত সময়ের মধ্যে এই সিকিউরিটি ডিপোজিট দেবে টেকনোলজি পার্টনার থেকে তা পাওয়ার পর। এখানেও আবার লঙ্ঘিত হয়েছে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল।
১৫ নভেম্বর তুরস্কের নেটাস টেলিকমিউনিকেসিওন এএস অফার করে ইউএসভিত্তিক সিয়েনার ইকুইপমেন্ট, যা টেকনিক্যালি ও ফিন্যান্সিয়ালি রেসপনসিভ পাওয়া যায়। তুরস্কের প্রতিষ্ঠানটিকে সফল দরপত্রদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং সুপারিশ করা হয় চুক্তির জন্য। কিন্তু যখন তা বোর্ডে পেশ করা হয়, তখন বোর্ড পুরো প্রক্রিয়াটি বাতিল ঘোষণা করে। এরপর নেটাসের পক্ষ থেকে অভিযোগও তোলা হয়।
এরপরও ঘটনা-বিঘটনা আরও সুদীর্ঘ। গত ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই প্রক্রিয়াটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। আদালত বিটিসিএলকে নতুন করে দরপত্র আহবানের আদেশও দিয়েছেন। সরকারি ক্রয়ে এ ধরনের দ্রুততার সাথে মাত্র চার দিনে এই ক্রয়প্রস্তার সম্পন্ন করা ও অন্যান্য ঘটনা থেকে এটুকু স্পষ্ট, এখানে একটি দুষ্টচক্র কাজ করেছে। কাজটি যে বিধিসম্মত ছিল না, তা আদালতের রায় থেকেও স্পষ্ট। আমরা চাই ভবিষ্যতে এ ধরনের অনিয়ম থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে।


পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - জানুয়ারী সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস