লেখক পরিচিতি
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - ফেব্রুয়ারী
কমপিউটার বুঝবে ব্যাথা
কেমন হয়, যদি হাতে থাকে এমন একটি কমপিউটার যেটি আপনার প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠতে পারত। বুঝতে পারত আপনার মনের বেদনা। হ্যাঁ, তেমনটিই খুব শিগগির সম্ভব করে তুলতে যাচ্ছে কমপিউটার বিজ্ঞানের একটি ক্ষেত্র, যার নাম দেয়া হয়েছে অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং। বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীরা এমনই কিছু ব্যবস্থা ও ডিভাইস গড়ে তুলতে যাচ্ছেন, যা মানুষের আবেগ ও মানবিক প্রভাবের ছদ্মরূপ ধারণ করে তা চিনতে, ব্যাখ্যা করতে ও প্রক্রিয়াজাত করতে পারবে। এটি একটি ইন্টারডিসিপ্লিনারি ফিল্ড, তথা জ্ঞানের বহুশাখা সম্পর্কীয় বিষয়, যা বিসত্মৃত কমপিউটার বিজ্ঞান, মনস্তত্ব ও কগনিটিভ সায়েন্সের তথা বোধবিজ্ঞানের বিষয়-আশয়ে। এর উৎস নিহিত রয়েছে দর্শন বিজ্ঞানের আবেগ বা ইমোশন সম্পর্কিত দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানের মাঝে। ১৯৯৫ সালে অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং বিষয়ের ওপর লেখা রোসালিন্ড পিকার্ডের একটি নিবন্ধে এর আধুনিক প্রক্রিয়া ক্যাটেলাইজ করা হয়। আমাদের জীবনে কমপিউটারের ব্যবহার যত বেশি বাড়বে, তত বেশি করে আমরা চাইব কমপিউটার আমাদের সাথে কোমল ও সামাজিকভাবে আরও বেশি স্মার্ট উপায়ে কাজ করুক। আমরা চাইব না কমপিউটার গুরুত্বহীন তথ্য দিয়ে আমাদেরকে বিরক্ত করুক। এ ধরনের কমন-সেন্সের কারণ খোঁজার জন্য প্রয়োজন মানুষের আবেগিক পরিস্থিতি, তথা ইমোশনাল স্টেট বোঝা। আমরা এমন সিস্টেম দেখতে শুরু করেছি, যা আপনার ক্যুইজে উপস্থাপিত রিয়েল টাইমের পরিবর্তন উপস্থাপন করছেন অথবা ছাত্রদের মনোভাব পরিবর্তনের সাথে সাথে এক সেট ভিডিওর পরিবর্তন অনুমোদন করছেন ইত্যাদির মতো সুনির্দিষ্ট, পূর্ব-সংজ্ঞায়িত ফাঙ্কশন পারফর্ম করে।
আমরা কী করে এমন একটি কমপিউটার তৈরি করতে পারি, যা যথাযথভাবে আপনার মানসিক ও আবেগিক পরিস্থিতিতে সাড়া দিতে পারে? গবেষকেরা ব্যবহার করছেন সেন্সর, মাইক্রোফোন ও ক্যামেরার সাথে সফটওয়্যার লজিককে কাজে লাগিয়ে। ব্যবহারকারীর আবেগ ও বোধজ্ঞানকে বুঝে তাতে সাড়া দিতে সক্ষম একটি ডিভাইস পথনির্দেশ সংগ্রহ করতে পারে বিভিন্ন উৎস থেকে। মুখম-লে ফুটে ওঠা ফ্যাসিয়াল এক্সপ্রেশন, পশ্চার, জেশ্চার (ইশারা-ইঙ্গিত), স্পিস অথবা রিদম অব কি-স্ট্রোকস এবং মাউসে অনুভূত হাতের তাপমাত্রার পরিবর্তন ইত্যাদি সবকিছুর মাধ্যমে যে উল্লেখযোগ্য আবেগিক পরিবর্তন প্রকাশ পায়, তা একটি কমপিউটারের মাধ্যমে ধরা যায় এবং এর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা যায়। উদাহরণ টেনে বলা যায়, একটি বিল্টইন ক্যামেরা ধারণ করতে পারে ইউজারের ছবি। স্পিচ, জেশ্চার ও ফ্যাসিয়াল রিকগনিশন টেকনোলজি কার্যকরভাবে উদঘাটন করা হচ্ছে অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং অ্যাপ্লিকেশনের জন্য।
জেশ্চারকে কাজে লাগানো যেতে পারে ইউজারের আবেগিক অবস্থাটা ধরার জন্য। বিশেষ করে যখন তা ব্যবহার করা হয় স্পিচ ও ফেইস রিকগনিশন প্রযুক্তিকে একসাথে করে। এসব জেশ্চার বা ইশারা-ইঙ্গিতে থাকতে পারে সিম্পল রিফ্লেক্সিভ রেসপন্স, যেমন- আপনার কাঁধ তোলা, যখন আপনি কোনো প্রশ্নের উত্তর জানেন না। অথবা এগুলো হতে পারে কমপ্লেক্স ও মিনিংফুল, যখন যোগাযোগ চলে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে।
তৃতীয় আরেকটি উদ্যোগ হচ্ছে ফিজিওলজিক্যাল সাইন মনিটর করা। এগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে দেহের নাড়ির ও হৃদস্পন্দনের হার অথবা মাইনিউট কন্ট্রাকশন অব ফ্যাসিয়াল মাসল। ব্লাড ভলিউমে পালস মনিটর করা যাবে, যেটিকে আমরা জানি ‘গ্যালভানিক স্কিন রেসপন্স’ নামে। এ ক্ষেত্রের গবেষণা এখনও থেকে গেছে শৈশব পর্যায়ে। তবে এই গবেষণা গতিশীল হয়ে উঠছে। আমরা দেখতে শুরু করেছি, এই টেকনিক বাস্তব ফল বয়ে আনছে। সংগৃহীত ডাটা থেকে অর্থপূর্ণ ধরনের নির্যাস বের করে আনার জন্য প্রয়োজন ইমোশনাল ইনফরমেশন চিহ্নিত করা। মানুষের আবেগ চিহ্নিত করা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে একটি কাজ। কিন্তু কমপিউটারে আরেকটি কাজও চলছে। সে কাজটি হচ্ছে কমপিউটারে আবেগের চেহারা কেমন হবে তা জানা। এরই মধ্যে এমন সিস্টেম ব্যবহার হচ্ছে, যা স্বয়ংক্রিয় টেলিফোনে বোধজ্ঞান ধারণ করে। আর অনলাইন কনভারসেশন এজেন্টগুলো মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার সুযোগ করে দেয়।
অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিংয়ের নানা প্রয়োগ রয়েছে। একটি প্রয়োগ হচ্ছে শিক্ষায়। এ ধরনের ব্যবস্থাগুলো সহায়তা করতে পারে অনলাইন-লার্নিং ও ক্লাসরুম-লার্নিংয়ের একটি বড় সমস্যা সমাধান করতে। সমস্যাটি হচ্ছে, শিক্ষণ-সংক্রান্ত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া। ই-লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগের বেলায় অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং উপস্থাপনের সময় ক্লাসের কমপিউটারাইজড শিক্ষকদের স্টাইল বা ধাঁচের সাথে শিক্ষকেরা সাজুয্য আনতে পারেন- যখন একজন শিক্ষার্থী বিরক্তিবোধ করে, হতাশ হয়, আগ্রহবোধ করে অথবা সন্তুষ্ট থাকে। ফিজিওলজিক্যাল হেলথ সার্ভিসগুলো উপকৃত হয় অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং অ্যাপ্লিকেশন থেকে, যা নির্ধারণ করতে পারে গ্রাহকদের আবেগিক ও মানসিক অবস্থা। রোবটিক সিস্টেমগুলো মানুষের সাথে অথবা জটিল পরিবেশে কাজ করে অ্যাফেক্টিভ ইনফরমেশন অধিকতর কার্যকরভাবে প্রক্রিয়াজাত করতে পারে। কম্প্যানিয়ন ডিভাইসগুলো, যেমন- পোষা প্রাণীর সাথে ব্যবহারের ডিভাইসগুলো অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং সক্ষমতা ব্যবহার করে সামাজিক মনিটরিংয়ের কাজগুলো করতে পারবে। এর মাধ্যমে জোরদার করা যাবে রিয়েলিজম এবং প্রদর্শন করতে পারবেন উচ্চতর মাত্রার অটোনমির ডিসপ্লে।
সামাজিক মনিটরিংয়ের বেলায় আরও সম্ভাবনাময় প্রয়োগ করা যাবে অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিং। উদাহরণ বলা যায়, একটি গাড়ি মনিটর করতে পারবে এর ভেতরে থাকা সবার আবেগিক অবস্থা। সচেতন করে তুলতে পারবে তাদের অতিরিক্ত নিরাপত্তা উদ্যোগের ব্যাপারে। চালকের রাগান্বিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সবাইকে সতর্ক করে তুলতে পারে। অ্যাফেক্টিভ কমপিউটিংয়ের সম্ভাবনাময় প্রয়োগ রয়েছে হিউম্যান-কমপিউটার ইন্টারেকশনে, যেমন- ‘অ্যাফেক্টিভ মিরর’। এই মিরর একজন ইউজারকে দেখতে সাহায্য করে তিনি কতটুকু সফলতার সাথে পারফর্ম বা কাজ করছেন। একটি উদাহরণ হতে পারে এমন- চালকের মধ্যে কি ঘুম-ঘুম ভাব কাজ করছে, না অধিকতর দ্রুতগতিতে চলছেন, কিংবা চলছেন খুবই ধীরগতিতে। একটি সিস্টেমকে এমনকি তুলনামূলকভাবে প্রাসঙ্গিক বলা যাবে, যদি গাড়িচালক অসুস্থ বা নেশাগ্রস্ততা অনুভব করেন। যদিও কেউ ড্রাইভারের এ ধরনের অবস্থা সম্পর্কে মিশ্র-প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। ইমোশন মনিটরিং এজেন্টগুলো ক্রোধান্বিত ই-মেইল পাঠানোর আগে বরং পাঠাতে পারেন সতর্ক-বার্তা। অথবা একটি মিউজিক প্লেয়ার ট্র্যাক বাছাই করতে পারে আপনার মুডের অবস্থার ওপর নির্ভর করে