• ভাষা:
  • English
  • বাংলা
হোম > চাই বহুপক্ষীয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি
লেখক পরিচিতি
লেখকের নাম: মোহাম্মাদ আব্দুল হক
মোট লেখা:১৭
লেখা সম্পর্কিত
পাবলিশ:
২০১৭ - মে
তথ্যসূত্র:
কমপিউটার জগৎ
লেখার ধরণ:
ইনটারনেট
তথ্যসূত্র:
প্রচ্ছদ প্রতিবেদন
ভাষা:
বাংলা
স্বত্ত্ব:
কমপিউটার জগৎ
চাই বহুপক্ষীয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি
প্রযুক্তি যুগে সবচেয়ে টেকসই পথ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ইন্টারনেট। এই পথে সংযুক্ত রয়েছেন বিশ্বের ৩৪৩.১ কোটির বেশি মানুষ। ইন্টারনেট টেলিকমিউনিকেশন (আইটিইউ ২০১৬ সালের প্রতিবেদন) ইউনিয়নের হিসেবে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪৭ শতাংশই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার ৪০ শতাংশ হলেও উন্নত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠী। আঞ্চলিক হিসেবে আফ্রিকায় ২৩ শতাংশ, আমেরিকায় ৬৫ শতাংশ, আরব রাষ্ট্রগুলোয় ৪২ শতাংশ, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৪২ শতাংশ, কমনওয়েলভুক্ত স্বাধীন দেশগুলোতে ৬৭ শতাংশ ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ৭৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী আন্তর্জাতিক পথে যাতায়াত করে থাকে। কিন্তু বিশ্বের প্রায় ৫৩ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। আবার অনেক স্থানেই ইন্টারনেট এখনও প্রান্তিক মানুষের কাছে সহজলভ্য নয়। একইভাবে ইন্টারনেট দস্যুতা, প্রোপাগা-া, চৌর্যবৃত্তি তথা অশরীরীয় আক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ভয় বা শঙ্কা যেমন রয়েছে, পুঁজিবাদ কিংবা সাম্রাজ্যবাদ আগ্রাসন তথা মোড়লিপনা নিয়েও রয়েছে বিস্তর বিতর্ক, ব্যবহারে অনীহা কিংবা বাধা। এমন পরিস্থিতিতে টেকসই উন্নয়নে সার্বজনীন ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছে সংশিস্নষ্ট বিষয়ে জাতিসংঘের ছায়া সংগঠন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম তথা আইজিএফ। বহুপক্ষীয় অংশীজনের অভিমত নিয়েই সর্বজনগ্রাহ্য ও গণতান্ত্রিক একটি যুগোপযোগী নীতি বাস্তবায়নে ২০০৬ সাল থেকে কর্ম প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে সংগঠনটি। সরকার, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, প্রযুক্তিবিদ, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, ব্যবহারকারী নারী-তরুণসহ সব ক্ষেত্র থেকে (আঞ্চলিক পর্যায় থেকে) গ্রহণ করা হচ্ছে পরামর্শ। এসব পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয় আগামীর ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনার রূপরেখা। এই রূপরেখা প্রণয়নের সক্রিয় সদস্য দেশ হিসেবে গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশ কনসালটেশন অন এপিআরআইজিএফ ২০১৭’ শীর্ষক সভা।
বিআইজিএফের পরামর্শ সভা
আগামী ১৬-২১ ডিসেম্বর সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় অনুষ্ঠিত হবে চলতি বছরের ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (আইজিএফ)। এর আগে ২৬-২৯ জুলাই ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিত হবে ‘এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (এপিআরআইজিএফ) ২০১৭’ সম্মেলন। এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের এই সম্মেলনের আগে ১২-১৪ জুন হবে উপদেষ্টা (ম্যাগ) পর্যায়ের দ্বিতীয় বৈঠক। চলতি মাসের মধ্যে জমা দিতে হবে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠেয় কর্মশালায় অংশ নেয়ার আবেদন। এভাবেই পর্যায়ক্রমে ইন্টারনেট পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রান্তিক মানুষ তথা বহুপক্ষীয় অংশীজনের ভাবনা নিয়ে সুইজ্যারল্যান্ড সম্মেলনে যোগ দেবেন ফোরাম সদস্যরা। ফোরামের অন্যতম সদস্য হিসেবে এই আয়োজনে বরাবরের মতো অংশ নেবে বাংলাদেশ। সম্মেলনে যাওয়ার
আগে দেশের অন্যতম বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিষয়ক মুখপত্র মাসিক কমপিউটার জগৎ, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের সাথে যৌথভাবে ইন্টারনেট পরিচালনা সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নির্ধারণে পরামর্শ সভা করেছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম (বিআইজিএফ)। সভায় দেশে ইন্টারনেটের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় তথ্য মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগসহ সংশিস্নষ্টদের নিয়ে জাতীয় কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন বিআইজিএফ চেয়ারপারসন ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। একই সাথে স্কাইপে, ভাইবার কিংবা ফেসবুক লাইভের মতো প্রযুক্তি সেবার বৈধতা থাকার পরও দেশের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা জামানতের মাধ্যমে অনুমতি নেয়া, ডটবাংলা ও ডটবিডি নিবন্ধনে দীর্ঘসূত্রতা বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সভায় অংশ নেয়া আলোচকেরা। তাদের আলোচনায় উঠে এসেছে দেশের গ্রাম পর্যায়ে উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা, ইন্টারনেট ব্যবহারে বহুমাত্রিকতা সংযোজনের বিষয়টি। ডিজিটাল বৈষম্য ঘুচতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও আলোচকেরা নানা গঠনমূলক প্রস্তাব তুলে ধরেন। দাবি তোলেন সরকারের সংশিস্নষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মন্ত্রী, সচিবদের এ ধরনের বৈঠকে উপস্থিত হয়ে জনমানুষের নাড়ির স্পন্দন অনুভবের এবং রাজধানীর বাইরেও ইন্টারনেট ব্যবহার ও পরিচালনার ওপর আলোচনা শুরু করার।
বিএনএনআরসি’র প্রধান নির্বাহী এএইচএম বজলুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন বিআইজিএফের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু, বাংলাদেশ কমপিউটার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম মাহফুজুল ইসলাম, মেট্রোনেট লিমিটেডের সৈয়দ আলমাস কবির, ইন্টারনেট সোসাইটি ঢাকা শাখার সহ-সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর হোসেন, আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, বিআইজিএফের নির্বাহী সদস্য মো: সাজ্জাদ হোসেন খান, দৃক আইসিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী এসএম আলতাফ হোসাইন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং আইটি বিভাগের এসডিই প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ কায়সার, বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসক নূরুন্নবী চৌধুরী, গিগাবাইট বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি খাজা মো: আনাস খান, বিটিআরসির সহকারী পরিচালক ইশতিয়াক আরিফ, ই-ক্যাব ইয়ুথ ফোরামের প্রেসিডেন্ট আসিফ আহনাফ, জাতিসংঘের ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামে (আইজিএফ) মাল্টিস্টেকহোল্ডার অ্যাডভাইজরি গ্রুপের সদস্য ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটরস গ্রুপের (বিডিনগ) ট্রাস্টি চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির প্রমুখ।
অংশীজনের ভাবনা
বিআইজিএফ পরামর্শ সভায় শুরুতেই একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন বিআইজিএফ মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু। এতে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম গঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যেমন তুলে ধরা হয়, তেমনি উপস্থাপন করা হয় এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কর্মপরিধি। ‘ওয়ান ওয়ার্ল্ড, ওয়ান ইন্টারনেট’ স্লোগান বাস্তবায়নে ইন্টারনেটের মেরুদ- হিসেবে খ্যাত ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইন নেমস অ্যান্ড নাম্বারস তথা আইক্যানের কর্তৃত্ব যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে স্বাধীন সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাংলাদেশের সোচ্চার ভূমিকার কথা। জানানো হয়, বৈশ্বিক মতামত নিয়ে ইন্টারনেট সম্পর্কিত নিয়ম ও নীতিমালা প্রণয়নে ২০১৬ সালে স্বাধীন সংগঠন হিসেবে কাজ করছে সংস্থাটি। ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশ আইজিএফ আন্তর্জাতিক পরিম-লে কাজ শুরু করে। নিয়মিত প্রচেষ্টার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরে বাংলাদেশের পক্ষে ‘ডটবাংলা’র স্বীকৃতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। উপস্থাপনায় ডটবিডি ও ডটবাংলা সহজলভ্য ও সহজপ্রাপ্য করার দাবি জানিয়ে আবদুল হক অনু বলেন, ইন্টারনেটের উপযোগিতা বাড়াতে না পারলে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়বে। এ কারণে সবাইকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের বাইরে হোস্টিং না করে দেশেই তা সংরক্ষণে সরকারের প্রণোদনামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি মানুষের আস্থা অর্জনের প্রতি দৃষ্টি দেন তিনি।
সভায় তরুণদের নিয়ে বিআইজিএফের অধীনে আরও একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গঠনের ঘোষণা দেন সভার সঞ্চালক এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ইন্টারনেট পরিচালনা বিষয়ক স্টেকহোল্ডার গ্রুপের সদস্য এএইচএম বজলুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের তরুণেরাই যেহেতু ইন্টারনেট বেশি ব্যবহার করে, সে কারণে ইন্টারনেট সংশিস্নষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন কিংবা পরিচালনায় তাদের মতামতও যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। তাই তাদেরও একটি পস্নাটফর্ম তৈরি করা এখন সময়ের দাবি। তিনি বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রমী সভা। এ সভা কারও জন্য নাইস টু লার্ন, কারও জন্য মাস্ট টু লার্ন, আবার অন্যদের জন্য গুড টু লার্ন। এই তিন ক্যাটাগরির লোকই এই সভায় অংশ নিয়েছেন। এখানে যেমন আছেন ইন্টারনেট পরিচালনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তেমনি আছেন যারা অল্পবিস্তর জানেন তারাও। একেবারেই যারা জানেন না কিন্তু ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তারাও অংশ নেন এই সভায়। আসলে এই মাল্টি স্টেকহোল্ডার পদ্ধতিতে কেউ কাউকে দুষতে পারে না। তাই এই বৈঠকে সরকার, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যবসায় সংগঠন প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীরা অংশ নিচ্ছেন। এভাবেই ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সের ক্ষেত্রে যে চারটি স্তর রয়েছে, সব স্তরের অংশ নেয়ার মধ্য দিয়েই এই সভার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইন্টারনেট পরিচালনার একটি লাগসই নীতিমালা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এখানে ইন্টারনেটের সোশ্যাল, কনটেন্ট, লজিক্যাল ও ফিজিক্যাল বিষয়ে আমাদের ভাবনা বিনিময় করব। দেশে-দেশে এবং দেশের মধ্যে ইন্টারনেটের বৈষম্য, শহরের সাথে গ্রামের ইন্টারনেটের বৈষম্য, দ্বীপাঞ্চলে ইন্টারনেট নিশ্চিত করা, এমনকি মূল জনগোষ্ঠীর সাথে দলিত সম্প্রদায়ের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়ার বিষয়টিও উঠে আসবে আমাদের আলোচনায়। আর এখান থেকে প্রাপ্ত বিষয়ই আমরা ব্যাঙ্ককে অনুষ্ঠিতব্য আঞ্চলিক আইজিএফে তুলে ধরব।
সুমন আহমেদ সাবির
জাতিসংঘের ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে গঠিত ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের (আইজিএফ) মাল্টি স্টেকহোল্ডার অ্যাডভাইজরি গ্রুপের সদস্য সুমন আহমেদ সাবির বলেন, আমরা কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চাই, জীবনের মান উন্নয়ন করতে পারি, তার দিকনির্দেশনা দিতেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় আইজিএফ। সবার অংশ নেয়ার মাধ্যমে সার্বজনীন একটি নীতি উন্নয়ন করতে কাজ করছে।
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অপারেটর গ্রুপের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ইন্টারনেট যেহেতু একটি আন্তর্জাতিক পরিম-লে চলে, তাই এটি পরিচালনানীতি শুধু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এই নীতিমালা একই সাথে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিবেচনায় সহযোগিতা ও অংশগ্রহণমূলক নীতিমালার ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমাদের সমস্যাগুলো তাই আন্তর্জাতিক পরিম-লেও শেয়ার করতে হবে।
সমাজের প্রত্যেক মানুষকে ইন্টারনেটের অধীনে এনে একটি টেকসই উন্নয়ন ধারা বাজায় রাখার প্রত্যয় নিয়ে আগামী জুলাই মাসে এশিয়ার আইজিএফ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ইন্টারনেট সবার জন্য প্রয়োজন। সরকার, ব্যবসায়ী, পেশাদার প্রত্যেকটি লোকের জন্য ইন্টারনেট প্রয়োজন। তাই এ নীতি প্রণয়নে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সতর্কতা হচ্ছে- যে নীতি টিকে থাকবে না, সে জায়গায় যেনো আমরা না যাই। তাই পলিসি বা নীতি-নির্ধারণীর জায়গাগুলোয় আমাদের সবগুলো খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভুল সংশোধনে উদার মন নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
সভায় উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধি এবং ব্যবসায় নেতাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনার অনেক উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু কিছু ভুল আমাদের আছে, যা আমাদের ঠিক করা উচিত। টেকসই ও অধিকতর উন্নয়নের প্রত্যাশায় আমি এখানে দুটি উদাহরণ টানছি। ২০০৬ সালে আমরা দেশে সাবমেরিন ক্যাবেলের যাত্রা শুরু করি। আজকে ২০১৭ সালে এসে আমাদের ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ জিবি পস্নাসে। অপরদিকে ২০০৭ সালে সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয় ভিয়েতনাম। আজ সেখানে ব্যান্ডউইডথ ক্যাপাসিটি দাঁড়িয়েছে ৪ টেরাবাইটে। তাদের লোকাল কনটেন্টও ৪ টেরাবাইটের মতো। পক্ষান্তরে আমাদের লোকাল কনটেন্ট মোটের ওপর ২০ জিবি। কাজেই জনমিতি অনুসারে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের উন্নয়নে কিছু ত্রম্নটি আছে। এই ত্রম্নটি রয়েছে নীতি-নির্ধারণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও সামগ্রিক অংশ নেয়ার বিষয়েও। কনটেন্টের অপ্রতুলতায় ইন্টারনেটের ব্যবহার ততটা বাড়েনি। এখানে আরও অনেক লোককে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর এটা করতে হলে সবার আগে চলে আসছে নিরাপত্তার প্রশ্নটি। ইন্টারনেট যেনো আমাদের ক্ষতির কারণ না হয়, সে বিষয়টি তাই সবচেয়ে বেশি মাথায় রাখতে হবে। একইভাবে নিরাপত্তার নামে যেনো ব্যবহারকারীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা না হয়, সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহার ও পরিচালনায় আমাদের একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান তৈরি করতে হবে। সে ক্ষেত্রে সমন্বিত একটি ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরি করতে হবে।
সুমন বলেন, বিশ্বে অনেক দেশেই ইন্টারনেট বন্ধ আছে। আবার অনেকে বন্ধ করার পর আবার খুলে দিচ্ছে। আসলে ইন্টারনেট নিয়ে এই ভয় আসে অজ্ঞতা থেকে। যেখানেই অজ্ঞতা থাকে, সেখানেই ভয় থাকে। এই ভয়কে জয় করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সাব কন্টিনেন্টে একটা বিষয় দেখা যায়, সরকারের চেয়ারে যিনি বসেন, তিনি অন্যদেরকে অপরাধী ভাবেন। আর অপরাধ দমন করতে গিয়ে তারা সবাইকে একটি রেস্ট্রিকশনের মধ্যে ফেলে দেন। আমাদের সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সংহতিপূর্ণ অবস্থানের মাধ্যমে এই জায়গা থেকে উত্তরণ করতে হবে।
অধ্যাপক মো: মাহফুজুল ইসলাম
বৈঠকে সরকারের নানা উদ্যোগের প্রশংসার পাশাপাশি তির্যক সমালোচনাও করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কমপিউটার সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমরা অনেকটা পথ এগিয়েছি। তবে সফলতার পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু ব্যর্থতাও রয়েছে। আমরা যেভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য এগিয়ে যাচ্ছিলাম, সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মূলই হচ্ছে আইসিটির বাস্তবায়ন। আর ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজির মিলত বিষয়ই মূলত ইন্টারনেট। ইন্টারনেটকে যদি শহরে-গ্রামে, ধনী-দরিদ্রের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলেই মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে বাস্তবায়িত হবে। এই বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কয়েকটি প্রশ্ন এসে যায়। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে দাম বা সহজলভ্যতার বিষয়। এ ছাড়া আমাদের দেশে যেসব ওয়েবসাইট আছে, তার বেশিরভাগই হোস্টিং করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে মান, সুরক্ষা ও মূল্যসংবেদনশীলতায় যে এগিয়ে থাকবে, সেখানেই মানুষ ছুটবে। এখানে রাষ্ট্রীয় সীমানার কোনো বাধা নেই। তাই আমাদের দেশে ইন্টারনেট, ডোমেইন, হোস্টিং সাশ্রয়ী না হয়, তবে নির্ভরযোগ্য সংযোগ, স্টোরেজ বা ডিভাইস না থাকলে আমরা বাইরে যাবই। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ইন্টারনেট আমরা তখনই ব্যবহার করব, যখন এটি আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনবে। আমাদের দেশে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে প্রত্যেক জায়গাতেই ওয়েবসাইট রয়েছে। সরকারি অনেক সেবাই আমরা এখন অনলাইনে নিয়ে এসেছি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা এর সুফলটা পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। ব্যাংকিং অনলাইন হওয়ার পরও নিরাপদে তা ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়ায় আমাদের কোনো লাভ হচ্ছে না। যখন আমি অনলাইনে এটিএমে টাকা তুলতে পারছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পাদন করতে পারছি; তখনই মূলত আমরা ইন্টারনেট ব্যবহার করব। এ ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমাতে হবে। অনলাইনে সেবা থাকার পর এখনও আমাদের পাসপোর্ট পেতে ৭ দিন সময় লাগে। অথচ অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করে দুপুরে জমা দিয়ে পরের দিন সকালবেলা পাসপোর্ট হাতে পাওয়া যায়। আমাদের ন্যাশনাল আইডি রয়েছে। সেখানে যে ভুল তথ্য আছে, তা আমাদের সংশোধনের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স কার্যকর হলেই মূলত এই ছোট প্রতিবন্ধকতাগুলো ঠিক হবে। সব নাগরিক যেনো অনলাইনেই নিজেদের কাজ নিজেরা করতে পারে, আমাদের সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। অফিসের ফাইল আর কেউ বহন করবে না, এটা অনলাইনেই সংশিস্নষ্টদের কাছে চলে যায় এবং যথা-ত্বরিত কার্যসম্পাদন হয় সেদিকে নজর দিতে হবে।
ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠায় তিন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক আরও বলেন, এর একটি হচ্ছে সবার জন্য বোধগম্য ইনফরমেশন রিসোর্স। এই অবকাঠামোর মাধ্যমে আমরা যেনো সহজেই প্রত্যাশিত তথ্য পাই, এগুলো যেনো যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা হয়। এসব তথ্যের মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে। দ্বিতীয় অবকাঠামো হচ্ছে টেলিকমিউনিকেশন। আর তৃতীয় অবকাঠামোটি হচ্ছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার। ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স এসব অবকাঠামোকে আরও শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে ইনফো সরকার ১ ও ২-এর পর এখন ইনফো সরকার ৩ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। কিন্তু বিডি গভ ও ইনফো সরকার-২ প্রকল্পে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে হার্ডওয়্যার স্থাপন করা হয়েছে। অনেক জায়গাতেই অপটিক্যাল সংযোগ স্থাপন করা হয়নি। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছে না।
মাহফুজুল ইসলাম আরও বলেন, এতকিছুর পরও টেলিকমিউনিকেশন অবকাঠামো ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ইনফরমেশন রিসোর্স ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা ইন্টারনেটের তিনটি মাত্রার মধ্যে মাত্র একটি মাত্রায় কাজ হয়েছে। বিশেষ করে টেলিকমিউনিকেশন সংযোগ বাস্তবায়িত হয়নি। অবশ্য আশার কথা হচ্ছে, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ইনফো সরকার-৩ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থাপন করার কাজ শুরু হচ্ছে। সংযোগ আর সেবা- এ দুটি ধাপ সত্যিকারভাবে বাস্তবায়িত হলে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করবে।
এসএম আলতাফ হোসেন
ইন্টারনেটে এখন প্রায় সব তথ্যই পাওয়া যায়। এই তথ্যের ব্যবহার ও কাজে লাগানোটাই আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ২০০৬ সাল থেকে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরাম। এখন এটি আকার ও কাজের ব্যাপ্তিতে বড় হচ্ছে। এটা আশার বিষয়। এখন আমাদের আলোচনাটা বছরে একবার না করে প্রান্তিকে প্রান্তিকে করতে হবে। একই সাথে এখন পর্যন্ত এই ফোরামে সরকারের টেলিকম, আইসিটি বিভাগ ও ইন্টারনেট সংশিস্নষ্ট আরও কিছু বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত নেই। আইএসপিএবির মতো বেসিস, বিসিএসসহ প্রতিটি প্রযুক্তি সংগঠনের প্রতিনিধিদেরও এই ফোরামে অন্তর্ভুক্ত হওয়া দরকর। যেহেতু এই ফোরামে কৌশলগত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, তাই তাদের উপস্থিতির অভাবটা এখন প্রকট হচ্ছে। তারা এই ফোরামে যোগ দিলে আরও কার্যকর হতে পারত। একই সাথে এই ধরনের আলোচনা ঢাকার বাইরেও করার পরামর্শ দেন দৃক আইসিটির প্রধান নির্বাহী এসএম আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের তথ্য-মহাসাগরে সত্য তথ্য যেমন আছে, তেমনি অনেক তথ্যই ম্যানুপুলেট হয়ে থাকে। নির্বাচন, সন্ত্রাস ইত্যাদি বিষয়ে ইন্টারনেটে ম্যানুপুলেট করা হয়। ইনক্লুসিভ সাসটেইনেবল ইন্টারনেট পেতে চাইলে এর পরিচালনা নীতি শুধু বাংলাদেশের দিকে তাকিয়েই হবে না। এটি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক উভয় প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সব কিছু মাথায় নিয়ে আমাদের প্রায় ১৭ কোটি জনগণের জন্য ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় একটি টেকসই কাঠামো দাঁড় করাতে হবে। ডটবিডি ডোমেইনে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে দেড় মাসের বেশি সময় লাগার আক্ষেপ প্রকাশ করে আলতাফ হোসেন আরও বলেন, ব্যান্ডউইডথ নিয়ে আমাদের দেশে কিছু ভুল ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে, তা দূর করতে হবে। আর ইন্টারনেট গভর্ন্যান্সকে কার্যকর করা গেলে পদ্মা সেতুর চেয়েও বেশি উপকৃত হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। এসব সম্ভাবনা, সীমাবদ্ধতা উত্তরণের বিষয় নিয়ে এখন রেডিও-টিভিতে টকশো হওয়া দরকার।
আসিফ আহনাফ
ইন্টারনেটে তরুণেরা শুধু যোগাযোগমাধ্যমে ব্যস্ত থাকছে। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। পর্যাপ্ত কনটেন্টের অভাবে তারা মূলত এদিকে ঝুঁকছে। তাদের জন্য ই-লার্নিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করে তুলতে পারলে তাদের নতুন কর্মসংস্থান গড়ে উঠবে। এতে হতাশা কমবে।
ইশতিয়াক আরিফ
ইন্টারনেট যেনো সবাই পায়, সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করে বিটিআরসি। সবার জন্য ইন্টারনেট নিশ্চিত করতে বিটিআরসির এখন নীতিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। ইন্টারনেটের দাম নির্ধারণ ও নিরাপত্তা নিয়ে বিটিআরসির আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা চলছে। সুষ্ঠুইন্টারনেট পরিচালনা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই বিডি সার্ট অ্যাডভান্স লেভেলে কাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার ভিত্তিতে কাজ করে। কিন্তু ব্যবহারকারী পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এখন সবচেয়ে জরুরী বলে মনে করেনি বিটিআরসি’র এই সহকারী পরিচালক। তিনি বলেন, টেলিকম বিভাগ ছাড়াও এই কাজে সকল পক্ষের সহযোগিতা ও সমন্বয় দরকার।
জাহাঙ্গীর হোসেন
নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় করা দরকার। বিনা আলোচনায় কোনো নীতি আরোপ করা উচিত নয়। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে সচেতনতা গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। প্রত্যেক অভিভাবককে সমত্মানের দিকে নজর রাখতে হবে। ইন্টারনেট লগ সংরক্ষণ ব্যক্তি নিরাপত্তার লঙ্ঘন- এটাও নীতি প্রণয়নের সময় মাথায় রাখা চাই। এটি বাস্তবায়নে আমি দ্বিধান্বিত।
নূরুন্নবী চৌধুরী হাছিব
বাংলা উইকিপিডিয়ার প্রশাসক নূরুন্নবী চৌধুরী হাছিব বলেন, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সহযোগিতা না পাওয়ায় আমরা ইন্টারনেটের কাঙিক্ষত ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারিনি। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বাড়লেও বাংলা কনটেন্ট সে হারে বাড়ছে না। ওয়েবসাইটগুলোর তথ্য হালনাগাদ হচ্ছে না। বাংলায় কনটেন্ট উন্নয়ন করতে না পারলে আমরা বিশাল জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট সেবায় সংযুক্ত করতে পারব না। নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে এ আলোচনা এক বছর ধরে হলেও সংশিস্নষ্টদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। তাই তাদেরকে এই আলোচনায় নিয়ে আসা দরকার। তিনি বলেন, আইএসপিগুলোর লগ এক বছরের জন্য সংরক্ষণের জন্য বিটিআরসি একটি নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবহারকারীদের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধামেত্মর আগে আলোচনার দাবি রাখে। কেননা, আমি জানি না, একজন ব্যবহারকারী হিসেবে একজন সাধারণ আইএসপির কাছে আমাদের তথ্য থাকাটা কতটা নিরাপদ।
এমদাদুল হক
আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক বলেন, প্রযুক্তি উন্নয়নে প্রসঙ্গক্রমে মাঝে মাঝেই ভিয়েতনামের নাম চলে আসে। তারা আমাদের চেয়ে এক বছর পর সাবমেরিন ক্যাবলে সংযুক্ত হওয়ার পর কীভাবে সম্ভব হলো সে প্রশ্ন এসে যায়। এর কারণ খতিয়ে দেখলে বিষয়টি সহজেই অনুমিত হবে। আইএসপি লাইসেন্স নীতিমালা এ জন্য দায়ী। শুরুতে একটি কোম্পানি এই খাতে একচেটিয়া ব্যবসায় করেছে। এই একচেটিয়া বাজার ভাঙতে ৩৯টি লাইসেন্স দেয়া হয়। এতগুলো লাইসেন্সের কিন্তু দরকার ছিল না। এর ফলে এখন সবগুলো লাইসেন্সই মারা যাচ্ছে। কয়েক দিন পরেই দেখা যাবে নীতিমালাগত কারণে তারা ব্যবসায় বন্ধ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মাত্র দুটি এনটিটিএন কোম্পানি রয়েছে। দেশজুড়ে তারা নেটওয়ার্ক তৈরি করছে। সেখানে সরকারের নীতিমালাগত কারণে বাজার চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই দুটি কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসায় করছে। দেশের ৫ শতাধিক আইএসপি ও আইআইজি কোম্পানি, আইআইজিডব্লিউ ও মোবাইল অপারেটর প্রত্যেককেই এই দুই অপারেটরের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তাই এখন আমি ঢাকায় ২ হাজার টাকায় ১ এমবিপিএস ব্যান্ডউইডথ দিতে পারলেও ঢাকার আশপাশে সেবা দিতে হলে এই এনটিটিএন কোম্পানিগুলোকেই ২ হাজার টাকা দিতে হয়। অথচ ব্যান্ডউইডথের উচ্চমূল্যের সব দায় দেয়া হয় আইএসপিএবির ওপর। আইএসপিএবির ব্যাকইন্ডে নতুন করে তিনটি স্তর তৈরি করায় ব্যবহারকারী পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম চড়া থাকছে। মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে অন্যরা ব্যবসায় ভাগ বসাচ্ছে। ট্যাক্সের চাপ বহন করতে হচ্ছে। এই পলিসি ঠিক করা না হলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না। ব্যাকআপ সেবাকে প্রাইমারি করে দেয়ায় আইএসপিএবি কোম্পানিগুলো সমস্যার মুখে রয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এমদাদুল হক। তিনি আরও বলেন, ইনফো সরকার-৩ প্রকল্পও আবার সেই দুই এনটিটিএন কোম্পানির কাছে জিম্মি হতে চলেছে। একইভাবে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি হচ্ছে।
খান মোহাম্মদ কায়সার
আমাদের দেশে এখনও ইনক্লুসিভ ইন্টারনেট ব্যবহার করার মতো কোনো গভর্ন্যান্স পলিসি তৈরি হয়নি। ইন্টারনেটের ন্যায্য দাম নির্ধারণ হয়নি। আবার দেশের মানুষের রাতের ঘুম হারাম করে দিয়ে ইন্টারনেট ফ্রি ব্যবহার করার সুযোগ করে দিলে এই জাতি কিছুদিনের মধ্যে একটি পাগল জাতিতে পরিণত হবে। তাই এখন ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স আমাদের দেশের জন্য খুব বেশি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে লোকটি ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, সেই ব্যবহারটা কোন ক্ষেত্রে হচ্ছে। কেননা ইন্টারনেট ব্যবহারের স্বাধীনতা ও সীমানা নির্ধারণ করা না গেলে এটা সুফল বয়ে আনবে না। তাই অবিলম্বে ইন্টারনেট গাইডলাইন তৈরি করা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না, আইপি ঠিকানা আটকে রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা অর্জন করতে হবে।
সৈয়দ আলমাস কবীর
দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার মাত্র ২০ জিবি। ব্যান্ডউইডথের বেশিরভাগই অব্যবহৃত থাকে। স্থানীয় কনটেন্টের অভাবে এমন দুরবস্থা। ই-মেইল, ফেসবুকিং, ইউটিউবের মধ্যেই যেনো আমরা সীমাবদ্ধ। এটা অশনিসঙ্কেত। ইন্টারনেট প্রসারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে ই-গভর্ন্যান্স। সরকারি সেবাগুলো ইন্টারনেটভিত্তিক করলে এর ব্যবহার অনেক বাড়বে। শুধু ফরম ডাউনলোডের মতো নয়, সিমলেস ইন্ট্রিগেশন করতে হবে। অনলাইনেই সব কাজ সম্পন্ন করার মাধ্যমে প্রশাসনের ডিসেন্ট্রালাইজেশন করা যাবে। ই-কমার্স যত প্রসার লাভ করবে, ইন্টারনেট তত বিকশিত হবে। অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা চালু করলে এ খাতটি চাঙ্গা হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে অনলাইনমুখী করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নীতিগত কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এর ফলে প্রযুক্তি খাত পিছিয়ে পড়ছে। এই যেমন আমি যদি ভিডিও কনফারেন্সিং করতে চাই, তাহলে বিটিআরসির কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জামানত দিয়ে অনুমতি নিতে হয়। এটি একটি হাস্যকর নীতি।
হাসানুল হক ইনু
সভাপতির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ও বিআইজএফ চেয়ারপারসন হাসানুল হক ইনু বলেন, এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশের ঢাকাতেই প্রথম কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছিল। কিন্তু তারপর আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর প্রযুক্তির ব্যবজহার নিয়ে বাংলাদেশে নতুন করে আবার ভাবা শুরু হয়। তখন জামিলুর রেজা চৌধুরিকে প্রধান করে একটি উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি ৩৯টি প্রস্তাবনা দিয়েছিলো। এই প্রস্তাবমালার বেশির ভাগই সরকার গ্রহণ করেছিলো। এর মধ্যে কম্পিউটারের ওপর কর মুক্তি সুবিধাটা যুগান্তকরী পদক্ষেপ। তবে প্রশাসনিক বিষয়ে বেশি কিছু করা হয়নি। তবে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর শেখ হাসিনা সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করে। এই আইনটি ছাতার মতো। প্রযুক্তি আয়ত্ব ও প্রয়োগের বিষয়টি আইনে সুচারুর রূপে বিধৃত হয়েছে। এ আইনটি ধরে এগুলো অনেক দূর এগুনো যাবে। কেনানা এই আইনেই ছিলো রেভিনিউ বাজেটের শতকরা ৫ ভাগ তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ব্যয় করতে হবে। কিন্তু বিশেস্নষণ করে দেখা যাবে তা করা হয়নি।
এ পর্যায়ে দেশের সাইবার আকাশকে নিরাপদ রাখতে মানবাধিকার কর্মীসহ সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহবান জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় অংশীজনের অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশে সাইবার আইন, সাইবার পুলিশ ও সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ তৈরিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হাতে নেয়ার গুরুত্ব তুলে ধরে হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আয়ত্ত করা এবং সাইবার জগতকে টেকসই ও নিরাপদ করা এই সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নিরাদ করতে সাইবার আইনি কাঠামো গঠন এবং সাইবার আইন, সাইবার উকিল, সাইবার পুলিশ গঠন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা নিশ্চিত করে অল্পদিনের মধ্যেই সাইবার আইন তৈরির কাজ শেষ হবে। আর আগামী দুই মাসের মধ্যে আসবে সম্প্রচার আইন। সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হবার আহবান জানিয়ে দ্রুততম সময়ে সাইবার আইন পাশ হোক বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেছেন, সাইবার অপরাধীরা আমার অধিকার ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর দ-বিধি ছাড়া গণতন্ত্র অচল। তাই প্রযুক্তি ও আইন দিয়েই এ অবস্থা থেকে সুরক্ষেত থাকতে হবে।
বাক-স্বাধীনতার মতো ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির দাবি জানিয়ে হাসানুল হক ইনু আরও বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য নিরাপদ ও বিনামূল্যে ইন্টারনেট জরুরি। কারণ, এটি জনগণের সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক প্রযুক্তি।
তিনি আরও বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি সমন্বিত কর্মধারা গড়ে তুলতে আমরা এখনো পারিনি। চেষ্টা চলছে। বহুত ছিটেফোটা কাজ হচ্ছে। এখন সধারণ জনগণ, প্রসাশনের কর্মকর্তা, সরকারি কর্মী, ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবসায়ীরা এবং অল্পকিছু রাজনীতিবিদরা বুঝতে পারছেন ডিজিাটল বাংলাদেশ কার্যকর। এটা কাজ করছে। মানুষ এখন এর দরকারি দিকটি বুঝছে। কিন্তু এই দরকারি জিনিসটা আয়ত্ত, প্রয়োগ দক্ষতা সার্বিকভাবে গড়ে ওঠেনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, শিল্প বিপ্লবের পর বিশ্ব তথ্য ও যোগযোগ প্রযুক্তি বিপ্লবে প্রবেশ করায় এটা এখন একটি তুমুল আলোচনার বিষয়। এত দ্রুত এই বিপ্লবের প্রসার ঘটছে যে ছয় মাস অন্তর অন্তর প্রযুক্তির পরিবর্তন ঘটছে। সুতরাং ক্রমাগত হালনাগাদ না থাকলে এই বিপ্লব থেকে ছিটকে বেড়িয়ে যেতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের মহাসড়ক থেকে পিছিয়ে যাবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্র বিশেষ নয়; সার্বিক প্রযুক্তি-সব ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা যায়। প্রযুক্তিকে তাই কেবল অংকের মতো সুনির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে না। তাই যাপিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সম্ভব। সেজন্য এটা অর্থনীতিতে নতুন একটা মাত্রা যুক্ত হয়েছে। এর ফলে এখন অর্থনীতিতে টেকসই অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সবুজ ও ডিজিটাল অর্থনীতি। এমুহূর্তে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে এই ত্রিমাত্রিক উন্নয়নের মডেল ব্যবহার করতে হবে। এজন্য ইন্টারনেটকে আরও জনমুখী করতে হবে। এটা সমৃদ্ধি আনবে। বৈষম্য কমাবে। নিরাপদ রাখবে। পরিবেশ বান্ধব করবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, সাধারণ সদস্য হিসেবে জাতিসংঘ নির্ধারিত ২০৩০ সালের টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনে কয়েকটি ক্ষেত্রে শুণ্য সহিষ্ণুনীতি গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য আমরা জঙ্গীবাদ দমনে এই নীতি গ্রহণ করেছি। এখন দারিদ্র্য উচ্ছেদ করতে হবে। এখানে কোনো ছাড় নেই। দূর করতে হবে লিঙ্গ বৈষম্য। একইসঙ্গে পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। উন্নয়নের এমন ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে হলে ইন্টারনেটের টেকসই, নিরাপদ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সকলক্ষেত্রে ইন্টারনেটের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে কীভাবে দারিদ্র, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা যায় এ বিষয়ে সবাইকে তৎপর থাকতে হবে। সেজন্য গ্রাম-শহর, ধনী-গরীবের দূরত্ব ও বৈষম্য, লৈঙ্গিক সমতা এবং সরকার ও জনগণের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি চমৎকার দাওয়াই।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবিলম্বে বহুপক্ষীয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি গঠন করার প্রতি জোর দাবি জানান হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ইন্টারনেট প্রযুক্তি যেহেতু জনগণের প্রযুক্তি সেজন্য সরকারের বাইরে যত অংশীজন আছে, সব অংশীজনের সমন্বয়ে একটি বহুপক্ষীয় ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা জাতীয় কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিতে হবে। এই কমিটি ইন্টারনেটের ব্যবহার ও প্রয়োগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা করে যে পরামর্শ দেবে সরকার তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এই কমিটিকে সব সময় তৎপর থাকার পরামর্শ দিয়ে তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক, বৈশ্বিক, মহাদেশীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে যতক্ষণ কোনো কমিটি থাকছে না ততক্ষণ পর্যন্ত সরকার ও অংশীজনের মধ্যে একটি দূরত্ব থেকেই যাবে। বিটিআরসি একটি বিশেষ ক্ষেত্রে কাজ করায় বাধ্য হয়েই এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মাল্টি স্টেকহোল্ডারের মধ্যে থাকলেও পরামর্শের অভাবে পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
ইনু বলেন, ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা একটি রাষ্ট্রীয় বিষয়। তাই তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়- এই তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে একটি টেকসই, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনা বহুপক্ষীয় জাতীয় কমিটি গড়ে তোলা উচিত। এ লক্ষে্য প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি সংশিস্নষ্ট পর্যায়ে বিজিআইএফ-কে ধর্না দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। একইসঙ্গে অংশীজনদের কাছ থেকে উত্থাপিত ও অনলাইন দুনিয়ায় জাতীয় ব্র্যান্ডিং খ্যাত ডটবাংলা, ডটবিডি’র ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি এইমুহূর্তে পরিবর্তন করে বেসরকারি খাতে দিয়ে হলেও সহজে ও দ্রুততার সঙ্গে মানুষনে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আনার জোর দাবি তোলেন। সরকারি সেবার ব্যবহার আরও প্রাঞ্জল করে ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়তে সকলকে সরকারের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান। ইন্টারনেটে বাংলা বিষয়বস্ত্ত (কনটেন্ট) ও সেবার পরিধি বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। ই-বাণিজ্য ও ই-ব্যাংকিং এ বিদ্যমান বাধা দূর করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান। ভিডিও কনফারেন্স করতে বিটিআরসির অনুমতি নেয়ার বিষয়টি হাস্যকর অভিহিত করে তথ্যমন্ত্রী বলেন এটা সহজ ও কমদামে করা উচিত। ইন্টারনেটের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর প্রত্যাকার করা দরকার। ইন্টারনেটকে অন্তর্ভূক্তি নীতির অধীনে এনে ভিক্ষুক তৈরি না করে তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করা দরকার। ই-বর্জ নীতিমালা তৈরি করে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে হবে। ই-বাণিজ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় ইন্টারনেট ক্রস বর্ডার ট্রেডের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়

চুম্বক ভাবনা
* আমাদের সরকারের অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে। কিন্তু এগুলোতে ভিজিটর সংখ্যা বেশ কম। এটা বাড়াতে হবে। এজন্য ওয়েবের মাধ্যমে শুধু তথ্য সরবরাহ নয়, সেবা দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। এখান থেকে ভিজিটরের প্রশ্নের উত্তরের রিয়েল টাইম উত্তর প্রাপ্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
* ইন্টারনেট ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এখনও আমাদের ৪০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। এই ব্যবহার বাড়াতে অনলাইনে বাংলা নিবন্ধ এবং তথ্য-উপাত্তের (কনটেন্ট) সংখ্যা ও ব্যপ্তি বাড়াতে হবে।
* ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় বাধা সাইবার হামলা। সাইবার হামলা মোকাবেলায় কারিগরি দক্ষতার পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
* সাইবার হুমকি পর্যবেক্ষণে ইন্টারনেট গভর্ন্যান্স ফোরামের বিশেষ উইং থাকা দরকার। এই শাখাটি নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টি ও ভোগান্তিতে তাদের পাশে থাকবে।
* প্রযুক্তি দুনিয়ায় বাংলাদেশের দূত ডটবিডি। তাই বাংলাদেশের সব ওয়েবসাইট ডটবিডি ডোমেইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। একইভাবে ডটবাংলা ডোমেইন দিয়েও ডিজটাল বিশ্বে আমরা আমাদের স্বকীয়তার ঘোষণা দিতে চাই।
* ডিজিটাল বৈষম্য ঘুচতে সামাজিক তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক।
* প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে কাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার দরকার।

প্রস্তাবনা
১. ইন্টারনেটকে মৌলিক অধিকার ঘোষণা করে এর ওপর আরোপিত কর প্রত্যাহার।
২. ডটবাংলা ও ডটবিডি’র ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন সাধন।
৩. বাংলা কনটেন্ট ও স্থানীয় সেবার প্রাণঞ্জল ও সমৃদ্ধিকরণ।
৪. অবিলম্বে সাইবার আইন প্রণয়ন করে সাইবার পুলিশ ও আদালত স্থাপন।
৫. ই-বাণিজ্য ও ই-ব্যাংকিং খাতে বিদ্যমান বাধা অপসারণ। ক্রস বর্ডার ট্রেড কৌশল নির্ধারণ।
৬. ই-বর্জ্য নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
৭. ভিডিও কনফারেন্সিং-এ বিটিআরসি’র কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণের বিধান প্রত্যাহার।
৮. প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট প্রসারে প্রচ্ছন্ন বাণিজ্যিক চক্র ভেঙে দেয়া ও সুরক্ষার বিষয় নিশ্চিতকরণ।
৯. তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়- এই তিন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে অংশীজনদের সঙ্গে নিয়ে অবিলম্বে একটি টেকসই, নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায় বহুপক্ষীয় জাতীয় কমিটি গঠন।

পত্রিকায় লেখাটির পাতাগুলো
লেখাটি পিডিএফ ফর্মেটে ডাউনলোড করুন
লেখাটির সহায়ক ভিডিও
২০১৭ - মে সংখ্যার হাইলাইটস
চলতি সংখ্যার হাইলাইটস