কোনো নেটওয়ার্কের আওতায় সব পিসি বা ক্লায়েন্টকে অটোমেটিক্যালি আইপি অ্যাড্রেস বরাদ্দ দেয়ার পদ্ধতিকে বলা হয় ডিএইচসিপি। আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) সার্ভার মূলত এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ক্লায়েন্টদের আইপি অ্যাড্রেস ডায়াল আপে সংযোগের জন্য বরাদ্দ দিয়ে থাকে ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।
ডিএইচসিপি নেটওয়ার্কের প্রতিটি হোস্টকে সার্ভার নিজ থেকে আইপি অ্যাড্রেস বরাদ্দ করে থাকে। নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বা ব্যবহারকারীকে কষ্ট করে আইপি অ্যাড্রেস টাইপ করতে হয় না। নেটওয়ার্কে হোস্ট পিসি অন হওয়ার সাথে সাথেই সে ডিএইচসিপি সার্ভারে আইপি অ্যাড্রেসের জন্য অনুরোধ পাঠিয়ে দেয়। অনুরোধ পাওয়ার পর সার্ভার অব্যবহৃত আইপি অ্যাড্রেসসমূহ থেকে একটি অ্যাড্রেস ওই হোস্ট পিসিকে প্রদান করে এবং সার্ভারে সেটা তালিকাভুক্ত হয়। হোস্ট পিসি অফ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে তার আইপি অ্যাড্রেসটি সার্ভার অন্য সক্রিয় হোস্টকে দেয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ডিএইচপিসি সার্ভার ব্যবহারের ফলে নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের নিজ থেকে আইপি অ্যাড্রেস বরাদ্দ প্রদান এবং তা হিসাব রাখার ঝামেলা অনেকখানি কমে যায়।
হোস্টকে বরাদ্দের জন্য প্রতিটি ডিএইচসিপি সার্ভার একটি নির্দিষ্ট রেঞ্জের বৈধ (Valid) আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে। ডিএইচসিপি শুধু হোস্ট পিসির আইপি অ্যাড্রেসই প্রদান করে না, বরং সে হোস্টের গেটওয়ে, পছন্দসই উইনস সার্ভার অ্যাড্রেস ও ডিএনএস অ্যাড্রেসও সরবরাহ করতে সক্ষম। হোস্ট বা ক্লায়েন্ট পিসি যে আইপি অ্যাড্রেসটি ডিএইচপিসি সার্ভার থেকে পেয়ে থাকে, তা স্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে পারে না। মূলত সার্ভার আইপি অ্যাড্রেস একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হোস্টকে লিজ প্রদান করে। ওই নির্দিষ্ট সময়ের অর্ধেক পার হওয়ার পর অ্যাড্রেসটি ব্যবহার অব্যাহত রাখার জন্য সেটি নবায়ন করে নিতে হয়। কোনো কারণে সার্ভার আইপি অ্যাড্রেস আপডেট করার জন্য প্রস্ত্তত না থাকলে লিজ সময়ের শতকরা ৮৭.৫ ভাগ অতিক্রম হওয়ার পর আইপি অ্যাড্রেস নবায়নের জন্য আবার চেষ্টা করা হয়। লিজ সময়ের পুরোটা পার হওয়ার পরও যদি সার্ভার থেকে সাড়া পাওয়া না যায়, তাহলে ক্লায়েন্ট পিসিকে ওই আইপি অ্যাড্রেসটি ত্যাগ করতে হয়।
মাইক্রোসফটের অন্যান্য নেটওয়ার্ক সার্ভার অপারেটিং সিস্টেমের মতো উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-এ ডিএইচসিপি কনফিগারেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ডিএইচসিপি সার্ভার কমান্ড প্রম্পট ও গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস দুই পদ্ধতিতেই কনফিগার করা যায়। এ লেখায় শুধু গ্রাফিক্স ইন্টারফেস পদ্ধতিতে সার্ভার ২০১২-এ ডিএইচসিপি কনফিগারেশন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
কনফিগারেশন ধাপগুলোর সচিত্র বিবরণ নিমণরূপ
০১. সিস্টেমে ডিএইচসিপি সার্ভার ইনস্টল করার পর সার্ভার ম্যানেজারের রোল দেখে নিতে হবে। এখানে ডিএইচসিপি সার্ভার কনফিগারেশন সম্পন্ন করার জন্য একটি সতর্কীকরণ বার্তা দেখা যাবে।
০২. এবার ডিটেইল উইন্ডোতে গিয়ে Configure DHCP configuration-এ ক্লিক করে কনফিগারেশন উইজার্ডটি চালু করুন।
০৩. এ পর্যায়ে ইনস্টলেশন উইজার্ডটি চালু হয়ে যাবে।
০৪. পরবর্তী ধাপে ডিএইচসিপি সার্ভারকে আপনার অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরিতে অথরাইজ করতে পারেন। এ কাজটি করতে হবে, কারণ আইপি অ্যাড্রেস ডিএইচসিপি ক্লায়েন্টদের মধ্যে বরাদ্দের সার্ভারকে ডিএনএস ও অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি সার্ভিসের এন্টিগুলো সরাসরি আপডেট করতে হয়। এ কাজটি করার জন্য সিস্টেমে আপনাকে ডোমেইন অ্যাডমিন হিসেবে নিজের ক্রেডেনসিয়াল উপস্থাপন করতে হবে।
০৫. এর পরপরই ডিএইচসিপি অ্যাক্টিভ ডিরেক্টরি সার্ভিসে অথরাইজ হয়ে যাবে।
০৬. এখানে একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, উইন্ডোজ সার্ভার ২০১২-তে ‘closed’ কথাটির অর্থ কিন্তু কনফিগারেশন সম্পন্ন হয়েছে এমন নয়। বরং কনফিগারেশনের কাজগুলো ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকে। সার্ভার ম্যানেজারের ওপরে অবস্থিত ফ্ল্যাগে ক্লিক করে কনফিগারেশন স্ট্যাটাস দেখে নিতে পারেন।
০৭. এবার ডিএইচসিপি স্কোপ কনফিগার করার জন্য আমাদেরকে DHCP MMC ওপেন করতে হবে। এ কাজের জন্য প্রথমে Tool ও পরে DHCP-এ ক্লিক করতে হবে।
০৮. এখন DHCP MMC-এ আমাদেরকে ডিএইচসিপি সার্ভারে ডান ক্লিক করতে হবে এবং পপআপ মেনু থেকে Add/Remove Bindings সিলেক্ট করতে হবে।
০৯. এ পর্যায়ে পরীক্ষা করে নিন আপনার বাইন্ডিং নেটওয়ার্ক ইন্টারফেসে সেট করা আছে কি না। না থাকলে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার সেট করে নিন। এবার Ok বাটনে ক্লিক করে DHCP MMC-এ ফেরত যেতে হবে।
১০. এখন DHCP IPv4 স্ট্যাকে ডান ক্লিক করে পপআপ মেনু থেকে New Scope সিলেক্ট করুন।
১১. এ পর্যায়ে নিউ স্কোপ উইজার্ডটি চালু হয়ে যাবে। পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য Next বাটনে ক্লিক করুন।
১২. নতুন স্কোপের জন্য একটি নাম ও তার জন্য যুতসই একটি বর্ণনা এখানে এন্ট্রি দিন।
১৩. এখন সার্ভার যে আইপি রেঞ্জ ও সাবনেট মাস্ক ব্যবস্থাপনার কাজ করবে, তা এখানে এন্ট্রি দিন। আইপি অ্যাড্রেস রেঞ্জ হিসাব করার জন্য অনলাইন টুলের সাহায্য নিতে পারেন। এ ধরনের একটি টুলের লিঙ্ক হচ্ছে www.subnet-calculator.com।
১৪. যেসব আইপি অ্যাড্রেস বা অ্যাড্রেসসমূহ ডিএইচসিপি সার্ভারের আওতার বাইরে রাখতে চান (যেমন স্ট্যাটিক আইপি বা রিজার্ভড আইপি), সেগুলো এবং সার্ভার থেকে মেসেজ প্রাপ্তির বিরতিকাল সংক্রান্ত তথ্যাদি পরবর্তী উইন্ডোতে যথাস্থানে এন্ট্রি দিন।
১৫. এখন আপনাকে আইপি অ্যাড্রেস বরাদ্দের জন্য লিজ টাইম সেট করতে হবে। লিজ টাইমের অর্থ হচ্ছে একটি ডিএইচসিপি ক্লায়েন্ট সার্ভারের কাছে আবার নবায়নের অনুরোধ পাঠানোর আগ পর্যন্ত যে সময়কালব্যাপী একটি আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করার সুযোগ পাবে সেটি। লিজ টাইম সেট করার বিষয়ে একটি নিয়ম প্রচলিত রয়েছে। যখন আপনার আইপি স্কোপ বড় হবে, বরাদ্দের জন্য পর্যাপ্ত আইপি অ্যাড্রেস থাকবে এবং সিস্টেমে বিশেষ কোনো সিকিউরিটি অডিট থাকবে না, তখন একটি ডিএইচসিপি ক্লায়েন্ট সর্বোচ্চ ৮ দিন পর্যন্ত একটি আইপি অ্যাড্রেস ধরে রাখতে পারবে। অপরদিকে ওয়াইফাই সংযোগের জন্য ডিএইচসিপি সার্ভার ব্যবহার করা হবে এবং সার্ভারে স্বল্পসংখ্যক আইপি অ্যাড্রেস অবশিষ্ট থাকবে, তখন একটি ক্লায়েন্ট সর্বোচ্চ দুই দিনের জন্য কোনো আইপি অ্যাড্রেস ধরে রাখতে পারবে।
১৬. এখানে উইজার্ডের সাহায্যে ডিএনএস (DNS), ডিফল্ট গেটওয়ে ও উইনস (WINS) কনফিগার করার সুযোগ পাবেন। ডিএনএস কনফিগারেশন পদ্ধতি পৃথকভাবে আলোচনা করা হয়েছে বিধায় এখানে এ বিষয়গুলো বর্ণনা করা হলো না।
১৭. এ পর্যায়ে আপনি সার্ভারের স্কোপ অ্যাক্টিভেট করতে পারেন। নিউ স্কোপ উইজার্ডে প্রথম অপশনটি সিলেক্ট করে Next বাটনে ক্লিক করুন।
১৮. এখন Finish বাটনে ক্লিক করে স্কোপ ইনস্টলেশন ও অ্যাক্টিভেশনের কাজটি সম্পন্ন করুন।
১৯. এ পর্যায়ে DHCP MMC উইন্ডোটি নিচের চিত্রের মতো দেখাবে।
ডিএইচসিপি সার্ভার ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য সার্ভারের আওতাভুক্ত কোনো ক্লায়েন্ট কমপিউটার চালু করুন। এবার ক্লায়েন্ট কমপিউটারের ডস প্রম্পটে গিয়ে IPconfig /all কমান্ড ব্যবহার করে দেখুন কোনো আইপি অ্যাড্রেস সার্ভার থেকে পাওয়া যায় কি না। সার্ভারে নির্দিষ্ট করে দেয়া রেঞ্জ থেকে আইপি অ্যাড্রেস পাওয়া গেলে মনে করতে হবে ডিএইচসিপি সার্ভার যথাযথভাবে কনফিগার করা হয়েছে এবং সেটি কজ করছে।
ফিডব্যাক : kazisham@yahoo.com